অপারেশন ডায়মন্ড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রেদফার মিগ-২১, অপারেশন ডায়মন্ডের বিষয়, হাটজারিম এয়ারবেসে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী যাদুঘরে

অপারেশন ডায়মন্ড (হিব্রু ভাষায়: מִבְצָע יַהֲלוֹם‎) ছিল ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ দ্বারা পরিচালিত একটি অপারেশন। এর লক্ষ্য ছিল সেই সময়ের সবচেয়ে উন্নত একটি সোভিয়েত নির্মিত মিগ-২১ যুদ্ধবিমান অধিগ্রহণ করা। অপারেশনটি ১৯৬৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল এবং শেষ হয়েছিল ১৬ আগস্ট ১৯৬৬ সালে। একজন ইরাকি পাইলট শেষ বিমানটির উড্ডয়ন পরিচালনা করেছিল।[১]

প্রথম দুটি প্রচেষ্টা[সম্পাদনা]

একজন মিশরীয় পাইলটকে রাজি করানোর দায়িত্ব দেয়া হয় মোসাদ এজেন্ট জিন থমাসকে। থমাস আর তার এজেন্টরা আদিব হান্না নামে একজন মিশরীয় পাইলটকে টার্গেট করে তাদের কাজ করানোর জন্য। তারা তাকে ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবার প্রস্তাবও দেয় মিগ-২১ নিয়ে ইসরাইলে যাবার জন্য। কিন্তু হান্না তাদের কথায় রাজি তো হয়নি, উল্টো মিশরীয় কর্তৃপক্ষকে থমাসের এই পরিকল্পনার কথা জানিয়ে দেয়। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে থমাসসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে মিশরীয় কর্তৃপক্ষ। এরপর তাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয় অপরাধ প্রমাণিত হওয়াতে।[২] দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও হিসেবে মোসাদ বেছে নেয় দুজন ইরাকি পাইলট, কিন্তু তাদের দ্বিতীয় প্রচেষ্টাও ব্যর্থ হয়।[২]

সাফল্য[সম্পাদনা]

ইরাকি বিমানের ফুটেজ

১৯৬৪ সাল, মুনির রেদফা একজন ইরাকি পাইলট। শুধুমাত্র খ্রিস্টান হবার কারণে রেদফা কর্মক্ষেত্রে অনেক বৈষম্যের শিকার হতেন। পদোন্নতি পেতেন না সহজে, পোস্টিং সবসময় দুর্গম এলাকায় হতো। ফলে ইরাক আর ইরাকি বাহিনীর উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন তিনি। সুযোগ খুঁজছিলেন ইরাক ছেড়ে চলে যাবার।[২][৩] রেদফার রাগের আরেকটি কারণ ছিল, বিনা কারণে কুর্দিদের উপরে হামলা করা। গুপ্তচরবৃত্তির তত্ত্বাবধানে মোসাদ এটিকেই তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ হিসেবে দেখে। মোসাদ তাদের একজন নারী এজেন্টকে পাঠায় রেদফার সাথে যোগাযোগের জন্য। প্রথমে রেদফার সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে সেই নারী এজেন্ট, রেদফার নিজের কাছ থেকেই তার হতাশা আর রাগের কথাগুলো শোনে সেই মোসাদ এজেন্ট। এরপরই মোসাদ এজেন্ট তার আসল পরিকল্পনা শুরু করে। বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে রেদফাকে রাজি করায় ইউরোপে আরেক মোসাদ এজেন্টদের সাথে দেখা করার ব্যাপারে। রেদফা রাজি হয়ে ইউরোপে মোসাদের একজন অফিসারের সাথে দেখা করেন।[২] রেদফাকে ১ মিলিয়ন ডলার, ইসরাইলের নাগরিকত্ব এবং চাকরির আশ্বাস দেয়া হয় তার মিশন সফল করতে পারলে।[২][৩] তবে রেদফাও নিজের কিছু শর্ত জুড়ে দেন অন্য সবকিছুর সাথে। তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে ইরাক থেকে বের করে আনতে হবে। রেদফা পালিয়ে যেতে সফল হতে পারুক বা না পারুক, ইরাকে তার পরিবার থাকলে তাদের অচিন্তনীয় অত্যাচারের শিকার হতে হবে তার জানা ছিল। তাই তিনি সবকিছুর আগে তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চান। মোসাদের প্রস্তাবে রাজি হলে রেদফা ইসরায়েলে যান পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে। সফলভাবে ইসরায়েলে প্রবেশ করতে পারলে যে বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন, সেটিও দেখে আসেন রেদফা। ইসরাইলের তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান ও উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করেন সম্ভাব্য ফ্লাইট পথ নিয়ে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ রেদফাকে পুরো মিশনের বিপদগুলোও জানিয়ে দেয়।[২][৩] সবকিছু ঠিকঠাক করে মোসাদ তাদের এজেন্ট পাঠায় ইরাকে, রেদফার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদে ইসরাইলে নিয়ে যাবার জন্য। নিরাপত্তার খাতিরে পরিবারের কাউকেই জানানো হয়নি আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে। রেদফা তার স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে প্যারিসে যান। রেদফা তার স্ত্রীকেও কিছু জানাননি এ ব্যাপারে। তাই তার স্ত্রী প্রথমে ভেবেছিলেন তারা ছুটি কাটাতে গিয়েছেন প্যারিসে, কিন্তু যখন মোসাদ এজেন্ট তার সাথে দেখা করে, তখন তিনি অবাক হয়ে যান। প্রথমে রেগে গিয়ে ইরাকি কর্তৃপক্ষের কাছে সব কিছু ফাঁস করে দেবার হুমকিও দেন। কিন্তু মোসাদ এজেন্টরা তাকে শান্ত করতে সক্ষম হয়। পরিবারের অন্য সদস্যদের ইরান সীমান্তে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে কুর্দি গেরিলা তাদের ইরান পাড়ি দিতে সাহায্য করে, সেখান থেকে তাদের ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হয়।[২][৩]

অবশেষে রেদফার সুযোগটি আসে ১৯৬৬ সালে, আগস্টের ১৬ তারিখে। রেদফা তার নির্ধারিত বিমানে ফুয়েল সম্পূর্ণ করে ইসরায়েল এর উদ্দেশ্য রওনা দেন। যখন তিনি উত্তর জর্ডানের উপর দিয়ে উড়ছিল, তখন তার বিমান জর্ডানের রাডার দ্বারা ট্র্যাক করা হয়েছিল। জর্ডানীরা সিরিয়ার সাথে যোগাযোগ করেছিল, কিন্তু সিরিয়ান বাহিনী থেকে তারা আশ্বস্ত হয়েছিল যে বিমানটি সিরিয়ার বিমান বাহিনীর এবং এটি একটি প্রশিক্ষণ মিশনে ছিল।[২] এভাবেই জর্ডান ও ইরাকি বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে রেদফা সফল ভাবে ইসরায়েল পৌঁছায়[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. עמוס גלבוע ואפרים לפיד (עורכים), מלאכת מחשבת: 60 שנות מודיעין ישראלי - מבט מבפנים (עמוד 246), הוצאת ידיעות ספרים והמרכז למורשת המודיעין, 2008
  2. Ian Black and Benny Morris (২০০৭)। Israel's Secret Wars: A History of Israel's Intelligence Services। Grove Press। পৃষ্ঠা 206–209। আইএসবিএন 978-0-8021-3286-4 
  3. Loch K. Johnson (২০০৭)। Strategic Intelligence, Volume 1। Praeger Security International। পৃষ্ঠা 75–76। আইএসবিএন 0-275-98943-7