বিষয়বস্তুতে চলুন

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড

স্থানাঙ্ক: ২৭°২০′১৩″ উত্তর ৭৯°০৩′৫০″ পূর্ব / ২৭.৩৩৭° উত্তর ৭৯.০৬৪° পূর্ব / 27.337; 79.064
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড
পথের তথ্য
দৈর্ঘ্য২,৫০০ কিলোমিটার (১,৬০০ মাইল)
অস্তিত্বকালমৌর্য–বর্তমান
প্রধান সংযোগস্থল
পূর্ব প্রান্ত:সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ
পশ্চিম প্রান্ত:কাবুল

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা 'জি টি রোড' এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন ও দীর্ঘতম সড়ক পথ। ইউনেস্কোর তথ্য অনুসারে অন্তত ২৫০০ বছর ধরে[][] এটি মধ্য এশিয়াকে ভারতীয় উপমহাদেশের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি বাংলাদেশের মায়ানমার সীমান্তে টেকনাফ হতে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ঢাকা, কলকাতা, কানপুর, দিল্লি, ভারতের অমৃতসর হয়ে পশ্চিমে পাকিস্তানের লাহোর, গুজরাট, রাওয়ালপিন্ডি এবং পেশোয়ার কাবুল, আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত।[] এর প্রাক্তন নামের মধ্যে ছিল উত্তরপথ, শাহ রাহে আজ়ম, সড়কে আজ়ম, বাদশাহি সড়ক

গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে বিস্তৃত রুট মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় থেকে ছিল। মহাসড়কটি খ্রিস্টপূর্ব ৩ য় শতাব্দীতে উত্তরপথ নামে একটি প্রাচীন পথ ধরে তৈরি করা হয়েছিল,[] এটি গঙ্গার মুখ থেকে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। অশোকের অধীনে এই রাস্তার আরও উন্নতি করা হয়েছিল।

শের শাহ শুরি পুরানো রুটে সোনারগাঁও এবং রোহতাস পুনরায় যোগ করেছিলেন।[] রাস্তার আফগান প্রান্তটি মাহমুদ শাহ দুররানির অধীনে পুনর্নির্মিত হয়। ১৮৩৩ থেকে ১৮৬০ সালের মধ্যে ব্রিটিশরা এর আরো সংস্কারসাধন করে।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

আদিকাল

[সম্পাদনা]

বৌদ্ধ সাহিত্য এবং মহাভারতের মতো ভারতীয় মহাকাব্যগুলি মৌর্য সাম্রাজ্যের আগেও গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের অস্তিত্ব স্বীকার করে এবং তখন একে উত্তরপথ বলা হত। রাস্তাটি ভারতের পূর্বাঞ্চলকে মধ্য এশিয়ার সাথে সংযুক্ত করত[]

মৌর্য সাম্রাজ্য

[সম্পাদনা]

সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত আধুনিক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডের অগ্রদূত এবং এটি পারস্যের রয়্যাল রোড দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল। [] খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দীতে মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়, ভারত এবং পশ্চিম এশিয়া এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ওভারল্যান্ড বাণিজ্য উত্তর-পশ্চিমের শহরগুলির মধ্য দিয়েই চলত। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য, তক্ষশীলা থেকে পাটলিপুত্র (বর্তমান ভারতের পাটনা) পর্যন্ত রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণে কর্মকর্তাদের একটি সম্পূর্ণ বাহিনী তৈরি করে ছিলেন। আটটি ধাপে নির্মিত রাস্তাটি পুরুষপুরা, তক্ষশীলা, হস্তিনাপুরা, কান্যকুব্জা, প্রয়াগ, পাটলিপুত্র এবং তাম্রলিপ্ত শহরগুলি সংযোগ করত।[]

পাণিনি উল্লেখ করেন চন্দ্রগুপ্তের পথটি প্রাচীন "উত্তরাপথ" বা উত্তর পথের উপর দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। সম্রাট অশোক, রুট বরাবর গাছ লাগানো, কূপ নির্মাণ এবং ভ্রমণকারীদের জন্য নিমিষধ্যায়" নামক বিশ্রাম-গৃহ তৈরি করেন। সম্রাট কনিষ্ক উত্তরপথ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলেও জানা যায়।[][১০][১১]

