কার্ল সেগান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
কার্ল এডওয়ার্ড সেগান
Carl Sagan
জন্মনভেম্বর ৯, ১৯৩৪
মৃত্যু২০ ডিসেম্বর ১৯৯৬(1996-12-20) (বয়স ৬২)
জাতীয়তা যুক্তরাষ্ট্র
মাতৃশিক্ষায়তনশিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়(বিএ, বিএস, এম‌এস, পিএইচডি)
পরিচিতির কারণবহির্জাগতিক বুদ্ধিমত্তার অনুসন্ধান
কসমস: আ পারসোনাল ভয়েজ
কসমস
ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড
পায়োনিয়ার প্লাক
পুরস্কারক্লাম্পকে-রবার্টস অ‍্যাওয়ার্ড (১৯৭৪)
পুলিৎজার পুরস্কার (১৯৭৮)
ওরস্টেড পদক (১৯৯০)
নাসা ডিস্টিংগুইশ্‌ড পাবলিক সার্ভিস মেডেল (দুইবার)
কার্ল সেগান অ‍্যাওয়ার্ড ফর পাবলিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং অফ সায়েন্স (১৯৯৩)
এনএএস পাবলিক ওয়েলফেয়ার মেডেল (১৯৯৪)
বৈজ্ঞানিক কর্মজীবন
কর্মক্ষেত্রজ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্জীববিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, মহাকাশ বিজ্ঞান এবং গ্রহীয় বিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানসমূহকর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়
স্মিথসোনিয়ান অ‍্যাস্ট্রোফিজিক্যাল অবসার্ভেটরি
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলে

কার্ল এডওয়ার্ড সেগান (ইংরেজি: Carl Edward Sagan) বিখ্যাত মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী, জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানী, বিজ্ঞান লেখক এবং মার্কিন মহাকাশ প্রকল্পসমূহের পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি বিজ্ঞান প্রচারক ও বিজ্ঞান জনপ্রিয়কারক হিসেবে বিশেষ ভাবে পরিচিত। বিজ্ঞান বিষয়ক টিভি সিরিজ কসমস: আ পারসোনাল ভয়েজ- তাকে আন্তর্জাতিক খ‍্যাতি এনে দেয়। সেগান বিজ্ঞান অনুরাগীদের বৃহৎ সংগঠন দ্য প্ল্যানেটারি সোসাইটির একজন সহ-উদ্যোক্তা। ভয়েজার মহাকাশযানের সাথে ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড বার্তাটি পাঠানোয় তার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তিনি মতবাদ দেন যে বুধ গ্রহের উচ্চ পৃষ্ঠ তাপমাত্রা গ্ৰিনহাউস প্রভাবের কারণে হয়েছে, যা বর্তমানে গৃহীত হয়েছে।

জীবনী[সম্পাদনা]

জন্ম ও বাল্যকাল[সম্পাদনা]

