জলঢোঁড়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

জলঢোঁড়া
খুলনার ডাকাতিয়া বিলে সাঁতাররত জলঢোঁড়া
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
জগৎ/রাজ্য: অ্যানিম্যালিয়া (Animalia)
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণি: রেপটিলিয়া (Reptilia)
বর্গ: Squamata
উপবর্গ: সারপেন্টস (Serpentes)
পরিবার: Colubridae
গণ: Fowlea
(শ্নাইডার, ১৭৯৯)
প্রজাতি: F. piscator
দ্বিপদী নাম
Fowlea piscator
(শ্নাইডার, ১৭৯৯)
প্রতিশব্দ[১]
জলাশয়ের পাশে জলঢোঁড়া, কেরালা
কাঠমান্ডুর টৌডাহায় জলঢোঁড়া

জলঢোঁড়া (বৈজ্ঞানিক নাম: Fowlea piscator; ফাউলিয়া পিসকেটর) বা আটঘরিয়া হলো কলুব্রিডি গোত্রের ন্যাট্রিসিনি উপগোত্রের সাপের একটি সাধারণ প্রজাতি। এই প্রজাতির সাপ এশিয়ায় এন্ডেমিক

ভৌগোলিক বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

জলঢোঁড়া সাপ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড, লাওস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, পশ্চিম মালয়েশিয়া, চীন (চচিয়াং, চিয়াংশি, ফুচিয়েন, কুয়াংতুং, হাইনান, কুয়াংশি, ইউন্নান), তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়াইন্দোনেশিয়ায় (সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও, সুলাওসি) পাওয়া যায়। এদের টাইপ লোকালিটি হলো ইস্ট ইন্ডিজ।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

জলঢোঁড়া সাধারণত মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। তবে এরা অনেক বড়ও হতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক সাপের তুণ্ড থেকে পায়ু পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ১.৭৫ মি (৫.৭ ফু) পর্যন্ত হতে পারে।[২] পূর্ণবয়স্ক জলঢোঁড়া সাপের চোখ নাসারন্ধ্র থেকে দূরত্বের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট। এদের রোস্ট্রাল আঁইশ উপর থেকে দৃশ্যমান। আন্তঃনাসা আঁইশ কিছুটা ত্রিকোণাকার, প্রি-ফ্রন্টাল আঁইশের সমান, সামনের দিকে সরু কিন্তু কোনো কোণ উৎপন্ন করে না। ফ্রন্টাল আঁইশ তুণ্ড থেকে এর দূরত্বের তুলনায় কিছুটা দীর্ঘ; কিন্তু প্যারাইটাল আঁইশের প্রায় সমান বা তার থেকে কিছুটা খাটো। লরিয়াল আঁইশ এর চওড়ার মতোই লম্বা। এদের একটি প্রি-অক্যুলার এবং তিনটি (কদাচিৎ চারটি) পোস্ট-অক্যুলার আঁইশ থাকে। এদের দুই দিকে দুইটি করে অথবা একদিকে দুইটি এবং অন্যদিকে তিনটি টেম্পো‌রাল আঁইশ থাকে। এদের সাধারণত নয়টি ঊর্ধ্ব-লেবিয়াল আঁইশ থাকে, যার মধ্যে চতুর্থ ও পঞ্চমটি চোখের সাথে সংযুক্ত। নিম্ন চোয়ালের সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এদের পাঁচটি নিম্ন লেবিয়াল আঁইশ থাকে, যেগুলো ঊর্ধ্ব-চোয়ালের তুলনায় সংক্ষিপ্ত। ১৯টি সারিতে বিন্যস্ত পৃষ্ঠীয় আঁইশ আড়াআড়িভাবে থাকে এবং এদের প্রান্তভাগ মসৃণ। অঙ্কীয় আঁইশের সংখ্যা ১২৫–১৫৮টি। পায়ুর আঁইশ বিভক্ত এবং উপপুচ্ছ আঁইশের সংখ্যা ৬৪–৯০টি। জলঢোঁড়ার রঙ খুবই বৈচিত্র্যময়। এতে কুইনকানসিয়াল প্রক্রিয়ায় বিন্যস্ত কালো দাগের পাশাপাশি সাদাটে ছোঁপও দেখা যেতে পারে, আবার হালকা রঙের দেহের ওপর কালো আড়াআড়ি দাগ দেখা যেতে পারে অথবা কালো আড়াআড়ি দাগের সাথে কালো ছোঁপ থাকতেও পারে অথবা না-ও থাকতে পারে। এই প্রজাতির সাপের দেহের নিচে এবং চোখের পেছনে প্রায় একই জায়গায় দুইটি তীর্যক রেখা দেখা যায়। এদের দেহের অঙ্কীয় পৃষ্ঠ বা নিচের দিক সাদা রঙের, তাতে কালচে দাগ থাকতেও পারে অথবা না-ও থাকতে পারে।[৩]

বাসস্থান, আচরণ ও খাদ্যাভ্যাস[সম্পাদনা]

মিঠাপানির হ্রদ এবং নদীর পাশে এরা বাসস্থান নির্মাণ করে। সাধারণত ছোট ছোট মাছ ও ব্যাঙ খেয়ে এরা জীবনধারণ করে।

জলঢোঁড়া বিষধর নয়। তবে অধিকাংশ সময় এরা মাথা উঁচিয়ে এবং গলা ছড়িয়ে বিষধর সাপের ফণা তোলার অনুকরণ করে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার অংশ হিসেবে এরা লেজ ফেলে পালাতে পারে। এদের এই ধরনের বিরল স্বভাব প্রথম ভিয়েতনামে শনাক্ত হয়।[৪]

জলঢোঁড়া অণ্ডজ প্রাণী। এরা একেবারে ৩০–৭০টি ডিম পাড়ে। তবে কখনো কখনো চারটি থেকে ১০০টি পর্যন্ত ডিম পাড়তে দেখা যায়। ডিমের আকারেও ভিন্নতা দেখা যায়। প্রতিটি ডিম ১.৫–৪.০ সেমি (০.৫৯–১.৫৭ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। ডিম ফোটার আগ পর্যন্ত মা সাপ ডিম পাহাড়া দেয়। ডিম ফুটে যে বাচ্চা বের হয়, তা ১১ সেমি (৪.৩ ইঞ্চি) পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।[২]

শ্রেণিবিন্যাস[সম্পাদনা]

জলঢোঁড়ার উপপ্রজাতির মধ্যে রয়েছে:

  • F. p. melanzostus (গ্রেভেহোস্ট, ১৮০৭) – ইন্দোনেশিয়া (বোর্নিও [?], জাভা, সুলাওসি [?]; সুমাত্রা), ভারত (আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ)
  • F. p. piscator (শ্নাইডার, ১৭৯৯) – বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, গণচীন (হাইনানসহ), শ্রীলঙ্কা, তাইওয়ান ও থাইল্যান্ড

ত্রিপদ নামকরণের পাশের বন্ধনীতে প্রদত্ত নাম নির্দেশ করছে যে ফাউলিয়া ছাড়া এদের অন্য নামে প্রথম বর্ণনা করা হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে ভারতীয় বৈজ্ঞানিক ইন্দ্রনীল দাস [fr] F. p. melanzostus-কে ফাউলিয়া মেলানজোস্টাস নামের আলাদা প্রজাতি হিসেবে বর্ণনা করেন।

চিত্রশালা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Species Xenochrophis piscator at The Reptile Database . www.reptile-database.org.
  2. Das I (2002). A Photographic Guide to Snakes and other Reptiles of India. Sanibel Island, Florida: Ralph Curtis Books. 144 pp. আইএসবিএন ০-৮৮৩৫৯-০৫৬-৫. (Xenochrophis piscator, p. 48).
  3. Boulenger GA (1890). The Fauna of British India, Including Ceylon and Burma. Reptilia and Batrachia. London: Secretary of State for India in Council. (Taylor and Francis, printers). xviii + 541 pp. (Tropidonotus piscator, pp. 349-350).
  4. Ananjeva NB, Orlov NL (1994). "Caudal Autotomy in Colubrid Snake Xenochrophis piscator From Vietnam" Russian Journal of Herpetology 1 (2): 169-171.

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Boulenger GA (1893). Catalogue of the Snakes in the .Volume I., Containing the Families ... Colubridæ Aglyphæ, part. London: Trustees of the British Museum (Natural History). (Taylor and Francis, printers). xiii + 448 pp. + Plates I-XXVIII. (Tropidonotus piscator, pp. 230–232).
  • Dutt, Kalma (1970). "Chromosome Variation in Two Populations of Xenochrophis piscator Schn. from North and South India (Serpentes, Colubridae)". Cytologia 35: 455–464.
  • Schneider JG (1799). Historiae Amphibiorum naturalis et literariae. Fasciculus Primus, continens Ranas, Calamitas, Bufones, Salamandras et Hydros. Jena: F. Frommann. xiii + 264 pp. + corrigenda + Plate I. (Hydrus piscator, new species, pp. 247–248). (in Latin).
  • Smith MA (1943). The Fauna of British India, Ceylon and Burma, Including the Whole of the Indo-Chinese Sub-region. Amphibia and Reptilia. Vol. III.—Serpentes. London: Secretary of State for India. (Taylor and Francis, printers). xii + 583 pp. (Tropidonotus piscator, pp. 293–296, Figures 95–96).

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]