তুগলক রাজবংশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তুগলক রাজবংশ

تغلق شاهیان[১] বা تغلقیه[২]
১৩২০–১৪১৩[৩]
দিল্লি সালতানাতের, ১৩৩০-১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দের তুঘলক রাজবংশের অধীনে অঞ্চল। ১৩৩৫ সালের পর সাম্রাজ্য হ্রাস পায়।[৪][৫]
দিল্লি সালতানাতের, ১৩৩০-১৩৩৫ খ্রিস্টাব্দের তুঘলক রাজবংশের অধীনে অঞ্চল। ১৩৩৫ সালের পর সাম্রাজ্য হ্রাস পায়।[৪][৫]
রাজধানীদিল্লি
প্রচলিত ভাষাফার্সি (সরকারি)[৬]
ধর্ম
সরকারি: ইসলাম) (সুন্নি)
অন্যান্য: হিন্দুধর্ম,[৭] শিয়া ইসলাম
সরকাররাজবংশ
সুলতান 
• ১৩২১-১৩২৫
গিয়াসউদ্দিন তুগলক
• ১৩৯৩-১৩৯৪
নাসিরুদ্দিন মোহাম্মদ শাহ
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১৩২০
• বিলুপ্ত
১৪১৩[৩]
আয়তন
৩২,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার (১২,০০,০০০ বর্গমাইল)
পূর্বসূরী
উত্তরসূরী
ইশা রাজবংশ
খুসরো খান
সাঈদ রাজবংশ
বর্তমানে যার অংশ ভারত
   নেপাল
 পাকিস্তান
 বাংলাদেশ

তুগলক সাম্রাজ্য (ফার্সি: سلسلہ تغلق বা আরবি: طغلاق[৮]) ১৩২০ সালে গিয়াসউদ্দিন[৯] কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি তুর্কি[১০] মুসলিম রাজবংশ[১১] যারা ১৩২০ থেকে ১৪১৩ পর্যন্ত দিল্লী সালতানাতের শাসক ছিল।[১২][১৩] এই সালতানাতের রাজধানী ছিল দিল্লি। এই সাম্রাজ্য মধ্যযুগে ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চল শাসন করেছে।

রাজবংশটি মুহাম্মদ বিন তুঘলকের নেতৃত্বে একটি সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তার আঞ্চলিক প্রসার ঘটায় এবং ১৩৩০ থেকে ১৩৩৫ সালের মধ্যে তার শীর্ষে পৌঁছায়। এটি ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ অংশ শাসন করেছিল।[১৪][১৫][১৬]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

"তুঘলক" শব্দটির ব্যুৎপত্তি নিশ্চিত নয়। ষোড়শ শতাব্দীর লেখক ফিরিস্তা দাবি করেছেন যে এটি তুর্কি শব্দ "কুতলুঘ" এর দুর্নীতি, কিন্তু এটি সন্দেহজনক।[১৭] সাহিত্য, সাংখ্যিক এবং এপিগ্রাফিক প্রমাণ স্পষ্ট করে যে তুঘলুক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা গিয়াসউদ্দিন-এর ব্যক্তিগত নাম ছিল, পৈতৃক পদবী নয়। ইতিহাসবিদরা পুরো রাজবংশকে সুবিধাজনক বিষয় হিসেবে বর্ণনা করার জন্য "তুঘলক" পদবী ব্যবহার করেন, কিন্তু রাজবংশের রাজারা "তুঘলক" কে পদবি হিসেবে ব্যবহার করতেন না: কেবল গিয়াসউদ্দিন এর পুত্র মুহাম্মদ বিন তুঘলুক নিজেকে তুঘলক শাহের পুত্র ("বিন তুঘলুক") বলে অভিহিত করেছিলেন।[১৭]

রাজবংশের বংশপরিচয় আধুনিক ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক হয় কারণ পূর্ববর্তী সূত্রগুলি এটি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করে। তুঘলকের রাজদরবার কবি বদর-ই চাচ বাহরাম গুরের রেখা থেকে রাজবংশের জন্য একটি রাজকীয় সাসানীয় বংশতালিকা খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন, যা সুলতানের বংশানুক্রমিক সরকারী অবস্থান বলে মনে হয়,[১৮] যদিও এটি চাটুকারিতা হিসাবে খারিজ করা যেতে পারে।[১৯] মরোক্কোর ভ্রমণকারী ইবনে বতুতা বলেছেন যে তুঘলক "তুর্কিদের কারাউনা উপজাতির" অন্তর্ভুক্ত, যারা তুর্কিস্তান এবং সিন্ধের মধ্যবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বাস করত, একজন সুফি সাধু রুকন-ই-আলমের দাবির উপর ভিত্তি করে। যাইহোক, এটি অন্যান্য সমসাময়িক উৎস দ্বারা সমর্থন করা হয় না।[২০] কারাউনারা মঙ্গোল ছিলেন বা মঙ্গোল সৈন্যদলের সাথে যুক্ত ছিলেন, যাদের তুঘলক তুচ্ছ করেছিলেন,[২১] এবং তুঘলক কারাউনা ছিলেন এমন সম্ভাবনা কম।[২২]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তুগলক সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল গিয়াসউদ্দিন তুগলকের মাধ্যমে। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে মুহাম্মদ বিন তুগলক ক্ষমতায় আসীন হন। তিনিই তুগলক সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তারপরও মুহাম্মদ বিন তুগলক তার দূর্বল রাজ্যনীতি, অসহিষ্ণুতা এবং রহস্যময় আচরনের কারণে কুখ্যাত ছিলেন। তাই বাংলা এবং উর্দূতে তুগলকি কাণ্ড বলতে আজব এবং অবান্তর কাণ্ড-কারখানাকে বুঝায়।

মুহাম্মদ বিন তুগলকের মৃত্যুর পর এক মাসেরও কম সময়ের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মুহাম্মদ ইবন তুগলক। কিন্তু ফিরোজ শাহ তুগলক মুহাম্মদ ইবন তুগলককে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে নেন। ফিরোজ শাহ তুগলক সৈন্যবাহিনীর দিকে খুব একটা মনোযোগ না দেওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের একটা বিশাল অংশ তার হাতছাড়া হয়ে যায়। ফিরোজ শাহ তুগলকের মৃত্যুর দশ বছরের মধ্যেই তুগলক সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।

সুলতান[সম্পাদনা]

ধারনকৃত নাম আসল নাম রাজত্ব কাল নোট
সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলক শাহ
سلطان غیاث الدین تغلق شاہ
গাজি মালিক
غازی ملک
১৩২১-১৩২৫ তুগলক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা
সুলতান মোহাম্মদ আদিল বিন তুগলক শাহ
سلطان محمد عادل بن تغلق شاہ
الغ خان
জুনা খান
جنا خان
মুহাম্মদ বিন তুগলক
ملک فخر الدین
১৩২৫-১৩৫১ তুগলক রাজবংশকে বাংলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করেছিলেন। খামখেয়ালি চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। সিন্ধ অভিযানে মৃত্যুবরণ করেন।
সুলতান ফিরোজ শাহ তুগলক
سلطان فیروز شاہ تغلق
ফিরোজ শাহ তুগলক
ملک فیروز ابن ملک رجب
১৩৫২-১৩৮৮
সুলতান গিয়াস উদ দিন তুগলক শাহ
سلطان غیاث الدین تغلق شاہ
তুগলক খান ইবন ফতেহ খান ইবন ফিরোজ শাহ
تغلق خان ابن فتح خان ابن فیروز شاہ
১৩৮৮-১৩৮৯
সুলতান আবু বকর শাহ
سلطان ابو بکر شاہ
আবু বকর খান ইবন জাফর খান ইবন ফতেহ খান ইবন ফিরোজ শাহ
ابو بکر خان ابن ظفر خان ابن فتح خان ابن فیروز شاہ
১৩৮৯-১৩৯০
সুলতান মোহাম্মদ শাহ
سلطان محمد شاہ
মোহাম্মদ শাহ ইবন ফিরোজ শাহ
محمد شاہ ابن فیروز شاہ
১৩৯০-১৩৯৪
সুলতান আলাউদ্দিন সিকান্দার শাহ
سلطان علاءالدین سکندر شاہ
হুমায়ূন খান
ھمایوں خان
1394
সুলতান নাসির উদ দিন মুহাম্মদ শাহ তুগলক
سلطان ناصر الدین محمود شاہ تغلق
মুহাম্মদ শাহ ইবন মুহাম্মদ শাহ
محمود شاہ ابن محمد شاہ
১৩৯৪-১৪১২/১৪১৩
সুলতান নাসিরুদ্দিন নুসরাত শাহ তুগলক
سلطان ناصر الدین نصرت شاہ تغلق
নুসরাত খান ইবনে ফাতেহ খান ইবনে ফিরোজ শাহ
نصرت خان ابن فتح خان ابن فیروز شاہ
১৩৯৪-১৩৯৮
  • রঙ্গিন সারিগুলো দ্বারা দুইজন সুলতানের অধীনে ভাঙন ধরা দিল্লি সালতানাতকে বোঝাচ্ছে; একটি পূর্বে ফিরোজাবাদ (Teal) এবং অন্যটি পশ্চিমে দিল্লিতে (Gray)।

