আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব (International relations theory) হচ্ছে তাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক পাঠ। এটি একটি ধারণাগত কাঠামো দান করবার চেষ্টা করে যার উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষণ করা হয়।[১] ওলে হলস্টি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহ রঙ্গিন রোদচশমার মত কাজ করে, যা পরলে পরিধানকারী কেবল সেই তত্ত্বের সাথে সম্পর্কিত বিষয়ই দেখতে পারে; যেমন বাস্তববাদীগণ একটি ঘটনাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে যেতে পারেন যা নির্মাণবাদীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তিনটি সর্বোচ্চ প্রভাবশালী তত্ত্ব হচ্ছে বাস্তববাদ, উদারতাবাদনির্মাণবাদ[২] কখনও কখনও কেওহেন ও নিয়ে এর তৈরি প্রতিষ্ঠানবাদকেও উদারতাবাদের থেকে ভিন্ন প্যারাডাইম হিসেবে আলোচনা করা হয়।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহকে "দৃষ্টবাদী/বিচারবাদী" তত্ত্বসমূহ এবং "উত্তর-দৃষ্টবাদী/প্রতিফলনবাদ" তত্ত্বসমূহে ভাগ করা হয়। "দৃষ্টবাদী/বিচারবাদী" তত্ত্বসমূহ রাষ্ট্র বিষয়ক বিশ্লেষণে মনোনিবেশ করে, "উত্তর-দৃষ্টবাদী/প্রতিফলনবাদী" তত্ত্বসমূহ নিরাপত্তার সম্প্রসারিত অর্থ নিয়ে কাজ করে, যার পরিসরে শ্রেণীগত, লিঙ্গগত ও উত্তরোপনিবেশী নিরাপত্তা অন্তর্ভুক্ত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বে চিন্তার অনেক দ্বন্দ্বমূলক পথ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে নির্মাণবাদ, প্রতিষ্ঠানবাদ, মার্ক্সবাদ, নব্যগ্রামসিবাদ ইত্যাদি রয়েছে।

তত্ত্ব হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ এর উৎস্যের অনুসন্ধান করতে গেলে পাওয়া যাবে ১৯৩৯ সালে প্রকাশিত ই. এইচ. কারের দ্য টুয়েন্টি ইয়ারস ক্রাইসিস এবং ১৯৪৮ সালে প্রকাশিত হান্স মরগেনথাউ এর পলিটিক্স এমং ন্যাশনস[৩] মনে করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে চেয়ার অফ ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ শুরু হয়।[৪] আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পাঠের শুরুর দিকের আন্তঃযুদ্ধ বছরগুলোতে সামষ্টিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য ব্যবস্থার প্রতিস্থাপনের মনোনিবেশ করা হয়। এই চিন্তাবিদদেরকে পরবর্তীকালে "ভাববাদী" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।[৫] এই চিন্তাধারার নেতৃস্থানীয় সমালোচনা এসেছিল কার এর "বাস্তববাদী" বিশ্লেষণ থেকে।

যাইহোক, ২০০৫ সালে ডেভিড লং ও ব্রায়ান স্মিদ এর একটি সাম্প্রতিক গবেষণা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উদ্ভব সম্পর্কে একটি নতুন ধারণা দেয়। এই সংশোধনবাদীগণ দাবি করেন, এই পাঠের উদ্ভব হয়েছিল ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকের সাম্রাজ্যবাদ ও আন্তর্জাতিকতাবাদের ধারণাগুলোর মধ্য দিয়ে। সংশোধনবাদীগণ দাবি করেন, ১৯১৮ সালের পূর্বে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পাঠ উপনিবেশী প্রশাসন, জাতি বিজ্ঞান ও জাতি বিকাশের আকারেই বিদ্যমান ছিল।[৬]

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বসমূহকে শ্রেণীকরণ করতে গেলে ব্যাখ্যামূলক ও গঠনমূলক উপায়সমূহের মধ্যে একটি পরিষ্কার পার্থক্য পাওয়া যায়। ব্যাখ্যামূলক তত্ত্বগুলো বলে, তত্ত্বের সাহায্যে জগৎকে ব্যাখ্যা করা যায়, জগৎ তত্ত্বের বাইরে অবস্থান করে। গঠনমূলক তত্ত্বগুলো বলে, তত্ত্বগুলো জগৎকে গঠন বা নির্মাণ করতে সাহায্য করে।[৭]

বাস্তববাদ[সম্পাদনা]

হিস্টোরি অফ দ্য পেলপনেসিয়ান ওয়ার এর লেখক থুসিডাইডিসকে প্রারম্ভিক বাস্তববাদী চিন্তাবিদদের একজন বলে মনে করা হয়।[৮]

বাস্তববাদ বা রাজনৈতিক বাস্তববাদ[৯] হচ্ছে এই পাঠের প্রারম্ভ থেকে তৈরি হওয়া একটি প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব।[১০] এই তত্ত্ব থুসিডাইডিস, ম্যাকিয়াভেলিহবস এর মত লেখকদের ধ্রুপদী চিন্তাধারার উপর নির্ভর করে। আন্তঃযুদ্ধ বছরগুলোর ভাববাদী চিন্তাধারার প্রতিক্রিয়া হিসেবে প্রারম্ভিক বাস্তববাদের উদ্ভব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু পর বাস্তববাদীরা ভাববাদীদের চিন্তাভাবনার অভাবের প্রমাণ পান। আধুনিক যুগের বাস্তববাদী চিন্তাবিদদের মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। তবুও তাদের তত্ত্বসমূহের প্রধান তিনটি দিক হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, নৈরাজ্য ও আত্ম-নির্ভরশীলতা।[১০]

  • জাতীয়তাবাদ: বাস্তববাদীগণ বিশ্বাস করেন যে রাষ্ট্রই আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রধান কর্তা।[১১] তাই এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের রাষ্ট্র-কেন্দ্রিক তত্ত্ব। উদারপন্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্ব, যা অ-রাষ্ট্রীয় কর্তাসমূহ ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজের তত্ত্বে অন্তর্ভুক্ত করে তার থেকে এই তত্ত্ব ভিন্ন। এই পার্থক্যকে অনেক সময় এভাবে প্রকাশ করা হয়: বাস্তববাদী বিশ্বদর্শনে জাতিরাষ্ট্রকে বিলিয়ার্ড বল হিসেবে দেখা হয়, অন্যদিকে উদারপন্থীরা রাষ্ট্রসমূহের সম্পর্ককে অনেকটা মাকড়সার জালের মত করে দেখে।
  • নৈরাজ্য: বাস্তববাদীরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা নৈরাজ্যের দ্বারা চালিত হয়, যার অর্থ হচ্ছে এই ব্যবস্থায় কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব নেই।[৯] তাই, আন্তর্জাতিক রাজনীতি হচ্ছে স্বার্থপর রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব।[১২]
  • আত্ম-নির্ভরশীলতা: বাস্তববাদীরা মনে করে, কোন রাষ্ট্রের টিকে থাকার জন্য অন্য কোন রাষ্ট্রের উপর নির্ভর করা যায় না।

বাস্তববাদের বেশ কিছু মূল পূর্বানুমান রয়েছে। এটি ধরে নেয় যে, জাতি-রাষ্ট্রসমূহ হচ্ছে নৈরাজ্যময় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় একটি একক, ভৌগোলিক কর্তা, যার অন্য রাষ্ট্রের সাথে আন্তসম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ এর উপরে আর কোন কর্তৃত্ব নেই, কেননা প্রকৃত কর্তৃত্বকারী বিশ্ব সরকারের অস্তিত্ব নেই। দ্বিতীয়ত, এটি ধরে নেয়, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে আন্তঃসরকারী প্রতিষ্ঠান, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান বা বহুজাতিক সংস্থা নয়, বরং সার্বভৌম রাষ্ট্রই প্রাথমিক কর্তা। এভাবে, সর্বোচ্চ ক্রমে থেকে রাষ্ট্রসমূহই একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এভাবে একটি রাষ্ট্র একটি যৌক্তিক সায়ত্তশাসিক কর্তা হয়ে তার নিজের আত্ম-স্বার্থে কাজ করে তার নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত ও রক্ষার প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ করে, অর্থাৎ তার সার্বভৌমত্ব ও উদ্বর্তনকে নিশ্চিত ও রক্ষা করে। বাস্তববাদীরা বলেন, নিজেদের অভীষ্টপূরণের জন্য রাষ্ট্রসমূহ সম্পদ বৃদ্ধি করার চেষ্টা করে, এবং রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার সম্পর্ক তাদের ক্ষমতার আপেক্ষিক মাত্রার উপর নির্ভর করে। এই ক্ষমতার মাত্রা রাষ্ট্রের সামরিক, আর্থিক ও রাজনৈতিক সক্ষমতাকে নির্ধারণ করে।

কোন কোন বাস্তববাদীকে মানব প্রকৃতি বাস্তববাদী বা ধ্রুপদী বাস্তববাদী বলে হয়,[১৩] তারা বিশ্বাস করে যে, রাষ্ট্রসমূহ অন্তর্নিহিতভাবেই আক্রমণাত্মক, আঞ্চলিক সম্প্রসারণ কেবলমাত্র বিরোধী ক্ষমতার দ্বারাই অবরুদ্ধ হয়। এদিকে আক্রমণাত্মক/প্রতিরক্ষামূলক বাস্তববাদীগণ মনে করেন,[১৩] রাষ্ট্রসমূহ নিরাপিত্তা ও রাষ্ট্রের অস্তিত্বের ধারাবাহিকতা নিয়ে আবিষ্ট হয়ে থাকে। প্রতিরক্ষামূলক দৃষ্টিভঙ্গি একটি নিরাপত্তা উভয়সংকট তৈরি করে, যেখানে একজনের অধিক নিরাপত্তা তার বিরোধী বা বিরোধীদের মধ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করে, যার ফলে বিরোধীরাও নিজেদের অস্ত্রের বিকাশ ঘটায়, এবং নিরাপত্তাকে একটি শূন্য-সমষ্টি ক্রিয়ায় পরিণত করে। এরফলে কেবলমাত্র আপেক্ষিক অর্জনই সম্ভব হয়।

নব্যবাস্তববাদ[সম্পাদনা]

নব্যবাস্তববাদ বা কাঠামোগত বাস্তববাদ[১৪] হচ্ছে বাস্তববাদের একটি বিকাশ যার ধারণা কেনেথ ওয়াল্টজ এর থিওরি অফ ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স গ্রন্থে পাওয়া যায়। যাই হোক, সেটা নব্যবাস্তববাদের কেবলমাত্র একটি ধারণাই ছিল। জোসেফ গ্রিয়েকো নব্যবাস্তববাদ ও ধ্রুপদী বাস্তববাদীদের ধারণাগুলোর সম্মেলন করেছিলেন। এই ধারার তত্ত্বকে অনেক সময় "আধুনিক বাস্তববাদ" বলা হয়।[১৫] ওয়াল্টজ এর নব্যবাস্তববাদ অনুসারে, কাঠামোর প্রভাবকে অবশ্যই রাষ্ট্রের আচরণ ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে বিবেচনা করতে হবে। এটি আন্তর্জাতিক পরিসরের সকল বিদেশ নীতির আকৃতি দান করে। উদাহরণস্বরূপ, রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার যেকোন দ্বন্দের সূত্রপাত হয়ে থাকে তাদের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী ও রক্ষাকারী সাধারণ ক্ষমতার (কেন্দ্রীয় কর্তৃত্ব) অভাবের জন্য। এছাড়া, একটি নৈরাজ্যময় ব্যবস্থায় অধিক ক্ষমতাশালী রাষ্ট্রসমূহে তাদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি করার প্রবণতা থাকে।[১৬] নব্যবাস্তববাদীদের মতে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কাঠামোকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে বিবেচনা করা হয়, এবং একে দুই স্তরে সংজ্ঞায়িত করা হয়: (ক) আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার ক্রমবিণ্যাসগত নীতি যেটা নৈরাজ্যময়, এবং (খ) এককগুলোর মধ্যে সক্ষমতার বণ্টন। এছাড়াও ধ্রুপদী বাস্তববাদের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সম্মিলিত সক্ষমতার ভিত্তিতে ক্ষমতাকে চিহ্নিত না করে ধ্রুপদী সামরিক ক্ষমতায় জোড় দেবার জন্য ওয়াল্টজ ধ্রুপদী বাস্তববাদকে চ্যালেঞ্জ করেছেন।[১৭]

উদারতাবাদ[সম্পাদনা]

চিরস্থায়ী শান্তি নিয়ে কান্টের লেখাগুলো ছিল গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্বের প্রারম্ভিক অবদান।[১৮]

উদারপন্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বের পূর্বতন মতবাদ ছিল "ভাববাদ"। ভাববাদ বা কল্পরাষ্ট্রবাদকে বাস্তববাদীগণ সমালোচনা করতেন, যেমনটা করেছিলেন ই. এইচ. কার[১৯] আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ভাববাদ (যাতে উড্রো উইলসনের দ্বারা ব্যক্তিত্ব আরোপনের জন্য তাকে উইলসনীয়বাদও বলা হয়ে থাকে) হচ্ছে একটি চিন্তাধারা যেখানে মনে করা হয়, রাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক দর্শন যা, তাকেই তার বিদেশ নীতির লক্ষ্য বানানো উচিত। যেমন, ভাববাদীগণ মনে করতে পারেন যে, যদি নিজের রাষ্ট্রে দারিদ্র্য বিমোচনকে রাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হিসেবে স্থাপন করা হয়, তবে এর সাথে বিদেশের দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যও থাকা উচিত। উইলসনের ভাববাদ হচ্ছে উদারপন্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বের পূর্বপুরুষ। পরবর্তীতে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর "প্রতিষ্ঠান-নির্মাণকারীদের" মধ্যে এই উদারপন্থী আন্তর্জাতিক সম্পর্ক তত্ত্বের বিকাশ ঘটে।

উদারতাবাদ অনুসারে রাষ্ট্রের সক্ষমতা নয়, বরং রাষ্ট্রের পছন্দের অগ্রাধিকারই রাষ্ট্রীয় আচরণের নির্ণায়ক। বাস্তববাদ যেখানে রাষ্ট্রকে একটি একক কর্তা হিসেবে দেখে, সেখানে উদারতাবাদ রাষ্ট্রীয় কার্যে বহুত্বের অনুমোদন দেয়। তাই সংস্কৃতি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা সরকারের ধরনের মত বিষয়ের কারণে পছন্দের অগ্রাধিকার রাষ্ট্রভেদে ভিন্ন হয়। উদারতাবাদ অনুসারে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া কেবল রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিষয়েই ("উচ্চ রাজনীতি") সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক বা সাংস্কৃতিক বিষয়ের ("নিম্ন রাজনীতি") উপরেও নির্ভর করে, আর তাই এটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠনসমূহ ও এমনকি ব্যক্তির উপরেও নির্ভরশীল। তাই, নৈরাজ্যময় আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা থাকার পরেও সহযোগিতা এবং ক্ষমতার বৃহত্তর ধারণার যথেষ্ট সুযোগ থাকে। উদাহরণ হিসেবে সাংস্কৃতিক পুঁজির কথা বলা যায়, যেমন চলচ্চিত্রের প্রভাবে কোন দেশের সংস্কৃতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং এরফলে এর একটি বাজার তৈরি হয়, যার কারণে চলচ্চিত্রগুলো বিশ্বজুড়ে রপ্তানি করা হয়। উদারতাবাদের আরেকটি পূর্বানুমান হচ্ছে রাষ্ট্রসমূহের মধ্যকার সহযোগিতা ও আন্তঃনির্ভরশীলতার মধ্য দিয়ে পরম অর্জন সম্ভব, এবং এভাবে শান্তি অর্জন সম্ভব।

গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্ব বলে, উদারনৈতিক গণতন্ত্র (প্রায়) কখনোই যুদ্ধে জড়ায় নি, এবং নিজেদের মধ্যে খুব কম পরিমাণ সংঘাতই তৈরি করেছে। বিশেষ করে বাস্তববাদীগণ এই ধারণাটিকে স্ববিরোধী হিসেবে দেখেন, এবং এই অভিজ্ঞতাবাদী দাবিটি বর্তমানে রাজনৈতিক বিজ্ঞানের বৃহৎ বিবাদগুলোর মধ্যে একটি। নেভার এট ওয়ার গ্রন্থের মত অনেক ক্ষেত্রে এও দাবি করা হয়েছে যে, যেকোন অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার তুলনায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কূটনীতিকে সাধারণত খুব ভিন্নভাবে দেখা হয়। (নব্য)বাস্তববাদীগণ এক্ষেত্রে উদারতাবাদীদের থেকে ভিন্নমত পোষণ করেন। তারা মনে করেন শান্তি কাঠামোগত কারণগুলোর উপরেই নির্ভরশীল, রাষ্ট্রের সরকার পদ্ধতির উপর নয়। গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্বের একজন সমালোচক সেবাশ্চিয়ান রসাটো এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক শান্তি তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে দক্ষিণ আমেরিকার বাম-প্রবণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণের দিকে আঙ্গুল তোলেন।[২০] উদারতাবাদীদের একটি যুক্তি হচ্ছে অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরশীলতার ফলে বাণিজ্যিক সম্পর্কে আবদ্ধ রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে আসে।[২১] অন্যদিকে বাস্তববাদীগণ বলেন অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরশীলতা সংঘাতের সম্ভাবনা কমায় না, বরং বাড়িয়ে দেয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The IR Theory Home Page"Irtheory.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৪ 
  2. Snyder, Jack, 'One World, Rival Theories, Foreign Policy, 145 (November/December 2004), p.52
  3. Burchill, Scott and Linklater, Andrew "Introduction" Theories of International Relations, ed. Scott Burchill ... [et al.], p.1. Palgrave, 2005.
  4. Burchill, Scott and Linklater, Andrew "Introduction" Theories of International Relations, ed. Scott Burchill ... [et al.], p.6. Palgrave, 2005.
  5. Burchill, Scott and Linklater, Andrew "Introduction" Theories of International Relations, ed. Scott Burchill ... [et al.], p.7. Palgrave, 2005.
  6. Schmidt, Brian; Long, David (২০০৫)। Imperialism and Internationalism in the Discipline of International Relations। New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 9780791463239 
  7. Smith,Owens, "Alternative approaches to international theory", "The Globalisation of World Politics", Baylis, Smith and Owens, OUP, 4th ed p176-177
  8. See Forde, Steven,(1995), 'International Realism and the Science of Politics:Thucydides, Machiavelli and Neorealism,' International Studies Quarterly 39(2):141–160
  9. "Political Realism | Internet Encyclopedia of Philosophy"Iep.utm.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-০৪-০৪ 
  10. Dunne, Tim and Schmidt, Britain, The Globalisation of World Politics, Baylis, Smith and Owens, OUP, 4th ed, p
  11. Snyder, Jack, 'One World, Rival Theories, Foreign Policy, 145 (November/December 2004), p.59
  12. Snyder, Jack, 'One World, Rival Theories, Foreign Policy, 145 (November/December 2004), p.55
  13. Mearsheimer, John (২০০১)। The Tragedy of Great Power Politics। New York: W.W. Norton & Company। পৃষ্ঠা 25–26। আইএসবিএন 978-0-393-07624-0 
  14. "Structural Realism" (পিডিএফ)। মার্চ ১৭, ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১৮, ২০০৯ 
  15. Lamy,Steven, Contemporary Approaches:Neo-realism and neo-liberalism in "The Globalisation of World Politics, Baylis, Smith and Owens, OUP, 4th ed,p127
  16. The Globalization of World Politics। Oxford University Press। ২০০৮। আইএসবিএন 978 0 19 929777 1 
  17. Lamy, Steven, "Contemporary mainstream approaches: neo-realism and neo-liberalism", The Globalisation of World Politics, Smith, Baylis and Owens, OUP, 4th ed, pp.127–128
  18. E Gartzk, Kant we all just get along? Opportunity, willingness, and the origins of the democratic peace, American Journal of Political Science, 1998
  19. Brian C. Schmidt, The political discourse of anarchy: a disciplinary history of international relations, 1998, p.219
  20. Rosato, Sebastian, The Flawed Logic of Democratic Peace Theory, American Political Science Review, Volume 97, Issue 04, November 2003, pp.585–602
  21. Copeland, Dale, Economic Interdependence and War: A Theory of Trade Expectations, International Security, Vol. 20, No. 4 (Spring, 1996), pp.5–41