খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১২৫৯ হিজরি, ১৮৪৩ সাল
মৃত্যুজ্বিলহজ্ব ১৩৪২ হিজরি
৫ জুলাই ১৯২৪ সাল
ধর্মইসলাম
পিতামাতা
  • ফকির মোহাম্মদ খিজরি (পিতা)
যুগআধুনিক যুগ
অঞ্চলদক্ষিণ এশিয়া
আখ্যাসুন্নি
ব্যবহারশাস্ত্রহানাফি
উল্লেখযোগ্য কাজমাজমু'আহ সালাওয়াতির রাসুল (দ.) (আরবি ভাষায় দরূদ শরীফের সংকলন)
তরিকাকাদেরী
মুসলিম নেতা

খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (উর্দু:خواجہ عبدالرحمان چھوہروی) পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের প্রদেশের হরিপুর জেলায় ১২৫৯ হিজরি ১৮৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন আধ্যাত্মিক সুফি সাধক ও কাদেরিয়া সুফি তরিকার শায়খ।[১][২]

নাম ও বংশ পরিচয়[সম্পাদনা]

খাজা আবদুর রহমান চৌহরভীর আসল নাম খাজা আবদুর রহমান। তার পিতার নাম ফকির মোহাম্মদ খিজরী। তিনি মাযহাবগত হানাফি আর তরিকতগত কাদেরী ছিলেন। মাত্র ৮ বছর বয়সে তাঁর পিতা খাজা ফকির মোহাম্মদ খিজরিকে হারান।[৩]

জন্ম[সম্পাদনা]

তিনি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের হরিপুরের চৌহর শরীফে ১২৫৯ হিজরি মোতাবেক ১৮৪৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হযরত খিজরি তার সময়ের অন্যতম আউলিয়া ছিলেন। যখন তার বয়স ৮ বছর তখন তার পিতা তাকে বলেছিলেন এক কোষে দুটি তলোয়ার একসাথে থাকতে পারেনা তার মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৪]

উম্মী উপাধি[সম্পাদনা]

তিনি উম্মী ছিলেন। তিনি কখনও কোন মাদ্রাসায় যাননি এবং কখনও কারো ছাত্রত্ব নেননি কেবল তিনি শিক্ষকের কাছ থেকে কুরআনের পাঠ নিয়েছেন, বাকী প্রচলিত পাঠ হাদিসের জ্ঞান, উসুলে ফিক্বহ, মানতিক এবং কারো কাছ থেকে লেখা শিখেননি। তিনি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ না করলেও তিনি ইলমে লাদুনিতে (আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান) সমৃদ্ধ ছিলেন।

বায়াত (আনুগত্য) ও একনিষ্ঠতা[সম্পাদনা]

বায়াত (আনুগত্য) হওয়ার জন্য তিনি কয়েকজন সঙ্গীর সাথে আখুন সাহেবের সাক্ষাতের জন্য সাইদু শরীফ যান, আখুন সাহেব ছিলেন তার সময়কালের কাদেরিয়া তরিকার অন্যতম দরবেশ। সেখানে লোকজনের ভিড় ছিল। সঙ্গীদের সাথে পরামর্শ করে ঠিক করেন পরের দিন সকালে চলে যাবেন, আখুন সাহেব সকালে তার খাদেমকে (সেবক) বাইরে পাঠান এবং হাজারা থেকে আগত এক ব্যক্তিকে ডেকে আনতে বললেন। তারা তাকে ভেতরে নিয়ে গেলেন এবং আখুন সাহেব তার কাছে জানতে চান তিনি স্বপ্নে কিছু দেখেছেন কিনা। তিনি প্রতুত্তরে বলেন চিল্লা (সাধনা) স্থান দেখতে পান। তিনি তাকে আপন চিল্লা (সাধনা) স্থানে সাধনা চালিয়ে যেতে বললেন এবং তার আপন মুর্শিদ (পীর) ঐখানে এসে তাকে বায়াত (আনুগত্যের অঙ্গীকার) করাবেন। কিছুদিন পর কাশ্মীর থেকে আগত প্রখ্যাত সুফি সাধক হযরত এয়াকুব শাহ্ গিনছাতরী চৌহর শরিফে আসেন এবং বায়াত (আনুগত্যের অঙ্গীকার) করান।[৩]

কাদেরিয়া তরিকার প্রচার[সম্পাদনা]

তিনি প্রচেষ্টার সাথে কাদেরিয়া সিলসিলার প্রচার করেছিলেন। কেবল হাজারায় নয়, তার মুরিদ (অনুসারী) কাশ্মীর, উত্তর পশ্চিমবঙ্গ, আফগানিস্তান, আরব, ভারত, বার্মা এবং বিশেষত বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি যেমনি সিলসিলার প্রচারের চেষ্টা করেছিলেন তেমনি তিনি ইসলামি জ্ঞান প্রচারেরও চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ১৯০২ সালে তাঁর গ্রাম থেকে এক মাইল দূরে হাজারার বিখ্যাত শহর হরিপুরে একটি দারুল উলূম প্রতিষ্ঠা করেন। এটি "দারুল উলুম ইসলামিয়া রহমানিয়া হরিপুর" নামে পরিচিত, এর ব্যয় এবং নির্মাণ ব্যয় বার্মা ও বাংলাদেশের শিষ্যরা বহন করেছিলেন। এই দারুল উলূমে দরসে নিজামী এবং হাদিসের পাঠদান করা হয়। দারুল আফতাও রয়েছে। এই দারুল উলূমের পাশাপাশি একটি প্রাথমিক মাদ্রাসাও রয়েছে যেখানে ছোট শিশুদের ধর্মীয় ও পবিত্র কোরআনের শিক্ষা দেওয়া হয়। তার ইচ্ছানুসারে এই দারুল উলূমের অগ্রগতি হয়েছে।

