কালবৈশাখী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কালবৈশাখী ঝড়
কলকাতায় কালবৈশাখী
ধরনবজ্রবিদ্যুৎসহ ঝোড়ো আঞ্চলিক বায়ুপ্রবাহ
গঠনমার্চ
স্থিতিকাল১-২ মাস
বিলুপ্তিএপ্রিল
সর্বনিম্ন তাপমাত্রাপ্রভাবিত অঞ্চলের উষ্ণতা ৫°C – ১০°C হ্রাস পায়
ঘূর্ণিঝড় নিশ্চিতগতিবেগ মোটামুটি ৮০ – ১০০ কিমি / ঘণ্টা
ঘূর্ণিঝড় প্রাদুর্ভাবের স্থিতিকাল৩০-৪০ মিনিট
বাতাসের গতিবেগ
  • ১৫০ কিমি / ঘণ্টা
সর্বোচ্চ তুষারপাত বা বরফ বিবৃদ্ধিমাঝে মাঝে শিলাবৃষ্টি হয়
সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতহালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টিপাত
ক্ষয়ক্ষতিপ্রভাবাধীন অঞ্চলে গাছপালা, বাড়িঘর প্রভৃতি ভেঙে পড়ে প্রাণহানিসহ প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়

  • প্রথম ঘূর্ণিঝড় থেকে শেষ ঘূর্ণিঝড়ের সময়।
বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড়ের পর একটি বৃষ্টি স্নাত সন্ধা যেখানে ডুবন্ত সূর্যের লাল আভা দৃশ্যমান।

কালবৈশাখী একটি স্থানীয় বৃষ্টিপাত ও বজ্রঝড় যা বাংলাদেশ ও ভারতের কিছু অঞ্চলে হয়ে থাকে। বাংলাদেশ ও উত্তর পূর্ব ভারতে মার্চ থেকে কালবৈশাখী ঝড় দেখা যায়। অনেকসময় এই ঝড় জীবনঘাতি রূপ ধারণ করে। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। কালবৈশাখীর বায়ুর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিমি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিমি-এর বেশিও হতে পারে। কালবৈশাখীর স্থায়িত্বকাল স্বল্পতর, তবে কখনও কখনও এ ঝড় এক ঘণ্টারও বেশিকাল স্থায়ী হয়। এই সময়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম, ত্রিপুরা, বিহার, ছত্তিশগড়ঝাড়খণ্ডে প্রায়ই বজ্রবৃষ্টি হয়। কালবৈশাখীর সময়ে যেকোন প্রকার বায়ুযান চালানো বিপদজনক। বিমানচালকেরা কালবৈশাখী ঝড়কে এড়িয়ে চলে। যদিও কালবৈশাখীর সময়কার বৃষ্টিপাত বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলার ধান, পাট এবং আসামের চা চাষের জন্য উপকারী ভূমিকা পালন করে।

নামকরণ[সম্পাদনা]

কাল শব্দের অর্থ ধ্বংস এবং বৈশাখ মাসে উৎপত্তি হয় বলে একে কালবৈশাখী নামে অভিহিত করা হয়। গ্রীষ্মকালে বা এপ্রিল – মে মাসে বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে মাঝে মধ্যে বিকালের দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হয় তাকে কালবৈশাখী বলে। কালবৈশাখী ঝড় উত্তর – দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে ইংরেজিতে নরওয়েস্টার বলা হয়।

কালবৈশাখীর কারণ[সম্পাদনা]

(এই অঞ্চলে ভূপৃষ্ঠস্থ অত্যধিক গরম হলে বাতাস হালকা ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে। উত্তপ্ত হালকা বাতাস সোজা উপরে উঠে শীতল হয়ে কিউমুলাস মেঘ সৃষ্টি করে। বায়ুমন্ডলের অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে কিউমুলাস মেঘ উল্লম্বভাবে কিউমুলোনিম্বাস নামক কালো মেঘ গঠন করে এবং পরবর্তী সময়ে বজ্রঝড়ের সৃষ্টি করে)। সাধারণ ঝড়ের সংগে এই ঝড়ের প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এ ঝড়ের সঙ্গে সবসময়ই বিদ্যুৎ চমকায় ও বজ্রপাত হয়।

কালবৈশাখীর জীবনচক্র[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের উত্তরে ঠাকুরগাঁওয়ে ভারী শিলাবৃষ্টি (এপ্রিল ২০২২)

কালবৈশাখীর জীবনচক্রকে তিনটি ধাপে ভাগ করা যায়। ধাপগুলি ঊর্ধগামী অথবা নিম্নগামী বায়ুস্রোতের মাত্রা এবং গতিবিধি দ্বারা নির্ণীত হয়ে থাকে। কালবৈশাখীর পর্যায়গুলি হচ্ছে:

  1. কিউমুলাস বা ঘনীপূঞ্জীভবন পর্যায়,
  2. পূর্ণতা পর্যায় এবং
  3. বিচ্ছুরণ পর্যায়।

একটি কালবৈশাখী পূর্ণতা লাভের ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট পর এর তীব্রতা হ্রাস পেতে শুরু করে বিচ্ছুরণ পর্যায়ে প্রবেশ করে। অতি দ্রুত হারে তাপমাত্রা হ্রাস, মেঘে প্রচুর জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি এবং বায়ুর পুঞ্জীভূত ঊর্ধ্বচলনের দরুণ কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে, শিলাবৃষ্টি অতিরিক্ত হলে ফসলের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে।

পূর্বাভাস[সম্পাদনা]

কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝড়টি তৈরি হয় বলে কয়েকদিন দিন আগে এর পূর্বাভাস দেয়া যায় না। কোন অঞ্চলে ব্যাপক গরম পড়লে তখন কেউ কেউ অনুমান করেন যে এ ধরনের ঝড় হতে পারে। কালবৈশাখী কোথায় কতক্ষণ হবে সেটি আগে থেকেই জানিয়ে দেয়ার মতো বৈজ্ঞানিক কোন উপায় এখনো নেই। এটি তৈরি হয় ৫/৬ ঘণ্টা আগে আর শতভাগ বোঝা যায় ২/৩ ঘণ্টা আগে।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]