ফখরুদ্দিন পাশা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
উমর ফখরুদ্দিন তুরকান[১]
1304 (1888)-SV. 1[১]
উমর ফখরুদ্দিন পাশা
ডাকনামমদিনার প্রতিরক্ষক (Tr.: Medine Müdafii)
মরুভূমির সিংহ[২]
মরুভূমির বাঘ[৩]
জন্ম১৮৬৮
রুসচুক, উসমানীয় সাম্রাজ্য
মৃত্যু২২ নভেম্বর ১৯৪৮ (বয়স ৭৯–৮০)
ইস্তানবুল, তুরস্ক
সমাধি
আনুগত্য Ottoman Empire (১৮৮৮–১৯১৯)
 Turkey (১৯২১–১৯৩৬)
সেবা/শাখা উসমানীয় সাম্রাজ্য সেনাবাহিনী
 তুর্কি স্থলবাহিনী
কার্যকাল১৮৮৮–১৯১৯, ১৯২১–১৯৩৬
পদমর্যাদাফেরিক
নেতৃত্বসমূহ৩১তম ডিভিশন, ১২তম করপস, ফোর্থ‌ আর্মি (ডেপুটী), হেজাজ এক্সপেডিশনারি ফোর্স‌
যুদ্ধ/সংগ্রামইটালি-তুর্কি যুদ্ধ
বলকান যুদ্ধ
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ
অন্য কাজকাবুলে তুর্কি রাষ্ট্রদূত।

ফখরুদ্দিন পাশা (১৮৬৮-২২ নভেম্বর ১৯৪৮) ছিলেন উসমানীয় সেনাবাহিনীর একজন সেনানায়ক ও মদিনার গভর্নর। তিনি ফখরি পাশা বা উমর ফখরুদ্দিন পাশা বলেও পরিচিত ছিলেন। ১৯১৬ থেকে ১৯১৯ পর্যন্ত তিনি গভর্নরের দায়িত্ব পালন করেন। মদিনার প্রতি তার ভালবাসা ও সাহসিকতার জন্য ব্রিটিশরা তাকে “মরুভূমির সিংহ” ও “মরুভূমির বাঘ” নামে ডাকত।[২][৩]

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

ফখরুদ্দিন পাশা রুসচুক (বর্তমান: রুস) নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মুহাম্মদ নাহিদ বে ও মায়ের নাম ফাতিমা আদিল হানিম। ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রুশ-তুর্কি যুদ্ধের সময় তার পরিবার কনস্টান্টিনোপলে চলে আসে।[৪][৫] তিনি যুদ্ধ একাডেমিতে যোগ দেন এবং ১৮৮৮ তে স্নাতক হন। তাকে প্রথমে পূর্বাঞ্চলে আরমেনিয়ার সীমান্তে দায়িত্ব দেয়া হয়। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কন্সটান্টিনপল আসেন ফার্স্ট রেগুলার আর্মিতে যোগ দেন। ১৯১১-১২ সময়কালে তাকে লিবিয়া প্রেরণ করা হয়। বলকান যুদ্ধ শুরু হলে তিনি গেলিপলিতে অবস্থান নেয়া ৩১তম ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার সেনা ইউনিট বুলগেরিয়ার কাছ থেকে এড্রিনোপল (বর্তমান: এডির্ন) ছিনিয়ে নেয় এবং তিনি আনোয়ার পাশার সাথে শহরে প্রবেশ করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে উসমানীয়দের সেনা সমাবেশের আগে স্টাফ কর্নেল ফখরুদ্দিন বে মসুলে অবস্থানরত ১২তম করপসের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯১৪ এর ১২ নভেম্বর তিনি মিরলিভা পদে উন্নীত হন এবং আলেপ্পোতে অবস্থানরত ফোর্থ আর্মির ডেপুটি কমান্ডার হন।[৬]

মদিনার প্রতিরক্ষা[সম্পাদনা]

কাবুলে তুর্কি রাষ্ট্রদুত উমর ফখরুদ্দিন পাশা

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৬ এর ২৩ মে জামাল পাশার আদেশে তিনি মদিনার প্রতিরক্ষার উদ্দেশ্যে হেজাজে রওয়ানা হন। ১৭ জুলাই তাকে হেজাজ এক্সপেডিশনারি ফোর্সের কমান্ডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।[৬]

ফখরুদ্দিন পাশাকে আরবরা ঘিরে ফেললেও তিনি কঠোরভাবে পবিত্র শহরের প্রতিরক্ষা করে যান। তাকে মদিনার প্রতিরক্ষার সাথে সাথে হেজাজ রেলওয়ের সুরক্ষার দিকটাও দেখতে হত। টি ই লরেন্স ও তার আরব সেনারা এ রেলপথের উপর হামলা চালাচ্ছিল। এ রেলপথের উপর তার সামগ্রিক সরবরাহ নির্ভর করছিল।[৭] বিচ্ছিন্ন একটি ক্ষুদ্র ট্রেন স্টেশনের তুর্কি সেনাছাউনি বেশ কিছু রাত্রিকালিন আক্রমণ রুখে দেয় এবং বর্ধমান হামলার বিরুদ্ধে রেলপথের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।[৭]

উসমানীয় ও মিত্রপক্ষের মধ্যে মুদরোসের যুদ্ধবিরতির পর আশা করা হচ্ছিল যে ফখরুদ্দিন পাশা আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু তিনি তা করতে অস্বীকার করেন এবং যুদ্ধবিরতি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।

একজন তুর্কি লেখক এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে লিখেছেন, ১৯১৮ এর বসন্তের এক শুক্রবার মসজিদে নববীতে নামাজের পর তিনি মিম্বরে অর্ধেক অংশ উঠেন এবং নবীর কবরের দিকে মুখ করে উচ্চস্বরে দৃঢ়ভাবে বলেনঃ

"আল্লাহর রাসুল, আমি কখনো আপনাকে ছেড়ে যাব না"

এরপর তিনি তার লোকদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ

"সৈনিকেরা! নবীকে সাক্ষি রেখে আমি তোমাদের প্রতি আবেদন করছি। আমি আদেশ দিচ্ছি শত্রু সংখ্যা যাই হোক না কেন শেষ গুলি ও শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তাকে ও তার শহরকে রক্ষা করতে। আল্লাহ আমাদেরকে সাহায্য করুক, এবং মুহাম্মদ এর দোয়া যাতে আমাদের সাথে থাকে।"

"বীর তুর্কি সেনাবাহিনীর অফিসাররা! হে ছোট মুহাম্মদরা, এগিয়ে আস এবং আমাদের প্রভু ও নবীর সামনে নিজেদের জীবনের বিনিময়ে তোমাদের বিশ্বাসকে সম্মান করার কথা দাও।"

ফখরুদ্দিন পাশা বলেছিলেন যে তিনি একটি স্বপ্ন দেখেন যাতে নবী মুহাম্মদ তাকে আত্মসমর্পণ না করতে আদেশ দিয়েছেন। ১৯১৮ এর আগস্টে শরিফ হুসাইন বিন আলী তাকে আত্মসমর্পণ করার আহ্বান জানান। ফখরুদ্দিন পাশা তাকে এ মর্মে উত্তর দেনঃ[এই উদ্ধৃতির একটি তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

"Fakhr-ud-Din, General, Defender of the Most Sacred City of Medina. Servant of the Prophet."

"In the name of Allah, the Omnipotent. To him who broke the power of Islam, caused bloodshed among Muslims, jeopardized the caliphate of the Commander of the Faithful, and exposed it to the domination of the British."

"On Thursday night the fourteenth of Dhu'l-Hijja, I was walking, tired and worn out, thinking of the protection and defense of Medina, when I found myself among unknown men working in a small square. Then I saw standing before me a man with a sublime countenance. He was the Prophet, may Allah's blessing be upon him! His left arm rested on his hip under his robe, and he said to me in a protective manner, 'Follow me.' I followed him two or three paces and woke up. I immediately proceeded to his sacred mosque and prostrated myself in prayer and thanks [near his tomb]."

"I am now under the protection of the Prophet, my Supreme Commander. I am busying myself with strengthening the defenses, building roads and squares in Medina. Trouble me not with useless offers."

