চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন | |
|---|---|
| ২৯তম বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) | |
| কাজের মেয়াদ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ – ৭ আগষ্ট ২০২৪ | |
| রাষ্ট্রপতি | মোঃ সাহাবুদ্দিন |
| প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
| পূর্বসূরী | বেনজীর আহমেদ |
| উত্তরসূরী | মোঃ ময়নুল ইসলাম |
| মহাপরিচালক র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান | |
| কাজের মেয়াদ ৮ এপ্রিল ২০২০ – ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | |
| প্রধানমন্ত্রী | শেখ হাসিনা |
| পূর্বসূরী | বেনজীর আহমেদ |
| উত্তরসূরী | এম খুরশীদ হোসেন |
| অপরাধ তদন্ত বিভাগ (বাংলাদেশ) প্রধান | |
| কাজের মেয়াদ ২৮ আগস্ট ২০১৯ – ১৪ এপ্রিল ২০২০ | |
| ব্যক্তিগত বিবরণ | |
| জন্ম | ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সুনামগঞ্জ জেলা শাল্লা উপজেলা |
| জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
| দাম্পত্য সঙ্গী | ডা. তৈয়বা মুসাররাত চৌধুরী |
| সম্পর্ক | চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (ভাই) |
| শিক্ষা | চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় |
| পুরস্কার | বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম), রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) |
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বাংলাদেশ পুলিশের ২৯তম মহাপরিদর্শক ছিলেন।[১] ২০২২ সালের ৩০শে সেপ্টেম্বর থেকে তাকে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়। এরপূর্বে তিনি র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র্যাব) মহাপরিচালক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন[২] ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান ছিলেন। ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন অপরাধের জন্য তাকে ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে গ্রেফতার করা হয়।[৩]
জীবনী
[সম্পাদনা]মামুন ১৯৬৪ সালের ১২ জানুয়ারি সুনামগঞ্জ জেলার শাল্লা উপজেলার শ্রীহাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।[৪] তিনি এইচএসসি পাশ করেছেন ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।[৫] তিনি ১৯৮৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট (এএসপি) হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।[৬] তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের ১৯৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা।[৭] তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিরাজগঞ্জ ও চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এবং চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার, এডিসি (ডিএমপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নীলফামারীর পুলিশ সুপার, ডিএমপির উপ কমিশনার (ডিসি) এবং ঢাকা পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরে তিনি ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সদর দপ্তরে ডিআইজি (অপারেশনস) এবং ময়মনসিংহ রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে নিয়োগ পান।
৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে আবদুল্লাহ আল মামুনকে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদা প্রদান করা হয়।[৮][৯] ২০২৪ সালের ৭ আগষ্ট এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তাকে অবসরে পাঠানো হয়।
ব্যক্তিগত জীবন
[সম্পাদনা]মামুন ব্যক্তিগত জীবনে ডা. তৈয়বা মুসাররাত চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৪] এই দম্পতির দুই ছেলে ও এক কন্যা রয়েছে।[৪]
বিতর্ক
[সম্পাদনা]২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।[১০]
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রাজসাক্ষী
[সম্পাদনা]২০২৫ সালের ১০ জুলাই জুলাই গণহত্যার মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। ঐ দিন এই মামলায় গণহত্যার দায় স্বীকার করে মামুন জবানবন্দি দেন এবং স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাজসাক্ষী হওয়ার সম্মতি দেন।[১১][১২][১৩][১৪]
২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি আদালতে হাজির হয়ে এই মামলায় ৩৬ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন।[১৫] ওইদিন তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে আন্দোলন চলাকালে আমাদের বিরুদ্ধে হত্যা-গণহত্যা সংঘটনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য। এ ঘটনায় আমি নিজেকে দোষী সাব্যস্ত করছি। আমি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিস্তারিত আদালতে তুলে ধরতে চাই। রহস্য উন্মোচনে আদালতকে সহায়তা করতে চাই।’[১৬]
তিনি আরও বলেন, 'বলেন ‘আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকিটা জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।’[১৭]
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ জবানবন্দিতে তিনি বলেন, "২০২৪ সালের ১৮ জুলাই তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাকে ফোন করে জানান যে আন্দোলন দমনে সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন শেখ হাসিনা।"[১৮] এছাড়াও মারণাস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে অতি উৎসাহী ছিলেন ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর ও ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এবং সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্বও ডিবির হারুনকে দেওয়া হয়েছিল।[১৯][১৪]
এছাড়াও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান এই দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার বিষয়ে জবানবন্দিতে তিনি বলেন, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছিল সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে। যার পরামর্শ দিয়েছিলেন র্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক হারুন অর রশীদ।[২০]
পুরস্কার
[সম্পাদনা]- বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)
- রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২।
- ↑ "নতুন আইজিপি বেনজীর আহমেদ"। প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শহীদুল হক গ্রেপ্তার"। প্রথম আলো। ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- 1 2 3 "Biography – Dhaka Range DIG Office"। www.dhakarange.police.gov.bd। ২ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "Who is Chowdhury Abdullah Al-Mamun, PPM | Biography | Information |"।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ "আইজিপি হলেন বেনজীর আহমেদ, র্যাব মহাপরিচালক মামুন"। যুগান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "ডিআইজি"। ঢাকা রেঞ্জ। ২ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ "confapp-2023-368" (পিডিএফ)। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় উন্নীত"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা। ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩।
- ↑ "সাবেক দুই আইজিপিসহ ৮৮ পুলিশের নামে হত্যা মামলা"। দৈনিক প্রথম আলো। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪। ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২৪।
{{সংবাদ উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: বট: মূল ইউআরএলের অবস্থা অজানা (লিঙ্ক) - ↑ bdnews24.com। "যেভাবে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন, তার সাক্ষ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?"। যেভাবে রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন, তার সাক্ষ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক) - ↑ প্রতিবেদক, জ্যেষ্ঠ (১০ জুলাই ২০২৫)। "জুলাই গণহত্যার দায় স্বীকার, রাজসাক্ষী হলেন চৌধুরী মামুন"। dhakapost.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ "রাজসাক্ষী হচ্ছেন সাবেক আইজিপি মামুন, নিরাপত্তার আবেদন আইনজীবীর"। www.ajkerpatrika.com। ৯ জুলাই ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- 1 2 Pratidin, Bangladesh (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। "সাবেক আইজিপি মামুনের জবানবন্দি হাসিনার দুঃশাসনের অকাট্য দলিল : চিফ প্রসিকিউটর | | বাংলাদেশ প্রতিদিন"। bd-pratidin.com। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ bdnews24.com। "আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত: রাজসাক্ষী মামুন"। আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত: রাজসাক্ষী ম (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: সাংখ্যিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক) - ↑ "সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে জুলাই গণহত্যা: রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুন"। Bangla Tribune। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ "চব্বিশের জুলাই হত্যাকাণ্ড: দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন সাবেক আইজিপি মামুন | আইন ও আদালত"। BSS। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। "তৎকালীন আইজিপির বর্ণনায় ৫ আগস্ট"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ প্রতিবেদক, নিজস্ব (২ সেপ্টেম্বর ২০২৫)। "সমন্বয়কদের আটকের দায়িত্ব ডিবির হারুনকে দেওয়া হয়েছিল"। Prothomalo। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
- ↑ "গুলির নির্দেশ হাসিনা-কামালের"। দেশ রূপান্তর। সংগ্রহের তারিখ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫।