রাম বসু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাম বসু
জন্ম( ১৯২৫-০৯-১৩)১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৫
তারাগুনিয়া চব্বিশ পরগনা , ব্রিটিশ ভারত (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
মৃত্যু১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭(2007-02-11) (বয়স ৮১)
ভাষাবাংলা
জাতীয়তাভারতীয়
উল্লেখযোগ্য রচনাবলিএকগুচ্ছ কাব্যনাট্য
উল্লেখযোগ্য পুরস্কাররবীন্দ্র পুরস্কার (১৯৮৯)
উল্টোরথ পুরস্কার
দাম্পত্যসঙ্গীঅলকা বসু (মৃ.২০০৬)
সন্তানসুকন্যা মিত্র (কন্যা)

রাম বসু (১৩ সেপ্টেম্বর ১৯২৫ - ১১ ফেব্রুয়ারি ২০০৭) [১]আধুনিক বাঙালি কবি, বহুকাল মার্কসবাদী চিন্তাধারায় অনুপ্রাণিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মর্মান্তিক বছরের পর লেখা তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ তোমাকে (১৯৫০) কবিতা-প্রেমী সমাজে সাড়া জাগায়। এই গ্রন্থের শীর্ষ কবিতা তোমাকে, পরান মাঝি হাঁক দিয়েছে ইত্যাদি কবিতা আজও গভীর জনপ্রিয়তার দাবী রাখে।

প্রগতিবাদী কবিতার জন্য বিখ্যাত হলেও, প্রেমের কবিতা-তেও তিনি সিদ্ধহস্ত, এবং নাটক-সুলভ সংলাপের প্রয়োগ বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়[২]

জীবনী[সম্পাদনা]

রাম বসুর জন্ম ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১১ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অধুনা পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় ইছামতী নদীর পার্শ্ববর্তী তারাগুনিয়া গ্রামে। পিতা ললিতকুমার বসু ও মাতা ইন্দুবালা। রাম বসুর জীবনের প্রথমদিক অতিবাহিত হয় বর্তমানের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সিংভূমের খনি অঞ্চলে তার পিতার কাঠের ব্যবসাস্থলে। পিতামহ অঘোরনাথ ছিলেন একজন কবি। তাই পারিবারিক সূত্রেই রাম বসু কবিতা রচনার প্রেরণা পান। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশের পর কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে ভরতি হন। বাণিজ্য শাখায় স্নাতক হওয়ার পর তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে পড়ার সময়ই কমিউনিস্ট ভাবাদর্শে শ্রদ্ধাশীল রাম বসু কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগ দেন। পড়াশোনা অসম্পূর্ণই থাকে। পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চাকরিতে যোগ দেন এবং সেখানে ডেপুটি সেক্রেটারির পদে থেকে অবসর নেন।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

রাম বসুর প্রথম কবিতা ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে অরণি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে তার অসংখ্য কবিতা অগ্রণী, ডাক, ইস্পাত, পরিচয়, ক্লান্তি, গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক, অমৃত, যুবমানস, সপ্তাহ, নক্ষত্রসহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তার ভাষণ, প্রাণ মাঝি হাঁক দিয়েছে,গজেন মালী প্রভৃতি কবিতা পঞ্চাশ-ষাটের দশকে একরকম আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। [১] প্রকাশভঙ্গির স্পষ্টতা ও সাবলীলতা সেই সঙ্গে তার সমাজ সচেতনতা ছিল রাম বসুর কাব্যের বিশিষ্ট লক্ষণ।[৩] রাম বসু নিজের নামে ১৪ টি কাব্যগ্রন্থ, দশটি কাব্য নাটক এবং "কনিষ্ক" ছদ্মনামে প্রবন্ধ ও উপন্যাস সহ আরো ষোলটি গ্রন্থ রচনা করেন।[১]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ কাব্যনাট্য গ্রন্থটির জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রবীন্দ্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি উল্টোরথ পুরস্কার পেয়েছেন।

কাব্যগ্রন্থ[সম্পাদনা]

  • তোমাকে (১৯৫০)
  • যখন যন্ত্রণা (১৯৫৪)
  • দৃশ্যের দর্পণে (১৯৫৬)
  • অন্তরালে প্রতিমা (১৯৬৬)
  • হে অগ্নি, প্রবাহ (১৯৬৭)
  • কানামাছি (১৯৭২)
  • সময়ের কাছে, সমুদ্রের কাছে (১৯৭৯)
  • মন্ত্র খুঁজি (১৯৮১)
  • আমি সাক্ষ্য দিই (১৯৯০)
  • কয়েকটি কবিতা (১৯৯২)
  • ঝিনুকে পড়ন্ত আলো (২০০০)
  • জোনাকির আদিত্য বৃত্তান্ত (২০০১)
  • সমুদ্র যে কাল (২০০৩)
  • কবিতা সমগ্রের কাছাকাছি (২০০৪)
  • রাম বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০০৫)[৪]
  • যাই,যাচ্ছি (২০০৭)

পারিবারিক জীবন ও জীবনাবসান[সম্পাদনা]

কবি রাম বসুর পত্নী অলকা বসু ছিলেন একজন প্রধান শিক্ষিকা। তিনি ২০০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি প্রয়াত হন। তাদের একমাত্র কন্যা সুকন্যা ছিলেন জননেত্রী ইলা মিত্রের পুত্রবধূ। কবি রাম বসু ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি পরলোক গমন করেন। [১]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, দ্বিতীয় খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, জানুয়ারি ২০১৯ পৃষ্ঠা ৩৫১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-২৯২-৬
  2. রাম বসুর ‘তোমাকে’ কাব্যগ্রন্থের মার্কসবাদী পর্যবেক্ষণ ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে অনুপম হাসান
  3. শিশিরকুমার দাশ (২০১৯)। সংসদ বাংলা সাহিত্যসঙ্গী। সাহিত্য সংসদ, কলকাতা। পৃষ্ঠা ১৯২। আইএসবিএন 978-81-7955-007-9 
  4. উদ্ধৃতি