কাঁসারু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

যে সম্প্রদায় কাঁসার তৈরী তৈজসপত্র বা গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী তৈরী করে তারা কাঁসারু বলে পরিচিত। এই সম্প্রদায়ের লোকজনকে ঠাটারি নামেও ডাকা হয়। কাঁসারুদের তৈরী প্রধান দ্রব্যসামগ্রীগুলো হল, কাঁসা বা পিতলের হাড়ি, কলসি, বাটি, চামচ, ফুলদানি, আতরদানি, চিলমচি, আগরদানি, ঘটি ইত্যাদি।[১] প্রাচীনকালে কাঁসা পিতলের দ্রবসামগ্রীতে বিভিন্ন কারুকার্য ও নঁকশায় লোকজ কাহিনী অঙ্কনরীতি দেখা যেত। অতীতে বাংলাদেশের ধামরাই, জামালপুর, নবাবগঞ্জ, ময়মনসিংহ এই সমস্ত দ্রব্য তৈরিতে প্রসিদ্ধ ছিল। বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানে কাঁসার তৈরী জিনিস উপহার দেবার প্রচলন ছিল। ইরান, পাকিস্তান সহ বহু দেশে কাঁসার তৈরী জিনিসের কদর আছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

বাংলার চন্দ্র বংশীয় রাজবংশের শাসনামল থেকে পদ্মা-কীর্তিনাশার তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল কাঁসা-পিতল শিল্প। বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলার পালং, বাঘিয়া, বিলাসখান, কাঁসাভোগ, মধ্যপাড়া, আংগারিয়া ও কোটাপাড়া এলাকায় কাঁসারু বা কংসবণিকদের বসবাস ছিল। আর এ সকল এলাকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাঁসা-পিতল তৈরীর কারখানার অস্তিত্ব ছিল। ভারত, নেপাল, বার্মা (বর্তমানে মায়নমার) প্রভৃতি দেশ থেকে বিদেশী বনিকারও এসব দ্রব্য সামগ্রী কিনতে আসত।[২] ধারণা করা হয় কাঁসারুরা হিন্দু ধর্মালম্বি স্বর্ণকার সম্প্রদায় থেকে এসেছে। কেউ কেউ তাদের কামারদের উপসম্প্রদায় হিসাবেও মনে করেন। কাঁসারুদের মধ্যে বাল্যবিবাহ প্রচলিত। জাতপাতের বিচারে কাঁসারুদের অবস্থান অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের চাইতে উঁচুতে। হস্তশিল্পে নিয়োজিত অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মতো তারা বিশ্ব কর্মার পূজা করে থাকেন।

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কাঁসার দ্রব্যাদির প্রচলন এখনও আছে। ধামরাইয়ের ভাকুর্তা গ্রামের ছোট ছোট কারখানায় কাঁসা ও পিতলের গহনা তৈরী হয়। [৩] ক্রমবর্ধমান প্লাস্টিকজাত দ্রব্যের বহুল প্রচলন ও কম মূল্যের কারণে কাঁসার তৈরী দ্রব্যাদির ব্যবসা কঠিন হয়ে পরছে।[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]