তিরুপল্লান্তু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তিরুপল্লান্তু
গরুড়োপরি বিষ্ণু ও তার সহধর্মিণী তিরুমালার মূর্তি।
তথ্য
ধর্মহিন্দুধর্ম
রচয়িতাপেরিয়ালবর
ভাষাতামিল
যুগখ্রিষ্টাব্দ ৯ম-১০ম শতাব্দী
শ্লোক১২

তিরুপল্লান্তু (তামিল : திருப்பல்லாண்டு, রোমান : Tirupaḷḷāṇṭu) বা 'পালান্ডু' [১] হলো হিন্দু দেবতা বিষ্ণুকে নিবেদিত একটি তামিল আশীর্বাদসূচক স্তোত্র[২]আলবরদের মধ্যযুগীয় ভক্তিমূলক স্তবের সংকলন [৩] নালায়ীরা দিব্য প্রবন্ধমের এটি প্রথম স্তোত্র । [৪][৫] পেরুমল তিরুমলির মতো সাহিত্য-সংকলনের অন্যান্য রচনায় এর উল্লেখ করা হয়েছে ।[৬]

এই স্তোত্রটি সাধারণত প্রভাত সময়ে শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মন্দিরগুলিতে পাঠ করা হয় । [৭][৮]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

তিরু হল একটি তামিল শব্দ যার অর্থ পবিত্রতা, [৯] 'পল্লান্তু' শব্দের অর্থ 'বহু বছর'। [১০]

কিংবদন্তি[সম্পাদনা]

এই স্তোত্রটির রচনা সম্পর্কে একটি শ্রীবৈষ্ণব কিংবদন্তি বিদ্যমান। পেরিয়ালবরকে একবার পান্ড্য রাজা ধর্মীয় বিতর্কে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানান । কবি-সাধক এই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকজন জৈন পণ্ডিতকে পরাজিত করতে সক্ষম হন, যা তাকে রাজার প্রশংসা অর্জন করতে সাহায্য করে। রাজা তাকে একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে সম্মানিত করেন, যেখানে তাকে একটি হাতির পিঠে বসিয়ে রাজধানী প্রদক্ষিণ করা হয়েছিল। ভক্তের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু স্বয়ং তাঁর গরুড় বাহনে উপবিষ্ট হয়ে তাঁর সাথে দেখা করার জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করেন । দেবতার উপস্থিতি প্রত্যক্ষ করে পেরিয়ালবর তাকে তিরুপল্লান্টু স্বব দ্বারা মহিমান্বিত করেছিলেন , এবং, সুরক্ষা ও দীর্ঘায়ু কামনা করেছিলেন। [১১][১২][১৩]

স্তব[সম্পাদনা]

তিরুপল্লান্তুতে বারোটি শ্লোক রয়েছে । কবি এই রচনায় বিষ্ণুর গুণাবলীর প্রশংসা করেছেন, যেমন : [১৪][১৫]

পল্লণ্টু পল্ল্যাণ্টু পল্ল্যাইরতত্তনটু

পলকোটি নুতনাইরাম মল্লাট তিনতোদ মানিবনা! উন চিবাড়ি চেব্বি তিরুক্কাপ্পুর অটিয়োমোটম নিন্নোটম পিরিভিন্নি আয়রাম পল্লান্টু বট্টিবাই নিনবালা মারপ্পিনিল বাল্লক্কিন্টু কাইবিরুত্তম বাল্লকিনারা মাই ওদি বালাত্তুইয়ুম চাতুতার আধুইয়ুম পল্ল্যাণটু পট্টাইপোর পুক্কু মুদঙ্কুম আপাঙ্কা

চান্নিয়ুম পল্লান্তু

অনুবাদ[সম্পাদনা]

শ্রীরাম ভারতীর নালায়ীরা দিব্য প্রবন্ধম স্তোত্রটির একটি গদ্য অনুবাদের বৈশিষ্ট্য রয়েছে , যার নাম 'দ্য সেক্রেড বুক অফ ফোর থাউজেন্ড' । [১৬] কামিল জেভেলিবিল তার তামিল সাহিত্য শিরোনামের বইতে জেএসএম হুপারের স্তবটির একটি কাব্যিক অনুবাদ তুলে ধরেছেন । [১৭]

