জাফর ইবনে ইয়াহিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জাফর ইবনে ইয়াহিয়া বার্মাকি, জাফর আল-বার্মাকি, (ফার্সি: جعفر بن یحیی برمکی, আরবি: جعفر بن يحيى, জাফর বিন ইয়াহিয়া) (৭৬৭–৮০৩) আবা-ফজল নামেও যিনি পরিচিত ছিলেন, পারস্যের আব্বাসিয় খলিফা হারুন আল-রশিদ এর উজির। তাঁর পিতার (ইয়াহিয়া ইবনে খালিদ) উত্তরাধিকারী হিসেবে এ পদে স্থলাভিষিক্ত হন। তিনি প্রভাবশালী বার্মাকিড পরিবারের সদস্য ছিলেন,যারা নাভা বিহার মঠের পূর্ব বৌদ্ধ নেতা ছিলেন। ৮০৩ সালে হারুন আল-রশিদের নির্দেশে তাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল বাকি বার্মাকিডসের সাথে। কথিত আছে যে হারুনের বোন আব্বাসার সাথে তার সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিলো; যদিও ঐতিহাসিক সূত্র এখনও অস্পষ্ট রয়েছে। বিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক হিসাবে তাঁর সুনাম ছিল এবং তিনি ভারতীয় বিজ্ঞানকে বাগদাদে প্রবর্তন করার জন্য অনেক কিছু করেছিলেন। [১] ৭৫১ সালে তালাসের যুদ্ধে (বর্তমান কিরগিজস্তানে) ট্যাং চীনা বন্দীদের কাছ থেকে কাগজ তৈরির প্রক্রিয়া জানার পর খলিফাকে বাগদাদে একটি পেপার মিল খোলার বিষয়ে রাজি করানোর কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয় । [২]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

জাফর ইবনে ইয়াহিয়ার ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায়নি। কোনো কোনো সূত্রে উল্লেখ আছে, তার স্ত্রীর নাম আব্বাসাআব্বাসা (জন্ম প্রায় ৭৬৫ – মৃত্যু ৮০৩) ছিলেন একজন আরব সম্ভ্রান্ত নারী।তিনি আল-মাহদীর কন্যা ছিলেন। তাঁর মা রাহিম ছিলেন উপপত্নী। তিনি ছিলেন আল-হাদী,হারুন আল-রশিদ, উলায়া এবং ইব্রাহিম ইবনে আল-মাহদির সৎবোন। হারুন আল-রশিদ তার প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণে তিনি আব্বাসার আত্মীয় ছিলেন বলে অসন্তুষ্ট ছিলেন। আব্বাসাকে তার জীবনে রাখার জন্য তিনি তার সাথে জাফর ইবনে ইয়াহিয়ার বিয়ে দেন। বিয়েটি সাজানো মনে করা হলেও আব্বাসা তার সাজানো স্বামীর প্রেমে পড়েন। প্রতি রাতে একজন দাসীকে জাফরের শয়নকক্ষে প্রেরণ করা হত। আব্বাসা এক সন্ধ্যায় দাসীর স্থানটি গ্রহণ করেন ও তাঁর স্বামী জাফর ইবনে ইয়াহিয়া অবাক হয়ে যান । পরবর্তীতে আব্বাসা গর্ভবতী হন এবং গোপনে দুটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। যমজ সন্তানকে মক্কায় পাঠিয়ে দেন তিনি। হারুন আল রশিদ শেষ পর্যন্ত সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারে এবং জাফর ইবনে ইয়াহিয়াকে হত্যা করে। জাফরের স্ত্রী আব্বাসাকে হয় হত্যা করা হয়েছিল, অথবা,নির্বাসনে প্রেরণ করা হয়েছিল। ধারণা করা হয় আব্বাসা ৮০৩ এর দিকে মৃত্যুবরণ করেন।[৩][৪][৫]

কথাসাহিত্যে[সম্পাদনা]