সেগান ১৯৩৪ সালের ৯ নভেম্বর[২] নিউইয়র্কের ব্রুকলিনে এক ইহুদী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা স্যাম সেগান ছিলেন পোশাক কারখানার সামান্য কর্মচারী[৩]। তার কাজ ছিল বিভিন্ন নকশা অনুযায়ী জামার কাপড় কেটেছেটে ঠিক করা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা একেবারে খারাপ না হলেও দারিদ্র্যসীমার সামান্য উপরে ছিল। কার্ল সেগান একবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছিলেন, ১৯৩৯ সালের কোন এক রবিবারে তার বাবা তাকে পাটিগণিতে শূন্যের ভূমিকা বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছিলেন এবং বলেছিলেন বড় সংখ্যা বলে কিছু নেই। কারণ যেকোন সংখ্যার সাথে এক যোগ করলেই আরেকটি বড় সংখ্যা পাওয়া যায়। বাবার কথায় তিনি এই বিষয়ে বিশেষ উৎসাহিত হয়ে পড়েন। শিশুসুলভ জিদের বশে তখনই ১ থেকে ১০০০ পর্যন্ত সংখ্যা লিখে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। তার হাতে লেখার জন্য কোন কার্ড না থাকায় বাবা তাকে লন্ড্রিতে জামা পাঠানোর সময় জমিয়ে রাখা একগাদা কার্ডবোর্ড এনে দেন। তবে কাজটি তার ধারণার চেয়ে ধীর গতিতে এগোচ্ছিল। তার উপর কিছু অংশ লিখার পর মা তাকে স্নানে যেতে বললেন। কাজ ফেলে তাই তখন তাকে উঠে পড়তে হয়। তার অনুপস্থিতিতে বাবা কাজটি চালিয়ে নিয়ে যান। তিনি স্নান শেষে এসে দেখেন ৯০০ পর্যন্ত লিখা শেষ। রাতের ঘুম কিছুটা নষ্ট করে তিনি সেদিনই ১০০০ পর্যন্ত লিখার কাজ সম্পন্ন করেন। সেই বাল্যকাল থেকেই সংখ্যা আর অঙ্কের প্রতি তার কোন ভয় ছিলনা।

তার জীবনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা বাল্যকালে ১৯৩৯ সালে বাবা-মা'র সাথে নিউইয়র্কের একটি ওয়ার্ল্ড ফেয়ারে গমন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় তিনি সেখানে বিস্মিত হয়েছিলেন। সেখানে ছিল একটি টাইম ক্যাপসুল যাতে ভবিষ্যতের মানুষদের এ সময়কার মানুষ সম্বন্ধে অবহিত করার জন্য বর্তমানের বিভিন্ন জিনিসপত্র জমিয়ে রাখা হয়েছিল। তাকে সবচেয়ে বিস্মিত করেছিল দুইটি জিনিস। এক স্থানে লিখা ছিল শব্দ দেখ এবং আরেক স্থানে আলোক শোন। এর তাৎপর্য বালক সেগান বুঝতে না পারলেও তার শিশুসুলভ বিস্ময় তাকে যুগিয়েছিল পরবর্তী যুগে বিজ্ঞান সাধনার অনুপ্রেরণা। একটি টিউনিং ফর্ককে আঘাত করে ওসিলোস্কোপের সামনে ধরলে পর্দায় সুন্দর সাইন তরঙ্গ দেখা যায়। আবার আলোক কোষের উপর আলো ফেলে মটোরোলা বেতার যন্ত্র শোনানো হয়েছিল। এভাবেই শিশুকাল থেকেই সেগান বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে বেড়ে উঠেন। এক্ষেত্রে তার বাবা-মা'র অবদান ছিল অনস্বীকার্য। তার বাবা-মা বিজ্ঞান সম্বন্ধে তেমন কিছুই জানতেন না, কিন্তু ছেলেকে সবসময়ই বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার ও বিশ্বজগতের সমস্যা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ করে দিয়েছেন[৪]। আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল না হওয়া সত্ত্বেও তারা সেগানের জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়ার প্রশ্নে কোন দ্বিমত পোষণ করেননি। এ কারণে বাবা-মা'র প্রতি তিনি সবসময়ই কৃতজ্ঞতা অনুভব করেছেন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানী হয়ে উঠার প্রেরণা[সম্পাদনা]

