মুসলিমদের আজারবাইজান বিজয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

মুসলিমদের আজারবাইজান বিজয় ছিল সামরিক সংগ্রাম যার ফলে ইসলামী খেলাফতে আজারবাইজান অন্তর্ভুক্ত হয়। রায় এবং মধ্য পারস্যের বিজয়ের পরে ৬৪৩ খ্রিস্টাব্দে ( হিজরী ২২) উমর আজারবাইজান বিজয়ের নির্দেশ দেন। রাশিদুন খিলাফত আল মুগিরাহ বিন শুবাহের বাহিনীর অধীনে প্রথম আজারবাইজানের দিকে বিজয় অব্যাহত রাখে।[১] আবু জাফর (তাবারি) আহমদ বিন সাবিত আল রাযির প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

উমর হুদাইফাকে অভিযানের কমান্ডে নিযুক্ত করন। হুদাইফা প্রথম জান্জনের দিকে অগ্রসর হয়। স্থানীয় গ্যারিসন আত্মরক্ষা করে কিন্তু অবশেষে শহরের পতন হয়।

মুসলিম বাহিনী আরদাবিলের দিকে অগ্রসর হয় যেখানে পারস্যরা জিজিয়ার স্বাভাবিক শর্তে আত্মসমর্পণ করে। আরদাবিল থেকে মুসলিম বাহিনী কাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তরদিকে অগ্রসর হয়। বাব এলাকায় একটি সংঘর্ষ শুরু হয় যা কাস্পিয়ান সাগরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর ছিল। মুসলমানরা আরেকটি বিজয় অর্জন করে, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে, হুদাইফাকে ফিরিয়ে আনা হয়।

এরপর পারস্যরা পাল্টা আক্রমণ শুরু করে, যার ফলে মুসলমানরা আজারবাইজানে তাদের অগ্রগামী পদ পরিত্যাগ করে। এর জবাবে উমর আজারবাইজানে বাহিনী পাঠান, একটি বুকেয়ার ইবনে আবদুল্লাহর নেতৃত্বে এবং অন্যটি উতবা বিন ফারকাদের নেতৃত্বে। বুকেয়ারের অধীনে দলটি জুরমিজানে পার্সিদের মুখোমুখি হয়। পারস্যদের কমান্ডার ছিলো ইসান্দিয়ার। যুদ্ধ বেশ গুরুতর ছিল, পারস্যরা পরাজিত হয় এবং তাদের সেনাপতি ইসান্দিয়ার জীবিত বন্দী করা হয়। ইসান্দিয়ার বুকেয়ারকে জিজ্ঞাসা করলেন, "আপনি কি যুদ্ধ বা শান্তি পছন্দ করেন?" যার উত্তরে বুকেয়ার বলেন যে মুসলমানরা শান্তি পছন্দ করে। এরপর ইসান্দিয়ার বলেন, "তাহলে আমাকে আপনার সাথে রাখুন যতক্ষণ না আমি আপনাকে আজারবাইজানের জনগণের সাথে শান্তি আলোচনায় সাহায্য করতে পারি।" পারস্যরা নিকটবর্তী পাহাড়ি দুর্গে গিয়ে নিজেদের ভেতরে বন্ধ করে দেয়। মুসলমানরা সমভূমির সমগ্র এলাকা দখল করে নেয়।[২]

২৫ হিজর বছরে কুরআনের ভাষাগত বিভ্রান্তি এড়াতে কুরআনের উসমানি মুশাফ তৈরি করা হয় যা আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার স্থানীয় উপভাষায় অনূদিত হয়েছিল। হুজাইফা উসমানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে অনুবাদটি তার মূল তাফসীর হারাবে যদি না এটি প্রথমেই মূল মুশাফ সংস্করণের প্রমিত বা স্যান্ডার্ড করতে ব্যর্থ হয়।[৩]

পরিণতি[সম্পাদনা]

বুকেয়ার ইবনে আবদুল্লাহ, যিনি সম্প্রতি আজারবাইজানকে পরাভূত করেছিলেন, তাকে তিফলিস দখলের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি কাস্পিয়ান সাগরের পশ্চিম উপকূলে বাব থেকে বুকেয়ার উত্তরে যাত্রা করেন। উমর বহুমুখী আক্রমণের তার ঐতিহ্যগত এবং সফল কৌশল অনুশীলন করার সিদ্ধান্ত নেন। যখন বুকেয়ার টিফলিস থেকে মাইল দূরে ছিল, তখন উমর তাকে তার সেনাবাহিনীকে তিন ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দেন। উমর হাবিব ইবনে মুসলাইমাকে তিফল, আব্দুলরেহমান কে দখল করার জন্য নিযুক্ত করেন পাহাড়ের দিকে উত্তরে এবং হুযাইফাকে দক্ষিণ পর্বতমালার দিকে অগ্রসর হওয়ার জন্য। হাবিব টিফলিসকৃষ্ণ সাগরের পূর্ব উপকূল পর্যন্ত এলাকা দখল করে নেয়। আব্দুলরেহমান উত্তরে ককেশাস পর্বতমালার দিকে এগিয়ে যান এবং উপজাতিদের দমন করেন। হুধেফা দক্ষিণ-পশ্চিমে পার্বত্য অঞ্চলে মিছিল করে সেখানকার স্থানীয় উপজাতিদের দমন করেন। ৬৪৪ সালের নভেম্বর মাসে উমরের মৃত্যুর পর আর্মেনিয়ায় অগ্রসর হন। ততক্ষণে দক্ষিণ ককেশাসের প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে।[৪]

৬৪৫ সালের পর ওয়ালিদ বিন উকবার অধীনে বাহিনী রায় এবং আজারবাইজানের দুটি সীমান্ত জেলায় (থুঘুর) চার বছরের আবর্তনে অভিযান চালায়। তাদের সেনাবাহিনীর এক চতুর্থাংশ কুফা থেকে ৪০,০০০ সৈন্য নিয়ে গঠিত প্রতি বছর রেতে প্রায় ৪০০০ এবং আজারবাইযানে ৬০০০ লোক নিয়ে অভিযান চালায়।[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Smith, G. Rex, সম্পাদক (১৯৯৪)। The History of al-Ṭabarī, Volume XIV: The Conquest of Iran, A.D. 641–643/A.H. 21–23। SUNY Series in Near Eastern Studies.। Albany, New York: State University of New York Press। আইএসবিএন 978-0-7914-1293-0 
  2. "Khalifa Umar bin al-Khattab - Expansion of Islam and Military Campaigns Conquest Of Azarbaijan"। ২০ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ নভেম্বর ২০২০ 
  3. Aʻẓamī, Muḥammad Muṣṭafá (২০০৫)। Sejarah teks al-Quran dari wahyu sampai kompilasi: kajian perbandingan dengan perjanjian lama dan perjanjian baru (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। Gema Insani। আইএসবিএন 978-979-561-937-6 
  4. The Muslim Conquest of Persia By A.I. Akram. Ch:16 আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৫৯৭৭১৩-৪,
  5. Daryaee, Touraj; Daryāyī, Tūraǧ (২০১২-০২-১৬)। The Oxford Handbook of Iranian History (ইংরেজি ভাষায়)। Oxford University Press, USA। আইএসবিএন 978-0-19-973215-9