বিষয়বস্তুতে চলুন

গদাধর পণ্ডিত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

গদাধর পণ্ডিত ছিলেন চৈতন্য মহাপ্রভুর একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী। তাঁরা শৈশবকাল তথা সন্ন্যাসী জীবনের এক দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন। গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম মতে তিনি পঞ্চতত্ত্বের একজন অন্যতম সদস্য। তাঁকে রাধারানী, ললিতা (গোপী) বা এঁদের মিলিত অবতার হিসাবে মনে করা হয়।[] শ্রীগদাধর পণ্ডিতের শৈশবকালের কিছু তথ্য নিচে দেওয়া হলো:

  • শৈশবের বৈশিষ্ট্য:
    • শ্রীগদাধর পণ্ডিত শৈশবকাল থেকে ধীর, শান্ত, নির্জনতা প্রিয় ও বৈরাগ্যবান ছিলেন।
    • শৈশবে গৌরসুন্দর খুব চঞ্চলভাব প্রকট করে যাকে তাকে ন্যায়ের ফাঁকি জিজ্ঞাসা করতেন।
  • চৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে সম্পর্ক:
    • শিশু লীলার সময় গৌরহরি গদাধরকে সঙ্গে নিয়ে কখনো নিজ অঙ্গনে কখনো গদাধরের গৃহে বিবিধ লীলা খেলা করতেন।
    • গ্রামের পাঠশালায় উভয়ে একসাথে অধ্যয়ন করতেন।
    • গদাধর বয়সে মহাপ্রভুর কয়েক বছরের ছোট ছিলেন।

আসলে কৃষ্ণলীলাতে যিনি রাধিকা, গৌরলীলাতে তিনিই গদাধর পণ্ডিত। তাঁর সম্পর্কে শ্রীশ্রীচৈতন্যচরিতামৃত-এর আদি খণ্ডের প্রথম পরিচ্ছেদে বলা হয়েছে :"গদাধর পণ্ডিতাদি - প্রভুর নিজশক্তি। তা সবার চরণে মোর সহস্র প্রণতি।।" নবদ্বীপে তাঁর বাসস্থান থাকলেও শ্রীশ্রীগৌরাঙ্গের সঙ্গে কীর্তন বিলাস করে তিনি নীলাচলে যান। নীলাচলে ক্ষেত্র সন্ন্যাস করে টোটায় বা উপবন অভ্যন্তরে তিনি বাস করতেন। শ্রীমন্মহাপ্রভুই যমেশ্বর টোটায় তাঁর বাসস্থান নির্ণয় করে দেন। যমেশ্বর টোটায় ইনি শ্রীগোপিনাথের সেবা স্থাপন করেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু প্রায় প্রতিদিনই গদাধর পণ্ডিতের কাছে গিয়ে শ্রীমদ্ভাগবত পাঠ শ্রবণ করতেন। ইনি ছিলেন আকুমার ব্রহ্মচারী। শ্রীল ঈশ্বর পুরীপাদ তাঁকে নিজ রচিত 'কৃষ্ণলীলামৃত' অধ্যয়ন করিয়েছিলেন।

শ্রীচন্দ্রশেখর আচার্যের গৃহে যখন শ্রীমন্মহাপ্রভু ব্রজ লীলা অভিনয় করেছিলেন সেই সময় দ্বিতীয় প্রহরে শ্রীগদাধর রমা বেশে প্রবেশ করেছিলেন। শ্রীমন্মহাপ্রভু শ্রীগদাধর সম্পর্কে তখন বলেছিলেন: "গদাধর মোর বৈকুণ্ঠের পরিবার।" শ্রীমন্মহাপ্রভুর অন্তর্দ্ধানের পর শ্রীগৌরাঙ্গের বিরহে শ্রীগদাধর পণ্ডিতের যে অবস্থা হয়েছিল - তার বিবরণ আছে শ্রীনরহরি চক্রবর্ত্তী ঠাকুরের ভক্তিরত্নাকর গ্রন্থে। সেখানে বলা হয়েছে - শ্রীনিবাস আচার্যকে কেবল মাত্র দর্শন দেবার জন্যই তিনি প্রাণ ধারণ করেছিলেন:

“শ্রীগৌরসুন্দর বলি মুদয়ে নয়ন ৷

ছাড়য়ে নিঃশ্বাস দীর্ঘ অনল সমান ৷।

গৌরাঙ্গ বিচ্ছেদে শ্রীপণ্ডিত-গদাধর।

যেরূপ হইল তাহা প্রভু-অগোচর।।

শ্রীনিবাসে অনুগ্রহ করিবার তরে ।

আছয়ে জীবন মাত্র নিশ্চল শরীরে।।

(— ভক্তিরত্নাকর ৩। ১৪২-১৪৪)

পণ্ডিত গদাধরের ভ্রাতুষ্পুত্র নয়নানন্দ গদাধর পণ্ডিতের তিরোধানকালে নীলাচলে উপস্থিত ছিলেন। সেই বিবরণে আছে:

“পণ্ডিত গোঁসাইপ্রভুর অপ্রকট সময়। / নয়নানন্দের ডাকি এই কথা কয় ৷৷ মোর গলদেশে থাকিত এই কৃষ্ণমূর্তি।/ সেবন করিহ সদা করি অতি প্রীতি ॥ তোমায় অর্পিলা এই গোপীনাথের সেবা।/ ভক্তিভরে সেবিবে না পূজিবে অন্য দেবীদেবা৷। স্বহস্তে লিখিত এই গীতা তোমায় দিলা। / মহাপ্রভু একশ্লোক ইহাতে লিখিলা ॥ ভক্তিভাবে ইহা তুমি করিবে পূজন। / এতকহি পণ্ডিত গোঁসাই হৈলা অদৰ্শন ॥"[]

- আজও নয়নানন্দের শ্রীপাট ভরতপুরে শ্রীশ্রী রাধা গোপীনাথ, গীতা গ্রন্থ এবং পণ্ডিত গদাধরের গলদেশে অবস্থিত শ্রীকৃষ্ণমূর্তি - "ময়ো কৃষ্ণ" নিত্য বিরাজিত, নিত্য পূজিত।


শ্রীল পণ্ডিত গদাধর গোস্বামী
জন্মআনুমানিক ১৪৮৭ খ্রিষ্টাব্দ, বৈশাখী অমাবস্যা তিথি,
বেলেটি গ্রাম, চট্টগ্রাম জেলা (অধুনা বাংলাদেশ) মতান্তরে, শ্রীধাম নবদ্বীপ, নদীয়া জেলা, (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ)
অন্তর্ধানটোটা গোপীনাথ মন্দির, পুরী
সঙ্গীশ্রী অদ্বৈত আচার্য , শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু , শ্রী নিত্যানন্দ প্রভু , শ্রীবাস ঠাকুর ,মুকুন্দ দত্ত, হরিদাস ঠাকুর , রামানন্দ রায় এবং অন্যান্য
পিতা-মাতা
  • শ্রীমাধব মিশ্র (বৃষভানু) (পিতা)
  • রত্নাবতী দেবী ( বৃষভানু-পত্নী কীর্তিদা রাণী) (মাতা)
পরিবারজগন্নাথ ও বাণীনাথ , নয়নানন্দ গোস্বামী (ভ্রাতুষ্পুত্র)

শ্রীল পণ্ডিত গদাধর গোস্বামী :-

  • আবির্ভাব তিথি : আনুমানিক ১৪৮৭ সালে বৈশাখী অমাবস্যা তিথি
  • আবির্ভাব সময়কাল : গৌর লীলা
  • আবির্ভাব স্থান : বেলেটি গ্রাম, চট্টগ্রাম জেলা (অধুনা বাংলাদেশ) মতান্তরে, শ্রীধাম নবদ্বীপ, নদীয়া জেলা, (অধুনা পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)
  • পিতা  / মাতা : শ্রীমাধব মিশ্র (বৃষভানু ) , ও রত্নাবতী দেবী (বৃষভানু-পত্নী কীর্তিদা রাণী)
  • ভ্রাতা : জগন্নাথ ও বাণীনাথ , নয়নানন্দ গোস্বামী (ভ্রাতুষ্পুত্র)
  • পিতৃ শ্রীগুরুদেব : শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরী (শ্রীপাদ লক্ষ্ণীপিতির প্রধান শিষ্য)
  • শ্রীল মাধবেন্দ্রপুরীর শিষ্য : ঈশ্বর পুরী, অদ্বৈত আচার্য, শ্রীমন্নিত্যানন্দ প্রভু, শ্রীমাধব মিশ্র পরমানন্দ পুরী, ব্রহ্মানন্দ পুরী, রঙ্গপুরী, পুন্ডরীক বিদ্যানিধি ও রঘুপতি উপাধ্যায় প্রমুখ বিখ্যাত ছিলেন।
  • শ্রীগুরুদেব : শ্রীল পুন্ডরীক বিদ্যানিধি
  • শ্রীপাট : শ্রীপাট ভরতপুর (নয়নানন্দ শ্রীপাট , কান্দি - মুর্শিদাবাদ) , নবদ্বীপের হরিবোল কুটির (হরিদাস দাস বাবাজী শ্রীপাট) , টোটা গোপীনাথ মন্দির (জগন্নাথ পুরী) , শ্রী শ্রী গৌর গদাধর মন্দির (চম্পাহাটি - নিমতলা) , শ্রী শ্রী গৌর-গদাধর গৌড়ীয় মঠ (শ্রীধাম নাবদীপ) গৌর গদাধর জন্মস্থানের মন্দির - চট্টগ্রাম জেলার (আধুনিক বাংলাদেশ), গদাধর পণ্ডিতের দন্ত সমাধি- শ্রী ব্রজধাম । এছাড়াও শ্রীপাট ময়নাডাল গদাধর শাখা ।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Gadadhara Pandita"Wikipedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১৭ 
  2. সাহা, অমরেন্দ্রনাথ (ডিসেম্বর ১৯৯৬)। বৈষ্ণব- দর্পণ। পুস্তক বিপণি, ২৭ বেনিয়াটোলা লেন, কলকাতা ৯। পৃষ্ঠা ৫৫–৫৬।