জাফরকে (বেশিরভাগ অনুবাদে গিয়াফার নামে) আরব্য রজনীর বেশ কয়েকটি গল্পে হারুন আল-রশিদের সাথে প্রায়ই দেখা গিয়েছে, কিছু ক্ষেত্রে মূল চরিত্র হিসাবেও । উদাহরণস্বরূপ "তিনটি আপেল" -এ জাফর একজন গোয়েন্দার মতো, যাকে অবশ্যই একটি হত্যাকান্ডের রহস্যের সমাধান করতে হবে এবং অপরাধীর সন্ধান করতে হবে।এ গল্পটি জাফরের রহস্য উন্মোচন এর মধ্যে দিয়ে এগোতে থাকে। আবার "আতাফের কাহিনী"-তে জাফর একজন অভিযাত্রী। খলিফার নির্দেশে ভ্রমণে বের হন।এ গল্পে আতাফের পাশাপাশি জাফর অন্যতম প্রধান চরিত্র।গ্লেন পিয়ার্সের উপন্যাস দ্য টাইরান্ট অফ বাগদাদে জাফরের গল্পটি হারুন আল-রশিদের সাথে দেখা করার জন্য শার্লাম্যাগনের রাষ্ট্রদূতের ভ্রমণের একটি কাল্পনিক বিবরণ দিয়ে বলা হয়েছে। তবে আরব্য রজনী দ্বারা অনুপ্রাণিত সাম্প্রতিক মিডিয়া জাফরকে একজন ভিলেন এবং যাদুকর হিসাবে চিত্রিত করেছে:

  • The Thief of Bagdad এর ১৯৪০ সংস্করণে কনরাড ভিড্ট প্রধান উজির জাফরের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, যে একজন যাদুকর; বাদশাহকে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং রাজকন্যাকে প্ররোচিত করার চেষ্টা করছিল।[৬]
  • দ্য গোল্ডেন ব্লেড (১৯৫২) সিনেমায় হারুন আল-রশিদ (রক হডসন) জাফরের (জর্জ ম্যাকডে) সাথে যুদ্ধ করেছিলেন,যে বাগদাদের খলিফার সিংহাসন দখলের চেষ্টা করছিল।
  • ক্যাথরিন হার্মেরি-ভিইলির দ্যা গ্র্যান্ড উজির অফ দি নাইট (1981) বইয়ে তিনি খলিফা হারুন আল রশিদের প্রেমিক।
  • ১৯৮৯ সালে প্রিন্স অফ পার্সিয়া ভিডিও গেমটিতে জাফর নামে একজন ষড়যন্ত্রকারী যাদুকরকে দেখানো হয়েছিল যে সুলতানের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং রাজকন্যাকে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য করেছিল। পরের প্রিন্স অফ পার্সিয়া গেমসে, একটি নামবিহীন 'উজির' প্রধান খলনায়ক এবং মূল গেম এর জাফর চরিত্রের উপর ভিত্তি করে।
  • 1992 সালে ডিজনি ফিল্ম আলাদিনে জাফর নামে একজন দুষ্ট উজির এবং যাদুকরকে দেখানো হয়েছে, যে মূল আলাদিন গল্পের একজন (নামবিহীন) উজির এবং দুষ্ট যাদুকরের সংমিশ্রণ।
  • রেনে গোসিনি এবং জিন তাবারি এর ফরাসী কার্টুন সিরিজ ইজনোগৌডে এ , তাকে একজন অযোগ্য দখলদার হিসাবে চিত্রিত হয়েছে যে কখনই ভাল খলিফা হারুন আল পোসাহর সিংহাসন দখল করতে পারেন না।
  • জাপানের ম্যাঙ্গা ম্যাজাই:দ্যা ল্যাবয়ারিন্থ অফ ম্যাজিক এ , জাফর সিন্ডরিয়ার রাজা সিনবাদের অধীনে কর্মরত এক তরুন সেনাপতি।

বংশ তালিকা[সম্পাদনা]

বার্মাক
খালিদ
ইয়াহিয়া
জাফরফজলমুসা

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. van Bladel, Kevin (২০১১)। "The Bactrian Background of the Barmakids"। A. Akasoy, C. Burnett and R. Yoeli-Tlalim। Islam and Tibet: Interactions along the Musk Routes। London: Ashgate। পৃষ্ঠা 43–88। 
  2. Reference needed.
  3. Women in World History: A Biographical Encyclopedia। Gale। ২০০২। ২০১৫-০৯-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  4. Betham, Matilda (১৮০৪)। Dictionary of the Celebrated Women, Every Age and Country। Warick Lake: B. Crosby and Co.। 
  5. Samuel Lorenzo Knapp (১৮৪৬)। Female biography: containing notices of distinguished women, in different nations and ages। T. Wardle। পৃষ্ঠা 69–70। সংগ্রহের তারিখ ২৯ ডিসেম্বর ২০১২ 
  6. Rovin, Jeff (১৯৮৭)। The Encyclopedia of Supervillains। New York: Facts on File। পৃষ্ঠা 168-169। আইএসবিএন 0-8160-1356-X 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]