বিষয়বস্তুতে চলুন

কুরআনে মহান কুরুশ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

কুরআনে মহান কুরুশ হলো একটি তত্ত্ব যেটি দ্বারা কুরআনে সূরা কাহফের, ৮৩-৯৮ আয়াতে উল্লিখিত ব্যক্তিত্ব জুলকারনাইন কে চিহ্নিত করা সাইরাস দ্য গ্রেট এর সাথে।[] (তবে তাকে মহান আলেকজান্ডার বলে সাধারণভাবে অভিহিত করা হয়) [] যেটি জার্মান সাংস্কৃতিক ভাষাতাত্ত্বিক জি.এম রেডস্লব দ্বারা ১৮৫৫ সালে উত্থাপিত হয়, তবে এটি পশ্চিমা সংস্কৃতি তে জনপ্রিয়তা লাভ করতে ব্যর্থ হয়,[] কিন্তু ভারতীয়, পাকিস্তানি এবং ইরানি মুসলিম চিন্তাবিদ যেমন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ, ড. ইসরার আহমেদ, মওদুদি, জাভেদ আহমেদ ঘামদি, আল্লামা তাবেতাবেঈ (তাফসীর আল-মিজান এ),[] নাসের মোকারম সিরাজি (তাফসির নিমুনিহ এ)[] এবং মুহাম্মদ আলী.[] দ্বারা এই মত গ্রহণযোগ্যতা পায়।

জুলকারনাইন: সূরা আল কাহফ (১৮) আয়াত ৮৩-১০১

[সম্পাদনা]
কাস্পিয়ান গেইট, ডারবেন্ট, রাশিয়া তে অবস্থিত, সাসানীয় সাম্রাজ্যের প্রতিরক্ষা প্রাচীর, মাঝে মাঝে আলেকজান্ডার এর ফটক নামে অভিহিত করা হয়

জুলকারনাইন এর কাহিনী কোরআন শরীফের ১৮ নং সূরা (সূরা আল কাহফ, "গুহা") এর সাথে জড়িত। এই সূরাটি নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর কাছে তখন নাজিল হয়েছিল যখন কুরাইশ গোত্রের লোকেরা ইহুদি যাদের শাস্ত্র সম্পর্কে জ্ঞান উচ্চতর তাদের কাছে দুইজন মানুষ পাঠায় যেকিনা তাদের পরামর্শ দেবে মুহাম্মদ (সঃ) সম্পর্কে যিনি আল্লাহর প্রেরিত আসল নবী কিনা পরীক্ষা করার জন্য। ইহুদিরা মুহাম্মদ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করার জন্য তাদেরকে তিনটি জিনিসের কথা বলে। এদের মধ্যে একটি ছিল " কোন মানুষ পৃথিবীর পূর্ব হতে পশ্চিম পর্যন্ত পৌছেছিল, এবং তাঁর গল্প কি"। যদি তিনি তোমাদের এই তিনটি জিনিসের কথা বলতে পারে তাহলে তিনি একজন নবী, সুতরাং তাঁকে অনুসরণ করবে। কিন্তু যদি বলতে না পারে তাহলে মনে করবে তিনি এমন একজন মানুষ যে কথা বানিয়ে বানিয়ে বলছে।

এই সূরাতে জুলকারনাইন সম্পর্কে আয়াত নাজিল করা হয়। বলা হয় জুলকারনাইন ছিল প্রথম ব্যক্তি যে পশ্চিম প্রান্তে ভ্রমণ করেছে যেখানে তাঁর মনে হয়েছে সূর্য কালোজলের নিচে ডুবে যাচ্ছে। এরপর তিনি সূদুর পূর্ব দিকে যান যেখানে দেখেন এটি সমুদ্র থেকে উদয় হচ্ছে। সবশেষে তিনি পূর্ব দিকের পাহাড়ি এক জায়গায় যান যেখানে তিনি দেখতে পান লোকজন ইয়াজুজ মাজুজ দ্বারা নিপীড়িত হচ্ছে।

