অয়নান্ত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দিন ও রাত্র যথাক্রমে বামে ও ডানে

সূর্যপথ কর্কটক্রান্তিমকরক্রান্তি রেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ হওয়ায় পৃথিবীর সৌরপাদ বিন্দু কর্কটক্রান্তি অতিক্রম করে যেমন অধিক উত্তরে যেতে পারে না তেমনি মকরক্রান্তি অতিক্রম করে অধিক দক্ষিণে যেতে পারে না। নিরক্ষরেখার উত্তরে কর্কটক্রান্তিতে এবং নিরক্ষরেখা দক্ষিণে মকরক্রান্তিতে সৌরপাদ বিন্দুর গমনের ঘটনাই অয়নান্ত। অর্থাৎ পৃথিবীর উপর দিয়ে সূর্যের ভ্রমণকালে পৃথিবীর ভৌগোলিক নিরক্ষরেখা থেকে সর্বাধিক উত্তর ও দক্ষিণে সূর্যের গমনই অয়নান্ত। প্রতি বছর দুটি অয়নান্ত সংঘটিত হয়; জুন মাসে উত্তর অয়নান্ত এবং ডিসেম্বর মাসে দক্ষিণ অয়নান্ত। সঙ্গত কারণেই উত্তর অয়নান্ত হল উত্তরায়ন সংক্রান্তি বা কর্কট সংক্রান্তি এবং দক্ষিণ অয়নান্ত হল দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি বা মকর সংক্রান্তি। তবে বর্তমানে কর্কট সংক্রান্তিমকর সংক্রান্তি পালনের দিন প্রায় তিন সপ্তাহেরও বেশি পিছিয়ে পড়ার কারণ হল বাংলা পঞ্জিকার ঐতিহ্যগত ত্রুটি। তা যাই হোক, একটি বছরের ঋতুসমূহ পৃথিবীর অয়নান্ত ও বিষুব উভয়ের সাপেক্ষে তথা সৌরপাদ বিন্দুর অবস্থানের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে।

অয়নান্ত শব্দটিকে বৃহত্তর অর্থেও ব্যবহার করা যেতে পারে। নিরক্ষীয় অঞ্চল ব্যতীত অন্যান্য যে কোন অক্ষাংশে উত্তর ও দক্ষিণ উভয় গোলার্ধের ক্ষেত্রে যেদিন সর্বাধিক পরিমাণ সূর্যালোক আপতিত হয় সেদিন গ্রীষ্ম সংক্রান্তি এবং যে দিন সর্বাপেক্ষা কম সূর্যালোক ভূপৃষ্ঠে পড়ে সেদিন শীত সংক্রান্তি সংঘটিত হয়। অর্থাৎ উত্তর গোলার্ধে যেদিন সর্বাধিক পরিমাণ সূর্যালোক পড়ে সেদিন সেখানে গ্রীষ্ম সংক্রান্তি হলেও দক্ষিণ গোলার্ধে ঘটে এর বিপরীত অবস্থা, শীত সংক্রান্তি। আবার উত্তর গোলার্ধে শীত সংক্রান্তি হলেও দক্ষিণে হবে গ্রীষ্ম সংক্রান্তি। একারণে গ্রীষ্ম সংক্রান্তি ও শীত সংক্রান্তি পদ দুটির ব্যবহারে অস্পষ্টতা থেকে যায়। অস্পষ্টতা দূরীকরণে ইংরেজি রচনাগুলোতে তাই জুন সল্সটিস ও ডিসেম্বর সল্সটিস পদ দুটি ব্যবহার করা হয়।[১] বাংলা ভাষায় উত্তর অয়নান্তদক্ষিণ অয়নান্ত পদদুটি অথবা তৎপরিবর্তে যথাক্রমে জুন সংক্রান্তিডিসেম্বর সংক্রান্তি পদদুটি ব্যবহার করা শ্রেয়তর।

পরিভাষা[সম্পাদনা]

ইংরেজি solstice শব্দটি ল্যাটিন sol (‘‘সূর্য’’) এবং sistere (‘‘স্থির থাকা’’) শব্দ দুটি থেকে এসেছে। আর অয়নান্ত শব্দটি সংস্কৃত অয়ন (‘‘চলন’’) এবং অন্ত (‘‘শেষ’’) শব্দ দুটি থেকে এসেছে, যার অর্থ দাড়ায় চলনের সমাপ্তি। অর্থাৎ এদিন সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের শেষ দিন।

সময়[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক প্রমাণ সময় অনুযায়ী নিকট অতীত ও ভবিষ্যতের সংঘটিত ও সংঘটমান কয়েকটি বিষুব ও অয়নান্তের সময়-তালিকা নিচে দেওয়া হল। উক্ত ঘটনাবলীর জন্য বাংলাদেশ মান সময় এবং ভারতীয় প্রমাণ সময় নির্ণয় করতে হলে তালিকায় প্রদত্ত সময়ের সাথে যথাক্রমে ঘণ্টা এবং ৫:৩০ ঘণ্টা যোগ করতে হবে। যেমন— ২০১৯ খ্রীস্টাব্দের উত্তর অয়নান্ত বাংলাদেশের প্রমাণ সময় অনুযায়ী জুন মাসের ২১ তারিখের ২১:৫৪ ঘটিকায় এবং ভারতের প্রমাণ সময় অনুযায়ী ২১:২৪ ঘটিকায় সংঘটিত হয়েছে।

বিষুবরেখায় এবং কর্কটক্রান্তিমকরক্রান্তি রেখায় সূর্যের অবস্থানের আন্তর্জাতিক তারিখ ও সময়:[২]
ঘটনাবলী মহাবিষুব উত্তর অয়নান্ত জলবিষুব দক্ষিণ অয়নান্ত
মাস মার্চ জুন সেপ্টেম্বর ডিসেম্বর
বছর
তারিখ সময় তারিখ সময় তারিখ সময় তারিখ সময়
২০০০ ২০ ০৭:৩৫ ২১ ০১:৪৮ ২২ ১৭:২৮ ২১ ১৩:৩৭
২০০১ ২০ ১৩:৩১ ২১ ০৭:৩৮ ২২ ২৩:০৪ ২১ ১৯:২২
২০০২ ২০ ১৯:১৬ ২১ ১৩:২৪ ২৩ ০৪:৫৫ ২২ ০১:১৪
২০০৩ ২১ ০১:০০ ২১ ১৯:১০ ২৩ ১০:৪৭ ২২ ০৭:০৪
২০০৪ ২০ ০৬:৪৯ ২১ ০০:৫৭ ২২ ১৬:৩০ ২১ ১২:৪২
২০০৫ ২০ ১২:৩৩ ২১ ০৬:৪৬ ২২ ২২:২৩ ২১ ১৮:৩৫
২০০৬ ২০ ১৮:২৬ ২১ ১২:২৬ ২৩ ০৪:০৪ ২২ ০০:২২
২০০৭ ২১ ০০:০৭ ২১ ১৮:০৬ ২৩ ০৯:৫১ ২২ ০৬:০৮
২০০৮ ২০ ০৫:৪৮ ২০ ২৩:৫৯ ২২ ১৫:৪৪ ২১ ১২:০৪
২০০৯ ২০ ১১:৪৪ ২১ ০৫:৪৫ ২২ ২১:১৯ ২১ ১৭:৪৭
২০১০ ২০ ১৭:৩২ ২১ ১১:২৮ ২৩ ০৩:০৯ ২১ ২৩:৩৮
২০১১ ২০ ২৩:২১ ২১ ১৭:১৬ ২৩ ০৯:০৫ ২২ ০৫:৩০
২০১২ ২০ ০৫:১৪ ২০ ২৩:০৯ ২২ ১৪:৪৯ ২১ ১১:১২
২০১৩ ২০ ১১:০২ ২১ ০৫:০৪ ২২ ২০:৪৪ ২১ ১৭:১১
২০১৪ ২০ ১৬:৫৭ ২১ ১০:৫১ ২৩ ০২:২৯ ২১ ২৩:০৩
২০১৫ ২০ ২২:৪৫ ২১ ১৬:৩৮ ২৩ ০৮:২০ ২২ ০৪:৪৮
২০১৬ ২০ ০৪:৩০ ২০ ২২:৩৪ ২২ ১৪:২১ ২১ ১০:৪৪
২০১৭ ২০ ১০:২৮ ২১ ০৪:২৪ ২২ ২০:০২ ২১ ১৬:২৮
২০১৮ ২০ ১৬:১৫ ২১ ১০:০৭ ২৩ ০১:৫৪ ২১ ২২:২৩
২০১৯ ২০ ২১:৫৮ ২১ ১৫:৫৪ ২৩ ০৭:৫০ ২২ ০৪:১৯
২০২০ ২০ ০৩:৫০ ২০ ২১:৪৪ ২২ ১৩:৩১ ২১ ১০:০২
২০২১ ২০ ০৯:৩৭ ২১ ০৩:৩২ ২২ ১৯:২১ ২১ ১৫:৫৯
২০২২ ২০ ১৫:৩৩ ২১ ০৯:১৪ ২৩ ০১:০৪ ২১ ২১:৪৮
২০২৩ ২০ ২১:২৪ ২১ ১৪:৫৮ ২৩ ০৬:৫০ ২২ ০৩:২৭
২০২৪ ২০ ০৩:০৬ ২০ ২০:৫১ ২২ ১২:৪৪ ২১ ০৯:২০
২০২৫ ২০ ০৯:০১ ২১ ০২:৪২ ২২ ১৮:১৯ ২১ ১৫:০৩

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "The Summer and Winter Solstices"। Scholastic। ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ অক্টোবর ১, ২০১৭ 
  2. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; USNO নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]