চম্পুকাব্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চম্পু বা চম্পুকাব্য হল ভারতীয় সাহিত্যে সাহিত্য রচনার একটি ধারা। 'চম্পু' শব্দের অর্থ পদ্য এবং গদ্যের সংমিশ্রণ। একটি চম্পুকাব্য গদ্য (গদ্য-কাব্য) এবং পদ্যের(পদ্য-কাব্য) সংমিশ্রণে গঠিত, গদ্য বিভাগের মধ্যে বিভিন্ন ছড়া ও শ্লোক ছড়িয়ে থাকে।

বিশ্বনাথ কবিরাজের প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী- ❝গদ্যপদ্যময়ী ক্বচিৎ চম্পুরিত্যভিধীয়তে।❞[১]

উৎপত্তি[সম্পাদনা]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আলংকারিক দণ্ডী (খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ-সপ্তম শতাব্দী) তাঁর কাব্যাদর্শ নামে কাব্যতত্ত্ব বিষয়ক একটি সারপুস্তিকায় চম্পুকাব্যের উল্লেখ করেন। এ থেকে অনুমান করা যায়, খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর পূর্বেও চম্পুকাব্য বিদ্যমান ছিল এবং পরবর্তী কয়েক শতাব্দী বেশ কিছু চম্পুকাব্য লিখা হয়েছিল। কিন্তু আধুনিক বাংলা সাহিত্যে চম্পুকাব্যের তেমন উল্লেখ পাওয়া যায় না।

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

চম্পুকাব্যে গদ্য ও পদ্যের গতি হবে পরিবর্তিত আকারে এগিয়ে চলা। কারণ গদ্যকাব্যের গদ্য রচনার একঘেয়েমির হাত থেকে পাঠক মনে মাঝে মাঝে ছন্দের দোলা দিয়ে একটু বৈচিত্র্যের আস্বাদ দেয়ার জন্য এবং কাহিনীর কথন-ভঙ্গিতে ভিন্নতা আনতে অতি স্বাভাবিক ভাবে গদ্যকাব্যে অজ্ঞাতসারে পদ্যের স্থান লাভ করে। টীকাকার রঙ্গাচার্য শাস্ত্রীর মতে গদ্য ও পদ্য রচিত কোন কাব্য চম্পুকাব্য হতে হলে গদ্য ও পদ্যের অনুপাত হতে হবে সমান।


বাংলা চম্পুকাব্য এখন খুব কম দেখা যায়। এর চর্চা প্রায় নাই বললেই চলে। তবে বর্তমানে একজন লেখক আছেন নাম "মৃন্ময় শুভ্র" তিনি তার ফেসবুকে প্রায়শই এটার চর্চা করেন। নিচে তার একটা উদাহরণ দিচ্ছি।

"দীর্ঘ রজনী সপ্নেরাও করে খেলা। ঘুম আসে, চলে যায় মাঝে মাঝে, আবারো সে ফিরে আসে। কি এক চোর পুলিশের খেলা! মহাভারতের সেই কুম্ভকর্ণের ঘুম আমারও যে ছিল এককালে। যখন ছিলে নাকো তুমি, বুনতে না স্বপ্নের কোনো জাল, আটকাতে না আমায় মায়ার কোনো জালে। আমি মুক্ত বিহঙ্গের মতো কতো নীড়ে স্বপ্ন বুনেছি! কতো সহস্র মাইল আমি পার হয়েছি! তবুও নিজেকে ভালোবেসেছি, থেমে যাইনি। আর এখন, লক্ষাধিক অদৃশ্য শিকল আমার হাত পায়ে জড়ানো! কতো শত আঘাতের চিহ্ন এই হৃদয়ে, যায়না তো এতো সব লুকোনো। তোমার ঐ অন্তর্ঘাত থেকে আমি খুব করে মুক্তি চাই; কিন্তু আমি জানি তো! ক্ষত-বিক্ষত এ হৃদয়ের তোমার থেকে কোনো মুক্তি নাই।"


তেলুগু[সম্পাদনা]

তেলুগু কবিরা কবিতা উপস্থাপনের চম্পু পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। কৃষ্ণমাাচার্য তাঁর লেখাগুলিকে মূলত বচন নামে ভক্তিমূলক গদ্যে রেখে চম্পা মার্গ-এর এই ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যান।

তেলুগু সাহিত্যে, সর্বাধিক প্রশংসিত চম্পু কাজ হল নান্নায়া ভট্টরাকুডুর অন্ধ্র মহাভারতম, যা একাদশ শতাব্দীর আশেপাশে লিখিত, যা চম্পু শৈলীতে উপস্থাপিত এবং উচ্চমানের সাহিত্যিক যোগ্যতাসম্পন্ন।

সংস্কৃত[সম্পাদনা]

সংস্কৃত সাহিত্যে বেশ কিছু চম্পুকাব্যের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন- নলচম্পু, মদালসাচম্পু, রামায়ণচম্পু, আনন্দবৃন্দাবনচম্পু, গোপালচম্পু, যশস্তিলকচম্পু, ভারতচম্পু এবং ইত্যাদি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. কবিরাজ, বিশ্বনাথ। সাহিত্যদর্পণ