সূরা কাফিরুন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(কাফিরুন থেকে পুনর্নির্দেশিত)
আল কাফিরুন
سورة الكافرون
শ্রেণীমাক্কী সূরা
পরিসংখ্যান
সূরার ক্রম১০৯
আয়াতের সংখ্যা
পারার ক্রম৩০
রুকুর সংখ্যা
← পূর্ববর্তী সূরাসূরা কাওসার
পরবর্তী সূরা →সূরা নাসর
আরবি পাঠ্য · বাংলা অনুবাদ

সূরা আল কাফিরুন (আরবি: سورة الكافرون) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১০৯ তম সূরা

আয়াতসমূহ[সম্পাদনা]

আরবি ভাষায় উচ্চারণ বাংলায় অনুবাদ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বিস্‌মিল্লাহির রাহ্‌মানির রাহীম
 قُلۡ یٰۤاَیُّهَا الۡکٰفِرُوۡنَ

لَاۤ اَعۡبُدُ مَا تَعۡبُدُوۡنَ

لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُد

وَ لَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدۡتُّمۡ ۙ

لَاۤ اَنۡتُمۡ عٰبِدُوۡنَ مَاۤ اَعۡبُدُ ؕ

لَکُمۡ دِیۡنُکُمۡ وَلِیَ دِیۡنِ

ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন।

লা আ’বুদু মা তা’বুদূন।

ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বূদ।

ওয়ালা আনা আ’বিদুম্মা আবাত্তুম।

ওয়ালা আনতুম আ’বিদুনা মা আ’বুদ।

লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন।

বলঃ হে কাফিরেরা,

আমি তার ইবাদাত করিনা যার ইবাদাত তোমরা কর,

এবং তোমরাও তাঁর ইবাদাতকারী নও যাঁর ইবাদাত আমি করি,

এবং আমি ইবাদাতকারী নই তার যার ইবাদাত তোমরা করে আসছ,

এবং তোমরা যার ‘ইবাদত করছ আমি তার ‘ইবাদাতকারী হব না’।

তোমাদের জন্য তোমাদের দীন এবং আমার জন্য আমার দীন।

সারাংশ[সম্পাদনা]

সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং এর আয়াত সংখ্যা ৬। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরা কাফিরুন এবং সূরা ইখলাস ফজরের সুন্নতে এবং মাগরিব পরবর্তী সুন্নতে অধিক পরিমাণে পাঠ করতেন, মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "সূরা 'কুল ইয়া আইয়ুহাল কাফিরুন' কুরআনের এক চতুর্থাংশ"।

সূরাটি সকল মুসলিমদের জন্যে উদাহরণ যে, কোন পরিস্থিতিতেই তারা শত্রুর সাথে আপসে যাবে না যা ইসলাম সমর্থন করেনা এবং এমন পরিস্থিতিতে তারা এই সূরার উপদেশ অনুসরণ করবে যা তাদের (অবিশ্বাসীদের) সম্পূর্ণভাবে হতাশ করবে।[১]

অবতীর্ণের সময় ও স্থান[সম্পাদনা]

সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়। এটির বিষয় এবং ঘটনা পরিষ্কার ভাবে স্থান, সময় ও পরিস্থিতিকে বুঝাতে সক্ষম রয়েছে। এটি ইসলামের উত্থানের মুহূর্তে অবতীর্ণ হয়েছে যখন সংখ্যায় অবিশ্বাসীদের তুলনায় মুসলিমরা সংখ্যালঘু এবং মুহাম্মদ প্রবল চাপের মধ্যে ছিলেন। অবিশ্বাসীরা তাকে তাদের ধর্মের (মূর্তিপূজা ও ইসলাম পরিপন্থী কার্যক্রম) পথে ডাকার চেষ্টা করলে তিনি কোনপ্রকার দ্বন্দ্ব ছাড়াই প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাদের হতাশার মাঝে ফেলে দেন।[১]

শানে নুযূল[সম্পাদনা]

হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, ওলীদ ইবনে মুগীরা, আস ইবনে ওয়ায়েল, আসওয়াদ ইবনে আবুদল মোত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খলফ প্রমুখ মক্কার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কয়েকজন একবার রসূলুল্লাহ্‌ - এর কাছে এসে বললঃ আসুন, আমরা পরস্পরের মধ্যে এই শান্তি চুক্তি করি যে, এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন এবং এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব।[২]

তাবরানীর রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেন, কাফেররা প্রথমে পারস্পরিক শান্তির স্বার্থে রসূলুল্লাহ্‌ - এর সামনে এই প্রস্তাব রাখল যে, আমরা আপনাকে বিপুল পরিমাণে ধনৈশ্বর্য দেব, ফলে আপনি মক্কার সর্বাধিক ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যাবেন। আপনি যে মহিলাকে ইচ্ছা বিবাহ করতে পারবেন। বিনিময়ে শুধু আমাদের উপাস্যদেরকে মন্দ বলবেন না। যদি আপনি এটাও মেনে না নেন, তবে এক বছর আমরা আপনার উপাস্যের এবাদত করব এবং এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের এবাদত করবেন।[৩]

আবু সালেহ্‌-এর রেওয়ায়েতে হযরত ইবনে আব্বাস বলেনঃ মক্কার কাফেররা পারস্পরিক শান্তির লহ্ম্যে এই প্রস্তাব দিল যে, আপনি আমাদের কোন প্রতিমার গায়ে কেবল হাত লাগিয়ে দিন, আমরা আপনাকে সত্য বলব। এর পরিপ্রেহ্মিতে জিবরাঈল সূরা কাফিরূন নিয়ে আগমন করলেন। এতে কাফেরদের ক্রিয়াকর্মের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ এবং আল্লাহ্‌ তা'আলার অকৃতিম এবাদতের আদেশ আছে।[৪]

বিষয়বস্তুর বিবরণ[সম্পাদনা]

এখানে শুধুমাত্র ঐ সমস্ত কাফেরদেরকে বিশেষভাবে বুঝানো হয়েছে, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ জানতেন যে, তাদের কাফেররা মহানবী -এর কাছে যখন (নিরপেক্ষ সন্ধি) প্রস্তাব রাখল যে, এক বছর আমরা তোমার উপাস্যের ইবাদত করব এবং এক বছর তুমি আমাদের উপাস্যের ইবাদত করবে। প্রতি উত্তর থাকে, এটা কখনই সম্ভব নয় যে, আমি তাওহীদের পথ পরিত্যাগ করে শিরকের পথ অবলম্বন করে নেব; যেমন তোমরা চাচ্ছ। আর যদি আল্লাহ তোমাদের ভাগ্যে হিদায়াত না লিখে থাকেন, তাহলে তোমরাও তাওহীদ ও আল্লাহর উপাসনা থেকে বঞ্চিতই থাকবে।
যদি তোমরা তোমাদের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট থাক এবং তা ত্যাগ করতে রাজী না হও, তাহলে আমিও নিজের দ্বীন নিয়ে সন্তুষ্ট, তা কেন ত্যাগ করব? (لَناَ أَعْمَالُناَ وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ) অর্থাৎ, আমাদের কর্ম আমাদের এবং তোমাদের কর্ম তোমাদের জন্য। (আল ক্বাস্বাস ৫৫ আয়াত) (তাছাড়া তোমাদের কর্ম ভ্রষ্ট এবং আমার কর্ম শ্রেষ্ঠ। আর অন্যায়ের সাথে কোন আপোস নেই।)[৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সূরা কাফিরুন"আল ইসলাম ডট অর্গানাইজেশন (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৩১ মে ২০১৭ 
  2. তাফসীরে কুরতবী
  3. তাফসীরে মাযহারী
  4. তফসীর মাআরেফুল ক্বোরআন (১১ খন্ডের সংহ্মিপ্ত ব্যাখ্যা)।
  5. "সূরা আল-কাফিরুন"বাংলা হাদিস ডট কম। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০১৭ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]