চোষক মুখী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

চোষক মুখী
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস সম্পাদনা করুন
জগৎ/রাজ্য: অ্যানিম্যালিয়া (Animalia)
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণি: Actinopterygii
বর্গ: Siluriformes
পরিবার: Loricariidae
উপপরিবার: Hypostominae
গোত্র: Hypostomini
গণ: Hypostomus
(লিনিয়াস, ১৭৫৮)
প্রজাতি: H. plecostomus
দ্বিপদী নাম
Hypostomus plecostomus
(লিনিয়াস, ১৭৫৮)
প্রতিশব্দ[১]

Acipenser plecostomus লিনিয়াস, ১৭৫৮
Hypostomus guacari Lacepède, 1803
Loricaria flava Shaw, 1804
Plecostomus bicirrosus Gronow, 1854
Plecostomus brasiliensis Bleeker, 1864
Plecostomus plecostomus লিনিয়াস, 1758
Pterygoplichthys plecostomus লিনিয়াস, 1758

চোষক মুখী (বৈজ্ঞানিক নাম: Hypostomus plecostomus) হচ্ছে লোরিক্যারিডে (Loricariidae) পরিবারের হাইপস্টোমাস (Hypostomus) গণের অন্তর্ভুক্ত একটি স্বাদুপানির মাছ। এটি সাকার ফিস অথবা সাকার মাউথ ক্যাটফিস নামেও পরিচিত।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

এই মাছ এই পর্যন্ত দুই ধরনের পাওয়া গেছে একটির রং সাদা ও ছোপ ছোপ দাগ অপরটি কালো এবং তার উপর সাদা ডোরাকাটা দাগ। বর্তমানে বাংলাদেশের নদ-নদীতে দ্বিতীয়টি ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে।[২] এটি সাধারণ একুরিয়ামের জন্য আদর্শ মাছ একুরিয়াম এর ময়লা খেয়ে বেঁচে থাকে এবং স্বাদু পানির দানব হচ্ছে এই মাছ ময়লা সহ অন্যান্য মাছের খাদ্য খেয়ে থাকে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে থাকে। তাই যে জায়গায় এই মাছ বেশি পরিমাণে থাকে অই জায়গায় অন্যান্য মাছ কম থাকে। বর্তমানে বুড়িগঙ্গা নদী সহ প্রায় জলাশয়ই মাছটি উল্লেখযোগ্য আকারে দেখা যায়। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাকার ফিস উন্মুক্ত জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়ায় দেশীয় অনেক প্রজাতির মাছ খেয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এটি চিংড়ি, কালি বাউস, মাগুর ও শিং মাছসহ ছোট শামুক জাতীয় শক্ত খোলের প্রাণী খেয়ে সাবাড় করে ফেলে।

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

এই মাছ কোস্টারিকা, পানামা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে বিস্তৃত তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এটি প্রবেশ করেছে। এবং চীন,মায়ানমার এরপর বাংলাদেশেও এটি প্রবেশ করেছে । [৩]

বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থা এবং সংরক্ষণ[সম্পাদনা]

রাজধানীর বুড়িগঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন জলাশয়ে উপস্থিতি রয়েছে রাক্ষুসে সাকার মাছের।[৪] জানা যায়, রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীতেও জেলেদের জালে ধরা পড়ে সাকার মাছ।[৫] আইইউসিএন বাংলাদেশ (২০০০) এর লাল তালিকা অনুযায়ী এই প্রজাতিটি বাংলাদেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ২০২০ সালে শেষ দিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও জলাশয়ে পাওয়া এই মাছ যা দেশের জন্য হুমকি স্বরূপ।[৩] বিশেষজ্ঞরা জানান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এ মাছ খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে। মানব শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন রোগ। তবে নিষিদ্ধের খবর এখনও অজানা সাধারণ মানুষের। ফলে ক্ষতি না জেনেই এ মাছ রান্না করে খাচ্ছেন অনেকে।[৬]

রাষ্ট্রপতির আদেশে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১১ জানুয়ারি নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করে দেশে ছড়িয়ে পড়া ক্ষতিকর সাকার মাছ চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ করে। এর মধ্য দিয়ে মাছটি আমদানি, প্রজনন, চাষ, পরিবহন, বিক্রি, গ্রহণ বা প্রদান, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও মালিক হতে পারবে না কেউ।[৭][৮]

নামকরণ[সম্পাদনা]

সাধারণ নাম[সম্পাদনা]

এইচ. প্লেকোস্টোমাসকে বর্ণনা করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সাধারণ নাম ব্যবহার করা হয়, যেখানে প্লেকোস্টোমাস এবং সংক্ষিপ্তরূপ "প্লেকো" অন্য সব সাধারণ নামের সাথে ব্যবহারযোগ্য। নামসমূহের মধ্যে রয়েছে:

