বিষয়বস্তুতে চলুন

অনুষ্কা শংকর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
অনুষ্কা শঙ্কর
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে একটি সঙ্গীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে অনুষ্কা শঙ্কর
২০১৪ খ্রিস্টাব্দে একটি সঙ্গীত পরিবেশন অনুষ্ঠানে অনুষ্কা শঙ্কর
প্রাথমিক তথ্য
জন্ম (1981-06-09) জুন ৯, ১৯৮১ (বয়স ৪৩)
উদ্ভবমুম্বাই, ভারত
ধরনভারতীয় সঙ্গীত
পেশাসেতারবাদক, সুরকার
বাদ্যযন্ত্রসেতার
কার্যকাল১৯৯৮—বর্তমান
লেবেলএঞ্জেল রেকর্ডস
ওয়েবসাইটAnoushkaShankar.com

অনুষ্কা শঙ্কর (জন্ম : ১৯৮১) একজন সেতার বাদক এবং সুরকার। তিনি ভারতীয় বাঙালি সেতারবাদক পণ্ডিত রবি শঙ্কর এবং সুকন্যা রাজনের কন্যা।

প্ৰাথমিক জীবন

[সম্পাদনা]

অনুষ্কা শঙ্কর ইংল্যান্ডের লন্ডন নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময় তার বাবার বয়স ছিল ৬১ বছর। তার শৈশব লন্ডন ও দিল্লিতে কাটে। নয় বছর বয়স থেকে তিনি তার বাবার কাছে সেতারের দীক্ষা নিতে শুরু করেন। বাবার দিক থেকে তিনি মার্কিন সংগীতশিল্পী নোরা জোন্স (জন্ম গীতালি নোরাহ শঙ্কর হিসেবে) এবং ১৯৯২ সালে প্রয়াত শুভেন্দ্র শুভ শঙ্করের বোন।[] অনুষ্কা তেরো বছর বয়সে প্রথম জনসমক্ষে সেতার পরিবেশন করেন; সেই থেকেই তার শিল্পীজীবন শুরু হয়। তার ঐ পরিবেশনায় তবলাবাদক ছিলেন জাকির হুসেইন

কিশোর বয়সে তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার এনকিনিটাসে থাকতেন এবং সান দিয়েগুইটো হাই স্কুল একাডেমিতে পড়তেন। তিনি ১৯৯৯ সালে সম্মাননাসহ স্নাতক উপাধি অর্জন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে সংগীতে শিল্পীজীবন গড়ার সিদ্ধান্ত নেন।[][]

অনুস্কা এবং রবিশঙ্কর ২০০৫ সালের কনসার্টে

রেকর্ডিং স্টুডিওতে তার প্রথম অভিজ্ঞতা হয় যখন এঞ্জেল রেকর্ডস তার বাবার জন্মদিন উপলক্ষে ইন সেলিব্রেশন নামে একটি বিশেষ চার-সিডির বক্স সেট প্রকাশ করেছিল। চৌদ্দ বছর বয়স থেকে তিনি তার বাবার সাথে সারাবিশ্বে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিচ্ছিলেন। পনেরো বছর বয়সে তিনি জর্জ হ্যারিসনের প্রযোজিত ল্যান্ডমার্ক অ্যালবাম চ্যান্টস অফ ইন্ডিয়ায় তার বাবাকে সহায়তা করেছিলেন। তাদের উভয়ের নির্দেশনায় তিনি স্বরলিপি এবং শেষ পর্যন্ত রেকর্ডে অংশগ্রহণকারীদের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। এই অভিজ্ঞতার পরে, অ্যাঞ্জেল রেকর্ডস প্রধানরা তাকে তাদের জন্য কাজ করার আমন্ত্রণ জানতে তার বাড়িতে এসেছিল। তিনি ষোল বছর বয়সে অ্যাঞ্জেল/ ইএমআইয়ের সাথে তার প্রথম স্বতন্ত্র রেকর্ডিং চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।

তিনি ১৯৯৮ সালে তার প্রথম অ্যালবাম প্রকাশ করেছিলেন। তার পর ২০০০ সালে তার অ্যালবাম অনুরাগ প্রকাশ পায়।

তিনি তার সঙ্গীত প্রতিভার জন্য তিনি ১৯৯৮ সালে প্রথম কোনো নারী হিসেবে বৃটেনের হাউজ অব কমন্স শিল্ড লাভ করেন। তিনিই সবচেয়ে কম বয়সে এই সম্মান লাভ করেন। তিনি ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতার রামকৃষ্ণ সেন্টারে প্রথম মহিলা পারর্ফমার হিসেবে সেতার পরিবেশন করেন। ২০০৩ সালে ইন্ডিয়ান টেলিভিশন একাডেমি, আসমী এবং ইন্ডিয়া টাইমস্ তাকে বছরের সেরা চারজন মহিলার মধ্যে অন্যতম হিসেবে নির্বাচিত করে। ২০০৪ সালে টাইম ম্যাগাজিন এশিয়া এডিশন কর্তৃক তাকে এশিয়ার ২০ জন সেরা হিরোর একজন হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের তিনটি অ্যালবাম প্রকাশের পর তিনি রেকর্ডিং থেকে কয়েক বছর দূরে ছিলেন। নিজের বাবার মেয়ে পরিচয়ের বাইরে নিজেকে একক শিল্পীরূপে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। এই সময়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ভ্রমণ করে প্রতি বছর গড়ে ৫০ থেকে ৬০ টি কনসার্ট করেন। ২০০৫ সালে তার প্রথম স্ব-উৎপাদিত, স্ব-রচিত, নন-ক্লাসিকাল অ্যালবাম ও তার চতুর্থ অ্যালবাম রাইজ মুক্তি পায়। তার অ্যালবাম রাইজ বেস্ট কনটেম্পরারি ওয়ার্ল্ড মিউজিক ক্যাটেগোরিতে গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। এটি ছিল গ্রামি পুরস্কারে তার দ্বিতীয় মনোনয়ন। অনুশকা শংকরই প্রথম ভারতীয় নারী যিনি গ্র্যামি পুরস্কারের ৪৮তম অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেছেন।

অভিনয় ও লেখালেখি

[সম্পাদনা]

তিনি অভিনয় আর লেখালেখিও করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ড্যানস লাইক অব ম্যান-এ অভিনয় করেন। তিনি ২০০২ সালে তার বাবার উদ্দেশ্যে একটি জীবনীগ্রন্থ লিখেছিলেন, যার নাম ছিল বাপিঃ দ্য লাভ অফ মাই লাইফ। এছাড়া তিনি বিভিন্ন বইতে অবদান রেখেছিলেন। কলামিস্ট হিসাবে তিনি তিন বছরের জন্য ভারতের সিটি ম্যাগাজিনে মাসিক কলাম লিখেছিলেন। এছাড়া তিনি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংবাদপত্র হিন্দুস্তান টাইমসের সাপ্তাহিক কলামিস্ট হিসাবে এক বছর লিখেছেন।

ব্যক্তিগত জীবন

[সম্পাদনা]

তিনি আমেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ভারতে বেড়ে ওঠেন। ২০১০ সালে তিনি ব্রিটিশ পরিচালক জো রাইটকে বিয়ে করেছিলেন।[] তাদের দুটি পুত্র সন্তান হয়। ২০১২ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তিনি লন্ডনে তার দুই ছেলের সাথে থাকেন।[]

পুরস্কার

[সম্পাদনা]
  • ১৯৯৮ সালে তিনি ব্রিটিশ হাউস অফ কমন্স শিল্ড লাভ করেন।[]
  • ২০০৩ সালে ভারতে বিশ্ব মহিলা দিবসে "বৰ্ষসেরা মহিলা" পুরস্কার পান।[]
  • ২০০৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনের এশিয়া মহাদেশ সংস্করণে ২০ এশিয়ান হিরোস শীৰ্ষক তালিকাতে স্থান লাভ করেন।
  • ২০০৩ সালে তিনি নিজের তৃতীয় অ্যালবাম “লাইভ এট কাৰ্নেগী হল” এর জন্য গ্ৰামি অ্যাওয়ার্ডে তিনি ও তার বোন নোরা জোন্স এক সাথে মনোনীত হন। কম বয়সে এই সম্মান লাভ করা তিনি বিশ্বের প্ৰথম মহিলা ছিলেন।
  • রাইজ অ্যালবামের জন্য গ্ৰামি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন লাভ করেন।
  • ট্রা‌ভেলার অ্যালবামের জন্য ২০১৩ সালে তৃতীয়বার মনোনয়ন লাভ করেন।
  • ট্রেসেস অব ইউ অ্যালবামের জন্য ২০১৪ সালে মনোনয়ন লাভ করেন।
  • ২০১২ সালে ট্রা‌ভেলার অ্যালবামের জন্য সংলাইন্স শ্ৰেষ্ঠ শিল্পী পুরস্কার (Songlines Music Award) পান।[]
  • ইতালীয় জ্যোতির্বিদ সিলভানো ক্যাসুলি দ্বারা আবিষ্কৃত গ্রহাণু ২৯২২72২ আনুশঙ্কর তার সম্মানে নামকরণ করা হয়েছিল। যা সরকারীভাবে টেমপ্লেট:MoMP ২০১৭ সালের ১২ জানুয়ারি Minor Planet Circularsতে প্রকাশ করেছিল Minor Planet Center ( 103028).

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "Anoushka Shankar Biography"Musician Biographies। Net Industries। ২০ জুলাই ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০০৯ 
  2. Chhibber, Kavita। "Anoushka Shankar"Kavita Chhibber। ১৮ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ জুলাই ২০১৫ 
  3. Barnett, Laura (২০ মে ২০১৪)। "Anoushka Shankar: 'Suddenly I'm the parent'"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২ নভেম্বর ২০১৬ 
  4. "Anoushka Shankar writes a heartfelt note on 'first love' and 'life as a single parent'"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ এপ্রিল ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১১ জুন ২০১৮ 
  5. De Cruz, Errol (২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০১)। "Shankar guru a left-handed genius"New Straits Times। Kuala Lumpur, Malaysia। সংগ্রহের তারিখ ৭ এপ্রিল ২০১১ 
  6. "Songlines – Music Awards – 2012 – Winners"{{subst:LC:S}}onglines। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]