এশীয় নীলপরী
এশীয় নীলপরী Irena puella | |
---|---|
পুরুষ নীলপরী | |
স্ত্রী নীলপরী | |
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
জগৎ: | প্রাণীজগৎ |
পর্ব: | কর্ডাটা |
শ্রেণী: | পক্ষী |
বর্গ: | প্যাসারিফর্মিস |
উপবর্গ: | Passeri |
পরিবার: | Irenidae |
গণ: | Irena |
প্রজাতি: | I. puella |
দ্বিপদী নাম | |
Irena puella (ল্যাথাম, ১৭৯০) | |
বৈশ্বিক বিস্তৃতি | |
প্রতিশব্দ | |
Coracias puella |
এশীয় নীলপরী (বৈজ্ঞানিক নাম: Irena puella) (ইংরেজি: Fairy-bluebird) বা নীলপরী Irenidae (আইরেনিডি) গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত Irena (আইরেনা) গণের এক প্রজাতির উজ্জ্বল নীল রঙের পাখি।[১][২] এশীয় নীলপরীর বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ শান্ত বালিকা (গ্রিক eirene = শান্ত; ল্যাটিন puella = বালিকা)।[২] সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ৩৭ লাখ ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার।[৩] বিগত কয়েক দশক ধরে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমে গেলেও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছে নি। সেকারণে আই. ইউ. সি. এন. এই প্রজাতিটিকে Least Concern বা ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।[৪] বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত।[২] Irena গণের অন্তর্ভুক্ত দুইটি প্রজাতির মধ্যে এশীয় নীলপরী একটি। অন্যটি হচ্ছে ফিলিপাইনের নীলপরী।
বিস্তৃতি
[সম্পাদনা]দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ জুড়ে এশীয় নীলপরীর বিচরণ। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, ব্রুনাই, ফিলিপাইন ও চীন এই প্রজাতিটির মূল আবাসস্থল।[৪]
উপপ্রজাতি
[সম্পাদনা]এশীয় নীলপরীর মোট ছয়টি উপপ্রজাতি এ পর্যন্ত শনাক্ত করা গিয়েছে।[৫] উপপ্রজাতিগুলো হল:
- I. p. puella (ল্যাথাম, ১৭৯০) - ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোচীন, মালয় উপদ্বীপের উত্তরাংশ ও দক্ষিণ চীন জুড়ে এদের আবাস। মনোনীত আর সবচেয়ে বড় উপপ্রজাতি। আরেকটি উপপ্রজাতি I. p. sikkimensis কে এই উপপ্রজাতির অন্তর্গত বলে মনে করা হয়।
- I. p. andamanica (আব্দুলআলী, ১৯৬৪) - আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ। এই উপপ্রজাতিটিকে অনেকে মনোনিত উপপ্রজাতি I. p. puella হিসেবে গণ্য করলেও মোটা ঠোঁটের জন্য একে আলাদা করা হয়েছে।
- I. p. malayensis (এফ. মুরে, ১৮৫৪) - মালয় উপদ্বীপের দক্ষিণাংশ এদের প্রধান আবাস।
- I. p. crinigera (শার্প, ১৮৭৭) - সুমাত্রা, বোর্নিও, বাংকা, বেলিটাং এদের প্রধান আবাস। সবচেয়ে ক্ষুদ্রকায় উপপ্রজাতি।
- I. p. turcosa (ওয়াল্ডেন, ১৮৭০) - এদের বিস্তৃতি শুধুমাত্র জাভায়।
- I. p. tweeddalei (শার্প, ১৮৭৭) - শুধুমাত্র পশ্চিম ফিলিপাইনে এদের বিস্তৃতি সীমাবদ্ধ। উপপ্রজাতিটির নাম অনেকসময় tweeddaleii হিসেবে লেখা হয়।
বিবরণ
[সম্পাদনা]এশীয় নীলপরী ভাত শালিকের আকারের লালচে দেহের বৃক্ষচারী পাখি। এদের দৈর্ঘ্য কমবেশি ২৫ সেন্টিমিটার, ডানা ১৩ সেন্টিমিটার, ঠোঁট ২.৯ সেন্টিমিটার, পা ১.৯ সেন্টিমিটার ও লেজ ১০ সেন্টিমিটার।[২] স্ত্রী ও পুরুষ পাখির চেহারা ভিন্ন। পুরুষ পাখির ডানা কালো। এছাড়া লেজ, গলা, বুকও কালো। কান-ঢাকনি এবং ঠোঁট ও চোখের মাঝের অংশ কালো। মাথার চাঁদি থেকে কোমর পর্যন্ত পিঠ উজ্জ্বল বেগুনি-নীল। ঠোঁট সোজা ও সীসা বর্ণের। নীলচে লেজতল-ঢাকনি ছাড়া দেহতল ঘোর কালো। স্ত্রী পাখির ডানার পালক কালচে ও ডানার প্রান্তদেশ নীলচে-ধূসর। এই অংশটুকু ছাড়া সারা দেহ অনুজ্জ্বল সবুজাভ-নীল রঙের। ঠোঁট কালচে বাদামি। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় পাখির চোখ গাঢ় লাল। মুখ ধূসরাভ-পাটকিলে; পা, পায়ের পাতা ও নখর কালো। এদের পা শরীরের তুলনায় ছোট। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির চেহারা পুরোপুরি স্ত্রী পাখির মত, কেবল ডানা বাদামি রঙের।[২] প্রজননকালে পুরুষ পাখি উজ্জ্বলতম বর্ণ ধারণ করে। উপপ্রজাতি ভেদে এদের আকার ও চেহারায় পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।[৬] বন্য পরিবেশে এরা ১০-১২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বন্দী পরিবেশে এরা সর্বোচ্চ ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে।[৭]
