রতনতনু ঘোষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রতনতনু ঘোষ
রতনতনু ঘোষ
জন্ম(১৯৬৪-১২-৩১)৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৪
মৃত্যু৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬(2016-09-03) (বয়স ৫১)
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
শিক্ষাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাকবি, গবেষক, প্রাবন্ধিক, সাংস্কৃতিককর্মী, অধ্যাপক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
রাজনীতিহীন রাজনীতি (২০০৫)
আদি নিবাসমুন্সীগঞ্জ
দাম্পত্য সঙ্গীড. ছন্দশ্রী পাল
পুরস্কারবাংলা একাডেমী পুরস্কার, বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প পুরস্কার

রতনতনু ঘোষ (৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৪ - ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬) ছিলেন একজন বাংলাদেশী কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক, সমাজচিন্তক, গবেষক, প্রকাশক, অধ্যাপক ও সংস্কৃতিকর্মী।[১] তিনি সত্তর দশকের শেষ দিক থেকে সাহিত্য চর্চা শুরু করেন। তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় অর্ধশতাধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। পেশাগত জীবনে অধ্যাপনা করেছেন।[২]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার মিরেশ্বরের নয়াগাঁও-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম নিধুবন ঘোষ এবং মাতার নাম ভগবতী ঘোষ।[৩] এত অল্প বয়েসে তিনি সাহিত্যাঙ্গনে অনেক কাজ করেছেন। মুন্সীগঞ্জ শহরের মালপাড়ায় থাকতেন তিনি । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার প্রতি তার আনুগত্য ছিল। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেছেন। জীবনের শেষ ভাগে এসে তিনি কবিতা রচনায় আত্মনিয়োগ করেন। প্রেম, প্রকৃতি, বিরহ ও সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ব্যক্তিগত কথকতা তার রচনার মূখ্য প্রতিপাদ্য ছিল। তিনি একজন পরিশ্রমী লেখক ছিলেন। মানুষের স্বরূপ, স্বদেশ সমাজ সাহিত্য, রাজনীতিহীন রাজনীতি, মুক্তচিন্তা, বিশ্বায়নের রাজনীতি, ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ। তার সম্পাদিত গ্রন্থ— নোবেল বিজয়ীদের নির্বাচিত প্রবন্ধ, উত্তরাধুনিকতা, বহুমাত্রিক বিশ্বায়ন, পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র: স্বরূপ সংকট সম্ভাবনা, ৩৪ নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাৎকার।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

রতনতনু ঘোষের জন্ম ১৯৬৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর। কেকে উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, হরগঙ্গা কলেজ থেকে আইএ পাশ করেন। মুন্সীগঞ্জে বেড়ে ওঠা সমাজকর্ম ও বাংলায় এমএ-তে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার লেখাপড়া। স্থিত হয়েছিলেন মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজ-এ অধ্যাপনা সূত্রে। ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত তিনি চষে বেড়িয়েছেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজে অধ্যাপনার দায়িত্ব পালনকালে সমাজকর্ম বিষয়ে পাঠদান, পরীক্ষার খাতা দেখা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা, পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াও ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা দেওয়া, শিক্ষা ভ্রমণে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন।

প্রকাশিত গ্রন্থ[সম্পাদনা]

রতনতনু ঘোষের লেখা গ্রন্থগুলো হলো- সংক্ষিপ্ত তালিকা

কাব্যগ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • মুক্তি তোকে পেতেই হবে বাংলাদেশ (নিঝুম প্রকাশন, ২০২৩)

মানুষ, মনুষ্যত্ব ও মানবাধিকার[সম্পাদনা]

  • মানুষের স্বরূপ (তলেপ্র/ বাংলা একাডেমি, ১৯৯৬)
  • মানুষকেন্দ্রিক জগৎ (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ১৯৯৭)
  • নিষ্ক্রিয় মনুষ্যত্ব ও সক্রিয় বর্বরতা (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ১৯৯৭)
  • মানুষের স্বরূপ সন্ধানে (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১১)
  • মানবাধিকার ও সুশাসন (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১১)

