খয়রাপাখ মাছরাঙা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

খয়রাপাখ মাছরাঙা
Pelargopsis amauroptera
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণী জগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: Coraciiformes
পরিবার: Alcedinidae
গণ: Pelargopsis
প্রজাতি: P. amauroptera
দ্বিপদী নাম
Pelargopsis amauroptera
(Pearson, 1841)
প্রতিশব্দ

Pelargopsis amauropterus (Pearson, 1841) [orth. error]

খয়রাপাখ মাছরাঙা (বৈজ্ঞানিক নাম: Pelargopsis amauroptera) (ইংরেজি: Pale-capped Pigeon), বাদামি মাছরাঙা বা কমলা মাছরাঙা এক প্রজাতির লাল ঠোঁট ও বাদামি ডানা বিশিষ্ট মাছশিকারি পাখি।[২][৩] প্রজাতিটি Alcedinidae (অ্যালসেডিনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Pelargopsis (পেলার্গোপসিস) গণের এক প্রজাতির বৃহদাকায় মাছরাঙা।[৪][৫] খয়রাপাখ মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ কালোডানা সিন্ধুসারস (গ্রিক: pelagros = সারস, oposis = চেহারা, amauros = কালচে, pteros = ডানাওয়ালা)।[৪] সারা পৃথিবীতে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এদের আবাস।[৬] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে যাচ্ছে। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে প্রায়-বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[১] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[৪] পৃথিবীতে এদের মোট সংখ্যা সম্বন্ধে তেমন একটা জানা যায়নি, তবে সংখ্যায় এরা বিরল।

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

খয়রাপাখ মাছরাঙার মূল আবাস দক্ষিণদক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ায় এদের মূল আবাস। ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন ও তার আশেপাশের অঞ্চলে এদের বেশি দেখা যায়। মায়ানমারের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও তেনাসেরিম, থাইল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল, মালয় উপদ্বীপের সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চল ও তৎসংলগ্ন ছোট দ্বীপে এরা বিচরণ করে।[১]

স্বভাব[সম্পাদনা]

খয়রাপাখ মাছরাঙার চিত্র।

খয়রাপাখ মাছরাঙা জোয়ার-ভাটায় সিক্ত নালা ও প্যারাবনের প্রবহমান নদীতে ও খালে বিচরণ করে। একা বা জোড়ায় ঘুরে বেড়ায়। উঁচু ডাল থেকে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে শিকার ধরে খায়। ওড়ার সময় এই পাখি পানির অল্প ওপর দিয়ে চলে কিন্তু বসার সময় গাছের উঁচু ডাল বেছে নেয়। ওড়ার সময় শব্দ করে ডাকে। বাধ্য হয়ে উড়তে হলে এরা খুব জোরে শব্দ করে ডাকে: কা-কা-কা-কা....। অন্য সময় করুণ সুরে শিস দিয়ে ডাকে: চৌ-চৌ-চৌ....।[২][৪]

বিবরণ[সম্পাদনা]

খয়রাপাখ মাছরাঙার দৈর্ঘ্য কমবেশি ৩৬ সেন্টিমিটার, ডানা ১৫ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ৭.৬ সেন্টিমিটার, পা ২ সেন্টিমিটার ও লেজ ৯.২ সেন্টিমিটার।[৪] প্রাপ্তবয়স্ক খয়রাপাখ মাছরাঙা মাথা ও ঘাড় বাদামি-কমলা; কাঁধ-ঢাকনি ও ডানা কালচে-বাদামি; পিঠ ও কোমর নীল। প্রান্ত-পালক ডানার বাকি অংশের চেয়ে গাঢ় বাদামি; গলা, বুক, পেট বাদামি-কমলা। ঠোঁট লাল; ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখ পর্যন্ত গাঢ় বাদামি টান চলে গেছে। ঠাঁটের আগা ঘন কালচে-বাদামি। এর চোখ বাদামি ও চোখের পাতা ইট-লাল। পা ও পায়ের পাতা লাল। ছেলে ও মেয়েপাখি দেখতে অভিন্ন।[২] অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির দেহ কমলা এবং কাঁধ-ঢাকনির কিনারা ও ডানার পালক ঢাকনি ফিকে রঙের। এছাড়া ঘাড়ে কালো ডোরা থাকে ও দেহতল কালো বর্ণের হয়।[৪]

খাদ্য[সম্পাদনা]

খয়রাপাখ মাছরাঙার খাদ্যের তালিকায় রয়েছে কাঁকড়া, সরীসৃপ ও মাছ।[২]

প্রজনন[সম্পাদনা]

খয়রাপাখ মাছরাঙা মার্চ-এপ্রিল মাসে খাল বা নদীর খাড়া পাড়ে ৩০-৬০ সে.মি. দীর্ঘ ও ১০ সেমি চওড়া সুড়ঙ্গ কেটে বাসা বানায়।[৪] ডিম সাধারনত সাদা রঙের ও গোল আকৃতির হয়ে থাকে। সংখ্যায় চারটির মত।[২] ডিমের মাপ ৩.৪ × ২.৮ সেমি।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Pelargopsis amauroptera"। Home Page The IUCN Red List of Threatened Species। ২০১৩-০৯-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-১০  line feed character in |প্রকাশক= at position 10 (সাহায্য)
  2. খয়রাপাখ মাছরাঙা[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], সৌরভ মাহমুদ, দৈনিক প্রথম আলো। ঢাকা থেকে প্রকাশের তারিখ: ১৭-০৬-২০১৩ খ্রিস্টাব্দ।
  3. রেজা খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: বাংলা একাডেমী। পৃষ্ঠা ১৩২। আইএসবিএন 9840746901 
  4. জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.) (২০০৯)। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ৭৩। আইএসবিএন 9843000002860 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  5. শরীফ খান (২০০৮)। বাংলাদেশের পাখি। ঢাকা: দিব্য প্রকাশ। পৃষ্ঠা ১৯৩। আইএসবিএন 9844833310 
  6. "Brown-winged Kingfisher Pelargopsis amauropterus"। BirdLife International। ২০১৬-০৩-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-১২