জ্যোতির্বিজ্ঞানী হওয়া প্রসঙ্গে সেগান বলেছেন, ছোটবেলায় ব্রুকলিনের বেন্‌সন হার্স্ট এলাকায় থাকার সময় এর আশেপাশে অবস্থিত তার প্রিয় স্থানগুলি ছিল বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্ট দালান, পায়রার খোপ, বাড়ির পিছনের প্রাঙ্গণ, সামনের বারান্দা, দালানগুলোর মধ্যকার খোলা জায়গা, এল্‌ম গাছ, কয়লার চুল্লির চিমনি, কারুকার্যময় কার্নিশ এবং চাইনিজ হ্যান্ডবল খেলার জন্য নির্মিত দেয়াল। এর মধ্যে তার মতে Loew's Stillwell নামে পরিচিত থিয়েটারের বহির্পাশ্বস্থ দেয়ালের বিশেষ উৎকৃষ্টতা ছিল। ঐ স্থানগুলোতেই অনেকেই থাকতো যাদের নাম তিনি জানতেন। এর অল্প কিছু দূরেই একটি স্থান ছিল যাকে তিনি মঙ্গল গ্রহ মনে করতেন। স্থানটি ছিল ৮৬নং সড়কের পাশ দিয়ে চলে যাওয়া রেল লাইনের উত্তরে। অবশ্য সেখানে তিনি তখন যেতে পারতেননা বলেই এ ধারণা করতে পেরেছিলেন। অনেকের মত তিনিও রাতের আকাশে বিস্ময়ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকতেন। আকাশের তারাগুলোর জন্য তার এক ধরনের দুঃখবোধ হত। জানতে চাইতেন আসলে এই আলোর উৎসগুলো কি? তখন থেকেই এর একটি সঠিক অর্থ অনুসন্ধানের জন্য তিনি ব্যাকুল হয়ে উঠেছিলেন। তার জ্যোতির্বিজ্ঞানী হয়ে উঠার মূল প্রেরণা ছিল সেই জীবন।

সেগান কিছুটা বড় হওয়ার পরপরই বাবা-মা তাকে প্রথম একটি লাইব্রেরি কার্ড ইস্যু করে দেন। গ্রন্থাগারটি ছিল ৮৫নং সড়কে যেখানে তিনি আগে কখনও যাননি। গ্রন্থাগারটিও ছিল তাই তার কাছে নতুন। সেখানে গিয়ে গ্রন্থাগারিকের কাছে তিনি তারকা-সংক্রান্ত একটি বই চান। গ্রন্থাগারিক মহিলা তাকে ক্লার্ক গ্যাব্‌ল এবং জ্যাঁ হারলো'র মত তারকাদের ছবি সংবলিত বই এনে দেন। বইয়ে কেবল নায়ক-নায়িকার ছবি দেখে অনুযোগ করলেন সেগান। মহিলাটি বুঝতে পেরে হাসলেন। এরপর তাকে এনে দেন জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর লেখা একটি বই। বইটি তার কাছে খুব ভাল লেগে যায়। আশ্চর্য সব জিনিস দেখতে পেয়ে বিস্মিত হন সেগান। জানতে পারেন আকাশের তারা-নক্ষত্র সম্বন্ধে অজানা সব তথ্য। এ সম্বন্ধে সেগান বলেছেন,

এ সময় সেগান আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পারেন। জানতে পারেন, পৃথিবীটা একটি গ্রহ এবং সূর্যের চারদিকে এমনি আরও অনেকগুলো গ্রহ আবর্তন করছে[৪]। কিছু গ্রহ সূর্য থেকে কাছে, কিছু আবার দূরে; পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক থেকে তৃতীয়। এভাবে তিনি ভাবলেন, অন্য তারাগুলোরও নিশ্চয়ই এরকম গ্রহমণ্ডল থেকে থাকবে। তার এই চিন্তার বাস্তবায়ন জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারেননি। অতি সাম্প্রতিককালে সূর্য ছাড়াও অন্যান্য তারায় গ্রহমণ্ডল আবিষ্কৃত হচ্ছে। এছাড়া তখন থেকেই তিনি সেই সব অন্য গ্রহেও যে প্রাণ থাকতে পারে সে বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। আর এর সাথে এ-ও বুঝতে পারেন যে এগুলো জানতে হলে তাকে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে। এ কারণেই তিনি তার পথ বেছে নিয়েছেন। তার এই আগ্রহে সাহস যুগিয়েছিলেন তার বাবা, মা এবং শিক্ষকেরা। একই সাথে জন্মের সময়টিকেও সেগান ধন্যবাদ জানিয়েছেন। কারণ এর আগে জন্ম নিলে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানতে পারতেন না। কারণ জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ের মৌলিক আবিষ্কার শুরুই হয়েছে ঊনবিংশ শতকের প্রথম থেকে।

শিক্ষা জীবন[সম্পাদনা]

কার্ল সেগান ১৯৫১ সালে নিউ জার্সির রাহ্‌ওয়ে হাই স্কুল থেকে পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। তিনি তার স্কুল জীবন সম্বন্ধে বলেছেন, জুনিয়র স্কুল ও হাই স্কুলে তিনি এমন কোন শিক্ষক পান নি যিনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অন্তত তাকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন। সেখানে পড়াশোনার পদ্ধতিও ছিল গতানুগতিক। ক্লাস ছিল হুকুম তামিল করার জায়গা, প্রশ্ন করার কোন সুযোগ ছিলনা, ল্যাবরেটরিতেও মুখস্থ করে সব করতে হতো। পাঠ্যবইয়ে এমন কিছু ছিলনা যা বিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের চেতনা সৃষ্টি করতে পারে। শেষের দিকে কিছু সুন্দর সুন্দর কথা থাকলেও তা পড়ার আগে বছর শেষ হয়ে যেত। লাইব্রেরিতে কিছু ভাল বই থাকলেও শ্রেণীকক্ষে তার কোন স্থান ছিল না। হাই স্কুল পাঠ শেষে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এখান থেকে সেখানে লাইব্রেরির বই পড়ে পড়েই তার মধ্যে একটি চেতনার সৃষ্টি হয়। তিনি মূলত পড়তেন বিভিন্ন বিজ্ঞান পত্রিকা এবং বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী

স্কুল শিক্ষা শেষে সেগান শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন[৬]। এখান থেকে ১৯৫৫ সালে ব্যাচেলর্‌স ডিগ্রী এবং ১৯৫৬ সালে মাস্টার্স ডিগ্রী লাভ করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে জ্যোতির্বিজ্ঞানজ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে ডক্টরেট ডিগ্রী লাভ করেছিলেন[৭][৮][৯]। এখানে তিনি এমন সব শিক্ষক পেয়েছিলেন যারা ছিল সমকালীন বিজ্ঞানের দিকপাল। এদের মধ্যে ছিলেন সুব্রামানিয়াম চন্দ্রশেখর, এনরিকো ফার্মি, এইচ জি মুলার এবং জি পি কুইপার। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের সব কিছু আবর্তিত হতো ফার্মিকে কেন্দ্র করে। আর চন্দ্রশেখরের কাছ থেকে তিনি পেয়েছিলেন গণিতের সৌন্দর্য্যের ধারণা। এছাড়া এক গ্রীষ্মকাল জুড়ে বিখ্যাত রসায়নবিদ হ্যারল্ড উরের সাথে আলাপ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি এখানেই। তার জ্যোতির্বিজ্ঞান শিক্ষার হাতেখড়ি হয় জিপি কুইপারের কাছে যার নামে কুইপার বেষ্টনীর নাম রাখা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি বিখ্যাত বংশগতি বিজ্ঞানী এইচ জি মুলারের সাথে কাজ করেছিলেন। মুলার ছিলেন ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ১৯৬২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত তিনি ম্যাসাচুসেট্‌সের স্মিথসোনিয়ান অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল মানমন্দিরে কাজ করেন।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার মাধ্যমে সেগান বিশুদ্ধ বিজ্ঞান শিক্ষার মৌলিক চেতনা লাভ করেন। এই কার্যক্রমের পরিচালক ছিলেন রবার্ট এম হাচিন্‌স। এই কার্যক্রমে বিজ্ঞানকে প্রকাশ করা হতো সমস্ত মানব জ্ঞানের অবিচ্ছিন্ন অংশ হিসেবে। সেখানে বোঝানো হতো, একজন পদার্থবিজ্ঞানীরও প্লেটো, আরিস্টটল, বাখ, শেক্সপিয়ার, গিবন জানা থাকা প্রয়োজন। কার্যক্রমের পরিচিতিমূলক বিজ্ঞান ক্লাসে প্রথমত টলেমির পৃথিবীকেন্দ্রিক ব্যবস্থাকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হতো যে, কোপারনিকাসের সৌরকেন্দ্রিক মতবাদ নিয়েও নতুনভাবে চিন্তা করতে হতো। এর ফলে ছাত্রদের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে যেতো। হাচিন্‌স কারিকুলামের শিক্ষকদের মানদণ্ড তাদের গবেষণার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল না। এই শিক্ষকদের মান নির্ধারণ করে দেয়া হতো শিক্ষা দেয়ার পদ্ধতির ভিত্তিতে, কতটুকু তথ্য তারা পৌঁছে দিতে পারছেন, কতটুকু উৎসাহ যোগাতে পারছেন এবং নতুন কোন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে পারছেন কি-না তার উপর। এই শিক্ষার ফলে তিনি মহাবিশ্বের কর্মকাণ্ডকে ব্যাপক দৃষ্টিতে দেখতে অভ্যস্ত হয়েছিলেন। তার পঞ্চাশের দশকের শিক্ষকদের প্রতি তিনি সবসময়ই কৃতজ্ঞতা বোধ করেছেন। তথাপি তার শিক্ষা জীবন সম্বন্ধে তাকে বলতে শোনা যায়:

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ব্রুকলিন বোটানিক গার্ডেনের গুনী ব্যক্তিদের জন্য উৎসর্গকৃত পথে কার্ল সেগানের সম্মানে স্থাপিত পাথরচিহ্ন

দুবছর ধরে মাইলোডিস্প্লাসিয়াতে ভুগে ও তিনবার মেরুদণ্ডের মজ্জা প্রতিস্থাপন অস্ত্রপচারের পরে সেগান নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হন। তিনি ওয়াসিংটনের সিয়াটল শহরে অবস্থিত ফ্রেড হাচিনসন ক্যান্সার রিসার্স ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবশেষে ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ভোর বেলায় ৬২ বছর বয়সে সেগান মৃত্যুবরণ করেন। [১০] তাকে নিউইয়র্কের ইথাকা শহরে লেকভিউ গোরস্থানে সমাহিত করা হয়।

বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অর্জন[সম্পাদনা]

প্রাকৃতিক নির্বাচন ও প্রাণের উৎপত্তি[সম্পাদনা]

গ্রহ সম্বন্ধনীয় তথ্য সংগ্রহ[সম্পাদনা]

বহির্জাগতিক প্রাণের অনুসন্ধান[সম্পাদনা]

সামাজিক চিন্তাধারা[সম্পাদনা]

বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণে অবদান[সম্পাদনা]

ব্যক্তিগত জীবন ও বিশ্বাস[সম্পাদনা]

