যোল্মো জাতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

যোল্মোরা (তিব্বতি: ཡོལ་མོ་) প্রধানত নেপালের পূর্ব ও উত্তর হিমালয় অঞ্চলের মানুষ। তারা নিজেদেরকে হিয়োলমো বা ইওলমোপা বলে পরিচিতি দেয়।[১] এরা নেপালের হেলাম্বু উপত্যকা এবং তার আশেপাশের অঞ্চলগুলির স্থানীয় বাসিন্দা। এই অঞ্চলে তাদের সম্মিলিত জনসংখ্যা প্রায় ১১,০০০। এছাড়াও ভুটান, দার্জিলিং, সিকিম এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তিব্বতের কিছু অঞ্চলে তাদের বিশাল জনগোষ্ঠী রয়েছে। তারা নেপাল সরকার কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত ৫৯টি আদিবাসী গোষ্ঠীর মধ্যে একটি[১] এবং ভারতের ৬৪৫ টি তফসিলি উপজাতির একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

যোল্মো বা হিয়োমোলো শব্দটি দুটি পৃথক শব্দ নিয়ে গঠিত। হিউল যার অর্থ উচ্চ পর্বত দ্বারা বেষ্টিত একটি স্থান বা এলাকা, এবং মো কথার অর্থ হল দেবী। অর্থাৎ হিয়োমোলো কথার সম্পুর্ন অর্থ হল দেবীর দ্বারা সুরক্ষিত অঞ্চল[১] শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে, তিব্বতি বৌদ্ধরা যোল্মো শব্দটি ব্যবহার করে প্রধানত হেলাম্বু অঞ্চলকে নির্দেশ করে এসেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বেশিরভাগ লোক ইওলমোস অথবা হেলাম্বু নামটি বেশি ব্যবহার করতে পছন্দ করে। প্রায়শই দাবি করা হয় যে "হেলাম্বু" নামটি আলু এবং মূলার ইয়লমো অনুবাদ থেকে উদ্ভূত হয়েছে ( হে মানে "আলু" এবং লাহবু মানে "মুলা")।[২][৩] যদিও এই উৎপত্তির ব্যাখাটি বিতর্কিত। এই ব্যাখ্যার খণ্ডনকারী যুক্তি দিয়ে পণ্ডিতগন বলেন যে হেলাম্বু শব্দটি ইয়লমো শব্দের একটি অপভ্রংশ যা ধ্বনিগতভাবে নেপালি ভাষাভাষীদের দ্বারা রূপান্তরিত হয়ে আধুনিক রূপ পেয়েছে।[৪]

ল্যাটিন লিপিতে "যোল্মো" -এর বানান নিয়ে মতভেদ আছে। কেউ কেউ "ইওলমো", আবার কেউ " হায়োলমো " বা " ইহোলমো " শব্দটি ব্যবহার করে। এটি লক্ষণীয় যে রবার্ট আর. ডেসজারলাইস (তাঁর সাম্প্রতিকতম গবেষনার কাজে[৫] এবং গ্রাহাম ই. ক্লার্ক তার লেখনির বিভিন্ন পর্যায়ে "ইওলমো" শব্দটি বেশি ব্যবহার করেছেন।

নেপাল আদিবাসী জনজাতি মহাসঙ্ঘ (নেপাল ফেডারেশন অফ ইনডিজেনাস ন্যাশনালিটিজ) হিয়োলোম শব্দটি ব্যবহার করে।[৬]

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

সমাজ[সম্পাদনা]

যোল্মো উপজাতি বিভিন্ন গোষ্ঠীতে বিভক্ত, যেমন নাইংমা-লামা, শাংবা, তেরগিলিনপা, ডাংসোং, সরমা-লামা, লহলুংপা, লামা ধোমারে, চ্যাবা, চুজাং, লোবা ইত্যাদি।[৭]

ধর্ম[সম্পাদনা]

তারা প্রাথমিকভাবে নিংমাপা তিব্বতি বৌদ্ধধর্ম অনুসরন করে যা অ্যানিমিজম এবং পৌত্তলিকতার এই দুই ধর্মীয় আচারের সংমিশ্রনে সৃষ্ট।[১]

ভাষা[সম্পাদনা]

