পঞ্চরাত্র

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

পঞ্চরাত্র হল সংস্কৃত ভাষায় রচিত বৈষ্ণব আগম শাস্ত্র।[১] 'পঞ্চরাত্র' কথাটির আক্ষরিক অর্থ 'পাঁচ রাত্রি। (পঞ্চ: পাঁচ, রাত্র: রাত্রি)।[২] এই নামটির একাধিক ব্যাখ্যা প্রচলিত আছে।[৩] শতপথ ব্রাহ্মণ (১২.৬) গ্রন্থেও এই শব্দটি পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে, নারায়ণ পাঁচ রাত্রি ব্যাপী একটি যজ্ঞ করে তুরীয় ও পরিব্যাপ্ত সত্ত্বা অর্জন করেন।[২][৪] পঞ্চরাত্র আগমগুলি রামানুজের শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থগুলির অন্যতম। [৪] পঞ্চরাত্র আগমে ২০০টিরও বেশি ধর্মগ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত।[৩] এগুলি বিভিন্ন সময়ে রচিত হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী[৫] থেকে ৬০০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে এগুলি রচিত হয়।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

আধুনিক কালে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে বিভক্ত বিষ্ণু-উপাসকগণ পঞ্চরাত্র পূজাপদ্ধতি অনুসরণ করেন। সাত্ত্বত সংহিতা বা সাত্ত্বত তন্ত্র ও জয়াখ্য সংহিতায় নাদ ও নাদব্রহ্মের ধারণাটি পাওয়া যায়। এই দুটি গ্রন্থকে পঞ্চরাত্র গ্রন্থগুলির মধ্যে অনুশাসনমূলক গ্রন্থ মনে করা হয়।

মধ্ব সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা আনন্দ তীর্থ তার মুণ্ডক উপনিষদ্‌ ভাষ্যে লিখেছেন: "দ্বাপরযুগে বিষ্ণু শুধুমাত্র পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের বিধানে পূজিত হতেন। কলিযুগে ভগবান হরির পূজা একমাত্র নামের দ্বারা হয়।"

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্মের ছয়টি দার্শনিক সনদ বা ষট্‌সন্দর্ভের অন্যতম পরমাত্মা সন্দর্ভ গ্রন্থে [[জীব গোস্বামী বলেছেন, "রাজসিক ও তামসিক গুণান্বিত অশুদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি শুধু বিপদ ডেকে আনছে এবং মূল বেদ অনুসরণ করা কঠিন দেখে এই দুইয়ের বিষয়ে অসন্তুষ্ট হয়ে সর্বজ্ঞ শাস্ত্রকাররা পঞ্চরাত্রের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে দৃঢ় নিশ্চয় হন। এগুলিতে পবিত্র সর্বোচ্চ সত্য নারায়ণ ও তাঁর পূজার বর্ণনা রয়েছে। এই পূজা অত্যন্ত সহজ।"[৬] একই সন্দর্ভে জীব গোস্বামী বলেছেন যে,[৭] স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ নারদ পঞ্চরাত্র বর্ণনা করেছেন। এই কারণে গৌড়ীয় পণ্ডিতরা এটিকে 'প্রমাণ' (সমালোচনামূলক প্রমাণ) হিসেবে ধরে নেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Oriental Institute, Maharaja Sayajirao University of Baroda (1940). Gaekwad Oriental Series, Issue 86, p.7.
  2. Jones, Constance and Ryan, James D. (2007). Encyclopedia of Hinduism, p.321-322. Infobase Publishing. আইএসবিএন ০৮১৬০৭৫৬৪৬
  3. Datta, Amaresh (1987). Encyclopaedia of Indian Literature: A-Devo, p.95. Sahitya Akademi. আইএসবিএন ৮১২৬০১৮০৩৮
  4. Sharma, C. D. (1991). Critical Survey Of Indian Philosophy, p.336. Motilal Banarsidass Publications. আইএসবিএন ৮১২০৮০৩৬৫৫
  5. Prakash, Om (2005). Cultural History Of India, p.120. New Age International. আইএসবিএন ৮১২২৪১৫৮৭৩
  6. Paramātma Sandārbha, Annucheda 17.
  7. pañcarātrasya kṛtsnasya vaktā tu bhagavān svayam

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • S. N. Dasgupta, A History of Indian Philosophy, vol. 3 (Delhi: Motilal Banarsidass, 1975); Sanjukta Gupta, trans., Laksmi Tantra: A Pancaratra Text.
  • Orientalia Rheno-Trajectina, Vol. 15 (Leiden: E. J. Brill, 1972); S. Rangachar, Philosophy of Pancaratras (Mandya: Sridevi Prakashana, 1991).