কংসারী হালদার
কংসারী হালদার | |
---|---|
সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৫৭-১৯৬২ | |
নির্বাচনী এলাকা | ডায়মন্ড হারবার |
সংসদ সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৬৭-১৯৭২ | |
নির্বাচনী এলাকা | মথুরাপুর |
আইনসভার সদস্য | |
কাজের মেয়াদ ১৯৭২-১৯৭৭ | |
নির্বাচনী এলাকা | সোনারপুর |
ব্যক্তিগত বিবরণ | |
জন্ম | আনধারিয়া গ্রাম, ২৪ পরগনা (বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগণা) | ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯১০
মৃত্যু | ২৯ আগস্ট ১৯৯৭ কলকাতা | (বয়স ৮৬)
জাতীয়তা | ভারতীয় |
রাজনৈতিক দল | ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি |
বাসস্থান | শিরাকোল, দক্ষিণ ২৪ পরগণা |
ধর্ম | হিন্দু |
কংসারী হালদার (২৬ সেপ্টেম্বর ১৯১০ - ২৯ আগস্ট ১৯৯৭) দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার কাকদ্বীপ তথা চন্দনপিঁড়ি কেন্দ্রিক তেভাগা আন্দোলনের খ্যাতনামা নেতা ও এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
জন্ম ও শিক্ষা
[সম্পাদনা]কংসারী হালদার দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার ডায়মন্ড হারবার ২নং উন্নয়ন ব্লকের অধীন আন্দারিয়া গ্রামে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নরেন্দ্রকৃষ্ণ হালদার আর মাতার নাম যশোদারাণী হালদার। পিতামাতার সাত সন্তানের মধ্যে কংসারী ছিলেন চতুর্থ সন্তান। প্রথমে পড়াশোনা করেন মাথুর স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত। এরপর ১৯৩০ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন সরিষা হাই স্কুল হতে। কলকাতার রিপন কলেজ (বর্তমানের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ) হতে আই.এ. এবং ১৯৩৩ সালে বঙ্গবাসী কলেজ হতে বি.এ. ও ১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় হতে এম.এ. পাশ করেন। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রাবস্থায়তেই লবণ আইন ভাঙার আন্দোলন বা লবণ সত্যাগ্রহ তথা সিভিল ডিসওবেডিয়েন্ট মুভমেন্ট আইন অমান্য করে কারাবাস করেন। প্রথম দিকে কংগ্রেসের সমর্থক হলেও পরে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন কালে বেআইনি ঘোষিত কমিউনিস্ট দলে যোগ দেন। পড়াশোনা শেষে তিনি স্থানীয় আঁধার-মাণিক হাই স্কুল শিক্ষকতা করেছেন।
তেভাগা আন্দোলনে ভূমিকা
[সম্পাদনা]তিরিশের দশকে কাকদ্বীপ এলাকায় কৃষক অসন্তোষ দেখা দেয়। মূলতঃ, কাকদ্বীপ-সুন্দরবনের বিস্তৃত এলাকার অজ্ঞ, অশিক্ষিত বঞ্চিত, জমিদার ও জোতদার দ্বারা শোষিত কৃষককুল তথা জনগোষ্ঠী পৌণ্ড্র সম্প্রদায়ভুক্ত ও প্রকৃতই অবহেলিত ছিল। কংসারী হালদার ছিলেন ওই পৌণ্ড্র সম্প্রদায়ের মানুষ। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দেই তাদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসেন তিনি। এর সুবাদে জীবদ্দশাতেই কিংবদন্তি হয়ে ওঠেন। বাংলায় কৃষি উৎপাদনের দুই তৃতীয়াংশ দাবির সমর্থনে কমিউনিস্টদের সংগঠিত বর্গা তথা ভাগচাষিদের আন্দোলনই ছিল তেভাগা আন্দোলন। সে আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি গণ-সংঘর্ষে বহু আন্দোলনকারী নিহত হয়। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে কাকদ্বীপের চন্দনপিঁড়ি গ্রামের অহল্যা নামে এক সন্তানসম্ভবা কৃষকবধূ পুলিশের গুলিতে প্রাণ দেন। চন্দনপিঁড়ির এই মর্মস্পর্শী ঘটনাটি প্রবীর মজুমদারের 'শোন গো ও দূরের পথিক', সাধন গুহের 'শোন কাকদ্বীপ রে', সলিল চৌধুরীর 'শপথ' প্রভৃতি একাধিক কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। চন্দনপিঁড়ির মামলায় কংসারী হালদারের প্রাণদণ্ডের আদেশ হলে তিনি আত্মগোপন করে ছিলেন। পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। ওই সময় এখানে তার ছদ্মনাম ছিল 'মধু'।
