কেপলার-১১ডি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কেপলার-১১ডি
বহির্গ্রহ বহির্গ্রহসমূহের তালিকা
মাতৃ তারা
তারা কেপলার-১১ (KOI-157)
তারামণ্ডল সিগনাস
বিষুবাংশ (&আলফা;)  ১৯ ৪৮মি ২৭.৬২সে
বিষুবলম্ব (&ডেল্টা;) +৪১° ৫৪′ ৩২.৯″
আপাত মান (mV) ১৪.২[১]
ভর (m) ০.৯৫ (± ০.১)[২] M
ব্যাসার্ধ (r) ১.১ (± ০.১)[২] R
তাপমাত্রা (T) ৫৬৮০ (± ১০০)[২] K
ধাতবতা [Fe/H] ০ (± ০.১)[২]
বয়স ৮ (± ২)[২] Gyr
ভৌত বৈশিষ্ট্যসমূহ
ভর(m)6.1 +3.1
−1.7
[৩] M🜨
ব্যাসার্ধ(r)3.43 (± .32)[৩] R🜨
ঘনত্ব(রৌ)0.9[১] গ্রা সেমি−৩
তাপমাত্রা (T) 692[১]
কক্ষপথের রাশি
অর্ধ-মুখ্য অক্ষ(a) .159[১] AU
কক্ষীয় পর্যায়কাল(P) 22.68719[১] d
নতি (i) 89.3[১]°
আবিষ্কারের তথ্য
আবিষ্কারের তারিখ ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১[৪]
আবিষ্কারক(সমূহ)
আবিষ্কারের পদ্ধতি অতিক্রমণ (কেপলার মিশন)[৪]
অন্য সনাক্তকরণ পদ্ধতি অতিক্রমণ সময় পার্থক্য
আবিষ্কারের অবস্থা সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষিত[৪]
নেপচুনের সাথে কেপলার -১১ডি (ধূসর) এর আকারের তুলনা।

কেপলার-১১ডি একটি বহির্গ্রহ যা সূর্য সদৃশ নক্ষত্র কেপলার-১১ এর কক্ষপথে আবিষ্কৃত হয়েছে। এটি তার আবিষ্কারক টেলিস্কোপ কেপলার এর নামে নামকরণ করা হয়েছে, কেপলার একটি নাসার মহাকাশযান যা পৃথিবী সদৃশ গ্রহ খোঁজার জন্য মাতৃ নক্ষত্রের সামনে দিয়ে গ্রহ পরিক্রমনের সময় আলোর উজ্জলতার তারতম্য পরিমাপের মাধ্যমে শনাক্ত করে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ট্রানজিট মেথড,যা কেপলার-১১ কে কেন্দ্র করে আবর্তন করা ছয়টি গ্রহ শনাক্ত করনে ব্যবহৃত হয়েছে, যার মধ্যে নক্ষত্র থেকে কেপলার-১১ডি এর অবস্থান তৃতীয়।বুধ গ্রহের মতই কেপলার-১১ডি গ্রহটি কেপলার-১১ নক্ষত্রকে ২৩ দিনে একবার আবর্তন করছে। গ্রহটির ভর পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি, এবং  এর পরিধি পৃথিবীর চেয়ে প্রায় সাড়ে তিনগুন বড়। যাই হোক, এটা পৃথিবীর চেয়ে বেশি উত্তপ্ত। এর শনি গ্রহের মতই কম ঘনত্ব এর জন্য কেপলার-১১ডি তে বৃহৎ হাইড্রোজেন - হিলিয়ামের বায়ুমণ্ডল রয়েছে। আবিষ্কার পরবর্তী পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত হবার পর গ্রহটি, কেপলার-১১ এর আরো পাঁচটি গ্রহ সহ ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে ঘোষণা দেয়া হয়।

নামকরণ এবং আবিষ্কার[সম্পাদনা]

অন্যান্য বহির্গ্রহের মতই, কেপলার-১১ডি এর নামকরণ তার মাতৃ নক্ষত্র কেপলার-১১ এর নামে করা হয়েছে। কেপলার-১১সি আর অন্য সব গ্রহ সমূহের সাথে একত্রে আবিষ্কার হওয়ার কারণে নক্ষত্র থেকে দূরত্ব অনুসারে নামকরণ করা হয়; সে কারণে, কেপলার-১১ডি, কেপলার-১১ নক্ষত্রের তৃতীয় গ্রহ হওয়ায় এর পদবী ডি দেয়া হয়েছে। কেপলার-১১, কেপলার মহাকাশযান এর নামে নামকরণ করা হয়েছে, যা একটি নাসার স্যাটেলাইট, গ্রহের অতিক্রমন নিরীক্ষার মাধ্যমে সিগনাস ও লিরা নক্ষত্রপুঞ্জের মাঝে মহাশুন্যের একটি ছোট এলাকায় পৃথিবী সাদৃশ গ্রহ খোঁজার উদ্দেশ্যে নির্মিত। অথবা  যে সব গ্রহ তাদের নক্ষত্রকে অতিক্রমের সময় পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান হয় তাদের শনাক্ত করা,  এই অতিক্রমণ মাতৃ নক্ষত্র এর  স্বাভাবিক উজ্জ্বলতায় তারতম্যের সৃষ্টি করে; এই তারতম্যই গ্রহের উপস্থিতি নির্দেশ করে, অতঃপর যা ফলো আপ পর্যবেক্ষণ দ্বারা যাচাই করা হয়।[৫] কেপলার-১১ডি, কেপলার-১১ দ্বারা চিহ্নিত, যাকে কেওআই-১৫৭ নামকরণ করা হয়েছে.[১]

পরবর্তী পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেছিল হ্যালি, ক্যালিফোর্নিয়ার সি.ডোনাল্ড স্যন টেলিস্কোপ; হাওয়াই এর ডব্লিও. এম. কেক মানমন্দির; অ্যারিজোনার ডব্লিও,আই,ওয়াই,এন (WIYN), হুইপল এবং এমএমটি (MMT) মানমন্দির; পশ্চিম টেক্সাসের হবি-এবারলে এবং হার্লান জে স্মিথ টেলিস্কোপ। এছাড়াও স্পিথজার স্পেস টেলিস্কোপ ও ব্যবহৃত হয়েছিল।[৫] কেপলার-১১ডি,  আরো পাঁচটি গ্রহ সহ ২রা ফেব্রুয়ারি,২০১১ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়া হয়। আবিষ্কারটি নেচার জার্নালের মাধ্যমে পরেরদিন প্রকাশ করা হয়।[৪]

মাতৃ নক্ষত্র[সম্পাদনা]

কেপলার-১১ সিগনাস নক্ষত্রপুঞ্জে অবস্থিত একটি জি-টাইপ নক্ষত্র. যার ভর ০.৯৫ Msun এবং এর পরিধি ১.১ Rsun.,ধাতবতা = ০, এর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৫৬৮০ (± ১০০) কেলভিন, কেপলার-১১ এর ভর প্রায় সূর্যের সমান (সূর্যের ৯৫%)  এবং পরিধি (সূর্যের ১১০%) এবং আয়রন এর মাত্রা প্রায় সূর্যের মতই। ধাতবতা গ্রহ মণ্ডলের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং নক্ষত্রের কাছাকাছি গ্রহ তৈরি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ধাতু সমৃদ্ধ গ্যাস মেঘ অস্থির কোরকে মহাকর্ষীয়ভাবে আদর্শ মাপে জমাট বদ্ধ হতে সাহায্য করে যদিও আদিম গ্যাস তখনও সিস্টেমে বিদ্যমান, গ্যাস দৈত্যদের এইরকম পরিস্থিতিতে গঠিত হবার প্রবণতা থাকে।।[৬] এটি সূর্যের চেয়ে সামান্য শীতল। যাইহোক, এটি সূর্য চেয়ে অনেক পুরোনো, প্রায় আট বিলিয়ন ( ±২) বছর বয়সী হতে পারে বলে অনুমান করা হয়। [২] কেপলার-১১ নক্ষত্রটি কেপলার-১১ডি ছাড়াও আরো পাঁচটি গ্রহের মাতৃ নক্ষত্রঃ কেপলার-১১বি, কেপলার-১১সি, কেপলার-১১ই, কেপলার-১১এফ, এবং কেপলার-১১জি। প্রথম পাঁচটি গ্রহগুলোর কক্ষপথ খুব সহজেই বুধ গ্রহের কক্ষপথে এটে যাবে, শুধু কেপলার-১১জি গ্রহটাই ভেতরের গ্রহ গুলোর চেয়ে বেশি দূরত্ব থেকে কেপলার-১১ নক্ষত্রটিকে পরিক্রমন করে থাকে।.[৪]

 ৬১৩ পারসেক দূরত্বে, নক্ষত্রটির আপাত মান ১৪.২। কেপলার-১১ নক্ষত্রটি খালি চোখে পৃথিবী থেকে দৃশ্যমান নয়।.[১]

বৈশিষ্ট্য[সম্পাদনা]

পৃথিবী, বৃহস্পতি তুলনায় কেপলার গ্রহগুলোর মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ এবং কেপলার-১১ডি নিচে কমলা রঙে দেখানো হয়েছে

কেপলার-১১ডি এর ভর ৬.১ ME  এবং এর পরিধি ৩.৪৩ RE, যা তাকে পৃথিবীর তুলনায় ছয়গুন বেশি ভর বিশিষ্ট ও সাড়ে তিন গুন বেশি পরিধি দিয়েছে। এর ঘনত্ব .৯ গ্রাম/সেমি3, এর কারণে কেপলার-১১ডি পানির চেয়ে কম ঘনত্ব সম্পন্ন ও অনেকটা শনি গ্রহের গ্যাস দৈত্যদের মত। ধারণা করা হয়, অন্য দুটি ভগিনী গ্রহ কেপলার-১১বি ও কেপলার-১১সি, যারা তাদের নক্ষত্রের বেশি নিকটবর্ততই,এদের অনুরুপ না হয়ে কেপলার-১১ডি এ হাইড্রোজেন - হিলিয়ামের বৃহৎ বায়ুমণ্ডল রয়েছে। [৪] কেপলার-১১ডি এর সুস্থিতি তাপমাত্রা ৬৯২ কেল্ভিন, যা পৃথিবীর সুস্থিতি তাপমাত্রা  ২.৭ গুন। এটা .১৫৯ অস্ট্র দূরত্বে থেকে প্রতি ২২.৬৮৭১৯ দিনে কেপলার-১১ এর কক্ষপথে পরিক্রমন করে, এটা কেপলার-১১ এর তৃতীয় নিকটতম গ্রহ। সে তুলনায় বুধ গ্রহ, .৩৮৭ অস্ট্র দূরত্বে থেকে প্রতি ৮৭.৯৭ দিনে কক্ষপথ পরিক্রমন করে থাকে[৭] কেপলার-১১সি এর কক্ষপথের নতী ৮৯.৩ °, তাই কেপলার-১১ডি এর প্রান্ত প্রায় পৃথিবী প্রান্তের মতন।[১] কেপলার-১১ডি, কেপলার-১১ই এবং কেপলার-১১এফ এহাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম বৃহৎ পরিমাণ উপস্থিতির কারণে ধারণা করা হয়, গ্রহগুলো সিস্টেমটি তৈরি হবার প্রথম কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে গঠিত হয়ে ছিল, গ্যাসীয় মেঘ এখনও গঠিত প্রোটোপ্লানেটরি ডিস্ক থেকে শোষিত হচ্ছে।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Kepler Discoveries"Ames Research CenterNASA। ২০১১। ২৭ মে ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১১ 
  2. Jean Schneider (২০১১)। "Notes for star Kepler-11"Extrasolar Planets Encyclopaedia। ১৬ জুন ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১১ 
  3. Lissauer, Jack L.; ও অন্যান্য (২০১১-০২-০২)। "A closely packed system of low-mass, low-density planets transiting Kepler-11" (পিডিএফ)Nature470 (7332): 53। arXiv:1102.0291অবাধে প্রবেশযোগ্যডিওআই:10.1038/nature09760বিবকোড:2011Natur.470...53L। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৩-২৫ 
  4. Denise Chow (২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "Astronomers Find 6-Pack of Planets in Alien Solar System"। Space.com। সংগ্রহের তারিখ ২২ মার্চ ২০১১ 
  5. Michael Mewinney and Rachel Hoover (২ ফেব্রুয়ারি ২০১১)। "NASA's Kepler Spacecraft Discovers Extraordinary New Planetary System"Ames Research CenterNASA। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ মার্চ ২০১১ 
  6. Henry Bortman (১২ অক্টোবর ২০০৪)। "Extrasolar Planets: A Matter of Metallicity"। Space Daily। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১১ 
  7. David Williams (২০০১)। "Mercury Fact Sheet"Goddard Space Flight CenterNASA। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মার্চ ২০১১