স্বভাব
[সম্পাদনা]এশীয় নীলপরী চিরসবুজ ও আর্দ্র চিরসবুজ বনের পাখি। এরা বেশ লাজুক ও সতর্ক পাখি, মানুষের সংস্পর্শ থেকে বহু দূরে ঘন বন এদের প্রধান বিচরণস্থল। সচরাচর জোড়ায় জোড়ায় অথবা ৬-৮ সদস্যের ছোট ঝাঁকে থাকে।[৭] এদের ছোট ছোট ঝাঁক আসলে কোন একটি গাছের ফল খাওয়ার সময় সৃষ্টি হয়। আবার অন্য পাখির দলেও এদের দেখা যায়। ফলদ গাছ, ফুলগাছ ও ঝোপঝাড়ে এরা ঘুরে বেড়ায়। গরমের দিনে এরা বনের অভ্যন্তরস্থ জলাশয়ে দল বেঁধে গোসল করে। এরা পরিযায়ী স্বভাবের নয়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে ফুলের মধু, ডুমুর এবং অন্যান্য পাকা ফল ও বিভিন্ন পোকামাকড়। খাওয়ার সময় এরা বার বার লেজ নাচায় আর ঘন ঘন ডাকে। এদের ডাকে বৈচিত্র্য রয়েছে আর ডাক উঁচু ও সুরেলা। ডাক অনেকটা: উইট্-উইট্...; হুইটিট্...; হুইট....; হুয়িক-উয়ি-উয়িক্.... অথবা উয়িইউয়িট্.....।[২]
প্রজনন
[সম্পাদনা]জানুয়ারি থেকে জুন মাস এদের প্রধান প্রজনন মৌসুম। ঘন ঝোপে গাছের চেরা ডালে বাসা করে। ঘন বনের অন্যসব পাখিরা যেখানে খোলা শুষ্ক অঞ্চলে বাসা করে, নীলপরী সেখানে বনের সবচেয়ে আর্দ্র ও ঘন এলাকায় বাসা করে। বাসা পেয়ালাকৃতির। ভূমি থেকে বাসার উচ্চতা ২ থেকে ৬ মিটার উঁচুতে হয়। বাসার ভিত্তি হল পত্রগুচ্ছ। বাসার অন্যান্য উপকরণ হল ছোট মূল ও পাতার শিরা। এছাড়া বাসায় সবুজ মসের আস্তর থাকে, যার ফলে বাসার অস্তিত্ব খুঁজে বের করতে কষ্ট হয়। কেবল স্ত্রী নীলপরী বাসা বানায়। বাসা বানানো হলে ২-৩টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো জলপাই-ধূসর কিংবা সবজে-সাদা রঙের, তাতে বিচ্ছিন্ন বাদামি ছিট ছিট থাকে। ডিমের মাপ ২.৮ × ২.০ সেন্টিমিটার। স্ত্রী নীলপরী একাই ডিমে তা দেয়।[২] ১৩ দিনে ডিম ফুটে ছানা বের হয়। বাবা-মা উভয়ে ছানাদের খাওয়ানোর ভার নেয়। ছয় সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত ছানারা বাবা-মার সাথে থাকে।[৭] উপযুক্ত পরিবেশ পেলে এশীয় নীলপরী বন্দী অবস্থাতেও সফলভাবে বংশবিস্তার করতে পারে।
চিত্রমালা
[সম্পাদনা]-
পুরুষ এশীয় নীলপরী
-
স্ত্রী নীলপরী
-
স্ত্রী নীলপরী
-
জন গুল্ড কর্তৃক অঙ্কিত চিত্র, ১৮৫০-১৮৮৩
-
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ রেজা খান, বাংলাদেশের পাখি (ঢাকা: বাংলা একাডেমী, ২০০৮), পৃ. ৮৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জিয়া উদ্দিন আহমেদ (সম্পা.), বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ: পাখি, খণ্ড: ২৬ (ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, ২০০৯), পৃ. ৩১৪।
- ↑ Irena puella ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে, BirdLife International এ এশীয় নীলপরী বিষয়ক পাতা।
- ↑ ক খ Irena puella[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], The IUCN Red List of Threatened Species এ এশীয় নীলপরী বিষয়ক পাতা।
- ↑ Asian Fairy-bluebird, The Internet Bird Collection এ এশীয় নীলপরী বিষয়ক পাতা।
- ↑ Asian Fairy-bluebird[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ], Twearth.com.
- ↑ ক খ গ এশীয় নীলপরী সম্পর্কে আরও তথ্য
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- আইইউসিএন লাল তালিকার ন্যূনতম উদ্বেগজনক প্রজাতি
- এশিয়ার পাখি
- ভারতের পাখি
- বাংলাদেশের পাখি
- নেপালের পাখি
- ভুটানের পাখি
- শ্রীলঙ্কার পাখি
- মিয়ানমারের পাখি
- থাইল্যান্ডের পাখি
- সিঙ্গাপুরের পাখি
- মালয়েশিয়ার পাখি
- ইন্দোনেশিয়ার পাখি
- কম্বোডিয়ার পাখি
- লাওসের পাখি
- ভিয়েতনামের পাখি
- ব্রুনাইয়ের পাখি
- ফিলিপাইনের পাখি
- চীনের পাখি
- আইরেনা (গণ)
- ১৭৯০-এ বর্ণিত পাখি
- জন ল্যাথাম (পক্ষীবিদ) কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা