ইওজ শাহ
হুসামউদ্দীন ইওজ খলজী (ফার্সি: حسام الدين عوض خلجي), যিনি পরবর্তীতে গিয়াসউদ্দীন ইওজ শাহ (ফার্সি: غیاث الدین عوض شاه) বলে পরিচিতি পান, বাংলার একজন শাসক ছিলেন। তিনি ১২০৮–১২১০ মেয়াদে এবং পুনরায় ১২১২-১২২৭ মেয়াদে দায়িত্বপালন করেন।
তাঁর শাসনকে "গঠনমূলক" হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে কারণ খলজি বন্যা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উদ্ভাবন করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার প্রাচীনতম রেকর্ড করা বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রধান শহরগুলিকে সংযুক্ত করে বাংলায় বড় বড় উন্নয়ন করেছিলেন।[১][২] খলজি বাংলার প্রথম নৌবাহিনী প্রতিষ্ঠা, লখনৌতি (গৌড়) এর সম্পূর্ণ দুর্গ এবং বাসনকোটের দুর্গ-শহর প্রতিষ্ঠার জন্যও সুখ্যাতি পেয়েছিলেন।[৩]
প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]তিনি খালাজ উপজাতির সদস্য ছিলেন।[৪][৫][৬][৭] যা ছিলো তুর্কি বংশোদ্ভূত একটি উপজাতি যারা তুর্কিস্তান থেকে অভিবাসনের পরে পরে ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে আফগানিস্তানে বসতি স্থাপন করেছিলো।[৮][৯][১০] তিনি গারমসিরের একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এবং তার পিতার নাম হোসাইন খলজি। তার প্রথম জীবনে, ইয়াওয়াজ খলজি তার গাধার সাথে পণ্য পরিবহন করতেন। একবার, তিনি একদল দরবেশকে খাবার ও পানীয় সরবরাহ করেছিলেন, যারা পরে তার জন্য প্রার্থনা করেছিলেন এবং তাকে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশের নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]১২০৮ সালে তিনি বাংলার ক্ষমতা লাভ করেন। পরে ১২১০ সালে আলি মর্দান খিলজি তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। আলী মর্দান খলজীর ওফাতের পর ১২১২ সালে পুনরায় ক্ষমতা লাভ করেন এবং গিয়াসউদ্দীন ইওজ শাহ নামে শাসন শুরু করেন।
গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজী দীর্ঘ ১৫ বছর শাসন করেন। তার শাসনামলে বাংলায় শান্তি বজায় ছিল। তিনি দেবকোট থেকে গৌড়ে রাজধানী সরিয়ে আনেন। বাংলায় তিনি একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজী পূর্ববঙ্গ, কামরূপ (আসাম), ত্রিহুত (উত্তর বিহার) ও উৎকলে (উত্তর ওড়িষ্যা) অভিযান পরিচালনা করেন ও এগুলোকে তার করদ রাজ্যে পরিণত করেন।[১১]
গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজীর বিহার জয়কে দিল্লীর মামলুক সালতানাতের প্রতি হুমকি হিসেবে ধরা হয় এবং দিল্লীর সুলতান ইলতুতমিশ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেন। ১২২৪ সালে ইলতুতমিশ বাংলা আক্রমণ করেন। বিহারের তেলিয়াগড়ে দুই সেনাবাহিনী মুখোমুখি হয়। গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজীর নৌবাহিনী ও পদাতিক বাহিনী দিল্লীর সেনাদের কাছে পরাজিত হয়। ফলে তিনি ইলতুতমিশকে ৮০,০০,০০০ টাকা ও ৩৮টি যুদ্ধের হাতি প্রদান করেন এবং ইলতুতমিশের নামে মুদ্রা জারি করতে বাধ্য হন। [১১]
কিন্তু ইলতুতমিশের ফিরে যাওয়ার পর গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজী পুনরায় স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এরপর বিদ্রোহ দমনের জন্য বাংলার পূর্বাঞ্চল আক্রমণ করেন। ১২২৬ সালে ইলতুতমিশ পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন ও তাকে পরাজিত করেন। গিয়াসউদ্দীন ইওজ খলজী ও তার সভাসদরা যুদ্ধে নিহত হন এবং বাংলা দিল্লীর মামলুক সালতানাতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়।[১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ এম আমিনুল ইসলাম এবং মোঃ ফজলুল বারী (২০১২)। "ভেড়িবাঁধ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ আবদুল করিম (২০১২)। "তুর্কি, জাতি"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ সালেহ উদ্দীন খান এবং সৈয়দ ওয়াহেদুজ্জামান (২০১২)। "সামরিক বাহিনী"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
- ↑ Minhāju-s Sirāj (১৮৮১)। Tabaḳāt-i-nāsiri: a general history of the Muhammadan dynastics of Asia, including Hindustān, from A.H. 194 (810 A.D.) to A.H. 658 (1260 A.D.) and the irruption of the infidel Mughals into Islām। Bibliotheca Indica #78। 1। Henry George Raverty কর্তৃক অনূদিত। Calcutta, India: Royal Asiatic Society of Bengal (printed by Gilbert & Rivington)। পৃষ্ঠা 548।
- ↑ "Khaljī dynasty | Indian dynasty | Britannica"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৫-২৯।
- ↑ Satish Chandra (২০০৪)। Medieval India: From Sultanat to the Mughals-Delhi Sultanat (1206-1526) - Part One। Har-Anand। পৃষ্ঠা ৪১। আইএসবিএন 978-81-241-1064-5।
- ↑ Sarkar, Jadunath, সম্পাদক (১৯৭৩) [First published 1948]। The History of Bengal। II: Muslim Period, 1200-1757। Patna: Academica Asiatica। পৃষ্ঠা ৩, ৮। ওসিএলসি 924890।
- ↑ Ashirbadi Lal Srivastava (১৯৬৬)। The History of India, 1000 A.D.-1707 A.D. (২য় সংস্করণ)। Shiva Lal Agarwala। পৃষ্ঠা ৯৮। ওসিএলসি 575452554।
- ↑ Abraham Eraly (২০১৫)। The Age of Wrath: A History of the Delhi Sultanate। Penguin Books। পৃষ্ঠা ১২৬। আইএসবিএন 978-93-5118-658-8।
- ↑ Radhey Shyam Chaurasia (২০০২)। History of medieval India: from 1000 A.D. to 1707 A.D.। Atlantic। পৃষ্ঠা ২৮। আইএসবিএন 81-269-0123-3।
- ↑ ক খ KingListsFarEast Bengal
- ↑ এ.বি.এম শামসুদ্দীন আহমদ (২০১২)। "ইওজ খলজী"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।
পূর্বসূরী মুহাম্মদ শিরান খিলজি |
বাংলার খলজী রাজবংশ ১২০৮-১২১০ (প্রথম দফা) ১২১২-১২২৭ (দ্বিতীয় দফা) |
উত্তরসূরী প্রথমবার আলি মর্দান খিলজি দ্বিতীয়বার নাসিরউদ্দিন মাহমুদ, মামলুক সালতানাতের অধীন |