আবু মা'শার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
আবু মা'শআর আল-বালখী
১৫ শতকের একটি পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠা "জন্মের বই" (BNF আরবী 2583 fol. 15v)
জন্ম১০ আগস্ট ৭৮৭
মৃত্যু৯ মার্চ ৮৮৬ (বয়স ৯৮)
উচ্চশিক্ষায়তনিক পটভূমি
যার দ্বারা প্রভাবিতএরিস্টটল এবং টলেমি
উচ্চশিক্ষায়তনিক কর্ম
যুগইসলামি স্বর্ণযুগ
(আব্বাসীয় যুগ)
প্রধান আগ্রহজ্যোতিষশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান
যাদের প্রভাবিত করেনআস-সিজযি, অ্যালবার্টাস ম্যাগনাস, রজার বেকন, পিয়ার ডি অ্যাইলি, পিকো দেলা মিরান্দোলা.[২]

আবু মা'শআর আল-বালখী, বা লাতিনীকৃত Albumasar (আলবুসার বা আলবুক্সার নামেও পরিচিত; পুরো নাম: আবু মাʿশার জাʿফার ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে ʿউমার আল-বালখী أبو معشر جعفر بن محمد بن عمر البلخي; ১০ আগস্ট ৭৮৭ – ৯ মার্চ ৮৮৬, আহ ১৭১–২৭২),[৩] ছিলেন একজন প্রাথমিক পারসিক[৪][৫] মুসলিম জ্যোতিষী, যিনি আব্বাসীয় খলিফাদের রাজদরবারে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্যোতিষী হিসেবে বিবেচিত হন।[৬] যদিও তিনি কোনো প্রধান উদ্ভাবক ছিলেন না, তবে জ্যোতিষীদের প্রশিক্ষণের জন্য তার লেখা ব্যবহারিক ম্যানুয়াল মুসলিম বুদ্ধিবৃত্তিক ইতিহাসকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং অনুবাদের মাধ্যমে পশ্চিম ইউরোপ ও বাইজেন্টাইনের ইতিহাসকেও প্রভাবিত করেছিল।[৭]

জীবনী[সম্পাদনা]

আবু মা'শার আল-বাল্খী (ফার্সি: ابوماشر بلخی) ছিলেন একজন পারসিক জ্যোতির্বিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং জ্যোতিষী। তিনি ৮০৫ সালে খোরাসানের বাল্খে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৮৬ সালে ইরাকের ওয়াসিতে মৃত্যুবরণ করেন।[৮]

তিনি ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী জ্যোতিষী এবং তাঁর রচনাবলী মুসলিম বিশ্বে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তিনি জ্যোতিষশাস্ত্র, গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যা নিয়ে বহু গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো "Kitab Al-Qiranat" (The Book of Conjunctions), "Kitab Al-Madkhal Al-Kabir" (The Book of the Great Introduction) এবং "Kitab Al-Uluf" (The Book of Thousands)।[৯]

আবু মা'শারের জ্যোতিষশাস্ত্রের মূল ভিত্তি ছিল হেলেনিস্টিক জ্যোতিষশাস্ত্র, তবে তিনি পারস্য এবং ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্র থেকেও প্রভাবিত হয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থান মানুষের জীবন এবং ভবিষ্যৎকে প্রভাবিত করে। তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক পূর্বাভাস, আবহাওয়া পূর্বাভাস এবং ব্যক্তিগত জীবনের বিভিন্ন ঘটনার পূর্বাভাস দিতেন।[১০]

আবু মা'শারের জ্যোতিষশাস্ত্র ইসলামী বিশ্বের বাইরেও প্রভাব বিস্তার করেছিল। তাঁর রচনাবলী ইউরোপে অনুবাদ করা হয় এবং ইউরোপীয় জ্যোতির্বিদ ও জ্যোতিষীগণের দ্বারা অধ্যয়ন করা হয়।

তিনি একজন পারস্য জাতীয়তাবাদী ছিলেন এবং সর্বদাই পারস্য সাম্রাজ্যের পুনরুত্থানের আশা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে জ্যোতিষশাস্ত্রের মাধ্যমে পারস্য সাম্রাজ্যের পুনরুত্থানের সময় নির্ধারণ করা সম্ভব।[১১]

আবু মা'শার ছিলেন একজন অসাধারণ জ্যোতিষী, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। তাঁর রচনাবলী ইসলামী বিশ্ব এবং ইউরোপ উভয় ক্ষেত্রেই জ্যোতিষশাস্ত্রের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

রচনা[সম্পাদনা]

আবু মাশার আল-বালখি জ্যোতির্বিদ্যা ও জ্যোতিষশাস্ত্রের উপর অনেকগুলো রচনা লিখেছিলেন, যার মধ্যে কিছু আজও বিদ্যমান।[১২]

  • কিতাব আল-মুদখাল আল-কবির (জ্যোতিষে বৃহত্তর ভূমিকা): এই রচনাটি জ্যোতিষে একটি ভূমিকা এবং ১১শ শতাব্দীতে লাতিন ও গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল। এটি পশ্চিমা দার্শনিকদের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল, যার মধ্যে রয়েছে আলবার্ট দ্য গ্রেট।[১৩]
  • কিতাব মুখতাসার আল-মুদখাল (জ্যোতিষে সংক্ষিপ্ত ভূমিকা): এটি উপরের রচনার একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ এবং অ্যাডেলার্ড অব বাথের দ্বারা লাতিনে অনুবাদ করা হয়েছিল।[১৪]
  • কিতাব আল-মিলাল ওয়া আল-দওয়াল (ধর্ম ও রাজবংশের বই): এটি সম্ভবত আবু মাশারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটি রজার বেকন, পিয়ার ডি'আইলি এবং পিকো দেলা মিরান্ডোলা সহ প্রধান পশ্চিমা চিন্তাবিদদের দ্বারা সমালোচনা করা হয়েছিল।[১৫]
  • ফী জিকর মা তাদুল্লা আলাইহি আল-আশখাস আল-উলউইয়া (আকাশীয় বস্তুগুলির ইঙ্গিতগুলোর উপর)
  • কিতাব আল-দালালাত আলা আল-ইত্তিসালাত ওয়া কিরানাত আল-কওয়াকিব (গ্রহের সংযুক্তিগুলির ইঙ্গিতগুলোর বই)
  • কিতাব আল-উলুফ (হাজারের বই): এই রচনাটি শুধুমাত্র সিজিজি দ্বারা সংক্ষিপ্তসার থেকে জানা যায়।[১৬]
  • কিতাব তাহাউইল সিনী আল-আলাম (আবু মাশারের ফুল): এই রচনাটি বছরের মাস এবং দিনগুলি পরীক্ষা করতে রাশিফল ব্যবহার করে। এটি জ্যোতিষীদের জন্য একটি ম্যানুয়াল ছিল এবং ১২শ শতাব্দীতে জন অব সেভিলের দ্বারা লাতিনে অনুবাদ করা হয়েছিল।
  • কিতাব তাহাউইল সিনী আল-মাওয়ালিদ (জন্মের বছরগুলোর বিপ্লবের বই): এই রচনাটি ১০০০ খ্রিস্টাব্দে গ্রীক ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছিল এবং গ্রীক অনুবাদ থেকে ১৩শ শতাব্দীতে লাতিনে অনুবাদ করা হয়েছিল।
  • কিতাব মাওয়ালিদ আল-রিজাল ওয়া আল-নিসা (পুরুষ ও নারীর জন্মের বই): এই রচনাটি ইসলামী বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছিল।[১৭][১৮]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. The Arrival of the Pagan Philosophers in the North:A Twelfth Century Florilegium in Edinburgh University Library, Charles Burnett, Knowledge, Discipline and Power in the Middle Ages, ed. Joseph Canning, Edmund J. King, Martial Staub, (Brill, 2011), 83;"...prolific writer Abu Ma'shar Ja'far ibn Muhammad ibn 'Umar al-Balkhi, who was born in Khurasan in 787 A.D. and died in Wasit in Iraq in 886..."
  2. Yamamoto 2007
  3. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  4. Frye, Richard Nelson, সম্পাদক (১৯৭৫)। The Cambridge history of Iran. 4: The period from the Arab invasion to the Saljuqs / ed. by R. N. Frye (6. print সংস্করণ)। Cambridge: Cambridge Univ. Pr। আইএসবিএন 978-0-521-20093-6 
  5. Hockey, Thomas A. (২০১৪)। Biographical encyclopedia of astronomers (2nd edition সংস্করণ)। New York: Springer। আইএসবিএন 978-1-4419-9918-4 
  6. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  7. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  8. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  9. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  10. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  11. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  12. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  13. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  14. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  15. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  16. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  17. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২। 
  18. "Abu Ma'shar al-Balkhi"Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৯-১২।