কল্পবিজ্ঞানে কৃষ্ণগহ্বর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

১৯৬০-এর দশকের শেষভাগে জন আর্চিবল্ড হুইলার কর্তৃক ‘কৃষ্ণগহ্বর’ (ইংরেজি: Black hole) পরিভাষাটির প্রবর্তনার আগে থেকেই কথাসাহিত্যে এই জাতীয় বস্তুর (অর্থাৎ, এমন বস্তু যার মাধ্যাকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে তার থেকে আলোও নির্গত হতে পারে না) বিবরণ দেওয়া হয়ে এসেছে।[১][২][৩] পরবর্তীকালে যা ‘কৃষ্ণগহ্বর’ নামে পরিচিত হয়েছিল তার প্রথম বিবরণ যে কাহিনিগুলিতে পাওয়া যায় তার অন্যতম ই. ই. স্মিথের লেখা দ্য স্কাইলার্ক অফ স্পেস গল্পের ‘কৃষ্ণসূর্য’ (ইংরেজি: black sun)। এই ধরনের বস্তুগুলিকে কথাসাহিত্যে সাধারণভাবে মহাকাশযাত্রীদের বিপদ হিসেবে চিত্রিত করা হত। পরবর্তী কালের কাজগুলিতেও (যেমন, ১৯৭৫ সালে স্পেস: ১৯৯৯ ধারাবাহিকের "ব্ল্যাক সান" পর্বে) মাঝে মাঝে একই রকমভাবে কৃষ্ণগহ্বরকে উপস্থাপনা করা হয়েছে। আবার কিছু কিছু রচনায় তো কৃষ্ণগহ্বরকে পুরোদস্তুরভাবে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতেও দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ ডেভিড ল্যাংফোর্ডের দ্য স্পেস ইটার (১৯৮২) উপন্যাসটির নাম করা যায়।[১][২][৪]

প্রথম দিকের কৃষ্ণগহ্বর বর্ণনাকারী অনেক রচনাতেই মাধ্যাকর্ষীয় সময়ের প্রসারণের ধারণাটি পাওয়া যায়। এই ধারণায় দেখা যায়, সাধারণ আপেক্ষিকতার পরিণতি হিসেবে একটি কৃষ্ণগহ্বরের কাছে সময় ধীরতর গতিতে অতিবাহিত হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, পল আন্ডারসনের ছোটোগল্প "কাইরি" (১৯৬৮), ফ্রেডেরিক পোলের উপন্যাস "গেটওয়ে" এবং পোলেরই "হিচি" ধারাবাহিকের অবশিষ্টাংশের নাম করা যায়।[১][২][৫] অতীতকালে সময় ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কৃষ্ণগহ্বরকে ব্যবহার করার বিপরীত প্রভাবের ছবি আঁকা হয়েছে ১৯৬৭ সালের "স্টার ট্রেক" ধারাবাহিকের "টুমরো ইজ ইয়েস্টারডে" পর্বে।[৬] জো হ্যাল্ডম্যানের উপন্যাস দ্য ফরএভার ওয়ার (১৯৭৪) প্রভৃতি রচনায় অবশ্য কৃষ্ণগহ্বর সময়ের পরিবর্তে মহাকাশ ভ্রমণের একটি পন্থা হিসেবেই চিত্রিত হয়েছে, এক্ষেত্রে কীটগহ্বরগুলি প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।[১][৩][৪] কৃষ্ণগহ্বরের অন্য রকম ব্যবহারের ধারণাও করা হয়েছে। যেমন, গ্রেগরি বেনফোর্ডের ছোটোগল্প "অ্যাজ বিগ অ্যাজ দ্য রিটজ"-এ (১৯৮৬) কৃষ্ণগহ্বরকে শক্তির একটি উৎস হিসেবে দেখানো হয়েছে।[১][২][৩] অতি ক্ষুদ্র কৃষ্ণগহ্বর প্রথম বর্ণিত হয় ল্যারি নিভেনের "দ্য হোল ম্যান" (১৯৭৪) ছোটোগল্পটিতে এবং পরে আর্থার সি. ক্লার্কের ইম্পিরিয়াল আর্থ (১৯৭৫) উপন্যাসে এবং মহাকাশচান প্রচালনার জন্য শক্তির উপায় হিসেবে এবং চার্লস শেফিল্ডের প্রোটেউস আনবাউন্ড (১৯৮৯) উপন্যাসে এক ধরনের কৃত্রিম মাধ্যাকর্ষণ হিসেবে চিত্রিত হয়।[১][২][৪]