সাক্ষাৎকারগ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • মুখোমুখি সংলাপ (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০২৩)
  • কথনবিশ্ব (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০০১)
  • সরদারের সংলাপ (প্যাপিরাস, ২০০৫)
  • কিংবদন্তীর সাক্ষাৎকার (জনতা প্রকাশ, ২০১০)
  • ৩৪ নোবেল বিজয়ীর সাক্ষাৎকার (সাহিত্যবিলাস, ২০১১)
  • কথোপকথনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)
  • বরেণ্যদের মুখোমুখি (কথাপ্রকাশ, ২০১৪)
  • আমার দেওয়া পঞ্চাশ সাক্ষাৎকার (২০১৪)

বিশ্বায়ন ও উত্তরাধুনিকতা[সম্পাদনা]

  • বিশ্বায়নের রাজনীতি (উৎসব প্রকাশনী, ২০০৭)
  • বহুমাত্রিক বিশ্বায়ন (কথাপ্রকাশ, ২০০৯)
  • উত্তরাধুনিক চিন্তাধারা : দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ (মাওলা ব্রাদার্স, ২০০৯)
  • উত্তরাধুনিকতা (কথাপ্রকাশ, ২০১০)

বাংলাদেশ, রাজনীতি ও সুশাসন[সম্পাদনা]

  • বাংলাদেশে সংখ্যালঘু (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০০২)
  • রাজনীতিহীন রাজনীতি (প্যাপিরাস, ২০০৫)
  • আলোকিত বাংলাদেশের পথ (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০০৬)
  • বাংলাদেশের রাজনীতি : প্রত্যাশা ও বাস্তবতা (রিদম প্রকাশনা সংস্থা, ২০০৭)
  • সুশাসন প্রত্যাশা (রিদম প্রকাশনা সংস্থা, ২০০৮)
  • বাংলাদেশের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতি (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০০৯)
  • অগ্রসর বাংলাদেশ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১৩)
  • অপরাজেয় বাংলাদেশ (অনন্যা, ২০১৪)

নির্বাচিত প্রবন্ধ[সম্পাদনা]

  • নোবেল বিজয়ীদের নির্বাচিত প্রবন্ধ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১১)
  • সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের প্রবন্ধ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)
  • শান্তিতে নোবেল বিজয়ীদের প্রবন্ধ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)
  • অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের প্রবন্ধ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)
  • বিজ্ঞানে নোবেল বিজয়ীদের প্রবন্ধ (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)
  • নির্বাচিত প্রবন্ধ (কথাপ্রকাশ, ২০১৩)
  • Sellected Essays (২০১৪)

পুঁজিবাদ, সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্র[সম্পাদনা]

  • পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্র (কথাপ্রকাশ, ২০১১)
  • গণতন্ত্র : স্বরূপ সংকট ও সম্ভাবনা (কথাপ্রকাশ, ২০১২)

স্বদেশ, সমাজ ও মুক্তচিন্তা[সম্পাদনা]

  • মুক্তচিন্তা (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ১৯৯৭)
  • স্বদেশ সমাজ সাহিত্য (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০০০)
  • কথাচিরন্তন (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১৪)
  • বইয়ের ভূমিকা (২০১৪)

শিক্ষা, ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা (অবসর প্রকাশনা সংস্থা, ২০১১)
  • ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১২)

ভূমিকা ও সম্পাদনা[সম্পাদনা]

  • মহাত্মা গান্ধীর আত্মকথা (হাওলাদার প্রকাশনী, ২০১১)
  • শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ : আহমদ শরীফ (কথাপ্রকাশ, ২০১১)
  • বিপর্যয়ের অর্থনীতি (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ২০১২)
  • আমার ধর্ম (হাওলাদার প্রকাশনী, ২০১৩)

কবিতা ও সাহিত্য-সমালোচনা[সম্পাদনা]

  • কবিতা বিষয়ক কথা (মুক্তাশ্রী প্রকাশন, ১৯৯৯)
  • কবিতা দেশে দেশে (কথাপ্রকাশ, ২০১২)
  • শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০১৪)

বাংলাদেশের সাহিত্য[সম্পাদনা]

  • প্রবন্ধ, কবিতা, ছোটগল্প, উপন্যাস ও নাটক (অঙ্কুর প্রকাশনী, ২০১৪)
  • কাব্যকলাম (বিভাস,২০১৫),
  • জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক দিবসরে কবিতা (কথা প্রকাশ,২০১৫),
  • নির্বাচিত কবিতা-কবিতায় বিশ্ব (গণপ্রকাশন,২০১৫),
  • কবিতাচিএ চিএময় কবিতা (উদাহরণ,২০১৫),
  • বহুস্বররে কবিতা (উদাহরণ,২০১৫),
  • কবিতাসমগ্র (গণপ্রকাশন,২০১৫),
  • স্বনির্বাচিত কবিতা (উদাহরণ,২০১৬)

প্রয়ান[সম্পাদনা]

ঢাকার তেজগাঁও শমরিতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ২০১৬ সালের ৩ অক্টোবর সোমবার বিকেল ৫ টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি পৃথিবীর এই রৌদ্র ছায়া ছেড়ে চলে গেছেন অনন্তলোকে।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক পুরস্কার (১৯৯৬)

ভাষা আন্দোলন মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা - রতনতনু ঘোষ । ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতা থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় পর্যন্ত যে গুরুত্বপূর্ণ ইতিবৃত্ত তৈরি হয়েছে তাতে বাঙালির আকাঙ্ক্ষা, জাগরণ, সংগ্রাম, বিকাশ ও বিস্তার লক্ষণীয় বিষয়। এদিকগুলো প্রবন্ধক্রমে উঠে এসেছে কালক্রমিক বিষয়-বৈচিত্র্য বহুমাত্রিক নিয়ে। তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ ও স্বকীয় মূল্যায়নের আলোকেই প্রবন্ধগুলো রচিত। গ্রন্থটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব যেমন আছে তেমনি জাতীয় পর্যায়ে বাঙালির স্বকীয় ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক বিকাশ এবং স্বাধীন স্বদেশের লক্ষ্য নির্ণয়েরও তা নির্দেশক হতে পারে। বাঙালি জাতির গৌরবজনক বিজয় দুটো_ একটি বায়ান্নতে অন্যটি একাত্তরে। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জিত হয়েছিল বিজয়। এ ব্যাপারে জাতির কোনো অংশের মধ্যেই কোনো ধরনের ভিন্নমত আজও পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু তার পরেও কথা থেকে যায়। কথা থেকে যায় ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অর্জিত বাঙালি জাতির প্রথম বিজয়কে নিয়ে। বিশেষ করে সে আমরাই সে বাঙালি জাতিই যখন বলি, ভাষা আন্দোলন হয়েছিল বলেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করতে পেরেছি। তাহলে দুটি বিজয়ই গুরুত্বপূর্ণ; দুটি বিজয়ই তাৎপর্যবহ। এ বিষয়গুলো বুঝতে হলে দুটি আন্দোলনেরই পটভূমি সামনে রাখা প্রয়োজন।ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা - এ তিনটি বিষয়-পর্বের ভিন্নমাত্রিক চিন্তাসমৃদ্ধ বক্তব্য পাঠকের উপলব্ধি ও বিবেচনার বিষয় হতে পারে আমাদের আর্থ-সামাজিক, ভাষিক-সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল (ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। ফজলুল হক, আবুল কাসেম; ইসলাম, মুহম্মদ সাইফুল, সম্পাদকগণ। মানুষের স্বরূপ (প্রথম সংস্করণ)। ঢাকা: কথাপ্রকাশ। পৃষ্ঠা ৩৮৪। আইএসবিএন 984-8524487 
  2. "বাংলা একাডেমির অসৌজন্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন"। ১০ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১৬ 
  3. সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ ও অন্যান্য সম্পাদিত; বাংলা একাডেমী লেখক অভিধান; বাংলা একাডেমী, ঢাকা; সেপ্টেম্বর, ২০০৮; পৃষ্ঠা- ৩৩৬

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]