ওড়িশার প্রস্তর খোদাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কোনারকে শিলার ওপর ক্ষোদিত নকশা
ভৌগোলিক নির্দেশক
বিকল্প নামকোণার্ক পাথর খোঁদাই
(କୋଣାର୍କ ପଥର ଖୋଦେଇ)
ধরনহস্তশিল্প, শিলা
অঞ্চলকোণার্ক, পুরী জেলা, ওড়িশা
দেশভারত
উপাদানহস্তশিল্প

ওড়িশায় প্রস্তর খোদাই পাথরের ওপর শিল্প ও মূর্তি ফুটিয়ে তোলা বা উপযোগী বস্তুর ওপর কারুকার্য তৈরি করার একটি প্রাচীন শিলাশৈল্পিক অভ্যাসের প্রাচীন রীতি। এটি ভারতের ওড়িশা রাজ্যের একটি প্রাচীন অনুশীলন। পাথর খোদাই করে কারুকার্য ফুটিয়ে তোলার শিল্পীদের উপস্থিতি রয়েছে মূলত কটক জেলার ললিতগিরি, পুরীভুবনেশ্বর অঞ্চলে, যদিও ময়ূরভঞ্জ জেলার খিচিংয়েও কিছু খোদায়ের নিদর্শন পাওয়া যায়। প্রস্তর খোদাই ওড়িশার হস্তশিল্পের মধ্যে অন্যতম প্রধান৷ শিল্প আকৃৃৃতিগূলি মূলত প্রথাগত পদ্ধতির খোদাই কাজের ওপর নির্ভর৷ এর মধ্যে রয়েছে কোণার্ক সূর্য মন্দিরের এবং এর জটিল কৌণিক ভাস্কর্য এবং লাল বেলেপাথরের উপর সূক্ষ্ম প্রাণবন্ত খোদাইয়ের কাজ হস্তশিল্প রীতির অন্যতম উদাহরণ। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভগুলির মধ্যে রয়েছে উদয়গিরিরত্নগিরি স্তূপসহ জগন্নাথ, লিঙ্গরাজ, মুক্তেশ্বরের মন্দির এবং এই অঞ্চলের অন্যান্য মন্দিরগুলি।[১]

পাথর[সম্পাদনা]

কোণার্ক পাথর খোদাইয়ে ব্যবহৃত হয়েছে বেলেপাথর, সাজিমাটির পাথর, সর্পিলপাথর, মাকরানা মার্বেল এবং গ্রানাইট পাথর। দক্ষ শিল্পীরা নরম, সাদা সাজিমাটির পাথর, খাদিপাথর বা কিছুটা শক্ত সবুজ রঙের ক্লোরাইট বা কোচিলপাথর ব্যবহার করে থাকতে পারেন। তবে মূল নির্মাণে গোলাপী খান্ডোলাইট, সাহানাপাথর বা বাউলপাথার এবং সবচেয়ে শক্ততম, কালো গ্রানাইট এবং মুগুনি পাথরের মতো শিলাই ব্যবহৃত হয়েছে।

পদ্ধতি[সম্পাদনা]

কাটা হবে এরকম আকারের পাথরের উপর প্রয়োজনীয় আকারের একটি রূপরেখা প্রথমে অঙ্কিত হয়। একবার রূপরেখা খোদাই করা গেলে, অযাচিত অংশগুলি সরিয়ে চূড়ান্ত চিত্রটি আনা হয়। শক্ত পাথরগুলির জন্য, বাটালি বা ঐজাতীয় অস্ত্র অথবা অন্য কোনো পদ্ধতিতে অতিরিক্ত উপাদান ছেঁটে ফেলা হয়। নরম পাথরের ওপর একটি তীক্ষ্ণ সমতল-ধারযুক্ত লোহার সরঞ্জাম দিয়ে অতিরিক্ত উপাদানগুলি আঁচড় দিয়ে তৈরি করা হয় সূক্ষ্ম কাজ। বিভিন্ন আকারের হাতুড়ি এবং বাটালি তথা মুনা, পাটিলি, মার্চুয়াল, থুক-থুকি এবং নিতানা ব্যবহার করা হতো এসব নির্শন তৈরিতে।

পণ্য[সম্পাদনা]

পাাথর খোদাইয়ের বিষয়বস্তু সাধারণত প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিতে পৌরাণিক ঘটনা বা ব্যক্তিত্বের বিবরণকে ফুটিয়ে তোলা৷ এছাড়া চিরাচরিত চিত্র মোমবাতি ধারক, পেনদানি, কাগজ চাপার বস্তু, গ্রন্থপ্রান্তিকী, পিলসুজ এবং পাথরের তৈরি বিভিন্ন আকৃৃৃতির ব্যবহার্য একাধিক আধার তৈরি করা হয়েছে। কুঁদ নামে একটি কাঠের লেদ দিয়ে বাঁক এবং পালিশ করা, কারিগররা সুন্দর পালিশ প্লেট (থালি), পাত্রে (জিনা, পাথুরি), কাপ এবং চশমা তৈরি করা হতো। এগুলি বিশেষ পুজো, নিত্য পূজাতে এবং প্রতিদিনের খাওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। পাথরের তৈরি পাত্র দই সংরক্ষণ করার জন্য ভাল কারণ পাথর দইয়ের অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া দেখায় না। আমার কাঠের আলমারি কে পিঁপড়ার আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করতে এইরকম আকৃতির পাথরের পাত্রে জল ধরে তার উপর আলমারির পায়া ডুবিয়ে রাখার প্রচলন রয়েছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]