উসমানীয় যুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি আদেশ আসার পরও তিনি তলোয়ার ফেলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। তার আচরণে উসমানীয় সরকার বিচলিত হয়ে পড়ে এবং সুলতান ষষ্ঠ মুহাম্মদ তাকে পদচ্যুত করেন। তিনি আদেশ মানতে অস্বীকার করেন এবং যুদ্ধ শেষ হওয়ার ৭২ দিন পর পর্যন্ত উসমানীয় পতাকা সমুন্নত রাখেন। মুদরোসের যুদ্ধবিরতির পর সবচেয়ে কাছের উসমানীয় সেনা ইউনিটের দূরত্ব ছিল মদিনা থেকে ১৩০০ কিমি (৮০৮ মাইল)।[৮]

ফখরুদ্দিন পাশা তার নিজের লোক কর্তৃক গ্রেপ্তার হন। ১৯১৯ এর ৯ জানুয়ারি বির দারবিশে তাকে আবদুল্লাহর সামনে আনা হয়।[৯][১০] আত্মসমর্পণের পর আবদুল্লাহ বিন হুসাইন মদিনা প্রবেশ করেন এবং তার ভাই আলী বিন হুসাইন ২ ফেব্রুয়ারি শহরে প্রবেশ করেন।[১০]

যুদ্ধ পরবর্তী জীবন[সম্পাদনা]

গ্রেপ্তারের পর তাকে মিশরের কায়রোতে সেনাবাহিনীর ব্যারাকে আনা হয়। পরে তাকে মাল্টায় পাঠানো হয়।[১১] ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত দুই বছর তিনি মালটায় যুদ্ধবন্ধী হিসেবে আটক ছিলেন।[১১] ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তির পর তিনি কামাল আতাতুর্কের অধীনে তুর্কি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং আনাতোলিয়া দখলকারী গ্রীকফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি ১৯২২ থেকে ১৯২৬ পর্যন্ত কাবুলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে ছিলেন।[১২] ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান এবং সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ১৯৪৮ এর ২২ নভেম্বর এস্কিশেহিরে একটি ট্রেন ভ্রমণের সময় হার্ট এটাকের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[১১] তার ইচ্ছা অনুযায়ী ইস্তানবুলের আশিয়ান আসরি সেমেট্রিতে তাকে দাফন করা হয়।[১১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Harp Akademileri Komutanlığı, Harp Akademilerinin 120 Yılı, İstanbul, 1968, p. 19. (তুর্কি)
  2. Defence Of Medina ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে, İsmail Bilgin, আইএসবিএন ৯৭৫-২৬৩-৪৯৬-৬, Timas Publishing Group.
  3. S. Tanvir Wasti
    The defence of Medina, 1916–19, Middle Eastern Studies
    Vol. 27, No. 4 (Oct., 1991), Published by: Taylor & Francis, Ltd. pp. 642-653
  4. The Encyclopædia Britannica, Vol.7, Edited by Hugh Chisholm, (1911), 3; Constantinople, the capital of the Turkish Empire...
  5. Britannica, Istanbul ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৮ ডিসেম্বর ২০০৭ তারিখে:When the Republic of Turkey was founded in 1923, the capital was moved to Ankara, and Constantinople was officially renamed Istanbul in 1930.
  6. "Fahreddin Paşa (Türkkan)" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০ জুলাই ২০১১ তারিখে, Turkey in the First World War.
  7. Mesut Uyar, Edward J. Erickson: A Military History of the Ottomans: From Osman to Atatürk, ABC-CLIO, 2009, আইএসবিএন ০২৭৫৯৮৮৭৬৭, page 253.
  8. Başbakan Erdoğan'ın sır konuşması, Sabah, 24.03.2012 (তুর্কি)
  9. Peters, Francis. (1994). "Mecca: A Literary History of the Muslim Holy Land". PP376-377. Princeton University Press. আইএসবিএন ০-৬৯১-০৩২৬৭-X
  10. Wilson, Mary. (1987). "King Abdullah, Britain and the Making of Jordan". P36. Cambridge University Press. আইএসবিএন ০-৫২১-৩৯৯৮৭-৪
  11. Fahreddin Paşa exhibition commemorates hidden jewel in Turkish photography ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২২ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে, Today's Zaman, Ömer Faruk Șerifoğlu, 14.12.2008
  12. Bilal N. Șimșir, "Cumhuriyetin İlk Çeyrek Yüzyılında Türk Diplomatik Temsilcilikleri ve Temsilcileri (1920–1950)" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ মে ২০১১ তারিখে, Atatürk Araștırma Merkezi Dergisi, Sayı 64-65-66, Cilt: XXII, Mart-Temmuz-Kasım 2006. (তুর্কি)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

উৎস[সম্পাদনা]

  • Public Record Office, London. F. O./371
  • Emel Esin, Mecca The Blessed, Medinah The Radiant (London, 1963), p. 190