মোজাম্মেল হক সমাজী
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সমাজী | |
---|---|
জন্ম | মোজাম্মেল হক ১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ |
মৃত্যু | ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪[১] চাটমোহর, পাবনা | (বয়স ৪৭)
সমাধি | সমাজ গ্রাম, চাটমোহর, পাবনা |
জাতীয়তা | বাংলাদেশী |
অন্যান্য নাম | সমাজী |
নাগরিকত্ব | বাংলাদেশী |
শিক্ষা | স্নাতকোত্তর (দর্শন শাস্ত্র) |
মাতৃশিক্ষায়তন | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
পেশা | রাজনীতি, শিক্ষকতা |
দাম্পত্য সঙ্গী | প্রথম স্ত্রী- মিসেস খুরশিদ জাহান বেগম এবং দ্বিতীয় স্ত্রী রোকেয়া হক সমাজী |
সন্তান | ৬ |
পিতা-মাতা | মমিন উদ্দিন মিয়া (পিতা) সৈয়দা হাসিনা বানু (মাতা) |
অধ্যক্ষ মোজাম্মেল হক সমাজী (১ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৭ - ১৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, উত্তরবঙ্গের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ[১] এবং বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একজন ঘনিষ্ঠ সহচর। তিনি ১৯৭০ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পরিষদে এবং ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।[২]
জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি
[সম্পাদনা]মোজাম্মেল হক ১৯৩৭ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের সমাজ গ্রামের প্রসিদ্ধ 'মিয়া বাড়িতে' জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মমিন উদ্দিন মিয়া এবং মাতার নাম সৈয়দা হাসিনা বানু। তার পিতা ১৯১৯ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে মেট্রিকুলেশন ডিগ্রী সম্পন্ন করে চাটমোহর উপজেলার রাজা চন্দ্র নাথ ও বাবু শম্ভু নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। মোজাম্মেল হক ছিলেন পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে চতুর্থ। তার প্রকৃত নাম ছিলো “মোজাম্মেল হক” এবং ডাক নাম ‘ছানু’। জন্মস্থান ‘সমাজ’ গ্রামের প্রতি নিবিড় ভালোবাসা থেকে নিজ নামের শেষে তিনি “সমাজী” শব্দটি যোগ করেছিলেন।
শিক্ষা জীবন
[সম্পাদনা]মোজাম্মেল হক সমাজী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। তার শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি হয় মক্তবে পড়ালেখার মধ্য দিয়ে। এরপর তিনি 'শীতলাই ইংলিশ স্কুলে' ভর্তি হন। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি পিতার কর্মস্থল তথা চাটমোহরের রাজা চন্দ্রনাথ এন্ড বাবু শম্ভু নাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হোন ও ১৯৫২ সালে সেখান থেকে প্রবাশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯৫৪ সালে এডওয়ার্ড কলেজ ,পাবনা থেকে আই.এ. এবং একই কলেজ থেকে ১৯৫৬ সালে বি.এ. পাশ করে ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হতে দর্শনে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম স্থান অধিকার করে এম.এ. পাশ করেন।[৩]
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]১৯৫৮ সালে এম.এ. পাশ করার পরপরই হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার বর্নাঢ্য কর্মজীবন শুরু হয়। কিছুদিন পর তিনি এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে কুমিল্লার নবাব ফয়জুন্নেসা কলেজ-এ যোগদান করেন। এখানে তিনি এক বছরের মত শিক্ষকতা করেন ১৯৫৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তাতে যুক্ত থাকেন। ১৯৬৩ সালে এই কলেজ ছেড়ে তিনি জিন্নাহ কলেজের (বর্তমান ঈশ্বরদী সরকারি কলেজ) প্রতিষ্ঠাতাকালীন অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি চাটমোহর ডিগ্রী কলেজের প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল ছিলেন।[৪][৫] পরবর্তীতে তিনি টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর ইব্রাহিম খাঁ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। আর এই প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বরত অবস্থাতেই ১৯৮৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
বৈবাহিক জীবন
[সম্পাদনা]মোজাম্মেল হক সমাজীর বৈবাহিক জীবনে দুজন স্ত্রী ছিলেন। ১৯৫৯ সালে তিনি খুরশিদ জাহান বেগমকে প্রথম বিবাহ করেন। এ পক্ষে তার বড় সন্তান এহসানুল হক সমাজীর জন্ম হয়। অতঃপর তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকাকালীন ১৯৬১ সালে বেগম রোকেয়া হককে বিবাহ করেন। বেগম রোকেয়া হকের গর্ভে তিন ছেলে ও দুজন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
রাজনৈতিক জীবন
[সম্পাদনা]মোজাম্মেল হক সমাজীর রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয় ১৯৫৬-১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালেই। এসময় তিনি আওয়ামীলীগের ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং স্বীয় মেধা,যোগ্যতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের গুণে রাজনীতিতে আপন আসন শক্ত করেন। তিনি ১৯৫৮ এর সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দলনে ,১৯৬৯ এর গণ অভ্যূত্থানের অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ ,অসামান্য ব্যক্তিত্বের বলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজি্বুর রহমানের প্রিয়ভাজন ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রাদেশিক গনপরিষদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি দেশ ও মাতৃকার টানে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন ।পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রনয়ন কমিটির তিনি কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে মোজাম্মেল হক সমাজ়ী চলনবিলের প্রতিনিধি হিসেবে সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি জন প্রতিনিধি হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে দেশের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার পর সামরিক শাসকের হাতে বন্দী হন। সামরিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তাকে ৫ বছরের কারাদন্ড এবং তার সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১৯৭৯ সালে তিনি কারাগার হতে মুক্তি পান এবং রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।[৬][৭] ১৯৮৩ সালে দলীয় কর্মসূচী পালন কালে তিনি আবারো বন্দী হন ।কিন্তু মাত্র ১৩ দিনের মাথায় তীব্র আন্দোলনের ফলে সামরিক শাসক তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন। তারপর ১৯৮৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি শিক্ষকতা এবং রাজনীতি করে যান।[৮] মোজাম্মেল হক সমাজী ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ, শিক্ষানুরাগী, চলনবিলের খেটে খাওয়া অসহায় মানুষের নিকটতম বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী। তিনি তার রাজনৈতিক জীবদ্দশায় বহুবার জেল খেটেছেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে রেখেছেন অসামান্য ভুমিকা। তিনি নিজে উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন এবং গরীব মেধাবীদের শিক্ষার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহযোগিতা করতেন। এলাকার ছাত্রদের শিক্ষিত করে তাদের চাকুরীর ব্যবস্থা করাই ছিল তার প্রধান কাজ। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ উদয় লাহিড়ীসহ আরো অনেকের জন্য তিনি অসামান্য অবদান রাখেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয়েছিলেন, চাইলে বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষকতাও করতে পারতেন; কিন্তু বিল গড়বার মোহ তাকে সেদিকে আকৃষ্ট করেনি।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "মৃত্যুবার্ষিকী"। দৈনিক প্রথমআলো। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৩ মার্চ ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ধ্রুবতারা। পৃষ্ঠা-১১
- ↑ লেখ্য সূত্র: রাধারমন সাহা বিএল এর জিলা পাবনার ইতিহাস,
- ↑ প্রমথনাথ বিশীর চলনবিল ও অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদ টিকে এর চলনবিলের ইতিকথা
- ↑ জেল হত্যাকাণ্ড : নেতৃত্ব শূন্যতার ব্লুপ্রিন্ট,ড. আবু সাইয়িদ
- ↑ http://www.jugantor.com/old/window/2015/11/03/1489/print[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
- ↑ ধ্রুবতারা,প্রকাশকাল-২০১৬,পাবনা,পৃষ্ঠা -১২