আয়াত নং আরবি উচ্চারণ বাংলা অনুবাদ (মুজিবুর রহমান)
১৮:৮৩ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا عَلَیۡکُمۡ مِّنۡہُ ذِکۡرًا ﴿ؕ۸۳﴾ ওয়া ইয়াছআলূনাকা আন যিল কারনাইনি কুল ছাআতলূ‘আলাইকুম মিনহু যিকরা-। তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলে দাওঃ আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব।
১৮:৮৪ اِنَّا مَکَّنَّا لَہٗ فِی الۡاَرۡضِ وَ اٰتَیۡنٰہُ مِنۡ کُلِّ شَیۡءٍ سَبَبًا ﴿ۙ۸۴﴾ ইন্না-মাক্কান্না-লাহূফিল আরদিওয়া আ-তাইনা-হু মিন কুল্লি শাইয়িন ছাবাবা-। আমি তাকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দিয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের উপায় ও পন্থা নির্দেশ করেছিলাম।
১৮:৮৫ فَاَتۡبَعَ سَبَبًا ﴿۸۵﴾ ফাআতবা‘আ ছাবাবা-। সে এক পথ অবলম্বন করল।
১৮:৮৬ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَغۡرِبَ الشَّمۡسِ وَجَدَہَا تَغۡرُبُ فِیۡ عَیۡنٍ حَمِئَۃٍ وَّ وَجَدَ عِنۡدَہَا قَوۡمًا ۬ؕ قُلۡنَا یٰذَا الۡقَرۡنَیۡنِ اِمَّاۤ اَنۡ تُعَذِّبَ وَ اِمَّاۤ اَنۡ تَتَّخِذَ فِیۡہِمۡ حُسۡنًا ﴿۸۶﴾ হাত্তাইযা-বালাগা মাগরিবাশ শামছি ওয়া জাদাহা-তাগরুবুফী ‘আইনিন হামিআতিওঁ ওয়া ওয়াজাদা ‘ইনদাহা-কাওমান কুলনা-ইয়া-যাল কারনাইনি ইম্মাআন তু‘আযযিবা ওয়া ইম্মাআন তাত্তাখিযা ফীহিম হুছনা-। চলতে চলতে যখন সে সূর্যের অস্তগমন স্থানে পৌঁছল তখন সে সূর্যকে এক পংকিল পানিতে অস্ত যেতে দেখল এবং সে সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল; আমি বললামঃ হে যুলকারনাইন! তুমি তাদেরকে শাস্তি দিতে পার অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পার।
১৮:৮৭ قَالَ اَمَّا مَنۡ ظَلَمَ فَسَوۡفَ نُعَذِّبُہٗ ثُمَّ یُرَدُّ اِلٰی رَبِّہٖ فَیُعَذِّبُہٗ عَذَابًا نُّکۡرًا ﴿۸۷﴾ কা-লা আম্মা-মান জালামা ফাছাওফা নু‘আযযি বুহূ ছু ম্মা ইউরাদ্দু ইলা-রাব্বিহী ফাইউ‘আযযি বুহূ‘আযা-বান নুকরা-। সে বললঃ যে কেহ সীমা লংঘন করবে আমি তাকে শাস্তি দিব। অতঃপর সে তার রবের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে এবং তিনি তাকে কঠিন শাস্তি দিবেন।
১৮:৮৮ وَ اَمَّا مَنۡ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَہٗ جَزَآءَۨ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ سَنَقُوۡلُ لَہٗ مِنۡ اَمۡرِنَا یُسۡرًا ﴿ؕ۸۸﴾ ওয়া আম্মা-মান আ-মানা ওয়া ‘আমিলা সা-লিহান ফালাহূজাঝাআনিল হুছনা-,ওয়া ছানাকূলুলাহূমিন আমরিনা-ইউছরা-। তবে যে বিশ্বাস করে এবং সৎ কাজ করে তার জন্য প্রতিদান স্বরূপ আছে কল্যাণ এবং আমার কাজে তাকে সহজ নির্দেশ দিব।