সেগান তিনবার বিয়ে করেছিলেন। ১৯৫৭ সালে তিনি জীববিজ্ঞানী লিন মারগুলিসকে বিয়ে করেন। তাদের দুটি সন্তান ছিল,জেরেমি এবং ডরিয়ন সেগান।মারগুলিসের সাথে বিচ্ছেদের পরে সেগান ১৯৬৮ সালে শিল্পী লিন্ডা সালজম্যানকে বিয়ে করেন এবং তাদেরও নিক সেগান নামের একটি সন্তান ছিল। এসকল বিবাহের সময় কার্ল সেগান তার ক্যারিয়ারের প্রতি প্রচন্ড মনোযোগী ছিলেন,যেটা হয়তো তার প্রথম বিবাহবিচ্ছেদের জন্য দায়ী।[১১] ১৯৮১সালে সেগান লেখিকা অ্যান ড্রুয়ানকে বিয়ে করেন এবং পরে তাদেরও দুটি সন্তান হয়,আলেক্সান্ড্রা ও স্যামুয়েল সেগান। কার্ল সেগান ১৯৯৬ সালে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অ্যান ড্রুয়ানের সাথে বিবাহিত ছিলেন।তিনি নিউইয়র্কের ইথাকায় একটি পাহাড়ের দাঁড়প্রান্তে অবস্থিত মিশরীয় পুনর্জাগরণী স্থাপত্যকৌশলের আদলে তৈরি ৯০০ স্টুয়ার্ট এভিনিউ নামের একটি বাড়িতে বাস করতেন যেটি ছিল কর্নেল গুপ্ত সংস্থার প্রাক্তন সদর দপ্তর।[১২]
আইজাক আসিমভ তার দেখা এমন দুজন ব্যক্তির মধ্যে একজন হিসাবে সেগানকে বর্ণনা করেছেন যাঁদের বুদ্ধিমত্তা তাকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। অপর ব্যক্তি হল কম্পিউটার বিজ্ঞানীকৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ মার্ভিন মিন্সকি[১৩]

রচনাসমূহ[সম্পাদনা]

সেগান কর্তৃক রচিত[সম্পাদনা]

  • Planets (১৯৬৬) কার্ল সেগান, জোনাথন নর্টন লিওনার্ড এবং লাইফ-এর সম্পাদকেরা
  • Intelligent Life in the Universe (১৯৬৬) সহ-লেখক: আয়োসিফ সামুইলোভিচ স্ক্‌লভ্‌স্কি। রান্ডম হাউজ
  • 'The Dragons of the Eden:Spectaculation on the Evolution of Human Intelligence'(১৯৯৫)
  • Cosmos (১৯৮০)
  • Pale Blue Dot: A Vision of the Human Future in Space(১৯৯৪)
  • Contact (১৯৯৫)
  • Billions & Billions: Thoughts on Life and Death at the Brink of the Millennium(১৯৯৭)
  • The Demon-Haunted World: Science as a Candle in the Dark (১৯৯৫ )

সেগান সম্বন্ধে রচিত[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sagan 1994, p. 68
  2. Poundstone 1999, pp. 363–364, 374–375
  3. "Carl Sagan"Internet Accuracy Project। Grandville, MI: Internet Accuracy Project। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১২ 
  4. "Carl Sagan"Famous Scientists। famousscientists.org। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১২ 
  5. Davidson 1999
  6. "Ryerson Astronomical Society"Ryerson Astronomical Society (RAS)University of Chicago Department of Astronomy and Astrophysics। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১২ 
  7. "Graduate students receive first Sagan teaching awards"University of Chicago Chronicle। University of Chicago News Office। 13 (6)। নভেম্বর ১১, ১৯৯৩। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ৩০, ২০১৩ 
  8. Head 2006, p. xxi
  9. Spangenburg & Moser 2004, p. 28
  10. Quarles, Norma (২০ ডিসেম্বর ১৯৯৬)। "Carl Sagan dies at 62"CNN। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫Sagan was a noted astronomer whose lifelong passion was searching for intelligent life in the cosmos. 
  11. Morrison, David (জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারি ২০০৭)। Man for the cosmos : Carl Sagan's life and legacy as scientist, teacher, and skepticওসিএলসি 1026991570 
  12. "Dear Uncle Ezra - Questions for Thursday, April 10, 2008 - Cornell University"web.archive.org। ২০১৩-০৬-০৬। Archived from the original on ২০১৩-০৬-০৬। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৪-১৬ 
  13. Asimov, Isaac, 1920-1992. (1981, ©1980)। In joy still felt : the autobiography of Isaac Asimov, 1954-1978.। New York: Avon। আইএসবিএন 0380530252ওসিএলসি 7880716  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

আরও দেখুন[সম্পাদনা]