সরেকওম
সরেকওম খানদান | |
---|---|
বর্তমান অঞ্চল | সিলেট, বাংলাদেশ |
পূর্ববর্তী বানান | সরকওম |
ব্যুৎপত্তি | লোক (কওম) এর মাথা/শির (সর) |
প্রতিষ্ঠাতা | হাজী মোহাম্মদ ইউসুফ |
ধর্ম | ইসলাম |
জমিদারি | সরেকওম বাড়ী, হযরত শাহজালালের দরগাহ |
সরেকওম খানদান (ফার্সি: سرقوم خاندان) সিলেট অঞ্চল এর বিখ্যাত পরিবার যারা শাহজালালের দরগাহের মোতায়াল্লি ও খাদিম। এই "সরেকওম" পদবি শুধু তাদের ব্যবহার করা হয়।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]তুমি চলে গেছ দূরে আসিবেনা কভু, তোমারে খুঁজিয়া আঁখি ফিরিতেছে তবু
তোমার আমার মাঝে হয়েছিল যত কথা বলা, রেশটুকু আজো প্রাণে দেয় আসি দোলা
সকারে, দুপুরে, সাঁঝে, নব বরষায়, যত কথা হয়েছিল তোমার আমায়
তাহার প্রতিটি কথা প্রতিটি চাহনি আঁধারে কাহারে খুঁজে জানিগো জানি
প্রতিটি নিঃশ্বাস তব এতটুকু হাসি, প্রতিদিন একই কথা তোরে ভালবাসি
তোরে ভালবাসি আমি জীবনে মরণে, জনমে জনমে মোর অবসর ক্ষণে
– মৌলভী সরেকওম উবায়দুল্লাহের কবিতা[২]
১৩০৩ খ্রী: সালে, সিলেটের ইসলামী বিজয়ের পরে, হাজী ইউসুফ সিলেটের চৌকিদিঘীতে অবস্থান করলেন শাহ জালালের সঙ্গে। জালালের নির্দেশে ইউসুফ একজন স্থানীয় মুসলিম নারীকে বিয়ে করে। তার ওফাতের আগে, শাহ জালাল নিযুক্ত করলেন যে ইউসুফ তার ওকফের মোতায়াল্লি হয়। ইউসুফকে পদবি দেওয়া হলো "সরেকওম" (লোকের মাথা) এবং তার বংশধরগণ এখনো ব্যবহার করতে আছেন। একজন ঘনিষ্ঠ সহচর, ইউসুফের ওফাতের সময় সেও জালালের সমাধির পাশে কবর দেওয়া হলো দক্ষিণ-পূর্বে।
১৬৬০ খ্রী: দশকে, সিলেটের মুঘল ফৌজদার, ইসফান্দিয়ার খান বেগ সরকারীভাবে স্বীকার করলেন যে শায়খ সরেকওম পীর বক্স হলো দরগাহের হক খাদিম। ইসফান্দিয়ার একটি অসম্পূর্ণ মসজিদ নির্মাণ করলেন দরগাহের পাশে যা এখনো দেখা যায় গেইটের গাছ জঙ্গলের পিছে।[৩]
শাহ জালালের পাশে দরগাহের ভূতপূর্ব মোতওয়াল্লী আবু তুরাবের কবর। এখান থেকে পশ্চিমের প্রবেশ পথে বাহির হতে আরেকটি বেষ্টনীর পাশে দরগাহের আরো দুই জন মোতওয়াল্লী আবু নাসির ও আবু নসর পাশাপাশি অন্তিম শয্যায় শায়িত আছেন।
১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩৬ খ্রী: সালে, কয়েকজন বাঙ্গালী মুসলমান সাহিত্যিকরা একসাথে বৈঠক করলেন সরেকওম বাড়ীতে। এখানেই শুরু হলো "সিলেট কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ" (যা পরে হবে কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ), বাংলার প্রাচীনতম এক সাহিত্য সংসদ। মুহাম্মদ নুরুল হক, সৈয়দ মুজতবা আলী, দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ, দিলওয়ার খান এবং চৌধুরী গোলাম আকবর সহ এই প্রতিষ্ঠানের সাবেক সভাপতিদের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের অনেক লেখক, সমালোচক এবং কবি রয়েছেন। যার প্রথম সম্পাদক ছিলো সরেকওম আবু জাফর আব্দুল্লাহ, একজন বিখ্যাত লেখক ও দরগাহ মোতায়াল্লি, আব্দুল্লাহের ওকফে এই প্রতিষ্টান বসে থাকতো অনেক বছর।[৪] এই যুগে আব্দুল্লাহ অনেক গ্রন্থসমূহ লিখলেন "আল-ইসলাহ" পত্রিকার জন্য।[৫] আব্দুল্লাহর সবচেয়ে খ্যাতনামা ছিলো "সপ্তক"।[৬] পাকিস্তান আন্দোলন এর সময় আব্দুল্লাহ ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ এক কর্মী।[৭] ঐতিহাসিক লেখক নাসির উদ্দিন আহমদ চৌধুরীর খালাতো ভাই ছিলেন।[৮] ১৯৭১ খ্রী সালে, আব্দুল্লাহ একটি ঘড়িসহ মিনার স্থাপন করলেন দরগাহে যার কাজ শেষ হলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার কয়েক দিন পরে। মৌলভী সরেকওম উবায়দুল্লাহ একজন খ্যাতনামা কবি ছিলেন যিনি "রাখালিয়া বাঁশী" নামক কবিতা লিখলেন। ১৯৪২ খ্রী: সালে তিনি সাহিত্যিক সংসদে সদস্য হন। তিনি কাজী নজরুল ইসলামকে দাওয়াত দিলেন যখন সে সিলেট অঞ্চল ঘুরতে এলো।[৯]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ মেহেদী, উজ্জ্বল (২৬ মে ২০১৮)। "এক কাতারে, এক আহারে"। প্রথম আলো।
- ↑ খাতুন চৌধুরী, রাবেয়া (১৯৯৩)। সিলেটের কাব্য সাধন। পৃষ্ঠা 175–176।
- ↑ চৌধুরী, মুজিবুর রহমান (২ অক্টো ২০১৯)। "গৌড়-বঙ্গে মুসলিম বিজয় এবং সুফি-সাধকদের কথা"। সিলেটের ডাক। ৫ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মার্চ ২০২০।
- ↑ শর্মা, নন্দলাল। "কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ"। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি।
- ↑ তাহের, সৈয়দ মোহাম্মদ। সরেকওম আবু জাফর আব্দুল্লাহ: জীবন ও কর্ম।
- ↑ হুসেন, মোহাম্মদ আশরফ (১৯৯০)। শিলহটের ইতিহাস। ১। মাহমুদ আহসান চৌধুরী।
- ↑ রাজিউদ্দীন কোরেশী (৩০ এপ্রিল ২০১৯)। "একটি বিবৃতি ও একটি সংগঠন"। দৈনিক নয়া দিগন্ত। zero width space character in
|কর্ম=
at position 8 (সাহায্য) - ↑ রফিকুর রহমান লজু (৩১ আগস্ট ২০১৯)। "ইতিহাস বিষয়ক একটি গ্রন্থের কথা"। সিলেটের ডাক। ২১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২০।
- ↑ চৌধুরী, হুসেন তৌফিক (২৫ মে ২০১৯)। "সিলেটে নজরুল"। সিলেটের ডাক। ২১ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ এপ্রিল ২০২০।