  • শেওলা চোষক/খাদক
  • পেজ ডায়াবলো (শয়তান মাছ)[৯][১০]
  • প্লেকো
  • দারোয়ান মাছ[১১]
  • পৌর মাছ - মালয় ভাষায় যেটি 'ইকান বান্দরায়া'
  • সাকারমাউথ ক্যাটফিশ[১১]
  • ঝাড়ুদার মাছ - ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় যেটি 'ইকান সাপু সাপু'
  • কুমির মাছ (প্যাপিলোকুলিসেপস লঙ্গিসেপসের সাথে বিভ্রান্ত হবেন না, যা মূলত কুমির মাছ বা তাঁবুযুক্ত ফ্ল্যাটহেড নামে পরিচিত)

শ্রেণীবিন্যাস[সম্পাদনা]

এই প্রজাতির বৈজ্ঞানিক নামটি, হাইপোস্টোমাস প্লেকোস্টোমাস, ল্যাটিন হাইপো (অর্থাৎ "নীচে"), স্টোমা (অর্থ "মুখ") এবং প্লেকো (অর্থ "প্লেটেড") থেকে উদ্ভূত হয়েছে।

হাইপোস্টোমাস প্লেকোস্টোমাস শনাক্ত করার জন্য অন্যান্য প্রজাতির অনেক সাধারণ নামও ব্যবহৃত হয়, যা H. plecostomus এবং অন্যান্য Loricariidae যেমন H. punctatus, Pterygoplichthys multiradiatus এবং P. pardalis এর নামসমূহের সাথে বিভ্রান্তি বাড়ায়। ২০১২ সালে, ওয়েবার, কোভেন এবং ফিশ-মুলার দেখান যে কার্ল লিনিয়াসের টাইপ ক্রমটি ভিন্নধর্মী এবং দুটি প্রজাতি নিয়ে গঠিত: এইচ. প্লেকোস্টোমাস (যার জন্য লেখকরা একটি লেক্টোটাইপ মনোনীত করেন) এবং এইচ. ওয়াটওয়াটা।[১২]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Froese, Rainer। "Synonyms of Hypostomus plecostomus"। FishBase। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১১ 
  2. বুড়িগঙ্গায় ভয়ের কারণ এখন ‘সাকার মাছ’, প্রথম আলো ১৬ নভেম্বর ২০২১
  3. গাউছিয়া ওয়াহিদুন্নেছা চৌধুরী, এ কে আতাউর রহমান (অক্টোবর ২০০৯)। "স্বাদুপানির মাছ"। আহমেদ, জিয়া উদ্দিন; আবু তৈয়ব, আবু আহমদ; হুমায়ুন কবির, সৈয়দ মোহাম্মদ; আহমাদ, মোনাওয়ার। বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষ২৩ (১ সংস্করণ)। ঢাকা: বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। পৃষ্ঠা ২০৩–২০৪। আইএসবিএন 984-30000-0286-0 |আইএসবিএন= এর মান পরীক্ষা করুন: invalid prefix (সাহায্য) 
  4. "সাকার মাছ নিষিদ্ধ: কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা"। সমকাল। ১৪ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  5. "এবার কর্ণফুলীতে ধরা পড়ল সাকার মাছ"। সমকাল। ২ জানুয়ারি ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  6. "নিষিদ্ধ সাকার মাছ খাচ্ছে মানুষ"। সমকাল। ১৫ নভেম্বর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  7. "চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ সাকার মাছ"। সমকাল। ২৫ জানুয়ারি ২০২৩। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  8. "Bangladesh to ban 'suckermouth catfish' as it threatens aquatic biodiversity"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ 
  9. "Fish jerky, anyone? Business hopes to sell Mexico's 'devil fish' to Canadians as sustainable snack | CBC News"। ২০২১-০৭-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৫-১০ 
  10. Orfinger, Alexander Benjamin; Douglas Goodding, Daniel (২০১৮-০২-১৪)। "The Global Invasion of the Suckermouth Armored Catfish Genus Pterygoplichthys (Siluriformes: Loricariidae): Annotated List of Species, Distributional Summary, and Assessment of Impacts"Zoological Studies57 (57): e7। আইএসএসএন 1021-5506ডিওআই:10.6620/ZS.2018.57-07পিএমআইডি 31966247পিএমসি 6517723অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  11. Froese, Rainer (৫ আগস্ট ২০১৪)। "Common names of Hypostomus plecostomus"FishBase। FishBase। ২৬ মে ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জুলাই ২০২১ 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; WeberCovainFisch-Muller2012 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি