ফ্রানৎস‌ লেডিগ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জার্মান জীববিজ্ঞানী ফ্রানৎস্ লিডিগ (১৮২১-১৯০৮)

ফ্রানৎস‌ ভন লেডিগ বা ফ্রানৎস লেডিগ বা ফ্রাঞ্জ লিডিগ; ইংরেজিতেঃ Franz Leydig (জার্মান: [ˈlaɪdɪç]  ; ২১ মে, ১৮২১ - ১৩ এপ্রিল, ১৯০৮), ছিলেন একজন জার্মান প্রাণিবিদ এবং তুলনামূলক শারীরস্থানবিদ।[১]

শিক্ষা ও কর্মজীবন[সম্পাদনা]

ফ্রানৎস লেডিগ ১৮২১ সালের ২১শে মে, জার্মানির টাউবের নদীর তীরে অবস্থিত রটেনবুর্গ ওব ডের টাউবের শহরে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তাঁর পিতা মেলখিওর লেডিগ ছিলেন একজন ক্যাথলিক ও নিম্ন শ্রেণির সরকারী কর্মকর্তা এবং মাতা মার্গারেটা ছিলেন একজন প্রোটেস্ট্যান্ট। তাঁর পিতা-মাতার তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন একমাত্র ছেলে।[১] লেডিগ তাঁর বাবার ক্যাথলিক ধর্ম এবং শখ উভয়ই গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন শখের উদ্যান-পরিচারক ও মৌমাছি পালনকারী। স্বয়ং লেডিগ পরবর্তীতে স্মৃতিচারণা করে বলেছিলেন যে, শৈশবের সেই ভাললাগার জিনিসগুলোই উদ্ভিদবিদ্যাপ্রাণিবিদ্যার ব্যাপারে তাঁর আজীবন আগ্রহের সূচনা ঘটিয়েছিল। ১২ বছর বয়সে তিনি একটি সরল অণুবীক্ষণ যন্ত্র অর্জন করেন, যা তিনি তাঁর বেশিরভাগ অবসর সময়ে ব্যবহার করতেন।

ফ্রানৎস ভন লেডিগ ১৮৪০ সাল থেকে মিউনিখে দর্শনশাস্ত্র এবং ১৮৪২ সাল থেকে ভুরৎসবুর্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্টিন মুনৎস (১৭৮৫-১৮৪৮), শেঙ্ক, এবং ফ্রানৎস ভন রিনেকারের (১৮১১–১৮৮৩) অধীনে চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন।[১] ১৮৪৭ সালের ২৭শে আগস্ট ভুরৎবুর্গে তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রে ডক্টরেট ডিগ্রী অর্জন করেন এবং হিস্টোলজি ও বিকাশগত শারীরস্থান বিষয়ে পাঠদানের পাশাপাশি ফিজিওলজি বিভাগে আলবার্ট ভন কলিকারের (১৮১৭-১৯০৫) অধীনে একজন সহকারী হিসেবে যোগদান করেন। ১৮৪৮ সালে তিনি ভুরৎবুর্গের জুওটমিক ইনস্টিউশনের প্রসেক্টর হন। পরের বছর তিনি প্রভাষকের যোগ্যতা অর্জন করেন এবং ১৮৫৫ সালের ৯ই মে তিনি অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৮৫০-১৮৫১ সালের শীতে লেডিগ সার্ডিনিয়াতে ভ্রমণ করেন। সেখানকার সমৃদ্ধ সামুদ্রিক জীবন তাঁর নজরে আসে, যা পরবর্তীতে তাঁর অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয় হয়ে উঠে। মাইক্রোস্কোপির পূর্ব অভিজ্ঞতার সাথে সেই সফরের অর্জিত জ্ঞান মিলিত হয়ে পরবর্তীতে তাঁর কাজের গতিপথ চালনা করেছিল।

১৮৫৭ সালে লেডিগ টুবিঙেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যাতুলনামূলক শারীরস্থান বিভাগের পূর্ণ অধ্যাপক হন এবং তিনি তাঁর Lehrbuch der Histologie des Menschen und der Tiere ("মানুষ ও প্রাণীর কলাস্থানবিদ্যার পাঠ্যপুস্তক") প্রকাশ করেন, যা অঙ্গসংস্থানবিদ্যাতে তাঁর মূল অবদান।[১] পাঠ্যপুস্তকটিতে, লিডিগ হিস্টোলজির ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ পর্যালোচনা করেন। এতে তিনি ইয়ান ইভানগেলিস্টা পুরকিয়েন ( ১৭৯৭–-১৮৬৯ ), গাব্রিয়েল গুস্টাভ ভালেন্টিন (১৮১০-১৮৮৩) এবং থিওডর শোয়ান (১৮১০-১৮৮২) দ্বারা কোষের আবিষ্কার ও সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করেন, যাঁরা ১৮৩৯ সালে কোষকে একটি নিউক্লিয়াস যুক্ত ভেসিকল হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। লেডিগ অন্যান্য সমসাময়িক শারীরস্থানবিদদের, বিশেষ করে ইয়োহানেস পিটার মুলারকে (১৮০১-১৮৫৮) তাঁর গ্রন্থিপ্যাথলজির জন্য কোষীয় মতবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করার কারণে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। লিডিগের বইটি একই জাতীয় বিষয়ের উপরে লিখা অন্যান্য বইয়ের সমসাময়িক সময়ে প্রকাশিত হয়েছিল, উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে- কলিকারের Handbuch der Gewebelehre des Menschen (১৮৫২) ("মানব টিস্যু বিজ্ঞানের ম্যানুয়াল") এবং ইয়োসেফ ভন গেরলাখের (১৮২০-১৮৯৬) Handbuch der allgemeinen und speciellen Gewebelehre des Menschlichen Körpers für Aerzte und Studierende (১৮৪৮) ("চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানবদেহের সাধারণ এবং বিশেষ টিস্যু তত্ত্বের ম্যানুয়াল") । অবশ্য,পাঠ্যপুস্তকটি শোয়ানের আবিষ্কারের পরবর্তী দুই দশকে তুলনামূলক অণুবীক্ষণিক শারীরস্থানের বৃদ্ধির সর্বোত্তম বিবরণ দেয়।

তিনি ১৮৭৫ সালে বন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক শারীরস্থান বিভাগের অধ্যাপক নিযুক্ত হন, সেখানে তিনি এনাটমিকাল ইনস্টিটিউটের পরিচালক এবং প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর ও প্রাণিবিদ্যা ইনস্টিটিউটের পরিচালকও হয়েছিলেন।[১] পরবর্তীতে তাঁকে Geheimer Medizinalrat ("গুপ্ত মেডিকেল পরিষদ") এবং ১৮৮৭ সালের ১লা এপ্রিলে ইমেরিটাস অধ্যাপক বানানো হয়। ১৯৩৮ সালের ১৩ই এপ্রিল তাঁর জন্মস্থান রটেনবুর্গ ওব ডের টাউবের শহরে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।[২] তাঁর স্ত্রী কাটারিনা ছিলেন এরলাঙেনের সার্জারি বিভাগের একজন অধ্যাপকের কন্যা; তাঁদের কোন সন্তান ছিল না। ফ্রানৎস ভন লেডিগ তাঁর জীবদ্দশায় বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছিলেন। তাঁকে বোলনা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী দেওয়া হয়েছিল। তিনি লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটি, নিউইয়র্ক বিজ্ঞান একাডেমি, সেন্ট পিটার্সবার্গের ইম্পেরিয়াল একাডেমি অফ সায়েন্সেস এবং রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস (১৮৯৮) সহ একাধিক চিকিৎসা ও বৈজ্ঞানিক সোসাইটির সদস্য ছিলেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

মন্তব্য[সম্পাদনা]

  1. "Franz von Leydig" (biography), Ole Daniel Enerson, 2006, WhoNamedIt.com WNI-675-Leydig.
  2. "Franz von Leydig - Wikipedia" (German), German Wikipedia, 2006-10-29, de.wikipedia.org webpage: GermanWP-Franz_von_Leydig.

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  • "ফ্রানৎস ভন লেডিগ (whonamedit.com)" (জীবনী), ওলে ডানিয়েল এনারসন, ২০০৬, WhoNamedIt.com webpage ওয়েবপৃষ্ঠা: ডাব্লুএনআই -675-লেডিগ