কৃষ্ণগহ্বরকে বিজ্ঞানীরা যেমন বুঝেছেন তার নিরিখে কথাসাহিত্যে সেটির চিত্রণের নির্ভুলতার বিভিন্ন মাত্রার। ঘটনা দিগন্তের অপর পারে কী রয়েছে তা অজ্ঞাত এবং সংজ্ঞা অনুযায়ী তা বাইরে থেকে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব না হওয়ায় লেখকেরা কৃষ্ণগহ্বরের অভ্যন্তরভাগের চিত্রণে শৈল্পিক ছাড়পত্রের প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকেন।[৪][৭][৮] ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ডিজনি চলচ্চিত্র দ্য ব্ল্যাক হোল-এ কৃষ্ণগহ্বরের বহির্ভাগ ও অভ্যন্তরভাগ উভয়েরই এক সম্পূর্ণ কাল্পনিক দৃশ্য অঙ্কিত হয়েছিল।[২][৩][৭] বেনফোর্ডের ইটার (২০০০) উপন্যাসের মতো অল্প কিছু রচনায় নরাত্বরোপিত চিন্তাশীল কৃষ্ণগহ্বরও দেখা গিয়েছে।[১][৮]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Westfahl, Gary (২০২১-০৭-১৯)। "Black Holes"Science Fiction Literature through History: An Encyclopedia [2 volumes] (ইংরেজি ভাষায়)। ABC-CLIO। পৃষ্ঠা 159–162। আইএসবিএন 978-1-4408-6617-3 
  2. Stableford, Brian M. (২০০৬)। "Black Hole"Science Fact and Science Fiction: An Encyclopedia (ইংরেজি ভাষায়)। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 65–67। আইএসবিএন 978-0-415-97460-8 
  3. Langford, David (২০০৫)। "Black Holes"Westfahl, GaryThe Greenwood Encyclopedia of Science Fiction and Fantasy: Themes, Works, and Wonders (ইংরেজি ভাষায়)। Greenwood Publishing Group। পৃষ্ঠা 89–91। আইএসবিএন 978-0-313-32951-7 
  4. Clute, John; Langford, David; Sleight, Graham (সম্পাদকগণ)। "Black Holes"The Encyclopedia of Science Fiction। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১১ 
  5. Lambourne, R. J.; Shallis, M. J.; Shortland, M. (১৯৯০)। "The Time Factor"Close Encounters?: Science and Science Fiction (ইংরেজি ভাষায়)। CRC Press। পৃষ্ঠা 56–70। আইএসবিএন 978-0-85274-141-2 
    • Luokkala, Barry B. (২০১৩-১০-২৩)। "Black Holes"Exploring Science Through Science Fiction (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 31–34। আইএসবিএন 978-1-4614-7891-1 
    • Luokkala, Barry B. (২০১৯-১১-০১)। "Black Holes"Exploring Science Through Science Fiction (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Nature। পৃষ্ঠা 35–39। আইএসবিএন 978-3-030-29393-2 
  6. Johnson, David Kyle (২০১৯-০৬-১৯)। "Understanding Black Holes Through Science Fiction"Sci Phi Journal (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-১৬ 
  7. Mann, George (২০১২-০৩-০১)। "Black Hole"The Mammoth Encyclopedia of Science Fiction (ইংরেজি ভাষায়)। Little, Brown Book Group। পৃষ্ঠা 468–469। আইএসবিএন 978-1-78033-704-3 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]