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির উপর নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। দীর্ঘদিন আত্মগোপন অবস্থাতেই ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে প্রথম লোকসভার নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্র হতে তফশিলি প্রার্থীর জন্য সংরক্ষিত আসনে কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী হিসাবে জয়ী হন। এদিকে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। পরে ১০ ই এপ্রিল ১৯৬২ তারিখের কলকাতা উচ্চ আদালত (কলিকাতা হাইকোর্ট)-এর রায়ে তিনি মুক্তি পান। ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে কমিউনিস্ট পার্টির বিভাজনের সময় তিনি সি পি আই তে থাকেন। ১৯৬৭ খ্রিস্টাব্দের লোকসভার নির্বাচনে মথুরাপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কংগ্রেস সমর্থিত সি পি আই প্রার্থী হিসাবে সোনারপুর কেন্দ্র থেকে বিধানসভার সদস্যও হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক চেতনা ও নিজস্বতা
[সম্পাদনা]কংসারী হালদারের ছাত্রাবস্থায় রাজনৈতিক চেতনা জাগান তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অনুকূল মহারাজ (পরে যিনি বেদান্তনন্দজী হন ও পাটনা রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক ছিলেন)। স্বামী বিবেকানন্দর কনিষ্ঠ ভ্রাতা ভূপেন্দ্রনাথ দত্তের কাছ থেকে পেয়েছেন হতদরিদ্র কৃষক ক্ষেতমজুরের কাছে যাওয়ার উপদেশ আর কৃষক আন্দোলনের শিক্ষা। কারাবাসে এসেছেন অখণ্ড বাংলার বিপ্লবীদের সংস্পর্শে। মার্কসবাদ অনুপ্রাণিত হয়েছেন আবার স্বামী বিবেকানন্দর শেষ শিষ্য স্বামী বিরজানন্দের কাছে দীক্ষা লাভ করেছেন। শেষে সক্রিয় রাজনীতির অঙ্গনে থাকার সুবাদে বহু ব্যক্তির সান্নিধ্যে এসেছেন। তাছাড়া রাজনীতিতে প্রবেশের আগে যে জাতীয় চেতনা তথা জনস্বার্থ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল তা লুপ্ত হওয়ার কথা নয়। তার মৌলিক চিন্তাধারা ও নিজস্বতার পরিচয় পাওয়া যায়। এমনকি তজ্জন্য পার্টির নির্দেশও অমান্য করেছেন দু'বার। একবার কাকদ্বীপে আন্দোলনের সময় আর একবার সোনারপুর কেন্দ্রে নির্বাচিত সদস্য হিসাবে আইনসভায় প্রতিনিধিত্বের সময়। শেষ বয়সে যখন আর রাজনীতি করেন না এবং শিরাকোলের বাসিন্দা ছিলেন, তখনো জনজীবন থেকে সরে যাননি। বরং তার দুটি গঠনমূলক কাজের পরিচয় পাওয়া যায়। মুসলিম ও তফশিলি অধ্যুষিত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য 'শিরাকোল বালিকা বিদ্যালয়' স্থাপন ও আমতলা-শিরাকোল এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডের দুই পাশে রিসর্ট বিরোধী আন্দোলনের সূচনা ও সেই অপচেষ্টার অপসারণ। তার এ কাজে এলাকার বহু তরুণ যুক্ত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি প্রখ্যাত সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবী ও ভারতের প্রথম সারির সমাজকর্মী মেধা পাটকর প্রমুখকে সঙ্গে পেয়েছিলেন।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]কংসারী হালদার ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ২৯ শে আগস্ট ৮৭ বৎসর বয়সে কলকাতার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- অঞ্জলি বসু সম্পাদিত সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত 'সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান' দ্বিতীয় খণ্ড চতুর্থ সংস্করণ তৃতীয় মুদ্রণ । ISBN : 978-81-7955-292-6
- মহাশ্বেতা দেবী সম্পাদিত ও প্রকাশিত "বর্তিকা" জুলাই-ডিসেম্বর ২০০৩ সংখ্যা
- ১৯১০-এ জন্ম
- ১৯৯৭-এ মৃত্যু
- রাজনৈতিক ব্যক্তি
- ভারতীয় রাজনীতিবিদ
- বাঙালি রাজনীতিবিদ
- বঙ্গবাসী কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
- পশ্চিমবঙ্গের ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির রাজনীতিবিদ
- পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা সদস্য
- পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার সদস্য ১৯৭২-১৯৭৭
- দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যক্তি
- চতুর্থ লোকসভার সদস্য
- দ্বিতীয় লোকসভার সদস্য