ব্যবহারকারী:Sbb1413/হিন্দু পঞ্জিকার জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ভিত্তি
সৌরজগতের ভূকেন্দ্রিক মডেলের উপর ভিত্তি করে হিন্দু পঞ্জিকা তৈরি করা হয়েছে।[১] ভূকেন্দ্রিক মডেলের মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠের উপর কোনো দর্শকের সাপেক্ষে সৌরজগতের বর্ণনা দেওয়া যায়।
হিন্দু পঞ্জিকা সময়ের নয়টি মানের সংজ্ঞা দিয়েছে:[২]
- ব্রাহ্মমান
- দিব্যমান
- পিত্রয়মান
- প্রাজাপত্যমান
- গুরোর্মান
- সৌরমান
- সাবনমান
- চান্দ্রমান
- নাক্ষত্রমান
সময়ের এই নয়টি মানের মধ্যে কেবল শেষের চারটি মান সক্রিয়ভাবে ব্যবহৃত[৩] এবং এই নিবন্ধে এদের বর্ণনা করা হয়েছে।
চান্দ্রমান
[সম্পাদনা]পৃথিবীর চারিদিকে চাঁদের গতির দ্বারা হিন্দু পঞ্জিকার চান্দ্রমান নির্ধারণ করা হয়। অমাবস্যা ও পূর্ণিমা এই পঞ্জিকার দুই গুরুত্বপূর্ণ চিহ্নক।
পক্ষ
[সম্পাদনা]পক্ষ বলতে পূর্ণিমার উভয়দিকের সময়কালকে বোঝায়। অমাবস্যার দিন এবং পূর্ণিমার দিনের মধ্যবর্তী প্রথম পক্ষকে গৌরপক্ষ বা শুক্লপক্ষ, এবং মাসের দ্বিতীয় পক্ষকে বধ্যাপক্ষ বা কৃষ্ণপক্ষ বলা হয়। পক্ষের সময় চাঁদ পৃথিবী–সূর্য অক্ষের সাপেক্ষে ১৮০° অগ্রসর হয়।
চান্দ্র মাস
[সম্পাদনা]চান্দ্র মাস বলতে এক অমাবস্যা থেকে অপর অমাবস্যা (অমান্ত প্রথা অনুযায়ী) কিংবা এক পূর্ণিমা থেকে অপর পূর্ণিমা (পূর্ণিমান্ত প্রথা অনুযায়ী) পর্যন্ত সময়কালকে বোঝায়।[৪][ক] অন্যভাবে বলতে গেলে, চান্দ্র মাস হচ্ছে চাঁদের প্রদক্ষিণকাল বা দুই পক্ষ। চান্দ্র মাসের সময় চাঁদ পৃথিবী–সূর্য অক্ষের সাপেক্ষে ৩৬০° অগ্রসর হয়।
চান্দ্রমান বর্ষ
[সম্পাদনা]পরপর ১২টি চান্দ্র মাস নিয়ে এক চান্দ্রমান বর্ষ গঠিত হয়।[৫] পূর্ণিমার সময় চাঁদ কোন নক্ষত্রে অবস্থিত এর উপর নির্ভর করে ১২টি চান্দ্র মাসকে চৈত্র, বৈশাখ ইত্যাদি নাম দেওয়া হয়। চান্দ্রমান বর্ষ ও সৌরমান বর্ষের মধ্যে সঙ্গতি বজায় রাখার জন্য অনেকসময় একটি অতিরিক্ত চান্দ্র মাস যোগ করা হয়, যা অধিকমাস নামে পরিচিত।
তিথি
[সম্পাদনা]বৈদিক পঞ্জিকা অনুযায়ী, একটি চান্দ্র দিনকে তিথি বলে। চাঁদ ও সূর্যের মধ্যে ১২ ডিগ্রি দ্রাঘিমাকোণ বৃদ্ধির সময়কে একটি তিথির সময়কাল ধরা হয়। তিথির সূচনার সময় দিন অনুযায়ী বদল হয় এবং তিথির মোট সময়কাল ১৯ ঘণ্টা থেকে ২৬ ঘণ্টার মধ্যে থাকে।[৬]
সৌরমান
[সম্পাদনা]সূর্যের চারিদিকে পৃথিবীর গতি দ্বারা হিন্দু পঞ্জিকার সৌরমান নির্ধারণ করা হয়।[৭] এতে নিরয়ন ও সায়ন উপাদান বর্তমান।
নিরয়ন উপাদান
[সম্পাদনা]হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, স্থির নক্ষত্রের সাপেক্ষে পৃথিবীর চারিদিকে সূর্যের প্রদক্ষিণ করে শুরুর বিন্দুতে আসতে যে সময় লাগে, তাকে এক নাক্ষত্র বছর বা সৌরমান বর্ষ বলে। এখানে চিত্রা নক্ষত্রের সঙ্গে বিমুখতার সময় সূর্যের অবস্থানকে শুরুর বিন্দুকে ধরা হয়েছে।[৮][খ][১০]
