জ্যোতিভূষণ চাকী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যোতিভূষণ চাকী
জন্ম১৯২৫
মৃত্যু২৭ মার্চ ২০০৮(২০০৮-০৩-২৭)
জাতীয়তাভারতীয়
পেশাশিক্ষক, লেখক
পরিচিতির কারণভাষাবিদ
দাম্পত্য সঙ্গীপ্রকৃতি চাকী (বি.১৯৪৬)
পিতা-মাতাঅহিভূষণ চাকী (পিতা)
জ্যোৎস্নারানি চাকী (মাতা)
পুরস্কারবিদ্যাসাগর পুরস্কার (২০০৩)
সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (২০০৬)

জ্যোতিভূষণ চাকী (জন্ম: ১৯২৫ - মৃত্যু: ২৭ মার্চ ২০০৮) একজন বাঙালি ভারতীয় শিক্ষাবিদ ও ভাষাবিদ ছিলেন। তিনি ১৮টি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন।[১]সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি কাব্যতীর্থ সম্মান পান।[২]

জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জ্যোতিভূষণ চাকীর জন্ম অবিভক্ত বাংলার দিনাজপুরে তার মাতুলালয়ে। তার পৈতৃক নিবাস ছিল অধুনা বাংলাদেশের পাবনায়। অহিভূষণ চাকী ও জ্যোৎস্নারানির সাত পুত্র সন্তান ও তিন কন্যা সন্তানের সর্বজ্যেষ্ঠ ছিলেন জ্যোতিভূষণ। দিনাজপুরের জেলা স্কুলে তার প্রাথমিক শিক্ষা। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে বি.এ পাশ করেন। পরবর্তিতে কলকাতায় এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে পাবনায় ফিরে যান। [২] তবে কলকাতায় অবস্থানকালে তিনি সংস্কৃৃত ও উর্দু ভাষা শিক্ষা শিক্ষা করেন যথাক্রমে দুর্গামোহন ভট্টাচার্য, মৌলানা মুইনউদ্দিন দর্দাঙ্গ ও মোহম্মদ আন্তানিয়ো উবে-র কাছে। সংস্কৃৃত ভাষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য পেয়েছেন কাব্যতীর্থ সম্মান।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

জ্যোতিভূষণ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে পাবনার গোপালচন্দ্র ইন্সটিটিউশনে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন এবং ওই বৎসরেই বিবাহ করেন প্রকৃতি দেবীকে। ভারত ভাগের সঙ্গে স্বাধীনতা লাভ সুখের হয়নি। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ছিন্নমূল হয়ে মালঞ্চি-গয়েশপুর হয়ে কলকাতার শিয়ালদহে আসেন অসহায় অবস্থায়। তার নিজের কথায়-

পুব বাংলায় প্রাণের জোয়ারে ভাসা দীর্ঘদিন স্থায়ী হল না। সাম্প্রদায়িক কালনাগিনীর বিষ ছড়াল সারা দেশে। আমরা নিজেদের দেখলাম শিয়ালদহ স্টেশনে। ভলান্টিয়ার হাতে চিঁড়ে-গুড়ের ঠোঙা ধরিয়ে দিয়ে বলল- কোন ক্যাম্পে যাবে।

শেষে কলকাতার ক্যাম্পই হয়ে যায় চাকী পরিবারের আশ্রয়। পরবর্তীতে কলকাতার পার্ক সার্কাস মডার্ন স্কুলে চার বৎসর শিক্ষকতা করেন। ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে যোগদেন জগদ্বন্ধু ইনস্টিটিউশনে। ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে অবসরের পর ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দ হতে আমৃত্যু তিনি কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সঙ্গে রিসার্চ স্কলার হিসাবে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত থাকেন। এছাড়াও তিনি পশ্চিমবঙ্গ উর্দু আকাদেমি, সাহিত্য অকাদেমি,এশিয়াটিক সোসাইটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সম্মাননা পুরস্কার[সম্পাদনা]

জ্যোতিভূষণ চাকী বিভিন্ন সময়ে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেন।

রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসমূহ[সম্পাদনা]

অনুবাদ গ্রন্থ-
  • রামচরিতমানস
  • জাতকের গল্প
ছড়ার বই-
  • উলুকুট-ঢুলুকুট
  • ঢ্যামকুড়কুড়
  • আমার ছবি তোমার ছড়া
সম্পাদিত গ্রন্থ-
  • কালিদাস সমগ্র
  • দুই বাংলার ছেলে ভুলানো ছড়া (এখলাস উদ্দিনের সঙ্গ)
অন্যান্য গ্রন্থ-
  • বাংলা ভাষার ব্যাকরণ আনন্দ পাবলিশার্স, কলকাতা
  • সোনাঝুরি (১৯৬৭)
  • বার্থ কৌতুকী (ভট্যেজি ছদ্মনামে) আনন্দ পাবলিশার্স,কলকাতা
  • গল্পের রংমহল (১৯৯১)
  • এক ঝাঁক গল্প:আরবি,ফরাসি ও সংস্কৃত চিরায়ত কাহিনী। ISBN-978-70-1240-002-8

জীবনাবসান[সম্পাদনা]

দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের জ্যোতিভূষণের স্ত্রী প্রকৃতি দেবী মারা যান। তাদের কোন সন্তান ছিল না। শেষ জীবনে অতি অসহায় অবস্থায় নিঃসন্তান জ্যোতিভূষণও দীর্ঘ রোগভোগের পর ২০০৮ খ্রিস্টাব্দের ২৭ মার্চ কলকাতার শেঠ সুখলাল কারনানি কলেজ হসপিটালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Linguist Jyoti Bhusan Chaki dies"One India। মার্চ ২৭, ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৩ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯, পৃষ্ঠা ১৪৬, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