গুনলা বাজন
গুনলা বাজন (নেপাল: गुंला बाजं) হলো নেপালের নেওয়ার জাতির ঐতিহ্যবাহী ভক্তিমূলক ধর্মীয় সঙ্গীত।[১] "গুনলা" হলো চন্দ্রভিত্তিক নেপাল সংবৎ বর্ষপঞ্জির দশম মাস, গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে যেটি আগস্ট মাসে সমাপতিত হয়। নেপাল ভাষায় "বাজন" মানে হলো "সঙ্গীত" অথবা "সঙ্গীত বাদক দল"।[২]
গুনলা হলো নেওয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র একটি মাস।[৩] এ মাসে তারা ধর্মীয় পুঁথি পাঠ করে এবং ভক্তিগীতি সহকারে প্রার্থনাস্থল ও তীর্থে গমন করে। বস্যার (বর্ষা) সময় গৌতম বুদ্ধ ও তার অনুসারীদের একস্থলে অবস্থান ও ধর্ম শিক্ষাদানকে কেন্দ্র করে এই পবিত্র মাস উদযাপনের ধারা প্রচলিত হয়।[৪]
অনুষ্ঠান
[সম্পাদনা]স্থানীয়তা অথবা বংশানুক্রমিক জাতিসত্তা অনুযায়ী গুনলা বাজন অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে। জাতিসত্তা বা গোষ্ঠী বার্ষিক দিনপঞ্জি অনুসারে জনসম্মুখে সঙ্গীত বাদনের আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও তারা সঙ্গীত শিক্ষা দান করে এবং ধর্মীয় উৎসব, স্তবগানের আসর ও ভোজের আয়োজন করে থাকে।[৫]
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে গুনলা বাজনের সাথে দৈনিক স্বয়ম্ভূনাথ ও অন্যান্য বৌদ্ধ তীর্থে গমন করা হয়। পবিত্র মাসের গুরুত্বপূর্ণ দিন হলো বহিদ্যঃ স্বঃবনেগু (बहीद्यः स्वःवनेगु), যখন ভক্তরা গুনলা বাজনের সাথে পবিত্র দরবারে বহিদ্যঃ-এর (দীপঙ্কর বুদ্ধ) মূর্তি ও পৌভা দর্শন করতে যায়।[৬] মাসের আরেকটি পবিত্র দিন হলো নিসলা ছাঃবনেগু (निसला छा:वनेगु), যখন স্বয়ম্ভূতে নিবেদন করা হয় এবং একটি প্রাঙ্গণে সঙ্গীতায়োজন করা হয়। এছাড়াও নেপাল সংবতের নববর্ষের প্রথম দিন মূল শোভাযাত্রায় গুনলা বাদক দল অংশ নেয়।
সঙ্গীত
[সম্পাদনা]গুনলা বাজনের একটি আয়োজন দ্যঃ হ্লায়েগু নামে দেবদেবীদের উদ্দেশ্যে একটি সংক্ষিপ্ত অভিবাদনের মাধ্যমে শুরু হয়।[৭] শোভাযাত্রা নিয়ে সম্মুখে অগ্রসর হওয়ার সময়, কোনো মন্দির প্রদক্ষিণ করার সময় কিংবা সেতু পারাপারের সময় ভিন্ন ভিন্ন বাজনা বাজানো হয়। এই বাজনাগুলো লবন্থ, চৌহ, গ্রহ, আস্তর, পলিমা ও পর্তাল ইত্যাদি নামে পরিচিত।
শোভাযাত্রায় বাদকেরা মূলত ঢাকঢোল ও করতালের মাধ্যমে মৌসুমি সঙ্গীত ও অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী সঙ্গীত বাজিয়ে থাকেন। সাম্প্রতিককালে চল পাওয়া সঙ্গীতও বাজানো হয়ে থাকে।
গোয়ারা নামক একটি বিশেষ দীর্ঘ বাজনা বাদকেরা মন্দির চত্ত্বর কিংবা পবিত্র দরবারে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে বাজিয়ে থাকেন। এটি সাধারণত ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্থায়ী হয়। গোয়ারা বাজনার মধ্যে জনপ্রিয় হলো অন্নপূর্ণা গোয়ারা, শ্বেতকালী গোয়ারা ও সঙ্গিন গোয়ারা।
বাদ্যযন্ত্র
[সম্পাদনা]"ধাঃ" (धा:) নামক দুইপাশবিশিষ্ট একটি ঢাক গুনলা বাজনে ব্যবহৃত প্রধান বাদ্যযন্ত্র। ধারণা করা হয়, কাঠমান্ডু উপত্যকায় ২০০০ বছর ধরে এই যন্ত্র বাজানো হয়ে থাকে। এই যন্ত্রের বাম দিকে একটি ছোট কাঠি ও ডান দিকে হাত দিয়ে বাজানো হয়।
সঙ্গীতের প্রধান সুর বাজানোর জন্য শিঙ্গা ও সানাই ব্যবহৃত হয়। মূলত "মোয়াহালি" (म्वाहालि) ও বাসুরি (बासुरि, বাঁশির অনুরূপ) নামক স্থানীয় বায়ু প্রবাহে চালিত বাদ্যযন্ত্রও ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্রপাতি হলো "তাঃ" (ता:) এবং "ভুস্যা" (भुस्या:), যা হলো যথাক্রমে ছোট ও বড় আকৃতির করতাল। "নায়খিন" (नायखिं) নামক ছোট তবলা এবং "ছুস্যা" (छुस्या:) নামক করতাল দিয়ে আলাদা বাজনা বাজানো হয়। এছাড়াও "পয়ন্তা" (पंयता:) নামক একটি দীর্ঘ শিঙাও বাজানো হয়।[২][৮]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lewis, Todd T. (জানুয়ারি ১৯৯৬)। "Notes on the Uray and the Modernization of Newar Buddhism" (পিডিএফ)। Contributions to Nepalese Studies। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২। Page 111.
- ↑ ক খ Lewis, Todd T. (Winter ১৯৯৩)। "Contributions to the Study of Popular Buddhism: The Newar Buddhist Festival of Gumla Dharma"। Journal of the International Association of Buddhist Studies। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। Page 328.
- ↑ Locke, John K. (২০০৮)। "Unique Features of Newar Buddhism"। Nagarjuna Institute of Exact Methods। ২৪ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১২।
- ↑ LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005) Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 64. Retrieved 5 January 2012.
- ↑ "Music of Buddha"। The Himalayan Times। ৫ আগস্ট ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ Locke, John Kerr (1985) Buddhist Monasteries of Nepal: A Survey of the Bahas and Bahis of the Kathmandu Valley. Kathmandu: Sahayogi Press. Page 408.
- ↑ University of New Mexico, Laboratory of Anthropology (Museum of New Mexico) (১৯৬০)। "Gunla Baja"। Journal of Anthropological Research, Volume 16। University of New Mexico। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১২। Page 415.
- ↑ Vajracharya, Madansen (১৯৯৮)। "Lokabaja in Newar Buddhist Culture"। সংগ্রহের তারিখ ৪ জানুয়ারি ২০১২।