হিন্দু পঞ্জিকায় রাশি বলতে পৃথিবীর চারিদিকে সূর্যের কক্ষপথের ৩০° বক্রপথকে বোঝায়।[১১] রেবতী নক্ষত্র থেকে শুরু এই ১২ রাশিকে মেষ, বৃষভ ইত্যাদি নাম দেওয়া হয়েছে। সূর্যের এক রাশি অতিক্রম করতে যে সময় লাগে তাকে সৌর মাস বলে[৪] এবং সংশ্লিষ্ট রাশি থেকে সৌর মাসের নামকরণ করা হয়। যে মুহূর্তে সূর্য কোনো রাশিতে প্রবেশ করে তাকে সংক্রান্তি বা সংক্রমণ বলে।
সায়ন উপাদান
[সম্পাদনা]সায়ন উপাদানগুলো অয়নান্ত ও বিষুব দ্বারা নির্ধারিত।[১২] সূর্যের মকরক্রান্তি থেকে কর্কটক্রান্তিতে স্থানান্তরে যে সময় লাগে তাকে উত্তরায়ণ এবং কর্কটক্রান্তি থেকে মকরক্রান্তিতে স্থানান্তরে যে সময় লাগে তাকে দক্ষিণায়ন বলে। পৃথিবীর আক্ষিক আনতির জন্য উত্তরায়ণের সময় সূর্যকে উত্তরদিকে মকরক্রান্তি রেখা থেকে কর্কটক্রান্তি রেখায় এবং দক্ষিণায়নের সময় সূর্যকে দক্ষিণদিকে কর্কটক্রান্তি রেখা থেকে মকরক্রান্তি রেখায় স্থানান্তরিত হচ্ছে বলে মনে হয়।[গ]
নাক্ষত্রমান
[সম্পাদনা]সাবনমান
[সম্পাদনা]নক্ষত্র
[সম্পাদনা]সময়ের বিভিন্ন মানের মিশ্রণ
[সম্পাদনা]টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ এই নিবন্ধে উল্লেখিত সমস্ত উদাহরণে অমান্ত প্রথা ব্যবহার করা হয়েছে।
- ↑ অবশ্য সব তথ্যসূত্র এই সংজ্ঞার সাথে সহমত পোষণ করে না। মার্সিয়ারের মতে কেটকার এক সংস্কৃত সূত্রকে অন্যান্য কর্তৃপক্ষের থেকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অবশ্য হিন্দু পঞ্চাঙ্গ তৈরি করার জন্য এই সংজ্ঞা বহুল প্রচলিত।[৯]
- ↑ সূর্যসিদ্ধান্ত অবশ্য অয়নান্ত ও বিষুবের জায়গায় রাশির মাধ্যমে উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নকে সংজ্ঞায়িত করেছে।[১৩] এক্ষেত্রে মকরক্রান্তি ও মকর সংক্রান্তির মধ্যে সমাপতনের কথা অনুমান করা হয়েছে। তবে অক্ষীয় অয়নচলনের জন্য এই সমাপতন হয় না এবং এর ফলে এই সংজ্ঞাটি সঠিক থাকে না। উদাহরণস্বরূপ, সূর্যসিদ্ধান্তের সংজ্ঞা অনুযায়ী মকরক্রান্তি (২১ ডিসেম্বর) ও মকর সংক্রান্তির (১৪ জানুয়ারি) মধ্যের সময়কালকে দক্ষিণায়নের অংশ হিসাবে ধরা হচ্ছে, যদিও এই সময়কালে সূর্যের আপাত গতি উত্তরদিকে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Burgess 1935, p. 285 (XII. 32)
- ↑ Burgess 1935, p. 310 (XIV. 1)
- ↑ Burgess 1935, p. 310 (XIV. 2)
- ↑ ক খ Burgess 1935, p. 8
- ↑ Burgess 1935, p. 7 (I. 13)
- ↑ Defouw, Hart (২০০৩)। Light on Life: An Introduction to the Astrology of India। Lotus Press। পৃষ্ঠা 186। আইএসবিএন 0-940985-69-1। অজানা প্যারামিটার
|coauthors=
উপেক্ষা করা হয়েছে (|author=
ব্যবহারের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে) (সাহায্য) - ↑ "Satapatha-brahmana Verse 8.7.3.10 [Sanskrit text]"। www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৮ ডিসেম্বর ২০২২।
- ↑ Ketkar 1923. pp. 34–35
- ↑ Mercier (2018). pp. 74–75
- ↑ Burgess 1935, p. 230
- ↑ Burgess 1935, p. 16 (I. 28)
- ↑ Tilak 1955, pp. 20–31
- ↑ Burgess 1935, p. 313 (XIV. 9)