শুক্র (দেবতা)
শুক্র/দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য | |
---|---|
শুক্রগ্রহ | |
অন্তর্ভুক্তি | গ্রহ , নবগ্রহ, দৈত্য, ও অসুরদের গুরু |
আবাস | পাতাল লোক |
গ্রহ | শুক্র গ্রহ |
মন্ত্র | গায়ত্রী মন্ত্র: ওঁ ভৃগুসূতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহি তন্নো শুক্র প্রচোদয়াৎ। প্রণাম মন্ত্র: হিমকুন্দমৃণালাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্। সর্বশাস্ত্রপ্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।। তাঁর কাছে থাকা মহাদেবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র: "ওঁ ত্র্যম্বকম য়জামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যৌর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ।।" |
দিবস | শুক্রবার |
রঙ | শ্বেত |
বাহন | শ্বেত অশ্ব |
ব্যক্তিগত তথ্য | |
মাতাপিতা | ভৃগু (পিতা) কাব্যমাতা (মাতা) |
সঙ্গী | জয়ন্তী, উর্জস্বতী |
সন্তান | দেবযানী |
শুক্র (সংস্কৃত: शुक्र) শব্দের অর্থ "নির্মল, স্বচ্ছ, উজ্জ্বল, একজন প্রাচীন ঋষি ও দেবতা যিনি হিন্দু পুরাণ অনুসারে অসুর বা দৈত্যদের গুরু।[১] মধ্যযুগীয় পুরাণ এবং হিন্দু জ্যোতিষ শাস্ত্রে, বিভিন্ন সময় তাকে শত্রুগ্রহ বা কখনো তাঁকে প্রাকৃতিক শুভ গ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি নবগ্রহের অন্যতম।[২] তার নামানুসারে সপ্তাহের একটি দিন হল শুক্রবার।
পরিচিতি
[সম্পাদনা]শুক্র হচ্ছেন ঋষি ভৃগু এবং কাব্য/দিব্য মাতার পুত্র, যিনি সপ্তর্ষিদের অন্যতম। তিনি দৈত্য/অসুরদের গুরু, এবং এছাড়াও বিভিন্ন হিন্দু গ্রন্থে তাকে শুক্রাচার্য্য অথবা অসুরাচার্য্য নামে উল্লেখ করা হয়।[৩] মহাভারতের বর্ণনা অনুসারে, শুক্র নিজেকে দুইভাগে ভাগ করেছেন, একভাগ দেবতাদের জ্ঞানের উৎস, আরেকভাগ অসুরদের জ্ঞানের উৎস। শুক্র ভীষ্মের রাজনৈতিক জ্ঞানের গুরু। পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, অসুরগুরু হলেন ভৃগুপুত্র ভার্গব এবং দেবী লক্ষ্মী তাঁর বোন। তিনি সূক্ষ্মতত্ত্বদর্শী হিসেবে শ্রেষ্ঠ এবং পবিত্র গীতায় এটি উল্লেখ আছে বিভূতিযোগে। অসুরগুরু শুক্রাচার্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গ্রহ। তিনি বৃষ ও তুলা রাশির অধিপতি, মীন রাশিতে উচ্চস্থ এবং কন্যা রাশিতে নিচস্থ। তাঁর অধীনে ভরণী (মেষ) ♈, পূর্ব ফাল্গুনী (সিংহ) ♌ এবং পূর্ব আষাঢ়া (ধনু) ♐ নক্ষত্র আছেন। অসুরগুরু ভালোবাসা এবং শিল্পের গ্রহ হিসেবে প্রসিদ্ধ। পশ্চিম আকাশে তিনি শুকতারা হিসেবে প্রকাশমান এবং সবথেকে উজ্জ্বল। কথিত আছে, একবার দেবতা ও অসুরদের যুদ্ধে অসুরদের আধিপত্য থাকায় দেবতারা বিষ্ণুদেবের কাছে সাহায্য চান। বিষ্ণুদেব অসুর বধে উদ্যত হলে দেখেন ভৃগুপত্নীর আশ্রয়ে অসুররা সুরক্ষিত। তখন শ্রীনারায়ণ কাব্য মাতাকে অনুরোধ করে অসুরদের ছেড়ে দিতে বললে কাব্য মাতা আশ্রয় গ্রহণকারীকে