কাসুতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(কাসুটি থেকে পুনর্নির্দেশিত)
কাসুতি এমব্রয়ডারি ব্লাউজের ওপর কাজ। চিত্র ১৮৫৫-১৮৭৯।

কাসুতি (কন্নড়: ಕಸೂತಿ ) হল ভারতের কর্ণাটক রাজ্যে ব্যবহৃত ঐতিহ্যপূর্ণ এক লৌকিক সূচিকর্মের ধরন। খুবই জটিল কাসুতির এই কাজ, কেননা, কখোনো কখোনো হাত দিয়ে ৫,০০০ পর্যন্ত সেলাই দেওয়া হয় এবং ঐতিহ্যপূর্ণভাবে ইলকাল শাড়ি, ব্লাউজ এবং আচকান অথবা কুর্তা ইত্যাদি পোশাকের ওপর এই কাজ করা হয়। কর্ণাটক হ্যান্ডিক্রাফটস ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (কেএইচডিসি) কাসুতি সূচিকর্মের জন্য একটা ভৌগোলিক ইঙ্গিত (জিআই) সুরক্ষিত করে যেটা কাসুতিকে কেএইচডিসিতে বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার দিয়ে থাকে।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

কাসুতির ইতিহাস পুরোনো সেই চালুক্য আমল থেকে।[১] 'কাসুতি' নামটা এসেছে 'কাই' (অর্থ - হাত) এবং 'সুতি' (অর্থ - সুতো) এই শব্দবন্ধ থেকে, সুতো ও হাতের ব্যবহার দিয়ে যে কর্মকুশলতার ইঙ্গিত করা হয়।[২] এই সম্পর্কে বলা যায় যে, সতের শতকে মহীশূর রাজ্যে নারী সভাসদগণ নাকি ৬৪ রকম শিল্পে পারদর্শী ছিলেন, কাসুতি ছিল সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।[২] কাসুতি সূচিশিল্পের মধ্যে কর্ণাটক রাজ্যের রঙ্গোলি লোকসূচিশিল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ লক্ষ্য করা যায়; আয়নাযুক্ত সূচিশিল্পের কাজ ও সোনা এবং রূপোর সুতোযুক্ত সূচিশিল্পের কাজ প্রধানত বিবাহের মতো বিশেষ অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কর্ণাটকে শাড়িতে কাসুতি সহ সূচিকাজ বিবাহের সাজসজ্জার অংশ হিসেবে ভাবা হয়, যাতে কালো সিল্কের একটা শাড়িতে কাসুতি সূচিশিল্প করলে তাকে বলা হয় প্রধান গুরুত্বের 'চন্দ্রকলি শাড়ি'।

কাসুতি শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

কাসুতি সূচিশিল্পের মূল ভাব

কাসুতির কাজে কিছু জটিল সূচিশিল্প সংশ্লিষ্ট আছে; যেমন, গোপুরম, রথ, পালকি, প্রদীপ এবং শঙ্খ। স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত জিনিসপত্র কাসুতির জন্যে ব্যবহৃত হয়। সূচিশিল্পে যে নকশায় কাজ করা হবে প্রথমে সেটা কাঠকয়লা অথবা পেন্সিল দিয়ে দাগ দিয়ে দেওয়া হয় এবং তারপর সূচ ও সুতো বাছাই করা হয়। এই কাজটা খুবই শ্রমসাধ্য এবং কাপড়ের ওপর প্রত্যেকটা সুতোকে গুনতি করতে হয়। নকশাগুলো কোনো গিঁট ছাড়াই সেলাই করা হয় যাতে নিশ্চিত করা যায় যে, কাপড়টা উভয় দিক থেকে একই রকম দেখতে হবে।[৩] বিভিন্ন রকমের সেলাই দেওয়া হয় ইচ্ছামতো নকশা পাওয়ার জন্যে। এর মধ্যে কয়েকটা হল 'গবন্তি', 'মুরগি', 'নেগি' এবং 'মেথি'। [৪] 'গবন্তি' হল ডবল রানিং সেলাই, উল্লম্ব, সমান্তরাল এবং কোণাকুণি দাগের জন্যে এটা ব্যবহার করা হয়; 'মুরগি' হল আঁকাবাঁকা সেলাই, 'নেগি' হল রানিং সেলাই এবং 'মেথি' হল পরস্পর আড়াআড়ি একটা সেলাই দেখতে ঠিক মেথি বীজের মতো।

বর্তমান পটভূমি[সম্পাদনা]

কাসুতির উন্নয়ন ঘটেছে তার ঐতিহ্যপূর্ণ সীমানার বাইরে, যেমনটা দেখা যায় মহীশূর সিল্ক শাড়ির ক্ষেত্রে।[৫] কর্ণাটক রাজ্যের হুবলিতে কাসুতি সংস্কৃতিকে অনুপ্রাণিত করার এবং এক ছাদের তলায় গ্রামীণ মহিলাদের হস্তশিল্প প্রদর্শনের জন্যে কর্ণাটক সরকারের সমাজ কল্যাণ দফতর একটা কাসুতি কেন্দ্র গড়ে দিয়েছে।[১] যাইহোক, কাসুতি দুর্বল পৃষ্ঠপোষকতায় ভুগছে এবং অনেক মানুষ এই হস্তশিল্পকে স্বেচ্ছায় গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছেনা; যার ফলে ধারওয়াদস্থিত যেএসএস কলেজ 'কর্ণাটক কাসুতি' নামে শিক্ষাক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।[১]


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. History of Kasuti is mentioned by Govind D. Belgaumkar and Anil Kumar Sastry (২০০৬-১০-২৭)। "Unique symbols of Karnataka"Online Edition of The Hindu, dated 2006-10-27। Chennai, India: 2006, The Hindu। ২০০৭-০২-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  2. কাসুতির উৎস Shyam Subbalakshmi B M। "Between the folds"Online Edition of The Deccan Herald, dated 2003-11-23। 2003 The Printers (Mysore) Private Ltd.। ২০০৭-০৪-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  3. কাসুতি কাজের একটা বিশদ বিবরণ হল: K. L. Kamat। "Kasooti – Traditional Embroidery"Online Webpage of Kamat's Potpourri। © 1996-2007 Kamat's Potpourri। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  4. A brief description of Kasuti is provided by "Indian crafts" (পিডিএফ)Online webpage of cimindia.net। 2004, Conferences & Incentive Management (I) Pvt. Ltd.। ৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২ 
  5. Mysore silk sarees using Kasuti work is mentioned by Aruna Chandaraju। "Modern MYSURU"Online Webpage of The Hindu, dated 2005-03-05। 2005, The Hindu। ৮ মে ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-২২