সন্তান[সম্পাদনা]

তার তিন ছেলে ছিল

  • (১) মাওলানা মৌলভী ফজলুর রেহমান সাহেব "চান পীর" নামে পরিচিত।
  • (২) সাহেবজাদা হাজী মুহাম্মদ ফজল সুবহান সাহেব
  • (৩) সাহেবজাদা মাহমুদ-উর-রেহমান সাহেব

বই সমূহ[সম্পাদনা]

  • মাজমু'আহ-এ সালাওয়াতির রাসুল (দঃ), যা উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।
  • শরাহ ইবনে মাজাহ শরীফ (অপ্রকাশিত)
  • শরাহ তিরমিযী শরীফ (অপ্রকাশিত)
  • আতা-উর-রেহমান ফাহ ইসলাম আবা সায়্যিদ আল-আনাম (অপ্রকাশিত)
  • ইনাম-উর-রেহমান ফি তছরীহাতুল কুরআন, (অপ্রকাশিত)
  • লুগাতুল হরফ (অপ্রকাশিত)
  • শরাহ আসমা হাসানা (অপ্রকাশিত)
  • সিয়াফ শরাহ চাহাল কাফ (পাঞ্জাবিতে প্রকাশিত)
  • দরূদ শরীফ (পাঞ্জাবিতে প্রকাশিত) 

ইন্তেকাল[সম্পাদনা]

খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী ১৩৪২ হিজরীর ১লা জিলহজ্ব মোতাবেক ১৯২৪ সালের ৫ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। তার মাজার চৌহর শরীফে অবস্থিত। [৪]

নিখুঁত রচনা[সম্পাদনা]

তার খ্যাতির কারণ তার দুর্দান্ত রচনা যা আরবি ভাষায় সেরা একটি গ্রন্থ, গ্রন্থটি হল মুহায়্যিরুল উকূল ফী বায়ানি আওসাফি আকলিল উকূল আল মুসাম্মা বিমাজমুআতি সালাওয়াতির রাসূল (দ.)। তিনি উম্মী (পড়াহীন) ছিলেন, আলেমগণ স্বীকার করেছেন তিনি ইলমে লাদুনি (আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান) এর অধিকারী ছিলেন। এটা অনেক বছর পূর্বে লেখা হলেও জীবদ্দশায় তিনি এটা লুকিয়ে রাখেন। মৃত্যুবরণের কয়েক বছর পূর্বে রেঙ্গুন (ইয়াংগুন) প্রবাসী তার প্রধান খলিফা হযরত মাওলানা সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটির নিকট জানালেন এ গ্রন্থের কথা। এটা বোখারী শরীফের মতো ত্রিশপারা সংবলিত, পারাগুলো কুরআন শরীফের পারা হতে একটু বড়। এ বিশাল দরূদ শরীফ লেখা সম্পন্ন করতে সময় লেগেছিল ১২ বছর ৮ মাস ২০ দিন। তার নির্দেশে প্রধান খলিফা হাফেজ সৈয়দ আহমদ শাহ সাহেব সিরিকোটির উদ্যোগে ১৯৩৩ সালে শেঠ আহমদের অর্থায়নে রেঙ্গুন থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালে হাফেজ সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটির উদ্যোগে মাওলানা আমীর শাহের তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম থেকে দ্বিতীয়বার প্রকাশিত হয়। হাফেজ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহের নির্দেশনায় ১৯৮২ সালে তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। ১৯৯৫ সালে সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ ও সৈয়দ মুহাম্মদ সাবির শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের চৌহর শরীফ থেকে অফসেট কাগজে অনুবাদসহ এর নবতর সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি উর্দু ও বাংলা ভাষায় অনূদিত হয়েছে।[৫] বাংলায় অনূদিত করছে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট বাংলাদেশ। এই গ্রন্থটির জ্ঞানের উৎস হল কুরআন ও হাদিস। এই গ্রন্থটিতে বহু দরুদ সালামের পাশাপাশি বিসমিল্লাহ'র ফজিলত ও যিকর করার ফজিলত রয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (দ.)'র বরকতময় হাদিসও রয়েছে। এখানে দোয়ার পদ্ধতির সাথে সাথে বহু দোয়াও রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. সিরাজুল হক। "বেলায়তের নক্ষত্র খাজা আব্দুর রহমান চৌহরভী"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. "Hazrat Khwaja Muhammad Abdul Rehman"www.ziaetaiba.com। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুলাই ২০২০ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  3. অধ্যাপক কাজী শামসুর রহমান। "হযরত খাজা আবদুর রহমান চৌহরভী (রহ.)"। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০২০ 
  4. মাজুমু'আহ-এ সালাওয়াতে রাসুল (দ.)। আনজুমান-এ-রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট। 
  5. শাজরা শরীফ। আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট।