কিউবার রাজনীতি
বিংশ শতাব্দীর শুরুতে কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। ১৮৯৮ সালের স্পেনীয়-মার্কিনী যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র কিউবা দখল করে এবং কিউবা মার্কিন মদতপুষ্ট একটি সরকার গঠন করে। ১৯০২ সালে দেশটি একটি ঐতিহাসিক পর্বে প্রবেশ করে, যার বৈশিষ্ট্য ছিল দুইটি স্বৈরশাসন এবং ভঙ্গুর গণতন্ত্র। ১৯৫৯ সালের পরে কিউবায় কমিউনিস্ট পার্টর নেতৃত্বে একদলীয় কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫৯ সালের ১লা জানুয়ারি কিউবান বিপ্লব কিউবাতে প্রজাতন্ত্রের পতন ঘটায়। ১৯৬১ সাল নাগাদ সরকারকে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টি ও তার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর অধীনে সরকারকে কেন্দ্রীভূত করে ফেলা হয়। ১৯৭০-এর দশক পর্যন্ত কিউবার বিপ্লবী সরকার অবিধিবদ্ধ আইনি চুক্তি মোতাবেক চালিত হত। এ সময় ১৯৪০-এর সংবিধানকে উপেক্ষা করা হয়। নির্বাহী শাখা আইন জারি করত এবং বাস্তবায়ন করত। বিচার ব্যবস্থার আইন প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা থাকলেও তা বাস্তবে কখনোই ঘটেনি।
১৯৭৬ সালে কিউবান সরকার একটি নতুন সংবিধান রচনা করেন যাতে কমিউনিস্ট শাসনব্যবস্থা বিধিবদ্ধ করা হয়। এই সংবিধানের অধীনে অনেকগুলি কমিটি, কাউন্সিল ও মন্ত্রণালয়কে সরকারের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই ক্ষেত্রগুলিতে নাগরিকেরা সরকারের সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন এবং সরকারও দ্রুততার সাথে সরকারি নীতি সংক্রান্ত তথ্য জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে পারেন। সবগুলি রাজনৈতিক এককই পিসিসি এবং শেষ পর্যন্ত ফিদে কাস্ত্রোর কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য ছিল।
কিউবান বিপ্লব কেন্দ্রীয় গণতন্ত্রের প্রতিশ্রুতি দেয়। অর্থাৎ সরকার নিয়ন্ত্রিত সংস্থার মাধ্যমে জনগণ শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারবে। কিউবার কমিউনিস্ট নেতৃত্বের মতে লাতিন আমেরিকার ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্রগুলি খুব সহজেই সামরিক একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয় কিংবা দুর্নীতির শিকার হয়, যার ফলে গণতন্ত্র অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাত্ত্বিকভাবে কিউবান সরকার এমন একটি কেন্দ্রশাসিত রাজনৈতিক কাঠামো তৈরি করে, যাতে প্রতিটি সরকারি নীতি বিষয়ক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জনগণের মতামত নেওয়া হয়। ফলে সামরিক স্বৈরতন্ত্র ও দুর্নীতি এড়ানো সম্ভব হয়। কিউবান কমিউনিস্টদের মতে এই পদ্ধতি গণতান্ত্রিক। তবে সমস্ত বড় সিদ্ধান্ত কাস্ত্রোই গ্রহণ করেন এবং জনমত গ্রহণ না করেই।
কিউবাতে সরকারি কাঠামোর বাইরে রাজনৈতিক সংগঠন কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পিসিসি ও কাস্ত্রো সংবাদসংস্থাগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করেন এবং স্বাধীন রাজনৈতিক সমাবেশ নিরুৎসাহিত করেন। তবে দমন পীড়নের প্রকৃতি নির্ণয় করা কঠিন। কিউবান নাগরিকদের ঐকমত্যে পৌঁছানোর বা বিরোধী নেতা নির্বাচন করার কোন সুযোগ নেই।