গ্যালারি[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ইসলামিক শব্দকোষ"। ৬ ডিসেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩ 
  2. "Encyclopaedia Islamica"। ২৯ জুন ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০১৩ 
  3. Edmund Wright, (২০০৬)। A dictionary of world history.Oxford University Press (২য় সংস্করণ)। Oxford: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-920247-8ওসিএলসি 70671510 
  4. Jackson, Peter (২০০৩)। The Delhi Sultanate: A Political and Military History। Cambridge, England: Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0521543293 
  5. Schwartzberg, Joseph E. (১৯৭৮)। A Historical atlas of South Asia। Chicago: University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 147, map XIV.3 (j)। আইএসবিএন 0226742210 
  6. "Arabic and Persian Epigraphical Studies - Archaeological Survey of India"। Asi.nic.in। ২০১১-০৯-২৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-১১-১৪ 
  7. Sharp, Henry (১৯৩৮)। "DELHI: A STORY IN STONE"Journal of the Royal Society of Arts86 (4448): 318–333। আইএসএসএন 0035-9114 
  8. "موسوعة التراجم والأعلام - محمد بن طغلق شاه"www.taraajem.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০২ 
  9. Sen, Sailendra (২০১৩)। A Textbook of Medieval Indian History। Primus Books। পৃষ্ঠা 90–102। আইএসবিএন 978-9-38060-734-4 
  10. Malik, Jamal (২০০৮)। Islam in South Asia: A Short History (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা ১০৪। আইএসবিএন 978-90-04-16859-6 
  11. Jamal Malik (২০০৮)। Islam in South Asia: A Short HistoryBrill Publishers। পৃষ্ঠা 104। 
  12. E.J. Brill's first encyclopaedia of Islam, 1913-1936। M. Th Houtsma। Leiden: E.J. Brill। ১৯৯৩। পৃষ্ঠা ১২৯–১৩০। আইএসবিএন 90-04-09796-1ওসিএলসি 28557785 
  13. Sen, Sailendra (২০১৩)। Textbook of medieval indian history.। Primus Books। পৃষ্ঠা ৯০–১০২। আইএসবিএন 93-80607-34-2ওসিএলসি 822894456 
  14. Jackson, Peter (১৯৯৯)। The Delhi Sultanate : a political and military history। Cambridge: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-40477-0ওসিএলসি 39443175 
  15. Rapson, Edward James; Haig, Sir Wolseley; Burn, Sir Richard; Dodwell, Henry (১৯৫৮)। The Cambridge History of India: Turks and Afghans, ed. by W. Haig (ইংরেজি ভাষায়)। The University Press। পৃষ্ঠা ১৫৩–১৬৩। 
  16. Burn, R. (১৯২৯)। "The Cambridge History of India, Vol. III, Turks and Afghans. Edited by Sir Wolseley Haig K.C.I.E., C.S.I., C.M.G., C.B.E."Journal of the Royal Asiatic Society (ইংরেজি ভাষায়)। 61 (4): 907–913। আইএসএসএন 1356-1863ডিওআই:10.1017/S0035869X00070313 
  17. Banarsi Prasad Saksena 1970, পৃ. 460।
  18. Nizami, Khaliq Ahmad (১৯৯৭)। Royalty in Medieval India (ইংরেজি ভাষায়)। Munshiram Manoharlal Publishers। পৃষ্ঠা ৮। আইএসবিএন 978-81-215-0733-2 
  19. Banarsi Prasad Saksena 1970, পৃ. 461।
  20. Mohammad Habib (১৯৭০)। A Comprehensive History Of India Vol. 5। Indian History Congress। পৃষ্ঠা ৪৬০,৪৬১। 
  21. Middleton, John (২০১৫-০৬-০১)। World Monarchies and Dynasties (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা ৯৬৬। আইএসবিএন 978-1-317-45158-7 
  22. Habib, Mohammad (১৯৪০)। A Comprehensive History Of India Vol.-v The Delhi Sultanat। পৃষ্ঠা ৪৮৩। 

উৎস[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]