খুররম জাহ্‌ মুরাদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খুররম জাহ মুরাদ
খুররম জাহ মুরাদ
জন্ম১৯৩২
ভূপাল, ভারত
মৃত্যু১৯৯৬
জাতীয়তাপাকিস্তান পাকিস্তানি
শিক্ষাNED University of Engineering and Technology University of Minnesota
Work
প্রকৌশল শৃঙ্খলাস্থাপত্য, পুরকৌশল
গুরুত্বপূর্ণ নকশাডিএনডি বাঁধ, ঢাকা, মসজিদুল হারামের এক্সটেনশন কাজ

খুররম জাহ্‌ মুরাদ (জন্ম:১৯৩২ মৃত্যু:১৯৯৬)[১] একজন পাকিস্তানি ইসলামী চিন্তাবিদ ও লেখক।[২][৩][৪] তিনি জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান নামক রাজনৈতিক দলের একজন নেতা হিসেবেও সমধিক পরিচিত। "ইসলামী জমিয়তে তলাবা" এর ২য় নাজিম-ই-আলা খুররম জাহ মুরাদ এশিয়ার একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী। একই সাথে তিনি ছিলেন দা’য়ী, সংগঠক, ছাত্রনেতা, হাদীস বিশারদ, ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং সেরা প্রকৌশলী।

জন্ম[সম্পাদনা]

খুররম জাহ মুরাদ ১৯৩২ সালে ভারতের ভূপালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর তার পরিবার করাচিতে চলে আসেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করেন।

শিক্ষা ও ক্যরিয়ার[সম্পাদনা]

পাকিস্তানে যখন তিনি দাওয়াতী কাজ শুরু করেন, তখন তিনি এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার ইসলামী আন্দোলনের সাথে জড়িয়ে পড়েন[৫]। খুররম জাহ মুরাদ করাচির NED University of Engineering and Technology থেকে পুরকৌশল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি একই বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন University of Minnesota থেকে। ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পাকিস্তানের বহু উন্নয়ন কাজ ও দৃষ্টিনন্দন স্থাপনার সাথে যুক্ত ছিলেন। আইয়ুব খানের আমলে ১৯৬৫ সালে মাতুয়াইল, মুসলিম নগর, যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, কদমতলী, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ, সিদ্ধিরগঞ্জ, ফতুল্লা থানাসহ ৫৭ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বন্যামুক্ত এলাকা গড়তে প্রতিষ্ঠা করা হয় ডিএনডি বাঁধ। এই প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন খুররম জাহ মুরাদ। ১৯৭৫ সালে সৌদি বাদশাহ পবিত্র কাবা ঘরের এক্সটেনশন কাজ শুরু করেন। এই কাজের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন খুররম জাহ মুরাদ। তিনি এর জন্য কোন পারিশ্রমিক গ্রহণ করেন নি। এই বদান্যতার পুরস্কার হিসেবে মসজিদুল হারামের আটটি দরজার মধ্যে একটি দরজা ইঞ্জিনিয়ার মুরাদের নামে নামকরন করা হয়েছে। দরজাটির নাম 'বাবে মুরাদ'।[৬]

রাজনৈতিক জীবন

খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তানে তার দাওয়াতী কার্যক্রম শুরু করলেও গোটা এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকায় তিনি দাওয়াতের কাজ ও ইসলামী সংগঠন প্রতিষ্ঠার কাজ করেছেন।[৭] একজন শিক্ষক ও দা’য়ি হিসেবে তিনি বহু মানুষে প্রেরণার প্রতীক হয়ে আছেন। পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর প্রশিক্ষণ বিভাগের প্রধান হিসেবে পাকিস্তান, যুক্তরাজ্য ও আফ্রিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণমূলক কার্যক্রম চালিয়ে তিনি ইসলামী আন্দোলনের যুবকদের চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৫১-১৯৫২ সেশনে খুররম জাহ মুরাদ ইসলামী জমিয়তে তলাবা (যা পরবর্তিতে ইসলামী ছাত্রসংঘ হিসেবে পরিচিতি পায়)-এর নাজিম-ই-আ’লার দায়িত্ব পালন করেন। ইসলামী জমিয়তে তলাবা বা ইসলামী ছাত্রসংঘের সংবিধান প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সংবিধানের খসড়া তারই তৈরী করা। তিনি জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয়ার পর পূর্ব-পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা মহানগরীর আমীরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন, UK এর ডিরেক্টর জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাওলানা মওদুদী রঃ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এবং লাহোর থেকে প্রকাশিত ‘তরজুমানুল কুরআনের’ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। সর্বশেষ খুররম জাহ মুরাদ পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীরের দায়িত্ব পালন করেন।[৮][৯]

