ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (উর্দু: عبیدالله مبارکپوری ) ছিলেন ভারতীয় একজন লেখক,গবেষক ও মুহাদ্দিস। মিশকাতুল মাসাবীহ-এর প্রামাণ্য আরবী ভাষ্য মিরআতুল মাফাতীহ গ্রন্থ লিখে তিনি বিশ্বব্যাপি সমাদৃত হন।

শায়খুল হাদিস

ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী
عبیدالله مبارکپوری

(রহ.)
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্ম১৯০৯
মৃত্যু১৯৯৪
ধর্মইসলাম
জাতিসত্তাব্রিটিশ ভারত
অঞ্চলভারত
আখ্যাআহলুল হাদিস
ধর্মীয় মতবিশ্বাসআছারি
প্রধান আগ্রহফিকহ, হাদিস
উল্লেখযোগ্য কাজমিরআতুল মাফাতীহ

জন্ম ও শৈশব[সম্পাদনা]

১৩২৭ হিজরীর মুহাররম মাস মোতাবেক ১৯০৯ সালে উত্তর প্রদেশের আজমগড় জেলার মুবারকপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।[১]তাঁর পিতা ছিলেন আব্দুস সালাম মুবারকপুরী। তাঁর পূর্ণ বংশপরিক্রমা হ’ল- ওবায়দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্দুস সালাম বিন খান মুহাম্মাদ বিন আমানুল্লাহ বিন হুসামুদ্দীন।[২]

বংশীয় ঐতিহ্য[সম্পাদনা]

ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর দাদা খান মুহাম্মাদ (১২৫৭-১৩২৭ হিঃ) মুত্তাকী ও দানবীর ছিলেন। অধিক কুরআন মাজীদ তেলাওয়াত, হাদীছে বর্ণিত দো‘আ-কালাম মুখস্থকরণ, ধর্মীয় গ্রন্থাবলী অধ্যয়ন এবং মাসআলা-মাসায়েলের ব্যাপারে তার গভীর অনুরাগ ছিল। তিনি আহলে হাদীস ছিলেন। তাঁর বড় আববা (বাবার নানা) আমানুল্লাহ (মৃঃ ১২৯৯ হিঃ) হেকীম, বংশের নেতা ও হাদীসের প্রতি আমলকারী তথা আহলে হাদীস ছিলেন। তিনি শাহ আব্দুল আযীয মুহাদ্দিছ দেহলভীর (১১৫৯-১২৩৯ হিঃ) ছাত্র শাহ আবূ ইসহাক আল-লেহরাবীর ছাত্র ছিলেন।[২][৩][৪]বাবা মাওলানা আবুল হুদা সালামাতুল্লাহ ওরফে আব্দুস সালাম মুবারকপুরী একজন বড় মাপের আহলে হাদীস আলেম ছিলেন।তিনি ইমাম বুখারীর জীবনী গ্রন্থ "সীরাতুল বুখারি" লিখে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করেন।[৪]

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

মাদরাসা দারুত তা‘লীম (প্রতিষ্ঠা : ১৯১২) দিয়ে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরীর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু।প্রাথমিক স্তরে তিনি কয়েক বছর এখানে অধ্যয়ন করেছিলেন।মৌলভী মুহাম্মাদ আছগার, মৌলভী শাহ মুহাম্মাদ প্রমুখ এখানে তার শিক্ষক ছিলেন।[৪][৫]এরপর তার বাবা আব্দুস সালাম মুবারকপুরী শিক্ষকতার সুবাদে তাকে নিম্নোক্ত মাদরাসাগুলোতে সাথে করে নিয়ে যান এবং সেগুলোতে তিনি শিক্ষার্জন করেন।

তিনি এই মাদরাসায় পড়তেন এবং মুহাম্মদ নুমানের[৬] পরিবারের ও গ্রামের অন্য শিশুদের সাথে খেলাধূলা করতেন। তখন তাঁর বয়স ছিল প্রায় ৮ বছর। তিনি এখানে উর্দূ ও ফার্সী ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। সম্ভবতঃ তিনি এখানে প্রাথমিক স্তরের পড়াশুনাও শেষ করেন।[৪][৭]

১৯১৭-২৩ খৃঃ পর্যন্ত ৫ বছর আব্দুস সালাম মুবারকপুরী এখানে শিক্ষকতা করেন। বাবার কাছে এ মাদরাসায় ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী নাহু, ছরফ, সাহিত্য, ফিকহ ও মানতেকের বিভিন্ন কিতাব তথা কাফিয়া, শরহে মুল্লা জামী, শরহে বেকায়া, মিশকাতুল মাছাবীহ, সিরাজী, শরহে তাহযীব, কুতবী, দীওয়ানে মুতানাববী, অক্লীদাস (অংক) অধ্যয়ন করেন।সাথে সাথে অন্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও তিনি পাঠ গ্রহণ করেন, যাদের নাম জানা যায়নি।[৪][৭][৮][৯]

১৯২৩ সালে আব্দুস সালাম মুবারকপুরী এখানে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হন। এখানে ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভী ও হুসাইন বিন মুহসিন ওরফে হুসাইন আরব ইয়ামানীর ছাত্র আল্লামা আহমাদুল্লাহ প্রতাপগড়ী দেহলভীর নিকট সহিহ বুখারী, মুসলিম, মুওয়াত্তা ইমাম মালেক; হাফেয আব্দুর রহমান নগরনাহসাবীর নিকট তাফসীরে জালালাইন, তিরমিযী, নূরুল আনওয়ার, মাকামাতে হারীরী ও দীওয়ানুল হামাসা; গোলাম ইয়াহ্ইয়া খানপুরীর নিকট তাফসীরে বায়যাভী, হেদায়া (শেষ দু’খন্ড), তালবীহ, তাওযীহ, শামসে বাযেগাহ, হামদুল্লাহ, কাযী মুবারক, শরহে হিদায়াতুল হিকমাহ, শরহে আকাইদে নাসাফী, শরহে মাওয়াকিফ, তাছরীহ, শরহে চগমনী, শরহে মাতালে‘ ও মুসাল্লামুছ ছুবূত; আবূ তাহের বিহারীর নিকট সুনান আবূ দাঊদ ও হাদিয়া সা‘দিয়া; আব্দুল গফূর জয়রাজপুরীর নিকট মুকাদ্দামা ইবনে খালদূন ও শামসে বাযেগার কতিপয় খন্ড; মুহাম্মাদ ইসহাক আরাভীর নিকট শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী রচিত আল-ফাওযুল কাবীর; আব্দুল ওয়াহ্হাব আরাভীর নিকট ছদরা এবং হাফেয মুহাম্মাদ গোন্দলভীর নিকট তাফসীরে বায়যাভীর কিয়দংশ অধ্যয়ন করে জ্ঞানতৃষ্ণা নিবারণ করেন। এখানে তিনি ক্লাসে সবসময় ফার্স্ট হতেন। এভাবে সুদীর্ঘ ৫ বছর দারুল হাদীস রহমানিয়ায় বাবা ও উল্লেখিত খ্যাতিমান আলেমদের নিকট শিক্ষা লাভ করে ১৯২৭ খৃষ্টাব্দে এখান থেকে ফারেগ হন এবং সনদ লাভ করেন। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর।[১][৪][৭][৮][৯]

আব্দুর রহমান মুবারকপুরীর কাছে শিক্ষাগ্রহণ :[সম্পাদনা]

ইলমে দ্বীন শিক্ষা লাভে প্রবল আগ্রহী ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী দারুল হাদীস রহমানিয়ায় অধ্যয়নকালে ছুটিতে বাড়ীতে এসে অযথা সময় নষ্ট করতেন না। সে সময় তিরমিযীর জগদ্বিখ্যাত ভাষ্যকার আব্দুর রহমান মুবারকপুরী মুবারকপুরে অবস্থান করছিলেন। জ্ঞান আহরণে সদা উদগ্রীব মুবারকপুরী এ সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করেন। তিনি তাঁর নিকট মাদরাসার ছুটিকালীন সময়ে তিরমিযীর (প্রথম দিকের বেশ কিছু অংশ), শরহে নুখবাতুল ফিকার (কিয়দংশ), মুকাদ্দামা ইবনে ছালাহ ও সিরাজী অধ্যয়ন করেন।[৮][৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইমাম খান নওশাহরাবী। তারাজিমে ওলামায়ে হাদীছ হিন্দ (উর্দু ভাষায়)। পাকিস্তান: মারকাযী জমঈয়তে তলাবায়ে আহলে হাদিস। পৃষ্ঠা ৩২৯। 
  2. তাযকেরায়ে ওলামায়ে মুবারকপুর (উর্দু ভাষায়)। পৃষ্ঠা ১৬৭। 
  3. আব্দুস সালাম মুবারকপুরীসীরাতুল বুখারী। কুয়েত: দারুল ফাতহ। পৃষ্ঠা ৪১। 
  4. At-tahreek, Monthly। "ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী (রহঃ) - ড. নূরুল ইসলাম"মাসিক আত-তাহরীক । ধর্ম, সমাজ ও সাহিত্য বিষয়ক গবেষণা পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৩-০২ 
  5. "মাসিক মুহাদ্দিস" (উর্দু ভাষায়) (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সংস্করণ): ২৬৮–৬৯। 
  6. মুবারকপুর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে মৌনাথভঞ্জন নগরীতে অবস্থিত এ মাদরাসায় ১৯১৪-১৯১৭ সাল পর্যন্ত ৩ বছর আব্দুস সালাম মুবারকপুরী শিক্ষকতা করেন। তিনি তখন মুহাম্মাদ নু‘মানের ডুমনপুরার বাড়ীতে অবস্থান করতেন।মুহাম্মাদ নু‘মান বিন আলহাজ আব্দুর রহমান মৌবী আযমী (১২৯৭-১৩৭১ হিঃ) জামে‘আ সালাফিয়া বেনারসের সাবেক রেক্টর ড. মুকতাদা হাসান আযহারীর (১৯৩৯-২০০৯ খৃঃ) নানা। তিনি (নু‘মান) মিয়াঁ নাযীর হুসাইন দেহলভীর ছাত্র। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের ওমরাবাদে অবস্থিত জামে‘আ দারুস সালামে (প্রতিষ্ঠা : ১৯২৪ খৃঃ) তিনি হাদীসের দরস দিতেন(জুহূদ মুখলিছাহ, পৃঃ ১৫৪, ২৬৬)।
  7. "সাওতুল উম্মাহ" (আরবি ভাষায়) (ডিসেম্বর সংস্করণ)। ২০০৮: ১৬–১৮। 
  8. ওবায়দুল্লাহ মুবারকপুরী, মিরআতুল মাফাতীহ ১/৯পৃঃ
  9. "আল-বালাগ" (মার্চ ১৯৯৪ সংস্করণ): ৩৯–৪০।