গদ্য অনুবাদ (শ্রীরাম ভারতী)
বহু বছর, বহু সহস্র বছর,
ও শত সহস্র বছর,
শক্তিশালী গদা তোমার হাতে রয়েছে, হে রত্নরঙের প্রভু! তোমার
রক্তিম পাদপদ্ম আমাদের আশ্রয়।
বহু বহু সহস্র বছর;
আপনার বুকে সেই শ্রী দেবী বিশ্রামরত ,
বহু বহু সহস্র বছর;
আপনার ডান হাতে শোভা পাচ্ছে
দুষ্কৃতিবিনাশী জ্বলন্ত চক্র ,
বহু বহু সহস্র বছর
যুদ্ধক্ষেত্রে বিরাজ করে পাঞ্চজন্য শঙ্খ
কাব্যিক অনুবাদ (জেএসএম হুপার)
শ্রদ্ধা তোমার প্রতি,
হে পরাক্রমশালী, যিনি জয় করেছেন
মল্লবীরদের,
তুমি গৌরবময় কৌস্তুভ মণি পছন্দ করো!
অসীম সৌন্দর্য তোমার সহস্র
কোটি বছর অনন্তকাল ধরে!
কোন বিঘ্ন না আসুক তোমার দাসদের!
ধন্য সেই দেবী যিনি বাস করেন আপনার
দীপ্তিশালী ডান পাশে!
তোমার শক্তিশালী ডান হাতে
গৌরবময় চক্র অসুরদের বধ করে!
যুদ্ধে ধ্বনিত হয় পাঞ্চজন্য শঙ্খ!

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Mulchandani, Sandhya (২০১৯-০৭-২০)। For the Love of God: Women Poet Saints of the Bhakti Movement (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Random House India Private Limited। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-93-5305-581-3 
  2. Aruṇācalam, Mu (১৯৮৯)। Musical Tradition of Tamilnadu (ইংরেজি ভাষায়)। International Society for the Investigation of Ancient Civilizations। পৃষ্ঠা 40। 
  3. University, Vijaya Ramaswamy, Jawaharlal Nehru (২০০৭-০৫-২২)। Historical Dictionary of the Tamils (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 37। আইএসবিএন 978-0-8108-6445-0 
  4. Hopkins, Steven Paul (২০০২-০৪-১৮)। Singing the Body of God: The Hymns of Vedantadesika in Their South Indian Tradition (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press, USA। পৃষ্ঠা 86। আইএসবিএন 978-0-19-512735-5 
  5. Carman, John Braisted (১৯৮৯)। The Tamil Veda : Piḷḷān's interpretation of the Tiruvāymol̲i। Internet Archive। Chicago : University of Chicago Press। পৃষ্ঠা 264। আইএসবিএন 978-0-226-09305-5 
  6. Suganya (২০১৮)। My Sapphire-hued Lord, My Beloved. A Complete, Annotated Translation of Kulacēkara Āḻvār's Perumāḷ Tirumoḻi and Periyavāccāṉ Piḷḷai's Medieval Maṇipravāḷam Commentary, with an Introduction। পৃষ্ঠা 154। 
  7. Vasudha Narayanan (১৯৯৪)। The vernacular Veda। Internet Archive। University of South Carolina Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-87249-965-2 
  8. University, Vijaya Ramaswamy, Jawaharlal Nehru (২০০৭-০৫-২২)। Historical Dictionary of the Tamils (ইংরেজি ভাষায়)। Scarecrow Press। পৃষ্ঠা 187। আইএসবিএন 978-0-8108-6445-0 
  9. Peterson, Indira Viswanathan (২০১৪-০৭-১৪)। Poems to Siva: The Hymns of the Tamil Saints (ইংরেজি ভাষায়)। Princeton University Press। পৃষ্ঠা 14। আইএসবিএন 978-1-4008-6006-7 
  10. Das, Sisir Kumar (২০০৫)। A History of Indian Literature, 500-1399: From Courtly to the Popular (ইংরেজি ভাষায়)। Sahitya Akademi। পৃষ্ঠা 39। আইএসবিএন 978-81-260-2171-0 
  11. Dalal, Roshen (২০১৪-০৪-১৮)। Hinduism: An Alphabetical Guide (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin UK। পৃষ্ঠা 929। আইএসবিএন 978-81-8475-277-9 
  12. PUBLICATION DIVISION। DEVOTIONAL POETS AND MYSTICS PART 1। পৃষ্ঠা 46। 
  13. Rangachar, S. (১৯৯১)। Philosophy Of Pancaratras (English ভাষায়)। পৃষ্ঠা 217। 
  14. Jayaraman, Dr P. (২০১৯)। A Brief History of Vaishnava Saint Poets : The Alwars (ইংরেজি ভাষায়)। Vani Book Company। পৃষ্ঠা 51। আইএসবিএন 978-93-89012-69-9 
  15. Raghavan, V. K. S. N. (১৯৮৩)। A Brief Study on the Tiruppallandu of Sri Periyalvar, the Tiruppalliyeluchi of Sri Tondaradippodiyalvar, and the Kanninunsiruttambu of Sri Madhurakaviyalvar (ইংরেজি ভাষায়)। Sri Visishtadvaita Pracharini Sabha। পৃষ্ঠা 10। 
  16. Makarand Joshi। The Sacred Book Of Four Thousand 01 Nalayira Divya Prabandham Sri Rama Bharati 2000। পৃষ্ঠা 2। 
  17. Zvelebil, Kamil (১৯৭৪)। Tamil Literature (ইংরেজি ভাষায়)। Otto Harrassowitz Verlag। পৃষ্ঠা 103। আইএসবিএন 978-3-447-01582-0