সুরি ও মুঘল সাম্রাজ্য

[সম্পাদনা]

সুর ​​সাম্রাজ্যের মধ্যযুগীয় শাসক শের শাহ সুরি ১৬ শতকে চন্দ্রগুপ্তের রয়্যাল রোড মেরামত করছিলেন। সোনারগাঁও এবং রোহতাসের পুরানো রুটটি আবার নতুন করে তৈরি করা হয় এবং একটি সরাই তৈরি করা হয়। জাহাঙ্গীর তার শাসনামলে ফরমান জারি করেন যে সমস্ত সরাই পোড়া ইট ও পাথর দিয়ে তৈরি করা হবে। লাহোর এবং আগ্রার মধ্যবর্তী এলাকায় গাছ লাগানো হয় এবং সেতু নির্মাণ করা হয়।[] রুটটিকে সুরি দ্বারা "সদক-ই-আজম" এবং মুঘলদের দ্বারা "বাদশাহী সড়ক" হিসাবে উল্লেখ করা হত।[১২][১৩]

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

[সম্পাদনা]

১৮৩০-এর দশকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক উদ্দেশ্যে ধাতব রাস্তা নির্মাণের একটি কার্যক্রম শুরু করে। কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে আফগানিস্তানের কাবুল পর্যন্ত রাস্তাটি পুনর্নির্মিত হয়েছিল[১৪]

শহরের দূরত্ব

[সম্পাদনা]

দূরত্ব গণনা গুগল ম্যাপ অনুসারে করা ।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Caravanserais along the Grand Trunk Road in Pakistan"। ৩ জুন ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  2. REDISCOVERING THE GRAND TRUNK ROAD https://www.dawn.com/news/1757790.html
  3. "মোগল আমলের গ্রান্ড ট্রাঙ্ক রোড"। ২১ জুন ২০১৬। ১৭ মে ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  4. 1 2 Vadime Elisseeff, p. 159-162, The Silk Roads: Highways of Culture and Commerce https://books.google.com.bd/books?id=zRPbecWnkoIC&dq=sher+shah+suri+maurya+rohtas&pg=PA161&redir_esc=y#v=onepage&q=sher%20shah%20suri%20maurya%20rohtas&f=false
  5. মোঃ মুক্তাদির আরিফ মোজাম্মেল (২০১২)। "গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর (সম্পাদকগণ)। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন ৯৮৪৩২০৫৯০১ওসিএলসি 883871743ওএল 30677644M
  6. Sanjeev, Sanyal (১৫ নভেম্বর ২০১২)। Land of the Seven Rivers: A Brief History of India's Geography (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Random House India Private Limited। পৃ. ৭২–৭৩, ১০৩। আইএসবিএন ৯৭৮৮১৮৪৭৫৬৭১৫
  7. Benjamin Walker, p. 69, Hindu World: An Encyclopedic Survey of Hinduism. In Two Volumes. Volume II M-Z
  8. Sanjeev, Sanyal (১৫ নভেম্বর ২০১২)। Land of the Seven Rivers: A Brief History of India's Geography (ইংরেজি ভাষায়)। Penguin Random House India Private Limited। পৃ. ৭২–৭৩, ১০৩। আইএসবিএন ৯৭৮৮১৮৪৭৫৬৭১৫
  9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Vadime নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  10. "Grand Trunk Road since Pre Mahabharata Times; Here are Evidences"। ২০ এপ্রিল ২০২০। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  11. "Grand Trunk Road: Uttarapatha, The Silk Route of India"। ২৬ আগস্ট ২০২১। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২
  12. Anu Kapur, p. 84, Mapping Place Names of India
  13. Romila Thapar (২০০২)। Early India: From the Origins to AD 1300। University of California Press। পৃ. ২৬৩। আইএসবিএন ০-৫২০-২৩৮৯৯-০The Mauryas had built a Royal Highway from Taxila to Pataliputra, a road that was almost continuously rebuilt in some approximation to the original during the period of Sher Shah, the Mughals and the British. The British referred to it as the Grand Trunk Road.
  14. A description of the road by Kipling, found both in his letters and in the novel Kim ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে.

আরো পড়ুন

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]