বিষয়বস্তুতে চলুন

আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ
১৮৮৪ - ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৯
ডাক নাম পীর বাদশা মিয়া
জন্ম তারিখ ১৮৮৪
জন্মস্থান বাহাদুরপুর, মাদারীপুর মহকুমা, ফরিদপুর জেলা, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি, ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে শিবচর উপজেলা, বাংলাদেশ)
মৃত্যু তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৯(1959-12-14) (বয়স ৭৪–৭৫)
মৃত্যুস্থান বাহাদুরপুর, মাদারীপুর মহকুমা, ফরিদপুর জেলা, পূর্ব পাকিস্তান
আন্দোলন ফরায়েজি আন্দোলন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন

আবা খালেদ রশীদ উদ্দিন আহমদ (১৮৮৪–১৯৫৯) বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং আধ্যাত্মিক সাধক ছিলেন; তিনি পীর বাদশা মিয়া নামেও পরিচিত। হাজী শরিয়তুল্লাহের চতুর্থতম বংশধর এই ব্যক্তি ১৯০৬ সালে তার পিতার মৃত্যুর পর বাহাদুরপুর আস্তানা ও ফরায়েজি আন্দোলনের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।[]

প্রারম্ভিক জীবন

[সম্পাদনা]

বাদশা মিয়া ১৮৮৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির মাদারীপুর মহাকুমার শিবচর থানাধীন বাহাদুরপুর গ্রামে সাঈদ উদ্দিন আহমদের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।[]

১৮৮৭ সালে বাদশা মিয়া তার পিতা খান বাহাদুর সৈয়দউদ্দীনের নিকট আরবি ভাষা শিখতে শুরু করেন এবং নিজ বাড়িতে ক্বারী সৈয়দ আহমদের কাছে কায়দা বাগদাদী পড়েন। তার পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় ক্বারী মোহাম্মদ সাহেবের নিকট কুরআন তেলাওয়াত করা শিখেন। এর পর নিজ বাড়িতে বাবু গুরুদেব পোদ্দারের নিকট অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়াশুনা করেন। ১৮৯৭ সালে তিনি ঢাকা মোহসিনীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকে জামায়াতে ফাজিল পাস করেন। তিনি আরবি, উর্দু, ফারসি ও ইংরেজি ভাষা শিখেছিলেন।[]

কর্মজীবন

[সম্পাদনা]

মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে ঢাকার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ ও বগুড়ার নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর নেতৃত্বে ২৬ ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে ঢাকার নবাবের শাহবাগ বাগানের বাড়িতে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মোহামেডান শিক্ষা সম্মেলনে বাদশা মিয়া যোগদান করেন। সেখানে সলিমুল্লাহ নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনের প্রস্তাব করলে তিনি তা সমর্থন করেন এবং ৩০ ডিসেম্বর ১৯০৬ সালে নবাবের শাহবাগ বাগানের বাড়িতে নিখিল ভারত মুসলিম লীগ গঠনের অধিবেশনে যোগ দেন। ১৯০৭ সালে ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ থানার রেকাবী বাজারে মুসলিম লীগকে জোরদার করার লক্ষে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে সলিমুল্লাহ সভাপতি ও বাদশা মিয়া প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য প্রদান করেন।[] ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর তিনি সরকারবিরোধী ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন।[] ৭ সেপ্টেম্বর ১৯২১ সালে বাকেরগঞ্জ জেলার জনসভায় ব্রিটিশ বিরোধী বক্তব্য দেওয়ায় রাজদ্রোহীতার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করে মাদারীপুর থানায় নেয়া হলে পুলিশ ও জেলখানা কর্তৃপক্ষ তাকে মাদারীপুরে রাখা নিরাপদ মনে না করলে পরে তাকে ফরিদপুর কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৫ আগস্ট ১৯২২ সালে আলিপুর কারাগার হতে তিনি মুক্তি লাভ করেন।[]

১৯২৬ সালে এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পার্টির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে তিনি অবদান রেখেছিলেন।[] ১৯৪০ সালে বাদশা মিয়া শিবচরে বাহাদুরপুর শরিয়াতীয়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।[]

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর বাদশাহ মিয়া দেশ থেকে পতিতাবৃত্তি নিষিদ্ধ করার দাবি জানালে সরকার না করায় তিনি পতিতা উচ্ছেদ আন্দোলন পরিচালনা করেন এবং নিজ উদ্যোগে মানুষের সাহায্য নিয়ে বরহামগঞ্জ ও চাঁদপুরে পতিতালয় উচ্ছেদ করেন।[] তিনি নেজামে ইসলাম পার্টিতে যোগদান করেন এবং ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে পূর্ববঙ্গ আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন।[] তৎকালীন নবগঠিত প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার বিকাশের জন্য প্রতি গ্রামে কমপক্ষে একটি মসজিদ ভিত্তিক কোরআনী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা এবং কয়েকটি গ্রামকে গুচ্ছ করে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ফরায়েজিদের নির্দেশ প্রদান করেন। তিনি খুৎবায়ে ছাদারত নামে একটি গ্রন্থ রচনা করেন।[]

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

১৫ আগস্ট ১৯০৭ সালে বাদশা মিয়া ঢাকার নবাব পরিবারের খাজা রাছুল বখশের কন্যা ছালেহা বেগমকে বিয়ে করেন। তিনি দুই পুত্র ও চার কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন।[] তার দুই পুত্রের নাম ছিল আবুল হাফেজ মোহসেন উদ্দিন আহমদমুহিউদ্দিন আহমদ[]

মৃত্যু ও কিংবদন্তি

[সম্পাদনা]

বাদশা মিয়া ১৪ ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে ৭৫ বছর বয়সে বাহাদুরপুর গ্রামে অবস্থিত বাসভবনে বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন।[]

বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে পীর বাদশা মিয়া নামে অসংখ্য মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার নামে রয়েছে কোড়ালিয়া পীর বাদশা মিয়া সড়ক, পীর বাদশা মিয়া জামে মসজিদ এবং পীর বাদশা মিয়া খানকা (আস্তানা)।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. গাজী, মুহাম্মদ আবদুর রহমান (১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬)। "সত্য ও ন্যায়ের সাথে কাজের মিল রেখে করেছেন বাদশাহী"চাঁদপুর কণ্ঠ। ২৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ আগস্ট ২০১৯ 
  2. মিয়া, আবদুল জাব্বার (১৯৯৪)। মাদারীপুর জেলা পরিচিতি। মাদারীপুর: মিসেস লীনা জাব্বার। পৃষ্ঠা ১৬৪। 
  3. মঈন-উদ-দীন আহমদ খান (২০১২)। "ফরায়েজী আন্দোলন"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. কিসমতি, জুলফিকার আহমদ (১৯৮৭)। বাংলাদেশের সংগ্রামী ওলামা পীর-মাশায়েখ। প্রগতি প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ১, ২৯। 
  5. "Pir Badshah Miah dead"। দ্য পাকিস্তান অবজার্ভার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৬ ডিসেম্বর ১৯৫৯। পৃষ্ঠা ৫।