কৌলীন্য প্রথা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সংস্কৃত শব্দ কুলিন থেকে কৌলিন্য শব্দের উৎপত্তি।।কৌলিন্য হল "হিন্দু কুল ও বর্ণ সমীকরণ আইন" যা বল্লাল সেন দ্বারা ১১৫৮-৬৯ সনে সেন সাম্রাজ্যে প্রবর্তিত হয়।সেন শাসন পরবর্তী সময়ে এটি "প্রথা" হিসেবে রূপলাভ করে। [১] কুলীন অর্থ হলো উত্তম পরিবার বা সম্ভ্রান্ত বংশজাত। সম্মানলাভার্থে প্রজারা সৎপথে চলবে, এই উদ্দেশ্যে বাংলার সেন বংশের রাজা বল্লালসেন কৌলিন্য প্রথা সৃষ্টি করেছিলেন। বাচস্পতি মিশ্রের মতে, কুলীন চিহ্নিত হয় আচার (শুদ্ধতা), বিদ্যা (জ্ঞান), বিনয় (শৃঙ্খলাবোধ), প্রতিষ্ঠা (শুদ্ধতার খ্যাতি), তীর্থ-দর্শন (তীর্থযাত্রা), নিষ্ঠা (কর্তব্যনিষ্ঠা), তপস্যা (কঠোর ধ্যান), আবৃত্তি (সমবর্ণে বিবাহ) এবং দান (উদারহস্ত) দিয়ে। এরূপ যোগ্য পরিবারের সাথে বৈবাহিক সূত্র স্থাপনের মাধ্যমে সাধিত হতো জাত্যৎকর্ষ এবং এর ফলে কোনো একটি বর্ণের ব্যক্তির জন্য কুলীন সমাজে প্রবেশের দ্বার উন্মোচিত হতো।[২]

কুলীন ও পরামানিক উপাধি প্রাপ্তি[সম্পাদনা]

রাঢ়বরেন্দ্র এর ব্রাহ্মণদের মধ্যে কৌলীন্য প্রথা অধিক মাত্রায় প্রভাব বিস্তার করেছিল। তারা সম্ভবত কান্যকুব্জের পাঁচ ব্রাহ্মণ-রক্ষিতীশ, মেধতিথী,বিতরগ, সুধনিধি এবং সম্ভরি-এর উত্তরসূরি। বলা হয়ে থাকে যে, রাজা আদিশূর-এর নিমন্ত্রণে তাঁরা এখানে আসে। তবে উল্লেখ্য, আদিশূরের ঐতিহাসিকতা তর্কের ঊর্ধ্বে নয়। গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক এবং বর্মণ রাজা হরিবর্মণ উভয়েই যথাক্রমে শকদ্বীপী ও বৈদিক ব্রাহ্মণ নিয়ে এসেছিলেন বলে জানা যায়। বলা হয়ে থাকে, এ ব্রাহ্মণদের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির ফলস্বরূপ বাংলায় সামাজিক প্রথা হিসেবে কৌলিন্য প্রথার সূত্রপাত হয়েছে। কৌলিন্য প্রথায় হিন্দু পদবী ব্যবহার শুরু হয়। এই পদবী সমাজের চার বর্ণ যথা- ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যশূদ্র বিভাজনের একটি চিহ্ন বহন করে[২]

রাঢ়ীয় কুলীন ব্রাহ্মণ[সম্পাদনা]

চোলরাজা দেবেন্দ্র বর্মনের ছয় শতকের শিলালিপিতে উত্তর রাঢ় সম্পর্কে প্রথম উল্লেখ পাওয়া যায়। রাঢ়ের এ অংশটিকে রাজেন্দ্র চোলের এগারো শতকের তিরুমুলাই শিলালিপিতে সুস্পষ্টরূপে একটি স্বতন্ত্র ভৌগোলিক এলাকা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভোজবর্মনের বেলাভ তাম্রলিপিতে উত্তর রাঢ়ের সিদ্ধলা গ্রামকে ভট্টভবদেবের জন্মস্থান হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। সিদ্ধলাকে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান বীরভূম জেলার সিদ্ধলা গ্রামের সঙ্গে এবং নৈহাটী লিপিতে উল্লিখিত বল্লহিত্তহ গ্রামকে বর্ধমান জেলার উত্তর প্রান্তের বালুটিয়ার সাথে শনাক্ত করা হয়েছে। শান্ডিল্য গোত্রীয় বন্ধ্যঘাটিগ্রামবাসী, কাশ্যপ গোত্রীয় চট্টগ্রামবাসী, ভরদ্বাজ গোত্রিয় মুখুটিগ্রামী, সাবর্ণী গোত্রীয় গাঙ্গুলি ও কুন্দলাল গ্রামী এবং বাৎস্য গোত্রীয়, ঘোষাল, কাঞ্জিলাল এবং পুতিতুন্ড এই আট গ্রামীরা রাঢ়ীয় কুলীন ব্রাহ্মণ[৩]

বারেন্দ্রীয় কুলীন ব্রাহ্মণ[সম্পাদনা]

বরেন্দ্রভূমির নামকরণের পেছনে একাধিক পৌরাণিক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। ‘বর’ শব্দের অর্থ হচ্ছে আশীর্বাদ এবং ‘ইন্দ্র’ শব্দের অর্থ দেবতাদের রাজা। অর্থাৎ ইন্দ্রের বর বা ইন্দ্রের আশীর্বাদ থেকে সাধারণভাবে বরেন্দ্র শব্দটির উৎপত্তি। এই কাহিনীর অনুসারিগণ বিশ্বাস করেন যে, বরেন্দ্রভূমি ইন্দ্রের পক্ষ থেকে আশীর্বাদস্বরূপ। রামায়ণমহাভারত গ্রন্থদ্বয়ে বরেন্দ্রভূমিকে ‘পুন্ড্র’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। পুন্ড্র অঞ্চলে বসবাসকারী ব্রাহ্মণদের বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ বলা হয় লাহিড়ী, সান্যাল, বাগচী, মৈত্র ও ভাদুড়ী পদবী এই পাঁচটি পদবীর ব্রাহ্মণরা বারেন্দ্রীয় কুলীন ব্রাহ্মণ। এছাড়া আরো বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ পদবী আছে যথা- আতর্থী, কাহালি কিন্তু সেগুলো কুলীন নয়। [৪]

কায়স্থ কুলীন[সম্পাদনা]

বঙ্গরাজ ব্ল্লাল সেন গৌড় নগর থেকে পাঁচ ঘর কায়স্থ এনে বঙ্গদেশে স্থাপন করেন। তাদের সঙ্গে তিনি বিবাহ আদান প্রদান করে নিজে তাদের সমাজে মিলিত হন। সেই বঙ্গজ কায়স্থরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে বঙ্গজ ও দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ বলে পরিগণিত হয়।এদেরকে বল্লাল কৌলিন্য মর্যাদা দেন। বর্তমানে সেই বংশের পদবী গুলি হল বসু/বোস(গৌতম গোত্র ), দত্ত, মিত্র(বিশ্বামিত্র গোত্র), ঘোষ(সৌকালিন গোত্র), গুহ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. https://www.britannica.com/topic/Kulinism
  2. "কৌলীন্য প্রথা - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৩ 
  3. "রাঢ় - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৩ 
  4. "বরেন্দ্রভূমি - বাংলাপিডিয়া"bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৯-২৩