১৮:৮৯ ثُمَّ اَتۡبَعَ سَبَبًا ﴿۸۹﴾ ছুম্মা আতবা‘আ ছাবাবা-। আবার সে এক পথ ধরল।
১৮:৯০ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ مَطۡلِعَ الشَّمۡسِ وَجَدَہَا تَطۡلُعُ عَلٰی قَوۡمٍ لَّمۡ نَجۡعَلۡ لَّہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہَا سِتۡرًا ﴿ۙ۹۰﴾ হাত্তাইযা-বালাগা মাতলি‘আশশামছি ওয়াজাদাহা-তাতলু‘উ ‘আলা-কাওমিল লাম নাজ‘আল লাহুম মিন দূনিহা-ছিতরা-। চলতে চলতে যখন সে সূর্যোদয় স্থলে পৌঁছল তখন সে দেখলো - ওটা এমন এক সম্প্রদায়ের উপর উদিত হচ্ছে যাদের জন্য সূর্য তাপ হতে আত্মরক্ষার কোন অন্তরাল আমি সৃষ্টি করিনি।
১৮:৯১ کَذٰلِکَ ؕ وَ قَدۡ اَحَطۡنَا بِمَا لَدَیۡہِ خُبۡرًا ﴿۹۱﴾ কাযা-লিকা ওয়া কাদ আহাতনা-বিমা-লাদাইহি খুবরা প্রকৃত ঘটনা এটাই যে, তার বৃত্তান্ত আমি সম্যক অবগত আছি।
১৮:৯২ ثُمَّ اَتۡبَعَ سَبَبًا ﴿۹۲﴾ ছু ম্মা আতবা‘আ ছাবাবা-। আবার সে এক পথ ধরল।
১৮:৯৩ حَتّٰۤی اِذَا بَلَغَ بَیۡنَ السَّدَّیۡنِ وَجَدَ مِنۡ دُوۡنِہِمَا قَوۡمًا ۙ لَّا یَکَادُوۡنَ یَفۡقَہُوۡنَ قَوۡلًا ﴿۹۳﴾ হাত্তাইযা-বালাগা বাইনাছছাদ্দাইনি ওয়াজাদা মিন দূনিহিমা-কাওমাল লা-ইয়াকা-দূনা ইয়াফকাহূনা কাওলা-। চলতে চলতে সে যখন পর্বত প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছল তখন সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে পেল যারা তার কথা মোটেই বুঝতে পারছিলনা।
১৮:৯৪ قَالُوۡا یٰذَاالۡقَرۡنَیۡنِ اِنَّ یَاۡجُوۡجَ وَ مَاۡجُوۡجَ مُفۡسِدُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَہَلۡ نَجۡعَلُ لَکَ خَرۡجًا عَلٰۤی اَنۡ تَجۡعَلَ بَیۡنَنَا وَ بَیۡنَہُمۡ سَدًّا ﴿۹۴﴾ কা-লূইয়া-যাল কারনাইনি ইন্না ইয়া’জূজা ওয়া মা’জূজা মুফছিদূনা ফিল আরদি ফাহাল নাজ‘আলুলাকা খারজান ‘আলাআন তাজ‘আলা বাইনানা-ওয়া বাইনাহুম ছাদ্দা-। তারা বললঃ হে যুলকারনাইন! ইয়াজুজ ও মা‘জুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে; আমরা কি তোমাকে রাজস্ব দিব এই শর্তে যে, তুমি আমাদের ও তাদের মধ্যে এক প্রাচীর গড়ে দিবে?
১৮:৯৫ قَالَ مَا مَکَّنِّیۡ فِیۡہِ رَبِّیۡ خَیۡرٌ فَاَعِیۡنُوۡنِیۡ بِقُوَّۃٍ اَجۡعَلۡ بَیۡنَکُمۡ وَ بَیۡنَہُمۡ رَدۡمًا ﴿ۙ۹۵﴾ কা-লা মা-মাকান্নী ফীহি রাববী খাইরুন ফাআ‘ঈনূনী বিকুওওয়াতিন আজ‘আল বাইনাকুম ওয়া বাইনাহুম রাদমা-। সে বললঃ আমার রাব্ব আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তা’ই উৎকৃষ্ট; সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মাযবূত প্রাচীর গড়ে দিব।
১৮:৯৬ اٰتُوۡنِیۡ زُبَرَ الۡحَدِیۡدِ ؕ حَتّٰۤی اِذَا سَاوٰی بَیۡنَ الصَّدَفَیۡنِ قَالَ انۡفُخُوۡا ؕ حَتّٰۤی اِذَا جَعَلَہٗ نَارًا ۙ قَالَ اٰتُوۡنِیۡۤ اُفۡرِغۡ عَلَیۡہِ قِطۡرًا ﴿ؕ۹۶﴾ আ-তূনী ঝুবারাল হাদীদি হাত্তাইযা-ছা-ওয়া-বাইনাসসাদাফাইনি কা-লানফুখূ হাত্তাইযা-জা‘আলাহূনা-রান কা-লা আ-তূনীউফরিগ ‘আলাইহি কিতরা-। তোমরা আমার নিকট লৌহপিন্ডসমূহ আনয়ন কর; অতঃপর মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্ত্তপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বললঃ তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাক। যখন ওটা অগ্নিবৎ উত্তপ্ত হল তখন সে বললঃ তোমরা গলিত তামা নিয়ে এসো, আমি ওটা ঢেলে দিই ওর উপর।
১৮:৯৭ فَمَا اسۡطَاعُوۡۤا اَنۡ یَّظۡہَرُوۡہُ وَ مَا اسۡتَطَاعُوۡا لَہٗ نَقۡبًا ﴿۹۷﴾ ফামাছতা‘ঊআইঁ ইয়াজহারূহু ওয়া মাছতাতা-‘ঊ লাহূনাকবা-। এরপর ইয়াজুজ ও মা’জুজ তা অতিক্রম করতে পারলনা বা ভেদ করতে পারলনা।
১৮:৯৮ قَالَ ہٰذَا رَحۡمَۃٌ مِّنۡ رَّبِّیۡ ۚ فَاِذَا جَآءَ وَعۡدُ رَبِّیۡ جَعَلَہٗ دَکَّآءَ ۚ وَ کَانَ وَعۡدُ رَبِّیۡ حَقًّا ﴿ؕ۹۸﴾ কা-লা হা-যা-রাহমাতুম মির রাববী ফাইযা-জাআ ওয়া‘দুরাববী জা‘আলাহূ দাক্কাআ ওয়া কা-না ওয়া‘দুরাববী হাক্কা-। যুলকারনাইন বললঃ এটা আমার রবের অনুগ্রহ; যখন আমার রবের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হবে তখন তিনি ওটাকে চূর্ন-বিচূর্ণ করে দিবেন এবং আমার রবের প্রতিশ্রুতি সত্য।
১৮:৯৯ وَ تَرَکۡنَا بَعۡضَہُمۡ یَوۡمَئِذٍ یَّمُوۡجُ فِیۡ بَعۡضٍ وَّ نُفِخَ فِی الصُّوۡرِ فَجَمَعۡنٰہُمۡ جَمۡعًا ﴿ۙ۹۹﴾ ওয়া তারাকনা- বা‘দাহুম ইয়াওমাইযিইঁ ইয়ামূজুফী বা‘দিওঁ ওয়া নুফিখা ফিসসূরি ফাজামা‘না-হুম জাম‘আ-। সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দিব একের পর এক তরঙ্গের আকারে এবং শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়া হবে; অতঃপর আমি তাদের সবাইকে একত্রিত করব।
১৮:১০০ وَّ عَرَضۡنَا جَہَنَّمَ یَوۡمَئِذٍ لِّلۡکٰفِرِیۡنَ عَرۡضَۨا ﴿۱۰۰﴾ۙ ওয়া ‘আরাদনা-জাহান্নামা ইয়াওমাইযিল লিলকা-ফিরীনা ‘আরদা-। আর সেদিন আমি জাহান্নামকে প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত করব সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের নিকট –
১৮:১০১ الَّذِیۡنَ کَانَتۡ اَعۡیُنُہُمۡ فِیۡ غِطَـآءٍ عَنۡ ذِکۡرِیۡ وَ کَانُوۡا لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ سَمۡعًا ﴿۱۰۱﴾٪ আল্লাযীনা কা-নাত আ‘ইউনুহুম ফী গিতাইন ‘আন যিকরী ওয়া কা-নূলা-ইয়াছতাতী‘ঊনা ছাম‘আ-। যাদের চক্ষু ছিল অন্ধ, আমার নিদর্শনের প্রতি এবং যারা শুনতেও ছিল অপারগ।

