মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম
কোনো মৌলের গ্রুপ এবং পর্যায় পরিবর্তনের ফলে যেসব ধর্মাবলী পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয় সেগুলোকে মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্ম বা Periodic Trends বলে। এসব ধর্ম পর্যায় সারণিতে মৌলের অবস্থান পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।[১] মৌলের পর্যায়বৃত্ত ধর্মগুলো হলো:
- ধাতব ধর্ম
- অধাতব ধর্ম
- পারমাণবিক ব্যাসার্ধ (পরমাণুর আকার)
- আয়নিকরণ শক্তি
- ইলেকট্রন আসক্তি
- তড়িৎ ঋণাত্মকতা
ধাতব ধর্ম
[সম্পাদনা]যেসব মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করে ধণাত্মক আয়নে পরিণত হয় সেগুলোই ধাতু। ধাতুর ইলেকট্রন ত্যাগের ধর্মই হচ্ছে ধাতব ধর্ম।
যেসব পরমাণু যত সহজে তার বহিস্থ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রন ত্যাগ করতে পারে সেসব মৌলের ধাতব ধর্ম বেশি। পর্যায় সারণিতে একই পর্যারের বাম থেকে ডানে গেলে ধাতব ধর্ম হ্রাস পায়। পর্যায় সারণিতে একই শ্রেণির উপর হতে নিচে গেলে ধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়।
অধাতব ধর্ম
[সম্পাদনা]যেসব মৌল এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করে ঋণাত্মক আয়নে পরিণত হয় সেগুলোই অধাতু। অধাতুর ইলেকট্রন গ্রহণের ধর্মই হচ্ছে অধাতব ধর্ম।
যেসব পরমাণু যত সহজে তার বহিস্থ শক্তিস্তরের এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করতে পারে সেসব মৌলের অধাতব ধর্ম বেশি। পর্যায় সারণিতে একই পর্যারের বাম থেকে ডানে গেলে অধাতব ধর্ম বৃদ্ধি পায়। পর্যায় সারণিতে একই গ্ৰুপের উপর হতে নিচে গেলে অধাতব ধর্ম হ্রাস পায়।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ
[সম্পাদনা]কোন পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কেন্দ্র থেকে তার সর্ববহিস্থ শক্তিস্তরের মধ্যকার দূরত্বই হচ্ছে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ।
একই পর্যায়ের বাম দিক থেকে যত ডানে যাওয়া যায়, মৌলের প্রোটন সংখ্যা তত বাড়তে থাকে। ফলে সমহারে ইলেকট্রন সংখ্যাও বাড়তে থাকে। ফলে পরমাণুর নিউক্লিয়াসের অধিক প্রোটন এবং বাহিরের ঘূর্ণয়মান ইলেকট্রনের মধ্যে আকর্ষণ বেশি হয়। ফলে শক্তিস্তর গুলো নিউক্লিয়াসের কাছে এসে যায়।ফলে পরমাণুর ব্যাসার্ধ কমে আকার ছোট হয়ে যায়। কিন্তু একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচের দিকে গেলে ইলেকট্রন এবং প্রোটন বাড়ার ফলে ব্যাসার্ধ কিছুটা ছোট হলেও নতুন শক্তিস্তর যোগ হওয়ার মাধ্যমে ব্যাসার্ধ তার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়।
অর্থাৎ, বাম থেকে ডানে গ্রুপের পরিবর্তন হওয়ার ফলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ হ্রাস পায়। অন্যদিকে ওপর থেকে নিচে পর্যায়ের পরিবর্তনের ফলে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বৃদ্ধি পায়। পরমাণুর আকার তুলনা করার ক্ষেত্রে সাধারণভাবে কোনো পরমাণুর নিউক্লিয়াসের কেন্দ্র ও আর সর্ববহিস্ত ইলেক্ট্রন স্তরের মধ্যবর্তী দূরত্ব কে পারমাণবিক ব্যাসার্ধ ধরা হয়। এটি দুভাবে প্রকাশ করা হয় এক সমযোজী।
আয়নিকরণ শক্তি
[সম্পাদনা]গ্যাসীয় অবস্থায় এক মোল গ্যাসীয় পরমাণু থেকে এক মোল ইলেকট্রন অপসারণ করে এক মোল ধনাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়, তা-ই হচ্ছে ঐ মৌলের আয়নিকরণ শক্তি।
পর্যায় সারণির একই পর্যায়ের বামের মৌলের আকার বড় অর্থাৎ পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি। আবার, একই গ্রুপের ওপরের মৌলের চেয়ে নিচের মৌলের আকার বড়। অর্থাৎ,পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে আয়নিকরণ শক্তির মান বাড়ে, আর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে আয়নিকরণ শক্তির মান কমে।
অর্থাৎ, একই পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে আয়নিকরণ শক্তির মান বৃদ্ধি পায়। একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে গেলে আয়নিকরণ শক্তি হ্রাস পায়।
পর্যায় সারণির উপর থেকে নিচে গেলে পারমাণবিক আকার বৃদ্ধি পায় এর ফলে আলীগণ শক্তি হ্রাস পায়।
ইলেকট্রন আসক্তি
[সম্পাদনা]গ্যাসীয় অবস্থায় কোন মৌলের এক মোল গ্যাসের পরমাণু তে এক মোল ইলেকট্রন প্রবেশ করিয়ে এক মোল ঋণাত্মক আয়নে পরিণত করতে যে শক্তি নির্গত হয়, তা-ই ঐ মৌলের ইলেকট্রন আসক্তি।
পর্যায় সারণির একই পর্যায়ের বামের মৌলের আকার বড় অর্থাৎ পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বেশি। পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে ইলেকট্রন আসক্তির মান বাড়ে, আর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে ইলেকট্রন আসক্তির মান কমে।
অর্থাৎ, একই পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে ইলেকট্রন আসক্তির মান বৃদ্ধি পায়।একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে গেলে ইলেকট্রন আসক্তি হ্রাস পায়। ডান দিক থেকে যদি বাম দিকে যায় তবে ইলেকট্রন আসক্তি কমে যায়।
তড়িৎ ঋণাত্মকতা
[সম্পাদনা]সমযোজী বন্ধনের পরমাণু গুলো বন্ধনের শেয়ারকৃত ইলেকট্রন গুলোকে নিজের দিকে টেনে নেয়ার প্রবণতাই ঐ মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা।
পারমাণবিক ব্যাসার্ধ কমলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান কমে, আর পারমাণবিক ব্যাসার্ধ বাড়লে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান কমে। অর্থাৎ, একই পর্যায়ের বাম থেকে ডানে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতার মান বৃদ্ধি পায়।একই গ্রুপের ওপর থেকে নিচে গেলে তড়িৎ ঋণাত্মকতা হ্রাস পায়। মৌলের তড়িৎ ঋণাত্মকতা সব মৌলের বেলায় ধনাত্মক মান হয়, তড়িৎ ঋণাত্মকতা ০ বা ঋণাত্মক মানের হয় না।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Harry H. Sister (১৯৬৩)। Electronic structure, properties, and the periodic law.। New York: Reinhold publishing corporation।
The physical and chemical properties of elements are periodic functions of the charges on their atomic nuclei i.e. their atomic numbers.