কেপ কোবরা
কেপ কোবরা (Cape cobra) | |
---|---|
কেপ কোবরা | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | Animalia |
পর্ব: | কর্ডাটা |
উপপর্ব: | Vertebrata |
শ্রেণী: | সরীসৃপ |
বর্গ: | Squamata |
উপবর্গ: | Serpentes |
পরিবার: | Elapidae |
উপপরিবার: | Elapinae |
গণ: | Naja |
প্রজাতি: | N. nivea |
দ্বিপদী নাম | |
Naja nivea (Linnaeus, 1758)[১] | |
![]() | |
সবুজ অঞ্চলটি জুড়ে কেপ কোবরার বিস্তৃতি | |
প্রতিশব্দ[২] | |
Coluber niveus Linnaeus, 1758 |
কেপ কোবরা (বৈজ্ঞানিক নাম: Naja nivea) এলাপিড পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এরা ইয়েলো কোবরা নামেও পরিচিত। এদের দৈর্ঘ্য মাঝারি মাপের এবং অতিমাত্রায় বিষধর। এই প্রজাতিভুক্ত কোবরারা দক্ষিণ আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এবং বৈচিত্রপূর্ণ অঞ্চল জুড়ে বসবাস করে, যথা- শুষ্ক সাভানা অঞ্চলে, ফিনবোস গুল্মের ঝোপযুক্ত অঞ্চলে, উষ্ণ এবং শুষ্ক বুশভেল্ড অঞ্চলে, মরু এবং প্রায় মরু অঞ্চলে। এই কোবরা প্রজাতি দিনের বেলায় বিচরণ করে এবং এদের খাদ্যাভ্যাস সাধারনধর্মী। ইহারা বিভিন্ন প্রজাতির সাপকে শিকার করে এবং নানাপ্রকার পচাগলা মাংস খায়। কেপ কোবরা সর্প প্রজাতির প্রধান শত্রু হল শিকারি পাখী, হানি ব্যাজারস এবং বিভিন্ন প্রকারের বেজী। দক্ষিণ আফ্রিকাতে কেপ কোবরাকে 'গিল স্ল্যাভ' অথবা 'হলুদ সাপ' এবং 'ব্রুইনক্যাপেল' অথবা 'বাদামী কোবরা' নামেও ডাকা হয়। আফ্রিকান ভাষাভাষী দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষজন কেপ কোবরাকে 'কপার ক্যাপেল' অথবা 'কপার কোবরা' নামেও উল্লেখ করে প্রধানত এদের উজ্জ্বল হলুদ বর্ণের বিভিন্নতার জন্য। এই প্রজাতির কোনো উপপ্রজাতির সন্ধান এখনো পাওয়া যায় নি।
শব্দপ্রকরণ[সম্পাদনা]
Naja nivea অথবা কেপ কোবরার বর্ণনা সর্বপ্রথম দেন সুইডিস প্রাণীবিদ কার্ল লাইনাস ১৭৫৮ সালে।[১] এদের বর্গীয় নাম নাজা, সংস্কৃত শব্দ nāgá (नाग) অর্থাৎ কোবরার ল্যাটিনরূপ। nivea বিশেষণটি ল্যাটিন শব্দ nix অথবা nivis থেকে উদ্ভূত যার অর্থ "তুষার" অথবা "snow" অথবা niveus অর্থাৎ "snowy"।[৩] এদের নামের অর্থের সাথে তুষার এর কি যোগাযোগ তা বোঝা যায় না, তবে ইউরোপের শ্রেণীবিন্যাসকারী বিজ্ঞানীরা প্রথম যে কেপ কোবরার নমুনাটিকে সংরক্ষণ করেছিলেন সেটার রঙ ফ্যাকাশে বা শ্বেত বর্ণ হয়ে যাওয়াকে বোঝাতে তুষার এর উল্লেখ করা হয়েছে।
শ্রেণীবিন্যাস[সম্পাদনা]
কেপ কোবরা এলাপিড পরিবারের নাজা বর্গের অন্তর্ভুক্ত। Carl Linnaeus প্রথম Naja nivea এর বর্ণনা দেন ১৭৫৮ সালে।[১] তিনি আসলে প্রথমে Coluber niveus এই দ্বিপদ নামটি দেন, কিন্তু প্রায় বছর দশেক পরে Josephus Nicolaus Laurenti এদের প্রকৃত কোবরা হিসাবে বর্ণনা করেন এবং নাজা নামে নথিভুক্ত করেন। ২০০৭ সালে Wüster et al. নাজা বর্গকে চারটি উপবর্গে অথবা উপগোত্রে বিভক্ত করেন। নানাবিধ করণের ভিত্তিতে; যথা রৈখিক চিত্র, অঙ্গসংস্থান বিদ্যা এবং পথ্য অথবা খাদ্য ইত্যাদি Naja nivea কে Uraeus উপবর্গের অন্তর্ভুক্ত করেন। এছাড়াও এই উপবর্গের অন্তর্ভুক্ত হল- ইজিপ্টিয়ান কোবরা
নিম্নে চিত্রিত ক্ল্যাডোগ্রাম বা শাখা বিন্যাস্টি বিভিন্ন নাজা বর্গভুক্ত সর্পপ্রজাতির শ্রেণীবিন্যাস ও সম্প্ররককে বিশ্লেষণ এবং প্রকাশ করে।[৪]
নাজা |
| ||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||||
বর্ণনা[সম্পাদনা]
কেপ কোবরা মাঝারি দৈর্ঘ্যের সাপ। পূর্ণবয়স্ক নমুনাগুলি ১.২ থেকে ১.৪মিটার (৩.৯ থেকে ৪.৬ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে এরা ১.৬মিটার(৫.২ ফুট) পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে। পুরুষ সাপগুলি স্ত্রীদের তুলনায় সামান্য বড় হয়। কেপ কোবরা প্রজাতির দীর্ঘতম নমুনা হিসাবে যে সাপটি নথিভুক্ত রয়েছে সেটি পুরুষ,নামিবিয়ার (Aus, Namibia)থেকে প্রাপ্ত এবং ১.৮৭মিটার(৬.১ ফুট) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট।[৫] De Hoop Nature Reserve থেকে প্রাপ্ত অপর একটি বিশাল নমুনা ১.৮৫ মিটার(৬.০৫ফুট) দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট।[৬]
কেপ কোবরার বর্ণের ভিন্নতা প্রচুর- এদের বর্ণবিন্যাস হলুদ থেকে সোনালী বাদামী থেকে কালচে বাদামী এমনকি কালো পর্যন্ত হয়। আবার এই সাপের গায়ের ডোরা এবং ছিট ছিট দাগও ভিন্ন ভিন্ন হয়- কালো থেলে ফ্যাকাশে রঙের ডোরা এবং ছিট ছিট দাগ দেখা যায়। যদিও বর্ণে এবং দেহের ডোরা অথবা ছোপ এর ভিন্নতা ভৌগোলিক ভাবে সম্পর্কিত তবুও একই ভৌগোলিক অবস্থানে সমস্ত প্রকার বর্ণভিন্নতা দেখতে পাওয়া ভীষণভাবে সম্ভব।
কমবয়সী নমুনাগুলির সাধারণত লক্ষনীয় ভাবে জলার অংশ কালো রঙের হয় এবং গলার এই কালো রঙ পেটের প্রায় এক ডজন আঁশ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে নেমে আসতে দেখা যায়। কেপ কোবরা প্রজাতির গায়ের রঙ জীবদ্দশার প্রথম এক-দুই বছরে ফিকে হয়ে যায় এবং এই সময় অপ্রাপ্তবয়স্ক কেপ কোবরার সাথে রিংকালস স্পিটিং কোবরাকে সাধার মানুষ প্রায়শই গুলিয়ে ফেলেন।
দেহের মধ্যভাগে পৃষ্ঠদেশ | উদরদেশ | সাবক্যাডুল (লেজের নিম্নদেশ) | অয়ানাল প্লেট | আপার ল্যাবিয়ালস (উপরের ঠোঁট বা চোয়াল) | চোখের আপার ল্যাবিয়ালস অঞ্চল | প্রি-অকুলারস (চোখের আগে) | পোস্ট-অকুলারস (চোখের পরে) | লোয়ার ল্যাবিয়ালস (নিচের চোয়াল) | টেমপোরাল |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
২১ | ১৯৫-২২৭ | ৫০-৬৮ (যুগ্ম) | একক | ৭ | ৩+৪ | ১ | ৩ (৪ হতেও পারে) | ৯ (৮-১০) | ১+২ (পরিবর্তনশীল) |
বিতরন এবং বাসস্থান[সম্পাদনা]
কেপ কোবরা দক্ষিণ আফ্রিকাজাত সর্প প্রজাতি। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিকাংশ স্থানেই প্রায়শই এদের দর্শন মেলে ;যেমন- ওয়েস্ট্ররান কেপ, নর্দান কেপ, ইস্ট্ররান কেপ, ফ্রি স্টেট এবং নর্থ ওয়েস্ট প্রভিন্স। এছাড়াও নামিবিয়ার দক্ষিণ অর্ধে, দক্ষিণ পশ্চিম বোস্তোয়ানা এবং পশ্চিম লেসোথো তেও এদের পাওয়া যায়।[৬][৭]
যে কোনো আফ্রিকান কোবরা প্রজাতির তুলনায়, কেপ কোবরা প্রজাতি যদিও ক্ষুদ্রতর ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ, এদের বাসস্থান অনেক বৈচিত্রপূর্ণ এবং ভিন্নধর্মী। এই সর্পপ্রজাতির পছন্দের বাসস্থানগুলি হল- আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে ফিনবোস নামক একপ্রকার গাছপালা এবং ঝোপযুক্ত অঞ্চল, দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত উষ্ণ এবং শুষ্ক বুশভেল্ড অঞ্চল, কারো স্ক্রাবল্যান্ড, শুষ্ক সাভানা অঞ্চল এবং নামিব এবং কালাহারি মরু অঞ্চল। কখনো কখনো এদের তীক্ষ্ণদন্ত ইঁদুরের গর্তে, পরিত্যক্ত উইঢিপিতে, শুষ্ক অঞ্চলে, পাথরের খাঁজে বাস করতে দেখা যায়। নাতিশীতোষ্ণ এবং শুষ্ক কারোইড অঞ্চলে এদের দেখা মেলে, তবে এই জাতীয় অঞ্চলের নদী এবং ঝরনার ধারে যেখানে নালার মাধ্যমে জল ভালমতো প্রবেশ করে এবং ফাঁকা অঞ্চলে এদের প্রায়ই দেখা যায়।
লেসোথো তে দেখা গেছে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৫০০মিটার (৮২০০ফুট) পর্যন্ত উচ্চতায়ও এদের উপস্থিতি রয়েছে। ফ্রি স্টেট প্রভিন্স এবং উচ্চ ঘাস জমিতে, কেপ অঞ্চলের পাথুরে পাহাড়ি অঞ্চলে এবং এদের ভৌগোলিক সীমার অন্তর্গত মরু এবং মরুধর্মী অঞ্চলেও এদের দেখতে পাওয়া যায়। কেপ কোবরা প্রজাতির সাপেরা গ্রামাঞ্চলে, সল্প উন্নত শহরতলি অঞ্চলে হানা দেয় যেখানে দিনের বেলার প্রবল উত্তাপ এড়াতে এবং তীক্ষ্ণ দন্ত প্রাণী শিকার করার উদ্দেশ্যে এরা ঘরবাড়ীতে প্রবেশ করে, এর ফলে এরা মানুষের সরাসরি সংস্রবে চলে আসে। [৫][৭]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ গ "Naja nivea"। ইন্টিগ্রেটেড ট্যাক্সোনোমিক ইনফরমেশন সিস্টেম। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০১৪।
- ↑ Uetz, P.। "Naja nivea"। Reptile Database। The Reptile Database। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মার্চ ২০১৪।
- ↑ "Etymology of Nivis"। Etymology। Online Etymology Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ Wallach, V.; Wüster, W.; Broadley DG. (২০০৯)। "In praise of subgenera: taxonomic status of cobras of the genus Naja Laurenti (Serpentes: Elapidae)" (পিডিএফ)। Zootaxa (ইংরেজি ভাষায়)। 2236: 26–36।
- ↑ ক খ গ Marais, Johan (২০০৪)। A Complete Guide to the Snakes of Southern Africa। Cape Town, South Africa: Struik Nature। পৃষ্ঠা 100–101। আইএসবিএন 1-86872-932-X।
- ↑ ক খ Phelps, T। "Observations of the Cape cobra, Naja nivea (Serpentes: Elapidae) in the De Hoop Nature Reserve, Western Cape Province, South Africa" (পিডিএফ)। Herpetological Bulletin। Cape Reptile Institute। ৪ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ ক খ Spawls, Stephen; Branch, Bill (১৯৯৫)। Dangerous Snakes of Africa। London, UK: Blandford Press। পৃষ্ঠা 81–82। আইএসবিএন 0-7137-2394-7।