জুলকারনাইন ও সাইরাস এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা

[সম্পাদনা]
একটি ডানা সম্বলিত জ্বীনের কারুশিল্প, এবং কিছু পন্ডিতদের মতে সাইরাস দ্য গ্রেট তার দুই শিংযুক্ত হেমহেম মুকুট পরিহিত অবস্থায় পসারগাদেজুলকারনাইন".

আধুনিক সময়ে, কিছু মুসলিম পণ্ডিত সাইরাস দ্য গ্রেট যিনি হাখমানেশি সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা এবং পারস্য ও ব্যাবিলন বিজেতা, তাকেই জুলকারনাইন বলে মনে করেন। এর কারন পুরাতন নিয়মে দানিয়েলের কল্পনায় দেখেন যে, "দুই শিং যুক্ত মুকুট যেটি মিডিয়া এবং পারস্য'র প্রতিনিধি।(দানিয়েল ৮:২০).[] ব্রানন হুইলার এই শনাক্তকরণের বিপক্ষে যুক্তি দেন যে খুব কম আরব ইতিহাসেই তাকে বিজয়ী হিসেবে দেখা হয়, এই অর্থে যেটি জুলকারনাইনের বর্ণনায় বর্ণিত, এবং আরব ইতিহাসে সাইরাস কে জুলকারনাইন হিসেবে খুব বেশি দেখা হয় নি। []

পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন, যেমন কুরুশের চোঙ দেখে বলা যায় যে সাইরাস ব্যাবিলনীয় ইশ্বর মারডুক এর উপাসক ছিলেন, যে তাকে পুরো পৃথিবী জয় করতে বলেন এবং ব্যাবিলনে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে বলেন।[] চোঙটি প্রমাণ করে যে নাবোনডিয়াস অন্যান্য ব্যাবিলনীয় শহর থেকে ব্যাবিলনে যে মূর্তিগুলো নিয়ে আসেন সেগুলো সাইরাস উপাসনার স্থানে প্রতিস্থাপন করেন এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলো পুনরায় নির্মাণ করেন।[] অন্যান্য লিখন এবং শিলালিপি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে সাইরাস তার রাজ্যে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করেছিলেন।[১০]

একটি জনপ্রিয় নিদর্শন পসারগাদে প্রাসাদের দরজার সম্মুখে পিলারে দেখতে পাওয়া যায়, যেখানে একটি ডানাযুক্ত ব্যক্তির দেখা মিলে হেমহেম মুকুট (প্রাচীন মিশরীয় মুকুট, ভেড়ার লম্বা শিং দ্বারা নির্মিত) পরিহিত অবস্থায়। [১১] অনেক পণ্ডিত এর উপরে দেখতে পাওয়া শিলালিপির ভিত্তিতে এটিকে সাইরাস হিসেবে চিত্রায়িত করেন।[১২] যদিও বেশিরভাগই এটিকে অধিদেবতা কিংবা কোনো পবিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখ করেছে, কারন একই শিলালিপি আবাসনটির অন্যান্য প্রাসাদেও দেখা যায়।[১৩][১৪][১৫]

এই তত্ত্বটি সর্বপ্রথম ১৮৫৫ সালে জার্মান সাংস্কৃতিক ভাষাতত্ত্ববিদ জি.এম রেডস্লব উপস্থাপন করেন, যদিও পশ্চিমে এটি তেমন জনপ্রিয়তা পায় নি।[] মুসলিম বক্তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম সৈয়দ আহমদ খান ১৮৮৯ সালে এটি প্রচার করেন।[১০] পরবর্তীতে মৌলানা আবুল কালাম আজাদ[১৬][১৭]এবং পরবর্তী বছরগুলোতে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পায়।[১৮]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Azad 1990, পৃ. 205।
  2. Wheeler 2006, পৃ. 182।
  3. Tatum, James (১৯৯৪)। The Search for the ancient novel। Johns Hopkins University Press। পৃষ্ঠা 342আইএসবিএন 978-0-8018-4619-9  উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "tatum" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে
  4. In his Vol 26 of his Opus Magnum, Tafsir al-Mizan
  5. In his Bargozideh Tafseer-i Nemuneh (برگزیده تفسیر نمونه), Vol 3, p69
  6. Raheem, M. R. M. Abdur (১৯৮৮)। Muhammad the Prophet (ইংরেজি ভাষায়)। Pustaka Nasional Pte Ltd। পৃষ্ঠা 231। আইএসবিএন 978-9971772239 
  7. Wheeler 1998, পৃ. 200।
  8. Simonin, Antoine (২০১২)। "The Cyrus Cylinder"worldhistory.org। ১৪ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০২১ 
  9. "CYRUS iii. Cyrus II The Great"iranicaonline.org। Encyclopedia Iranica। ২৯ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৭, ২০২১ 
  10. Merhavy, Menahem (২০১৫)। "Religious Appropriation of National Symbols in Iran: Searching for Cyrus the Great"। Iranian Studies48 (6): 933–948। এসটুসিআইডি 144725336ডিওআই:10.1080/00210862.2014.922277 
  11. Macuch, Rudolf (১৯৯১)। "Pseudo-Callisthenes Orientalis and the Problem of Dhu l-qarnain"। Graeco-Arabica, IV: 223–264। On ancient coins, he was represented as Jupiter Ammon Alexander with a horn in profile so that the imagination of two horns was incorporated in this picture. But this representation of mighty kings is much more ancient than Alexander, as is proved by the relief of Cyrus. (p.263) 
  12. Daneshgar 2016, পৃ. 222।
  13. Curzon, George Nathaniel (২০১৮)। Persia and the Persian Question (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 75। আইএসবিএন 978-1-108-08085-9। ২৩ মে ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  14. Stronach, David (২০০৯)। "PASARGADAE"Encyclopædia Iranica, online edition। Encyclopædia Iranica। ১৭ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  15. Stronach, David (২০০৩)। "HERZFELD, ERNST ii. HERZFELD AND PASARGADAE"Encyclopædia Iranica, online edition। Encyclopædia Iranica। ২৯ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ মার্চ ২০২১ 
  16. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :3 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  17. Pirzada, Shams। Dawat ul Quran। পৃষ্ঠা 985। ১৪ জুলাই ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৮ নভেম্বর ২০১৯ 
  18. Maududi, Syed Abul AlaTafhim al-Qur'an। ২০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ নভেম্বর ২০১৯The identification ... has been a controversial matter from the earliest times. In general the commentators have been of the opinion that he was Alexander the Great but the characteristics of Zul-Qarnain described in the Qur'an are not applicable to him. However, now the commentators are inclined to believe that Zul-Qarnain was Cyrus ... We are also of the opinion that probably Zul-Qarnain was Cyrus...