ঈশ্বরের রূপ ভেবে যেতে দেননি। কিন্তু নারায়ণ কখনোই নারীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতে চান না। উপায়ান্তর না পেয়ে নারায়ণ কাব্য মাতার প্রাণ হরণ করে নেন। তা জেনে ঋষি ভৃগু নারায়ণকে অভিশাপ দেন এবং অসুরগুরু শুক্রাচার্য নারায়ণকে পরমশত্রু ভাবেন। এজন্য নারায়ণের রাম অবতার রূপে থাকার সময় পত্নীর সাথে বিচ্ছেদের কষ্ট পেয়েছিলেন। তবে দেবী লক্ষ্মীর প্রতি অসুরগুরু এবং ঋষি ভৃগুর স্নেহ অটুট ছিলো। বিষ্ণুদেব বামন অবতার গ্রহণ করেছিলেন প্রহ্লাদপুত্র রাজা বলির অহংকার চূর্ণ করতে। স্ত্রীর কূট বুদ্ধিতে দাতা বলি ইন্দ্রদেব থেকে স্বর্গরাজ্য কেড়ে নিয়ে অমর হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেবতাদের অনুরোধে ভগবান বিষ্ণু অসুরগুরু শুক্রাচার্যের তত্ত্বাবধানে চলমান যজ্ঞে বামনের রূপ ধরে দান চাইতে আসেন। রাজা বলি আগেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, যজ্ঞের সময় কেউ দান চাইলে তিনি খালি হাতে ফেরত যেতে দেবেন না। যখন বিষ্ণুদেব বিরাটাকার ধারণ করে পৃথিবীতে পা রেখে পৃথিবীসম জমি দান করতে বলেন, তখন রাজা বলির দর্পচূর্ণ হয় এবং তিনি সস্ত্রীক ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু অসুরগুরু তা মেনে না নিতে পেরে সূক্ষ্ম রূপ ধারণ করে কোনো কলসের ভেতর ঢুকে যান এবং নারায়ণকে শায়েস্তা করার বুদ্ধি আঁটেন। বিষ্ণুদেব তখন দূর্বাঘাসের রূপ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। ফলস্বরূপ অসুরগুরুর এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়।[২][৪]
গায়ত্রী মন্ত্র: ওঁ ভৃগুসূতায় বিদ্মহে দিব্যদেহায় ধীমহি তন্নো শুক্র প্রচোদয়াৎ। প্রণাম মন্ত্র: হিমকুন্দমৃণলাভং দৈত্যানাং পরমং গুরুম্। সর্বশাস্ত্র প্রবক্তারং ভার্গবং প্রণমাম্যহম্।।
শক্তিশালী মন্ত্র: "ওঁ সোম শুক্রায় নমো।" তাঁর কাছে থাকা মহাদেবের মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র: "ওঁ ত্র্যম্বকম য়জামহে সুগন্ধিং পুষ্টিবর্ধনম্। উর্বারুকমিব বন্ধনান্মৃত্যোর্নুক্ষীয়মামমৃতাৎ।।"
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- নবগ্রহ
- বৃহস্পতি (দেবতা) হিন্দুধর্ম মতে দেবতাদের গুরু
- শুক্রনীতি
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Charles Russell Coulter; Patricia Turner (২০১৩)। Encyclopedia of Ancient Deities। Routledge। পৃষ্ঠা 108। আইএসবিএন 978-1-135-96390-3।
- ↑ ক খ Roshen Dalal (২০১০)। Hinduism: An Alphabetical Guide। Penguin Books India। পৃষ্ঠা 387–388। আইএসবিএন 978-0-14-341421-6।
- ↑ Gopal, Madan (১৯৯০)। K.S. Gautam, সম্পাদক। India through the ages। Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 72।
- ↑ Subramaniam, Kamala (২০০৭)। "Adi Parva"। The Mahabharata। Bharatiya Vidya Bhavan India। আইএসবিএন 81-7276-405-7।