কংসকার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কাঠমান্ডু দরবার চত্ত্বরে কংসকারদের গুনলা বাজন
কেল টোলের একটি সড়ক সংকেত

কংসকার (দেবনাগরী: कंसकार), কসাঃ বা কসাহ (कसाः) হলো নেপালের কাঠমান্ডু উপত্যকার নেওয়ার জাতির অন্তর্ভুক্ত একটি গোষ্ঠী। সংস্কৃত ভাষায় কংসকার শব্দটি দ্বারা তাদের নির্দেশ করা হয়, যারা কাঁসার জিনিসপত্র তৈরি করেন। নেওয়ার কংসকারেরা মূলত বংশ পরম্পরায় ধাতব সামগ্রী উৎপাদন ও এর বাণিজ্য করে থাকেন।[১][২] বর্তমানে কংসকারেরা বণিক, শিল্পপতি, বিভিন্ন পেশায় কর্মরত আছেন।

কংসকারেরা তুলাধর, বনিয়া (গোষ্ঠী), তাম্রকার, স্থাপিত, সিঁদুরকার, সেলালিক প্রভৃতি গোত্রের মতো উরায় গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।[৩] উরায় হলো উচ্চ বর্ণের বৌদ্ধ বণিক সম্প্রদায় এবং গোষ্ঠীভুক্ত গোত্রগুলোর পারিবারিক নাম তাদের শিল্পী ও ব্যবসায়িক পেশাদারিকে নির্দেশ করে।[১] কংসকারকদের ধর্ম হলো নেওয়ার বৌদ্ধ[৪] এবং মাতৃভাষা হলো নেপাল ভাষা[৫]

কংসকারদের আদি নিবাস হলো কেল টোল, যা কাঠমান্ডুর একটি ঐতিহাসিক অংশ। এখানকার সংস্কৃতিতে কংসকারেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কাঠমান্ডুর এই শহরতলী জন বহা (মচ্ছেন্দ্র বহাল) নামক পবিত্র দরবারের জন্য বিখ্যাত। এখানকার কেন্দ্রীয় মন্দিরে আর্যাবলোকিতেশ্বরের (মহান অবলোকিতেশ্বর) একটি মূর্তি বিরাজমান, যা জন বহা দ্যঃ বা শ্বেত মচ্ছেন্দ্রনাথ (বিকল্প নাম: শ্বেত করুণাময়) নামে জনপ্রিয় একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় দেবতা।[৬][৭]

ঐতিহ্যবাহী পেশা[সম্পাদনা]

নেওয়ারদের বংশ পরম্পরায় বাহিত সামাজিক শ্রম বিভাজনের ধারায় কংসকারেরা প্রাচীনকাল থেকে বংশানুক্রমে কাঁসা থেকে তৈজসপত্র নির্মাণ করে আসছে। রান্নাঘর ও আচার অনুষ্ঠানের তৈজস, বিভিন্ন ধরনের বাসন ও করতাল হলো এদের উৎপাদিত প্রধান পণ্য। চারপাশে খাঁজ কাটা সিফালা দেমা (सिफाला देमा) নামক বাসন কংসকারদের বিশেষত্বের পরিচায়ক। এদের কারখানায় তামা ও টিন গলিয়ে এবং কয়লা প্রজ্জ্বলিত চুল্লিতে এদের একত্রে মিশিয়ে কাঁসা তৈরি করা হয়।[৮]

তিব্বতে নেওয়ারদের ঐতিহ্যবাহী বাণিজ্যেও কংসকারদের ভূমিকা ছিল। এরা তিব্বতের লাসায় এবং ভারতের কালিম্পংকলকাতায় বাণিজ্য কুঠি পরিচালনা করতেন।[৯]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

কংসকারেরা দীর্ঘ শিঙা বাজিয়ে আর্যাবলোকিতেশ্বরের বার্ষিক রথ যাত্রায় অংশগ্রহণ করে। এই অনুষ্ঠানটি জন বহা দ্যঃ যাত্রা নামেও পরিচিত। এছাড়া কংসকারেরা গুনলার পবিত্র মাস ও অন্যান্য উৎসব উদযাপনে গুনলা বাজন নামক ধর্মীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে থাকে।

কাঠমান্ডুতে দ্বাদশ বার্ষিক সম্যক নামে নেওয়ার বৌদ্ধদের সবচেয়ে বিশেষ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, যেখানে দীপঙ্কর বুদ্ধের মূর্তি প্রদর্শিত হয়। প্রাচীনকাল থেকে এই উৎসবে প্রতিটি উরায় গোত্র একটি নির্দিষ্ট কর্তব্য সম্পাদন করে আসছে। এর মধ্যে কংসকারেরা পাঁচ প্রকারের খাদ্য তৈরি ও পরিবেশনের দায়িত্ব পালন করে থাকে।[১০]

কংসকারেরা কুহ্ম প্যাখম (কুমার প্যাখন নৃত্য নামেও পরিচিত) নামক একটি বার্ষিক নৃত্যানুষ্ঠানেও অংশগ্রহণ করে থাকে, যা অক্টোবরে মোহ্নী নামক উৎসবের সময় আয়োজন করা হয়ে থাকে। এই নৃত্যানুষ্ঠান অসন অথবা কাঠমান্ডু দরবার চত্ত্বরের উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজনে তুলাধর অথবা কংসকার গোত্রের একজন বালককে নির্বাচন করা হয়, যে এই ঐতিহ্যবাহী নৃত্য পরিবেশন করে।[১১][১২]

উল্লেখযোগ্য কংসকার[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Lewis, Todd T. (১৯৯৫)। "Buddhist Merchants in Kathmandu: The Asan Twah Market and Uray Social Organization" (পিডিএফ)Contested Hierarchies। Oxford: Clarendon Press। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১২  Page 47.
  2. Wright, Daniel (১৮৭৭)। "History of Nepal with an Introductory Sketch of the Country and People of Nepal"। Cambridge। সংগ্রহের তারিখ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১২  Page 86.
  3. Lewis, Todd T. (জানুয়ারি ১৯৯৬)। "Notes on the Uray and the Modernization of Newar Buddhism" (পিডিএফ)Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১২  Page 110.
  4. Locke, John K. (২০০৮)। "Unique Features of Newar Buddhism"। Nagarjuna Institute of Exact Methods। ২৪ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১২ 
  5. Lewis, Todd T। "Buddhism, Himalayan Trade, and Newar Merchants"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মার্চ ২০১২ 
  6. Locke, S.J., John K.। "Newar Buddhist Initiation Rites"INAS Journal। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১২  Page 2.
  7. Yoshizaki, Kazumi (২০০৬)। "The Kathmandu Valley as a Water Pot: Abstracts of research papers on Newar Buddhism in Nepal"। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০১২  Page 5.
  8. Kasāh, Dev Ratna (২৬ জুলাই ২০০৩)। "Kasāhtaygu Jya"। Udāy Samā  Page 23.
  9. Hilker, DS Kansakar (2005), Syamukapu: The Lhasa Newars of Kalimpong and Kathmandu, Kathmandu: Vajra Publications. আইএসবিএন ৯৯৯৪৬-৬৪৪-৬-৮.
  10. Lewis, Todd T. (১৯৯৫)। "Buddhist Merchants in Kathmandu: The Asan Twah Market and Uray Social Organization" (পিডিএফ)Contested Hierarchies। Oxford: Clarendon Press। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১২  Pages 51-52.
  11. Hoek, Bert van den; Shrestha, Balgopal (জুলাই ১৯৯২)। "Guardians of the Royal Goddess: Daitya and Kumar as the Protectors of Taleju Bhavani of Kathmandu" (পিডিএফ)CNAS Journal। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১২  Page 192.
  12. Lewis, Todd T. (জানুয়ারি ১৯৯৬)। "Notes on the Uray and the Modernization of Newar Buddhism" (পিডিএফ)Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মার্চ ২০১২  Page 112.