★পবিত্র কাবা ঘরের দরজাঃ[সম্পাদনা]

১৯৭৫ সালে সৌদি বাদশাহ পবিত্র কাবা ঘরের এক্সটেনশন কাজ শুরু করেন। এসময় ডাক পড়ে বিখ্যাত প্রকৌশলী ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব ইঞ্জিনিয়ার খুররম জাহ মুরাদের।

সৌদি বাদশাহ পারিশ্রমিক হিসেবে মুরাদ যা চাইবেন তাই দিতে চাইলেন। এক্সটেনশন কাজের ডিজাইন জমা দিয়ে মুরাদ বললেন-

"আপনি আমাকে দিতে চেয়েছেন এটা আপনার বদান্যতা। আমি এর পুরস্কার পরকালে আল্লাহর কাছ থেকে নিতে চাই এটা আমার বদন্যতা"

পবিত্র কাবা ঘরে ঢোকার আটটি দরজা আছে। এর মধ্যে একটি দরজা ইঞ্জিনিয়ার মুরাদের নামে নামকরন করা হয়েছে। দরজাটির নাম 'বাবে মুরাদ'...

রচনাসমূহ[সম্পাদনা]

  • কুরআন অধ্যয়ন সহায়িকা(এই বইটি ভারত বাংলাদেশ উভয় জায়গাতেই অনুবাদ হয়েছে।)
  • ইসলামী আন্দোলনঃ কর্মীদের পারষ্পরিক সম্পর্ক
  • ইসলাম-দ্যা ইজি ওয়ে
  • হু ইজ মুহাম্মাদ
  • গিফট ফ্রম মুহাম্মদ
  • শরীয়াহ-দ্যা ওয়ে টু জাস্টিস
  • ইসলাম এন্ড টেরোরিজম
  • ঈমানদারী
  • সুবহে সাদিক
  • নিয়ত এবং আমল[১০]
  • Muslim Youth in the West.[১১]
  • ইসলামের পুনরুজ্জীবন ও শিক্ষক সমাজ
  • লামহাত, বাংলায় অনুবাদ করছেন মুহা মইদুল ইসলাম
  • কুরাআনের রাস্তা
  • কুরআন ইকামাতে দ্বীন ও মাওলানা মওদূদী রহঃ

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯৯৬ সালে এ মহান মনীষী দুনিয়ার সফর শেষ করে আলমে আখিরাতে পাড়ি জমান। মূত্যুর সময় তিনি Glenfield হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তারিখ ছিল ১৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ৯ শাবান ১৪১৭ হিজরী। মরহুম খুররম মুরাদ চার পুত্র আহম্মদ ইমরান মুরাদ, হাসান সোহেব মুরাদ, ফারুক সালমান মুরাদ, ওয়ায়েস তাইয়েব মুরাদ এবং দুই কন্যা ফারাহ তাসনীম ও ফায়েজা’কে রেখে যান।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "লেখক:খুররম জাহ মুরাদ"। আমার বই.কম। 
  2. Nasr, Seyyed Vali Reza (১৯৯৬-০১-০৪)। Mawdudi and the Making of Islamic Revivalism (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press। আইএসবিএন 978-0-19-535711-0 
  3. Khurram Murad Way To The Quran (English ভাষায়)। 
  4. KHURRAM J. MURAD: AN OVERVIEW OF HIS POLITICAL AND SCHOLARLY CONTRIBUTIONS (English ভাষায়)। 
  5. Poston, Larry. (১৯৯২)। Islamic daʻwah in the West : Muslim missionary activity and the dynamics of conversion to Islam। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন 0-19-507227-8ওসিএলসি 133165051 
  6. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মে ২০১৭ 
  7. "Da'wa in the West"web.archive.org। ২০০৮-০৩-২৩। Archived from the original on ২০০৮-০৩-২৩। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  8. "Khurram Murad"www.soundvision.com। ২০১৬-০৮-১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  9. Editor, Online (২০১২-১১-২৯)। "Khurram Jah Murad: one of the most influential leaders of Islamic movement in the world"Youth Wave (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  10. "Khurram Murad"www.goodreads.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৩-১৬ 
  11. Murad, Khurram. (১৯৮৬)। Muslim youth in the West : towards a new education strategy। Islamic Foundation (Nairobi, Kenya)। Leicester: Islamic Foundation। আইএসবিএন 0-86037-174-3ওসিএলসি 13861256 

নোট[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]