পানদানি

লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউজিয়াম অফ আর্টে সংগৃহীত একটি পানদানি

পানদানি বা পানদান বা (পানেরবাড়া চাটগাঁইয়া ভাষা তে বলা হয়) এটি হল দক্ষিণ এশিয়ার পরিবার গুলিতে পান সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত একটি পাত্র। এতে পানের সঙ্গে অন্যান্য উপাদান যেমন জর্দা, আদা পাতা, সুপারি, খয়ের, চুন, লবঙ্গ, এলাচ (এলাচি) এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক উপাদানও সংরক্ষণ করা হয়। পান তৈরির জন্য পান, সুপারি এবং অন্যান্য মশলা সংরক্ষণের জন্য পানপাত্র ব্যবহার করা হয়। পানদানি সাধারণত ছিদ্রযুক্ত ধাতু দিয়ে তৈরি এবং এতে পান তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পৃথক উপাদানসমূহ সংরক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি আলাদা ভাগ রয়েছে।

ব্যুৎপত্তি

ময়ূরাকৃতির একটি পানদানি। পিতল দিয়ে তৈরি এই পানদানিটি সপ্তদশ বা অষ্টাদশ শতাব্দীর। বর্তমানে এটি কম্বোডিয়ার লংভেকে কম্বোডিয়া জাতীয় জাদুঘরে রয়েছে।

সংস্কৃতে "পান" বলতে বুঝানো হত সুপারির সাথে পানপাতার সংমিশ্রণ যা দক্ষিণ এশিয়া এবং তাইওয়ান জুড়ে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। "দান" একটি সাধারণ শব্দ, ইন্দো-আর্য ভাষায় পাত্র অর্থে এটি ব্যবহৃত হয়।

ইতিহাস

রৌপ্যনির্মিত পানদান ঊনবিংশ শতাব্দীতে খুব জনপ্রিয় ছিল। অউধ রাজ্যের শেষ শাসক ওয়াজিদ 'আলি শাহ' যাকে ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা ক্ষমতাচ্যুত করে কলকাতায় নির্বাসিত করেছিল, তার প্রতিদিনের পানের উপাদানগুলো সংরক্ষণ করার জন্য একটি পান দান ব্যবহার করা হত। ওয়াজিদ যে নির্দিষ্ট পানদান ব্যবহার করেছিলেন তা পরে দিল্লি করোনেশন দরবার এবং ১৯১১-১৯১২ সালের ভারতীয় সফরের সময় রানী মেরিকে দেওয়া হয়েছিল, তারপর ১৯১২ সালে সেটি জাদুঘরে উপস্থাপন করা হয়েছিল।

পূর্বকালে প্রায় সবাই পানদান বহন করত। এমনকি লখনউয়ের নবাবদের আদালতের নর্তকীরাও পানদান বহন করেছিল। জানা যায় যে, নর্তকীরদের পানদান লখনউয়ের সূক্ষ্ম মুঘল কাজের প্রলেপসহ খাঁটি রূপার তৈরি ছিল। তখন সাধারণত কৃষি শ্রমিক এবং অন্যান্য গ্রামীণ অধিবাসীরা পানপাতা ও সুপারি খেতেন। অনেকেই তাদের ক্ষুধা দমন করার জন্য এটি চিবিয়ে খেত কারণ এর মধ্যে নেশাদায়ক পদার্থের মতো হালকা ব্যথানাশক প্রভাব রয়েছে।

ওজন ও পরিমাপ

পানদানের নির্দিষ্ট কোন আকার নেই, ব্যক্তির রুচি স্থান ও ভেদে এটি পরিবর্তিত হয়, তবে সাধারণত৩.৯৩ ইঞ্চি উঁচু, ১০.৪৩ ইঞ্চি চওড়া এবং ৭ ইঞ্চি লম্বা হয়ে থাকে। এটি সাধারণত প্রায় ২ পাউন্ড ওজনবিশিষ্ট হয়।

উৎপাদন

এই পানদানিটির উৎপত্তির প্রতীক হিসাবে ইসলামি শিল্প এবং এর বৈশিষ্ট্য উভয়ই খোদাই করা রয়েছে।

পানদানির প্রতিটি নকশা একজন শিল্পীর হাতে নির্মিত হয় এবং প্রতিটি পানদানির নিজস্ব বৈশিষ্ট্য, স্বাতন্ত্র্য এবং নিজস্বতা রয়েছে। পানদানি গ্রাহকের রুচি অনুযায়ী নিজস্ব নকশা দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে এবং সাধারণত এটি গ্রাহকের ব্যক্তিত্ব প্রতিফলিত করে। স্থানীয় কারিগরদের দ্বারা তৈরি বেশিরভাগ রৌপ্যপাত্র কারিগরের হলমার্ক বা স্বাক্ষর হিসাবে নীচে একটি বা দুটি চিহ্ন রয়েছে। পানদানি সাধারণত রূপা থেকে তৈরি করা হয় এবং রূপাকে দূষিত হওয়া থেকে বিরত রাখতে একপ্রকার তেল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

আধুনিক ব্যবহার

বর্তমানকালেও অনেকেই তাদের পান পাতা এবং সুপারি সংরক্ষণের জন্য পানদানি ব্যবহার করে। যাইহোক, সময়ের সাথে সাথে বেশিরভাগ মানুষ পান পাতা চিবানো ছেড়ে দিয়েছেন, তাই কারিগররা অর্থনৈতিকভাবে আরও কঠিন সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি বিয়ের অনুষ্ঠানের সময় পানদানি হস্তান্তরের রীতিও হ্রাস পেয়েছে। স্থানীয় কারিগররা খুঁজে পাচ্ছেন যে তরুণরা পানদানি তৈরি করতে শিখতে আগ্রহী নয় কারণ এটি খুব বেশি অর্থ প্রদান করে না। তাছাড়া কেবল কোথাও কোথাও কেবল রমজানে এর ব্যবহার হয়।

নরম বা ছেঁচা পানপাতা খাওয়ার পাশাপাশি, অনেকেই একটি পানপাতা দিয়ে সুপারি ঢেকে চুন সহযোগে এটি খেয়ে থাকে। পানের অনেক উপকারিতা রয়েছে; এটি ব্যথানাশক প্রভাবের জন্য এবং রেচক হিসাবেও ব্যবহৃত হয় এবং এটি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে। আমাদের গ্রাম বাংলার এই প্রাচীন ইতিহাস এখন বিলুপ্ত হওয়ার পথে বর্তমান ডিজিটাল দুনিয়াতে তবে ৯০ দশকের ভাগ্যবান প্রজন্মঃ এখনো বেঁচে আছেন শুধু মাত্র সমাজের অল্প কিছু বাড়ি ঘরে দেখা যায়।

চিত্রশালা

• 
  আধুনিক সময়ে বিভিন্ন দোকান এবং বাজারে অহরহ পান বিক্রি করা হয়।
• 
  পানপাতা এবং চুন দিয়ে তৈরি পান, প্রায়শই রমজানের ছুটিতে ব্যবহৃত হয় যা ইসলাম ধর্মের সাথে সম্পর্কিত।