শেরপা এবং তিব্বতি ভাষার সাথে যোল্মোদের ব্যবহৃত ভাষার মিল রয়েছে। যোল্মোরা ঐতিহ্যগতভাবে লেখার জন্য সম্ভোতি (তিব্বতি) লিপি ব্যবহার করে তবে অনেক আধুনিক শিক্ষাবিদ দেবনাগরী লিপিও ব্যবহার করেন। কিরং-কাগেট ভাষা উপ-গোষ্ঠীর আরেকটি ভাষা কাগেটের সাথেও যোল্মো ভাষা খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

যোল্মোরা জঞ্জাতির লোকেরা মূলত কৃষিজীবী। আলু, মূলা, এবং কিছু অন্যান্য ফসল তারা চাষ করে। তারা ইয়াকের থেকে দুধ এবং মাংস পায়।[৮] গত কয়েক দশকে, হেলাম্বু অঞ্চল পর্যটন এবং ট্রেকিংয়ের জন্য একটি জনপ্রিয় স্থান হয়ে উঠেছে এবং অনেক যোল্মো মানুষজন এখন পর্যটন শিল্পের সাথে যুক্ত।

বিস্তার[সম্পাদনা]

নেপাল[সম্পাদনা]

২০১১ সালের নেপাল জাতীয় আদমশুমারি অনুসারে,[৯] নেপালের আভ্যন্তরীন অঞ্চলে বসবাসকারী যোল্মো জনগোষ্ঠীর জনসংখ্যা হল ১০,৭৫২ জন। এরা দেশের ১১টি জেলায় বসবাস করে এবং এই জনসংখ্যার ৯৯% লোক যোল্মো ভাষায় কথা বলে। যাইহোক, এখন যোল্মো ভাষায় কথা বলা লোকেদের সংখ্যা খুবই কম কারণ তাদের মধ্যে নেপালি এবং ইংরেজির ভাষায় কথা বলার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।[১] আন্তর্জাতিক গননা অনুসারে বৈশ্বিকভাবে বৃহত্তম যোল্মো বসতিগুলি নেপালের হেলাম্বু এবং মেলামচি উপত্যকায় স্থিত। এখানে ১০,০০ -এর বেশি যোল্মো লোকের বসবাস রয়েছে। প্রায় ৭০০ জনের একটি পৃথক দল লামজুং জেলায় বাস করে এবং কেউ কেউ পোখরার কাছাকাছি বসতি স্থাপন করেছে।[১০] ইলাম জেলায় অনেকগুলি গ্রাম রয়েছে যেখানে যোল্মো ভাষায় কথা বলা হয়।

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম রাজ্যে বসবাসকারী যোল্মোরা তফসিলি উপজাতি হিসাবে তালিকাভুক্ত।[১১]

ভুটান ও তিব্বত[সম্পাদনা]

ভুটান এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তিব্বতের গাইরং কাউন্টির এক উল্লেখযোগ্য সংখ্যার জনগোষ্ঠী যোল্মো ভাষায় কথা বলে।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "is Yolmopa/publisher=Indigenous Voice"। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জানুয়ারি ২০১৫ 
  2. Clarke, Graham E. (১৯৮০)। "A Helambu History": 1–38। 
  3. Clarke, Graham E. (১৯৮০)। Lama and Tamang in Yolmo। Aris and Phillips। পৃষ্ঠা 79–86। 
  4. Hari, Anne Marie (২০১০)। Yolmo Grammar Sketch। Ekta Books। পৃষ্ঠা 1। 
  5. Desjarlais, Robert (২০১৬)। Subject to Death। University of Chicago Press। 
  6. "Nepal Federation of Indigenous Nationalities"Nepal Federation of Indigenous Nationalities। Nepal Federation of Indigenous Nationalities। ২০১৪। ২০১৪-০৯-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-১১-২৪ 
  7. Sato, Seika (১৯৯৭)। "Crossing 'capture' out: On the marginality of the capture marriage tactics in Hyolmo, Nepal"। 
  8. Bishop, Naomi (১৯৯৮)। Himalayan Herders। Harcourt Brace College Publishers। আইএসবিএন 9780534440602 
  9. "Indigenous Peoples - Hyolmo"। Indigenous। ২০১৭-০১-২৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০৫-২৩ 
  10. Gawne, Lauren (২০১৩)। "Report on the relationship between Hyolmo and Kagate" (পিডিএফ): 1–27। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ মার্চ ২০২৩ 
  11. List of Notified Scheduled Tribes, Census of India